ডিজিটালাইশেনের যুগে চিঠিরা এখনো বেঁচে আছে। ডাকবিভাগ আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল ডিসেম্বর মাসে। ছাব্বিশ তারিখ সেদিন। চিঠির উপরে সুন্দর করে আমার নাম লিখা। চিঠিটা হাতে পেয়ে আনন্দিত হব নাকি দুঃখিত হব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। খামের উপরে প্রেরকের নাম লিখা "সদানন্দ চন্দন দাস"। এই খটোমটো নামের কোন ব্যক্তির সাথে আমার পরিচয় থাকার কথা না। আর আমি আলঝেইমারেও আক্রান্ত কেউ না যে এমন একটা নাম মনে থাকবে না। আপাতত এইটুকু নিশ্চিত, চিঠিটা যে পাঠিয়েছে সে পরিচিত কেউ। এটা বোঝার জন্য শার্লক হোমস পরিবারের কেউ হবার দরকার পড়ে না। কিন্তু এটা অভদ্রতার কোন স্তরে পরে সেটা চিন্তার বিষয়। এসব চিন্তা করতে করতে খামটা খুলে দেখলাম। ছোট্ট এক টুকরো কাগজ ছাড়া কিছু নেই। এইবার মেজাজ খারাপ হওয়ার কথা কিন্তু আমার হাসি পেল। এমন শিশুতোষ কাজ কে করতে পারে?
ভেবে কোন কূল কিনারা পেলাম না। খামটা রেখে দিলাম টেবিলের উপরেই।
পরেরদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আবারো হলুদ খাম। কিন্তু আজকে অন্য আরেকটা নাম, আঁখি। ব্যস এতটুকুই। আজকেও খুলে দেখলাম, আলেখা কাগজ।
এভাবে প্রতিদিন চলতে লাগল। শুক্র শনিবার কোন চিঠি আসত না। রবিবারে একসাথে তিনটা চিঠি আসত। সবগুলো চিঠিই ড্রয়ারে জমতে থাকলো। নয়ন, আভা, মীম, আঁখি, সদানন্দ চন্দন দাস, অরোরা। ছয়টা নাম থেকেই চিঠিগুলো আসতে লাগল। মীম নামটা দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। একসময় ভাবলাম সেইই কাজটা করছে।
সবগুলো চিঠিই জমতে থাকলো ড্রয়ারে। কোন কূল কিনারা করতে পারলাম না। যথেষ্ট বিরক্ত হবার কথা আমার। কিন্তু একসময় চিঠির নেশায় পড়ে গেলাম। প্রতিদিন শূন্য চিঠির জন্য অপেক্ষা।
একদিন দেখি একটা চিঠিতে শুধু ইংরেজীতে 'ও' লেখা। ব্যস আর কিছুই নেই। তার পরের দিনের চিঠির জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলাম। তারপর দিন দেখি লিখা ওয়ান(1)।
এভাবে এগারটা চিঠিতে একটা ফোন নম্বর লিখা। তাও আবার আমার ফোন নম্বর। মানে তার কাছে আমার কন্টাক নাম্বার আছে তাও আমাকে চিঠি দিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের বাড়ীটা একতলা, ছাদের উপরে একটা আলাদা রুমে থাকি আমি। প্রতিদিন সকালে ঘুম উঠেই চিঠির জন্য অপেক্ষা করতাম। লাস্ট চিঠিটা এসেছিল মে মাসের একদিন। মোট একশ চৌত্রিশটা চিঠি পেয়েছি। সংখ্যাটা অদ্ভূত। হঠাত খুব হাসি পেল। বয়স কম ছিল বলে কল্পনায় এক কিশোরীর মুখও উকি দিয়েছিল।
একশ চৌত্রিশ নম্বর চিঠিটাই শেষ চিঠি। তারপরদিন থেকেই চিঠি আসা বন্ধ। শেষটা যেদিন পেলাম তার পরদিনই আমার জন্মদিন। চিঠির জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু আর চিঠি আসে নি। অন্য কারো ক্ষেত্রে কি হত জানিনা কিন্তু আমার প্রচন্ড মন খারাপ ছিল সেদিন।
এখনো আমি চিলেকোঠাটাতেই থাকি। একজন বাস্তববাদী সুখী মানুষ। নিয়মিত অফিস বাসা। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা।
একদিন ঘরের আবর্জনা টাইপের সকল কাগজ ফেলে দেওয়ার জন্য হাত দিলাম। ড্রয়ারে এককোনে চিঠিগুলো রাখা ছিল। কি মনে করে খামের উপরের নামগুলো আবার দেখলাম। একটা কাগজে লিখার পরে হঠাত্ করেই খেয়াল করলাম সবগুলো নামই প্যালিনড্রোমিক। arora, eye(আঁখি), meem, নয়ন। এই প্রথম এটা খেয়াল করলাম। এইবার চিঠি প্রেরণকারীর উপর আমার একটা শ্রদ্ধা চলে আসল। আবারও চিঠি পেতে ইচ্ছে করল। যদিও তা সম্ভব কিনা জানি না।
- - - - - - - - - - - - - -
শেষকথাঃ হঠাত্ করেই লেখা শেষ হয়ে গেলে আমি প্রচন্ড বিরক্ত হই। তবে আমার বিশ্বাস সবকিছুই হঠাত্ করে শেষ হয়ে যায়, শুধুমাত্র কবিতা ছাড়া।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


