এবারের বিশ্বকাপকে অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছিল ল্যাটিন ফুটবলের সৌন্দর্য বিকশিত হবে আর ইউরোপীয়ান জায়ান্টদের জন্য কাজটা হবে দুস্কর । পরিবেশ , তাপমাত্রা , বাতাসের আদ্রতা কিংবা সমুদ্র পৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা এর কারণ হতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যেটা সবচেয়ে চমকপ্রদ সেটা হচ্ছে ছোট দল বলতে কিছু নেই , বিশ্বের সেরা ৩২ টি দল লড়াই করছে সমান তালে , জায়ান্টদের বিদায় করে দিচ্ছে সেই তথাকথিত ছোট দলগুলোই ।
১২ ই জুনঃ ব্রাজিল -ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠে এবারের বিশ্বকাপের । এই ম্যাচটি নিয়ে বলার মত কিছুই নেই , ব্রাজিল নিজেদের স্বাভাবিক ল্যাটিন আমেরিকান ফুটবল টা খেলতে পারেনি বলেই ধারণা তাও বিষ্ময় বালক নেইমারের ঝলকে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে । ব্রাজিলের খেলার মতই হতাশ করে সমন্বয়হীন উদ্ভোধনী অনুষ্টান , আর বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে থিমসং ! ম্যাচের শুরুতেই বিশ্বকাপের স্কোর-লাইন ওপেন করেন ব্রাজিলিয়ান লেফট ব্যাক মার্সেলো ,যদিও নিজেদের জালে। কিছুই করার ছিলনা বিশ্বমানের এই ল্যাফট ব্যাকের !
প্রথম হলুদ কার্ড টিও দেখেন ব্রাজিল এর নয়নের মনি নেইমার, পরে দুর্দান্ত দুটি গোল করে দলকে এগিয়ে নেন , খেলা শেষ হবার আগে দুর্দান্ত এক গোল করেন অস্কার । ৩-১ স্কোরলাইন হলেও সমান তালেই লড়েছে ক্রোয়েশিয়া ! বিতর্কিতে একটি পেনাল্টি ছিল যেটা নিয়ে খেলার পরে ফুটবল বিশ্বে কথা হয়েছে .।
১৩ ই জুনঃ এই দিনের এই খেলাটির কথা ফুটবল আমোদীরা মনে রাখলেও স্পেনিশরা ভুলে যেতেই চাইবেন । অভিশপ্ত মারকানা স্টেডিয়ামে যে স্পেনিশ ফুটবল কিংবা টিকিটাকার সমাধি রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয় ! অথচ এই খেলাটি নিয়েই সবচেয়ে বেশী মাতামাতি ছিল , গতবারের দুই ফাইনালিষ্ট প্রথম পর্বেই খেলছে বলে কথা ! সবাইকে অবাকই হতে হয়েছে চ্যাম্পিয়ানদের খেলা দেখে। প্রথম অর্ধের শুরুতেই বিতর্কিত এক পেনাল্টি থেকে গোল করে স্পেন এগিয়ে যায় ,
তারপর এবারের বিশ্বকাপ তো অবশ্যই সর্বকালের অন্যতম সুন্দরতম এক গোল করেন ডাচ তারকা বেন পার্সি ! ঊড়ন্ত পাখি হয়ে স্পেনিশ লিজেন্ড ক্যাসিয়াসকে বোকা বানানোর সেই গোলটির কথা অনেক দিন মনে থাকবে।
দ্বিতীয় অর্ধে যেন নিঠুর প্রতিশোধ নিলো হল্যান্ড ! গুনে গুনে আরো চারটি বল স্পেনিশ দুর্গে পাঠালো। হল্যান্ডের গতিময় ফুটবলের কাছে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়লো টিকিটাকায় মোড়া স্পেনিশ মিডফিল্ড আর রক্ষন দুর্গ ! বড্ড অসহায় দেখা গেছে অনেক দুঃসময়ের বিজয়ী বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা গোল-কিপার ক্যাসিয়াসকে ! খেলা শেষে বিশ্লেষণ করার মত কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা , একটা ম্যাচ দিয়ে বিচার ও করা যাচ্ছিলোনা ,দলটাতে যে সব মহারথীরা খেলেন তবে অনেকেই বয়সের ভাড়ে নুহ্য ! আলোচনায় আসলো স্পেনের সেই খেলার স্টাইল নিয়ে যেটা দিয়ে রাজত্ব করেছে টানা ৫-৬ বছর ! দুটি ইউরো , একটি বিশ্বকাপ জেতা টিকিটাকার প্রতিষেধক কি এখন ঘরে ঘরে? বিতর্কটা সময়ের জন্য না হয় তোলা থাকুক !
