somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্যানারি বর্জ্য হতে পোল্ট্রি ফিড তৈরি কার্যক্রম বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করি।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাভারের ভাকুর্তা গ্রামের মোগরাকান্দির গ্রামবাসী গেল তিন বছর আগেও একটু বেশি প্রশান্তির নি:শ্বাস নিতে গ্রামের চকে (বিস্তৃণ ফসলের মাঠ) যেত। কিন্তু এখন গ্রামের চকের একটা বড় অংশ গ্রামবাসীর জন্য নিষিদ্ধ। ঢাকার হাজারিবাগ থেকে ২০ জন ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামাল তৈরি মালিকের দখলে সেই চক।

যদি ভাবেন এই সমস্যা শুধুই ভাকুর্তা গ্রামের সেই মোগরাকান্দা গ্রামের অধিবাসীদের। আপনি আমি নিরাপদ এই দখল কিংবা বিষাক্ত বর্জ্য থেকে। তবে ভুল ভেবেছেন, আমার আদরে শিশু কিংবা আপনি যে পোল্ট্রি মুরগী বা মাছ খাচ্ছেন তার কোনটা দেহে যে মোগড়াকান্দা এই ভয়ানক বিষাক্ত উপাদান নেই তার প্রমাণ কি। মোগড়াকান্দা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের কোটি কোটি মানুষের দেহে।


আগে হাজারিবাগের বিভিন্ন স্থানে হত এই অপকর্ম। এখন ভাকুর্তার মোগড়াকান্দির চকে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে পোল্ট্রি ও মাছের খাবার (ফিড) তৈরি প্রাথমিক কাজ। চামড়ার বর্জ্যে ব্যাপক জনস্বাস্থ্যেও জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব বর্জ্য দিয়ে যদি মাছ ও মুরগির খাবার তৈরি করা হয় এবং সে খাবার মাছ ও মুরগিকে খাওয়ানো হলে মাছ ও মুরগির শরীর বিষাক্ত হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের এই অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য দেশবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। চামড়ার বর্জ্য থেকে পোল্টি ফিড তৈরি পুরো প্রক্রিয়াটি এতটা ভয়াবহ যে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে, দূষিত হচ্ছে স্থানীয় কৃষি জমি, নদীর পানি, বাতাস।


ক্ষতিকর এই বর্জ্যের বিষয়ে ২০১১ সালের ২১ জুলাই বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে তৎকালীন একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ এক মাসের মধ্যে বর্জ্যকে মাছ-মুরগির খাবার তৈরির কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেয়।হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা লিভ টু আপিল করেন। সেই লিভ টু আপিল আজ খারিজ করে দেন। এরপর ফের আবেদন (আপিল ফর রেস্টোরেশন) করে। যে আবেদন রবিবার ৯ এপ্রিল ২০১৭ খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্যানারি বর্জ্য থেকে পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। অথচ সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনে দেদারসে ট্যানারি বর্জ্য থেকে ‣তরি হচ্ছে মাছ ও পোল্ট্রি ফিড। আমি আজ সাভারের ভাকুর্তা গ্রামের মোগরাকান্দি গ্রামে বিষাক্ত ফিড তৈরি করতে দেখেছি। এখানে ২০টি কারখানা আছে।


চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩২ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। চামড়া ফিনিশিং করে বুশি বের করার স্তর পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ক্রমিয়াম, সালফিউররিক এসিড, সোডিয়াম , লাইম, এলডি, সোডা, সোডিয়াম, ফরমিকা, ক্লোরাইড, সালফেট, এলুমিনিয়াম সালফেট প্রভৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এসব কেমিক্যালের মধ্যে যেগুলো ধাতব পদার্থ তা সবই রয়ে যায় আগুনের জ্বালাবার পরও । পরে এগুলো ধাতব অক্সাইডে পরিণত হয় । এর মধ্যে সবেচেয় ভয়াবহ হল ক্রময়িাম। এটি আগুনে জ্বালালেও কোন ক্ষয় নেই। মাটিও হজম করতে পারেনা। কিন্তু সেই কেমিক্যাল আমাদের দেহে প্রবেশ হচ্ছে।


