somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শিশু, আমার ঘরের জীবন্ত এক আসবাব।

২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিশুদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত খেলাধূলা, বইপড়া, সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা খুবই জরুরী। এগুলো সাধারণতঃ ছেলে বেলা থেকেই গড়ে ওঠে। অথচ শহরের শিশুদের এসব করার সুযোগ অপর্যাপ্ত। ইট, কাঠ পাথরের জঞ্জালে চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ। শহরের শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই এবং বিকল্প খেলার স্থান তৈরির কোন উদ্যোগও খুবই সামান্য। বরং শিশুদের অনেক খেলার যায়গায় উঠে যাচ্ছে দালান, দলীয় কার্যলয়, আবর্জনার স্তুপ জমছে বা গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। কার জন্য কিসের প্রয়োজনে আমরা সম্পদের পাহাড় গড়ছি? আমার ঘরে টিভির সামনে বসে থাকা আমার শিশুটিকে দেখলে আজ আমার অন্য আট দশটা আসবাবের মতই মনে হয়। কম্পিউটার গেমস কিংবা টিভির নামক যন্ত্রের কাছে সে তার শৈশব সপে দিয়েছে নিতান্ত অপারগ হয়ে। শহরের কোন পরিকল্পনায় তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। রাজউক সকল বাড়িতে গাড়ির জন্য পার্কিং প্লেস বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু শিশু জন্য খেলার জায়গা কিংবা বেচে থাকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস গাছের জন্য এক ইঞ্চি জায়গায় কথা নেই। শিশু, যার জন্য বাড়ি আর প্রয়োজনীয় গাছ এই দুটিই পরিকল্পনার বাইরে।
একটা খাঁচার মত ভ্যানে চেপে স্কুল, স্কুলের গন্ডি থেকে আবার সেই খাঁচায় চেপে বাসা নামের আরেকটি খাঁচায় ফেরা। আর বাসার অবসরের সঙ্গী টেলিভিশন। এই জড় বস্তুটির সাথেই গড়ে উঠছে তাদের সখ্যতা। অন্যদের সাথে খেলাধূলা, মেলামেশা বা সামাজিক সম্পর্কে জড়ানো এমনকি তাদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের যে সুযোগ রয়েছে তা খুবই সামান্য। এমন একটা সময় ছিল যখন গ্রাম শহর সকল স্থানের শিশুর খেলাধূলা, ছুটোছুটিসহ বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহরাঞ্চলে নানা কারণে শিশুদের এই সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে। আজকাল কবিতা, গান, লেখা-লেখি, আলোচনা বা আড্ডাতে প্রায়ই একথা উঠে আসছে। অনেকেই নিজের দুরন্ত শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে পুলকিত হই। পাশাপাশি শহরের শিশুদের বিনোদনের সুযোগের অপর্যাপ্ততার জন্য হতাশা প্রকাশ করি।

শিশুদের যথাযথ বিকাশের অনুকূল অবস্থা তৈরীর উদ্যোগ খুব সামান্য বরং শিশুটি বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখে সময় কাটাচ্ছে এতে অনেকেই স্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু শিশুর শারীরিক ও মানসিক সু-স্বাস্থ্যের জন্য, তার সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সকলের উচিৎ একটু অন্যভাবে চিন্তা করা।