১৪ই জুনঃ এই দিনের অনুষ্টিত তিনটি খেলার মধ্যে দুটো খেলা মনে রাখার মত ! বাংলাদেশ সময়ে রাত দুটায় হওয়া কোষ্টারিকা - উরুগুয়ে খেলাটি ছিল এক ক্লাসিক এনকাউন্টার ! তারপরে ও খেলাটি এই পোষ্টে জায়গা করে নিয়েছে মূলত এই খেলাটিকে বিবেচনা করা হয় বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন হিসবে ! গ্রুপ অফ ডেথের চার দলের তিন দল হচ্ছে সাবের চ্যাম্পিয়ান এবং বর্তমান সময়েও তারকায় খচিত উরুগুয়ে , ইংল্যান্ড আর ইতালি !! সেই তুলনায় বড্ড মলিন কোষ্টারিকা !!
কিন্তু খেলার মাঠে সেদিন উরুগুয়ের চেয়ে বেশ ভালোভাবেই উজ্জ্বল ছিলো কোষ্টারিকা ! উরুগুয়ের মূল তারকা সুয়েরেজ বাইরে বসে বসে দেখলেন পরাজয় ... পেনাল্টিতে এগিয়ে পরে আরো তিন তিনটি গোল খেয়ে বসে সাবেক চ্যাম্পিয়ানরা ।উরুগুয়ের ভয়ানক সব আক্রমণ ঠেকিয়ে দিচ্ছিল কোষ্টারিকা ডিফেন্স । বড় ভাইদের পরাস্ত করে উল্লাসে মেতে উঠে কোষ্টারিকা !
বাংলাদেশ সময়ে ভোর চারটায় অনুষ্টিত হয় গ্রুপ অফ ডেথের অস্থির এক ম্যাচ , যে দেখেনি সে মিস করেছে কি পরিমাণ ফ্লুয়েন্ট , আক্রমণাত্বক ফুটবল খেলেছে দুটো দল , যেই জিতুক জয় হয় ফুটবলের এই ধরণের খেলায় । দুর্দান্ত খেলেও পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বিশ্বকাপের ব্রাত্য ইংলিশরা , মারিও বালোতাল্লি ম্যাজিকে জয় পায় আজ্জুরিরা । আর হ্যাঁ এই ম্যাচেই নিজের তৃতীয় বিশ্বকাপে এসে প্রথম গোলের দেখা পান সময়ের অন্যতম ভয়ানক স্ট্রাইকার রুনি !
১৫ই জুনঃ এই দিনে মাঠে নামে দুই শিরোপা প্রত্যাশী ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা । দু দলই নিজের খেলায় জয়লাভ করে ! আর্জেন্টিনা তারকা লিওনেল মেসি মাঠে নামার সময় ধারাভাষ্যকার বলছিলেন
" Probably He is the man , world Cup is most eagerly waiting for... "
গোল করে বিশ্বকাপে নিজের গোল খরা থেকে বের হয়ে আসার আভাস দেন ফুটবল রাজপুত্র ! অন্যদিকে বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইঞ্জুরি আক্রান্ত হওয়া সময়ের সেরা ফ্রেঞ্চ ফুটবলার রিবেরি আর সামিয়ার নাসরির স্কোয়াডে না থাকা বিতর্কে পানি ঢালে সুসংঠিত ফ্রান্স , প্রাণভরে খেলেছেন করিম বেনজেমা ! বাংলাদেশীদের আবেগি ভালোবাসা পাওয়া হন্ডুরাসকে মাটিতে নামিয়ে আনে ফ্রান্স ।
১৬ই জুনঃ এই দিনের ম্যাচগুলোর মধ্যে জার্মান আর পর্তুগালের লড়াইয়ের কথা বলা যায় , এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিক করে পর্তুগালকে গলির দলে পরিণত করেন থমাস মুলার তথা জার্মানি , মিডফিল্ড , আক্রমণ কিংবা ডিফেন্সে পর্তুগালকে মনে হয়েছে অযোগ্য কোন দল ! বড্ড বেমানান ভাবে নিস্প্রভ ছিলেন দলের সেরা তারকা বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ! খুব স্বাভাবিক ভাবে লাল কার্ড দেখে দলের বিপদ বাড়ান পেপে !