২০০৯ সালে আমরা গিয়েছিলাম বিসিএসআইআর-এ খোঁজ নিতে গেলে জানানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষনা পরিষদ যৌথভাবে কাজ করেছে চামড়ার বর্জ্য মিশ্রিত খাবার নিয়ে। যেসব এলাকায় এসব খাবার যাচ্ছে তার মধ্যে ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এ ৮টি জেলার ডিম সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে এ গবেষনার আওতায়। এসব এলাকার ডিমে ২৩.৪৮০৯ এমজি মাত্রার ক্রমিয়াম নামে রাসায়নিক পদার্থ ধরা পড়েছে। শিশুদের জন্য এ ডিম গ্রহণ করা খুবই ক্ষতিকর। কারণ ৮ বছর পর্যন্ত বয়সী একজন শিশুর শরীরে দিনে ক্রমিয়ামের সহনীয় মাত্রা হল ১৫ এমজি। ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন এর প্রতিবেদন মতে ৯ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের দিনে ক্রমিয়াম গ্রহনের সহনীয় মাত্রা হল ২৫ থেকে ৪৫ এমজি। তবে এ বয়সের মধ্যে যেসব নারী গর্ভধারণ করবে তাদের সহনীয় মাত্রা হল ২০ থেকে ২৫ এমজি। সুতরাং তারাও ঝুকিপূর্ন।

ভয়ঙ্কর এসব কেমিক্যাল ফুড চেইনের মাধ্যমে নানাভাবে মানবদেহে প্রবেশ করছে। ক্রমিয়াম এবং সীসা মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি প্রবেশ করলে মানুষের লিভার, কিডনী, ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেম অচল হয়ে যায়। ক্রমেই নারীর প্রজননক্ষমতাও ধ্বংস হয়ে যায়।

এই চকে আপনি চাইলেই যেতে পারবেন না। কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আছে তাদের নিজেস্ব নিরাপত্তা বেষ্টনি। ক্যামেরা চালানো নিষিদ্ধ। অচেনা লোক মানেই হাজার প্রশ্ন করা হবে আপনাকে। আদালতের রায় এখানে কোন বিষয় না। আপনি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের রাজধানীর ঢাকা থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরুত্বের মধ্যে দারোগা,মনসুর,জনির রাজ্যের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন মোগরাকান্দির এই চকে।

চক থেকে একটু দূরেই গড়ে উঠেছে বেশকিছু কারখানা। চক থেকে কাচাঁমাল সংগ্রহ করে এখানে ভেঙ্গে গুড়ো করে। তারপর বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড তৈরির কারখানায় এই কাঁচামাল পাঠানো হয়। চামড়ার বর্জ্য সিদ্ধ করে শুটকী তৈরির সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, সারা দেশের মছ ও মুরগীর খামারীরা এ শুটকি কিনে থাকেন। ময়মনসিংহ, গাজীপুর, ভৈরব, সিলেট, বগুড়া, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা প্রভৃতি জেলা থেকে ফড়িয়ারা এসে কিনে নিয়ে যায় শুটকী ও শুটকীর গুড়া। মূলত মাছের খাবার তৈরি করে যেসব কারখানা, সেসব মাঝারী ও ছোট ব্যবসায়ীরা বেশি নেয়। অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানও এসব শুটকী কিনে থাকে। তবে তারা সরাসরি কেনে না। অন্য মাধ্যমে কিনে, যাতে কেউ জানতে না পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে আদালতের নিষিদ্ধ তারপরও কিভাবে চলছে এই কাজ?
স্থানীয় প্রশাসনের গুটিকয়েক লোক তাদের নিয়ন্ত্রণে। আর গ্রামবাসী যারাই বাধা দিতে চেষ্টা করেছে, তারাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছে।



যেখানে আদালতের রায়ে কোন কাজ হচ্ছে না সেখানে আমরা কি করতে পারি?
আমাদের নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই বিষাক্ত খাদ্য থেকে মুক্তি দিতে আমরা কার কাছে যাব?


এগিয়ে আমাদেরই আসতে হবে। আমরা কেউ মুক্ত নই এই বিষাক্ত খাদ্য শৃঙ্খল থেকে। আমি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, রেজিস্টার সুপ্রিম কোট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। একার পক্ষে হয়তো বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের এই ব্লগ থেকে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়ে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা করি। আমি বিশ্বাস করি সবাই মিলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে একটু চাপ দিতে পারলেই আমরা সফল হব।


আর এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে আমাদের সফল হতেই হবে। আপনি, আমি ও আমার-আপনার সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের হেরে গেলে চলবে না।

আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্যানারি বর্জ্য হতে পোল্ট্রি ফিড তৈরি কার্যক্রম বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করি।




সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×