দেশের ছোট শহরগুলোতে এখনো শিশুদের খেলার উপযোগী পরিবেশ থাকলেও বড় শহরগুলোতে এ ব্যবস্থা অপ্রতুল। দেশের অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে শিশুদের যথাযথ শারিরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নেই। তাই ক্রমেই সন্তানকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করার প্রচ্ছন্ন একটা চেষ্টা অধিকাংশ অবিভাবকের। ফলে শিশুরা আবদ্ধ হয়ে পড়ছে টেলিভিশনের সামনে গন্ডিবদ্ধ জীবনে। যা একটি শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে। তার বিকাশের পথকে সংকুচিত করছে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে ৩৭% শিশু ঘরের মধ্যে খেলা-ধূলা করে এবং ২৯% শিশু কোন খেলা-ধুলা করে না। ব্যপারটা অবশ্যই দুঃখজনক যে, ৩৭% শিশু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে খেলে আর ২৯% শিশু কোন খেলাধূলাই করে না। এই শিশুদের বিনোদনের একমাত্র সংগী টেলিভিশন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে প্রায় সকল শিশুর (৯৮%) বাসায় টেলিভিশন আছে এবং ১৯% টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা শিশুর নিজের ঘরেই। ১৬% শিশু গড়ে প্রতিদিন ১ ঘন্টা, ৩৭% ২ ঘন্টা, ২৯% ৩ ঘন্টা, ১৩% ৪ ঘন্টা এবং ৫% শিশু প্রতিদিন ৪ ঘন্টার ও অধিক সময় টেলিভিশন দেখে। এদের মধ্যে ৭০% শিশু মনে করে টেলিভিশনে দেখা প্রোগ্রাম তাদের পড়ালেখায় কোন কাজেই আসেনা।
খেলাধূলার সুযোগ টেলিভিশন দেখা বিষয়ে জানার পাশাপাশি শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করা হয়েছে। উপাত্ত শিশুদের মধ্যে ১৮% শিশু প্রচুর বই পড়ে এবং ১১% শিশু পাঠ্য পুস্তকের বাইরে কোন বই পড়ে না। ২২% শিশুর বাড়িতে তার পড়ার উপযোগী ১ থেকে ১০ টি বই রয়েছে ৪০ এর উপরে বই আছে ২৮% শিশুর বাড়িতে এবং ৩% শিশুর বাড়িতে তার পড়ার উপযোগী কোন বই নেই। এ সকল বইয়ের মধ্যে প্রায় ১০% শিশু কোন বই পড়েনি। শিশুরা যে সকল বই পড়ে তার ৬৩% এর উৎস বাবা-মা এবং নিজে বই কেনে ১৫ % শিশু।
অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দৈনিক গড়ে ৪ ঘন্টা বা তারো বেশি সময় টেলিভিশন দেখে ২৩% শিশু এবং টেলিভিশন দেখেনা মাত্র ০.২%।
সার্বিক গবেষণায় ঢাকা মহানগরীর বাস্তব অবস্থা ফুটে উঠেছে শিশুদের খেলাধূলার পরিবেশ ও সুযোগের অপ্রতুলতা, টেলিভিশন দেখে তাদের সময় কাটানো এবং বই পড়ার সুযোগ ও আগ্রহের অভাব আমাদের শিশুদের শারিরীক মানসিকভাবে সুস্থ্য হয়ে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করে কিভাবে তাদের উপযোগী করে ঢাকা মহানগরীকে গড়ে তোলা যায় তা আমাদের ভাবতে হবে।

মানুষকে বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে নগর। উন্নত কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধার লাভের আশায় মানুষ নগরমুখী। বর্তমানে উন্নত জীবন-জীবিকার আকর্ষণে নগরমুখী এই মানুষগুলো শহরে এসে ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে। ব্যস্ততার মাঝে মাঝে মানুষের বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সুস্থ নির্মল বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরীর উদ্যোগ নগরগুলোতে নানা কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে। শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ আমাদের সবার কাম্য। আমাদের সকল কাজ, সকল চিন্তার প্রধান উপাদান তার শিশু সন্তান। প্রধানত শিশু সন্তানকে ঘিরেই আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্ন, সাধ, সংগ্রাম, শ্রম ও আকাংখ্যা। তাই তাদের সুস্থ্যভাবে বেড়ে ওঠা, যথাযথ শারিরীক ও মানসিক বিকাশের বিষয় টি আমাদের গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। শিশু যেন আনন্দপূর্ণ শৈশবের মধ্যদিয়ে শারিরিক ও মানসিকভাবে বিকশিত হয় তার জন্য সকলকেই কাজ করতে হবে।



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৩৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকে সাত রোজা।
সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। গতকাল সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। কারন আমি জানি, ১৫ রোজার পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×