১৭ই জুনঃ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে শিরোপা প্রত্যাশী ব্রাজিল । এই খেলার পুরোটা জুড়েই মেক্সিকোর গোল-কিপার ।
অসাধারণ সব সেভ করে তিনিই ছিলেন ম্যাচের রাজা, অন্যদিকে দূর পাল্লার ভয়ানক সব শটেই ব্রাজিলের দুর্গ বেধের স্ট্রাটেজি নিয়ে মাঠে নেমেছিল মেক্সিকো ! কেউই পাননি কাঙ্খিত গোলের দেখা ! ফলাফল ব্রাজিল ০- মেক্সিকো ০ ।
১৮ ই জুনঃ ১৮ই জুন ২০১৪ দিনটি মুখস্থ করে রাখতে পারেন চাইলে। দুরন্ত হল্যান্ড কে ধরণীতে নামিয়ে আনে ফুটবলে কিছুটা নবীন অসিরা । চমৎকার প্রাণবন্ত ফুটবল খেলে ডাচদের সাথে পুরো ৯০ মিনিটই সমানে লড়েছে সকারুরা । যদিও দিন শেষে স্কোর লাইনে হল্যান্ড ই বিজয়ী ! নিঃসন্দেহে দেখার মত একটি ম্যাচ ছিল ।
তবে দিনটি মুখস্থ করতে বলেছি ভিন্ন কারণে ! এই দিনেই যে একটি চ্যাম্পিয়ন জেনারেশনকে চোখের জলে বিদায় নিতে হয়েছিল! শুধু বিদায় নয় , ওদের খেলার ধরণ , পরাজয়ের ধরণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ! অথচ দলের বেশীরভাগ সদস্যকে এখনই অনেকেই লিজেন্ড মানেন । হ্যাঁ চিলির কাছে ২-০ গোলে হেরে স্পেনিশ ফুটবল তথা টিকিটাকা ফুটবলের সমাধির শেষ ইটটা গাঁথা হয়েছে বলেই মনে করা হয় ! কি এই টিকিটাকা?
১৯৮৮ সালে টোটাল ফুটবলের জনক ইয়ুহেইন ক্রুইফ বার্সালোনা ক্লাবে দিয়ে দেন আধুনিক টোটাল ফুটবলের অন্য মাত্রা টিকিটাকা । টোটাল ফুটবলের মতই সবাই একসাথে উঠে আসবে , আক্রমণ করবে প্রতিপক্ষ দুর্গে তবে কিছুটা ধীরে , খুব ছোট ছোট পাস দিয়ে , বল রিসিভ না করেই, ওয়ান টাচ পাসে পাসে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাগে যাবে ,এমনকি হতে পারে গোলটাও হবে আরেকটা পাসে !তখন থেকেই টিকিটাকার চর্চা স্পেনে। যে দলটাকে দেখেছেন দুটো ইউরো আর একটি বিশ্বকাপ জয় করতে তাদের অভ্যস্ত করা হয়েছে টিকিটাকায়। তারাই টিকিটাকার মূল উপাদান , আমাদের মুগ্ধ করেছেন টিকিটাকার ছন্দে ।
কোচ দেল ভস্কের শিষ্যরা মাঠে জ্যামিতিক ফুটবলই খেলতো । ঘোরলাগা ৬ টি বছরের সমাপ্তি ও দেখা দিলো । অনেকেই বলেন টিকিটাকার প্রতিষেধক বের করে ফেলেছে অন্য দল গুলোর , টিকিটাকার ছন্দপতনেই ভয়ানক প্রতি-আক্রমণ দুমরে মুচড়ে দিতে পারে টিকিটাকার সৌন্দর্য । তবে কি স্পেন খেলার ধরণ বদলাবে ? কোচ দেল বস্ক বলেছেন " আমরা চাইলেই সব কিছু পরিবর্তন করতে পারিনা , এই দলটির পরের জন্য যে দলটি রাখা হয়েছে তাদের ও টিকিটাকার উপাদান হিসেবেই গড়ে তোলা হয়েছে " ! হতে পারে দলটির অনেক সদস্যের একসাথে ক্যারিয়ারের শেষ সময় চলে আসাতেই এই বিপর্যয় । ছোট ছোট পাস দিতে গিয়ে বল হারালে আবার বল কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা কিংবা দ্রুত গতির কাউন্ডার এটাক ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা কিন্তু দলটির ছিল !
কি বিশেষনে বিশেষিত করবেন এই ছবিটাকে ?
কত গল্প লেখা হবে , কত কথা বলা হবে ! শুধু লিখা হবেনা এই অনুভুতিটুকু ! ক্যাসিয়াসের একা দাঁড়িয়ে থাকা ! সাম্রাজ্যের পতন বুঝি এভাবেই দেখতে হয় ! না হচ্ছেনা সঠিক উপমা খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা .......
স্পেনের নতুন একটি প্রজন্মকে আমরা হয়তো আবার খেলতে দেখবো সামনের ইউরো কিংবা বিশ্বকাপে , হয়তো টিকিটাকা দিয়েই আপনার আমার মুখ থেকে বের করে আনবে ওয়াও হোয়াট এ গোল !! সেটা সময়ের জন্য তোলা থাকুক , আপাতত এই বিশ্বকাপ টা লেখা হয়ে গেছে টিকিটাকার সমাধি হিসেবেই যার শুরু অভিশপ্ত মারাকানায়।
১৯জুন : যে যাই বলুক স্পেনের বিদায়ে খারাপ লাগলেও বিভীষিকাময় ফুটবল খেলেই বিদায় নিয়েছে স্পেন । এবার যে দুর্দান্ত খেলা ইংল্যান্ড - উরুগুয়ের যেকোন একদলের বিদায় বলার সময় হলো ! এমন এক ম্যাচে আরেকবার প্রাণভরে খেলে , পুরো ৯০ মিনিট লড়াই করে , সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজিয়েও বিদায় নিলো নাকউঁচু ইংলিশরা ! সুয়ারেজ ইঞ্জুরি আক্রান্ত অবস্থায় হারিয়ে দিলেন ব্রিটিশদের ! বিদায় ঘন্টা বেজেই গেল বুঝি ইংলিশদের ! তবে তারা স্পেনের মত বাজে ফুটবল না , খেলেছে দুরন্ত ফুটবল ! হারলেও খেলেই হেরেছে !
২০ই জুনঃ
ডি গ্রুপের আরেক অঘটন ! আজ্জুরিদের দুর্গ ভেঙ্গে একাকার করে দিয়েছে উরুগুয়েকে অবাক করা কোষ্টারিকা! মাত্র এক গোলেই নাড়িয়ে দিয়েছে সব হিসেব নিকেশ ! ডি গ্রুপের সবচেয়ে অনুজ্জ্বল দলটিই সবচেয়ে উজ্জ্বল ! ব্রিটিশরা বিমান ধরেছে , অন্য দুই দল উরুগুয়ে - ইতালি খেলবে বাচা -মরার খেলা ! বিশ্বকাপ বুঝি জমেই গেলো .....
২১ জুনঃ
নিজদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা , কিন্তু খেলায় প্রাণ ভরাতে পারেনি সমর্থকদের ! ইরান অতিমাত্রায় ডিফেন্সিভ খেলে খেলার একেবারে শেষে এসে
লিও মেসির প্রতিভার কাছেই হার মানে , এগার জন খেলোয়াড়ের ফাঁকে দুরন্ত এক কার্ভ শটে ৩ পয়েন্ট নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা !
অন্য জায়ান্ট জার্মানী নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সবসময় যা করে তাই করেছে , জয় বঞ্চিত থেকেছে ! ঘানা খেলেছে প্রাণ-ভরনো খেলা !
২৩শে জুনঃ নিজেদের শেষ ম্যাচে মাঠে নামে স্পেন , ৩-০ গোলে হারায় সকারুদের , যথারীতি টিকিটাকা খেলে ! কিছুটা নতুন দল নিয়ে ! সেই সাথে সমর্থকদের কষ্ট দিয়েও , বিশেষ করে ডিয়েগো কস্তা কিছুতেই স্পেন দলের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না , ইনিয়েস্তার দুরন্ত এক একটি পাসকে গোলের বদলে হতাশায় পরিণত করেছে এই ভিলেন , এই দিনে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ টি খেলে ফেলেছেন ইকার ক্যাসিয়াস , জাভি , ইনিয়েস্তা , ডেভিড ভিয়া !
নাহ হচ্ছেনা , এই খেলোয়াড়দের বিদায় টা এভাবে হওয়া উচিৎ হয়নি , ইতিহাস কখনো মাপ করবেনা দেল ভস্ককে ! ছোট কিছু স্ট্রাটেজিকাল ভুলে এই পরিণতি মেনে নেয়া যায়না ! কিছুটা নবাগত স্পেন দল বুঝিয়ে দিয়ে গেল টিকিটাকা শেষ হয়নি , আমরা আসছি আবার!!
এদিকে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ খেলাটা খেলতে নামে স্বাগতিকরা। খেলা শুরুর আগে কিছু গাণিতিক হিসেব নিকেশ ছিল , তখনো শেষ ১৬ নিশ্চিত হয়নি ব্রাজিলের। জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই শেষ ১৬ তে জায়গা করলো ব্রাজিল । আরেকবার জ্বলে উঠলেন বিষ্ময় বালক নেইমার , গোলের দেখা পেলেন ফ্রেড । ম্যাচে অনেক গুলো গোলহয়েছিল । ব্রাজিল জিতে ৪-১ গোলে ।
২৪ই জুনঃ
সেই কাঙ্কিত ম্যাচ ! অথচ আশায় গুড়েবালি ! দুই দলই খেলেছে স্লো আর অপরিকল্পিত ফুটবল। ভাগ্যের সাহায্যে উরুগুয়ে চলে গেল শেষ ১৬ তে , আর টানা দ্বিতীয়বারের মত প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় হলো আজ্জুরিদের ! সম্ভবত শেষ হলো আরেকটি প্রজন্মের , ছোট বেলা থেকে দেখে আসা পিরলো, বুফনকে আমারা আর দেখতে পারবো কিনা জানিনা ! কেউ কেউ বলে গ্রেট জিনেদিন জিদানের সাথে করা অন্যায়ের মাসুল দিচ্ছে ইতালি ! সেই পাপের আর কতদিন উঠাতে হয় চার বারের চ্যাম্পিয়ানদের সময় বলে দিবে !
ও হ্যাঁ এই ম্যাচে উরুগুয়ের নরখাদক সুয়ারেজ নিজের কামড়ের হ্যাট্রিক করলেন ! যতই ভালো খেলুক , ওকে ঘৃনাই করা উচিৎ ! নেক্কারজনক আর হাস্যকর সব কাজ করে বেড়ায় প্রতিভাবান এই স্ট্রাইকার !
২৫ জুনঃ নিজেদের শেষ ম্যাচে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা । এই ম্যাচ টি মনে থাকবে মেসির দুরন্ত সেই ফ্রি কিকের জন্য ! এই বিশ্বকাপের প্রথম উড়িয়ে মারা ফ্রি কিক যেটা জালের দেখা পেয়েছে , আগের দুই ম্যাচের তুলনায় কিছুটা বেটার ফুটবল খেলতে দেখা গেছে ! তবে দিনশেষে রাজা ক্ষুধে জাদুকরই !
একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দলটিকে। কি জানি লিটল জিনিয়াসের মনে হয় শখ হয়েছে বিশ্বকাপ ঘরে তোলার !
২৬ জুনঃ এই দিনের চারটি খেলার মাঝে পর্তুগাল - ঘানা ম্যাচটি উপভোগ্য ছিল যথেষ্ট । শেষ ১৬ তে যাওয়ার জন্য পর্তুগালের জন্য অসাধ্য এক টার্গেট ছিল , জিতলেও হারতে হবে আমেরিকাকে , হিসেব নিকেশ মিলাতে হবে কম করে হলেও ৫ গোলের। এমন এক ম্যাচে এই বিশ্বকাপে প্রথম নিজের ঝলক দেখিয়েছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো । একটি গোল পেয়েছেন যদিও সেটি রোনালদো সুলভ গোল নয় , তবে দুর্দান্ত খেলেছেন তিনি , ম্যাচে পর্তুগাল ২-১ গোলে ঘানাকে হারায় যা তাদের জন্য যথেষ্ট ছিলনা । গ্রুপের অন্য নিজের দলের বিরুদ্ধেই খেলতে নামেন ক্লিন্সমেন । এ যেন ক্লিন্সমেন বনাম ক্লিন্সমেন ।
অন্য গ্রুপে এবারের বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স বেলজিয়াম , ছোট নাম কিন্তু দুর্দান্ত কিছু ফুটবলার নিয়ে গড়া দলটা চলে গেছে শেষ ১৬ তে। প্রতিপক্ষ ছিল এশিয়ান , যদিও কোরিয়া হতাশ করেছে , দশ জনের বেলজিয়ামের সাথেও পেরে উঠেনি ।
অন্য খেলায় একমাত্র আরব দেশ হিসেবে আলজেরিয়া এবার শেষ ১৬ তে জায়গা করে নিয়েছে । দুর্দান্ত এক ম্যাচে রাশিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করে ইতিহাসের অংশ হলো আলজেরিয়ার এই দলটি । খেলার শেষ দিকে দর্শকদের উন্মাদনা এবং খেলা শেষে খেলোয়াড়দের উল্লাস দেখে মনে হচ্ছিল কাপজয়ী একটা দল বুঝি দেখেই পেল্লাম । নিজেদের ক্রিকেট দলের কথা মনে পড়ছিল তখ্ন .... অভিনন্দন আলজেরিয়া ।
গ্রুপ পর্ব শেষ হয়ে আসছে , টুর্নামেন্ট চলে এসেছে তার মূল বিসনেস এরিয়াতে ... হারলেই বিদায় , স্বপ্নসমাধি !! এবারের বিশ্বকাপে অন্যরকম কিছু হবার ইঙ্গিত দিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়ান্ট দল বিদায় নিয়েছে , ছোট দল বড় দল বলতে কিছুই নেই ! এমনিতেই ফিফা র্যাঙ্কিং এর প্রথম ১০-১২ টা দলের মাঝে পার্থক্য বলতে কিছুই নেই , মাঠে যেদিন যে ভালো খেলবে সেই জিতবে ... তারকা প্লেয়ার , কাপের ঐশ্বর্য কিছুই ফ্যাক্টর না ! সো ... নক আউটে যে কোন কিছুই হতে পারে ... যে কোন দলের সমাধি রচনা হতে পারে! আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা সুইজারল্যান্ডের সাথে , অনেক আর্জেন্টিনা সমর্থক ই খুশি , নাম টা খুব শক্তিশালী মনে হচ্ছে না , ফিফা র্যাঙ্কিং এ বর্তমানে আর্জেন্টিনা ৫ , সুইজারল্যান্ড ৬ । সো পার্থক্য টা শূন্যের কোঠায়... যে ভালো খেলবে সেই জিতবে ... নক আউট থেকে যদি আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে যায় তাহলে লিওনেল মেসির জন্য খারাপ লাগবে ... এই ক্ষণজন্মা জিনিয়াস বিশ্বসেরা হবার সকল উপাদান নিয়েই জন্মেছে ... ট্রাজিক হিরু হবার জন্য নয় ... নক আউটে জমজমাট ফুটবল উপভোগ করুন , অর্থহীন খোচাখুচি কম করুন !
সাদাকে সাদা বলুন , ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকুন !
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