somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবুর জ্বীনে পাওয়া

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এখনকার গ্রাম গুলোর মত তখনকার গ্রাম গুলো ছিল না। আমি গ্রামের ছেলে। আমার শৈশব আর কৈশরের বেশীর ভাগ সময়ই কেটেছে নানুবাড়ী, দাদাবাড়ী। যে কোন বাড়ীতে যাবার একমাত্র উপায় ছিল নৌকা। জোয়ার ভাটা হিসাব করে নৌকায় চড়তে হত। তারপর তিন চাল ঘন্টা নৌকার ছৈ র নীচে থাকতে হত, ইলেকট্রিসি ছিল সেই দূরের কোন শহরলোকের বাসিন্দা। সন্ধ্যার পরপরই প্রতি ঘরে জ্বলে উঠত কেরোসিনের হ্যারিকেন আর নয় ল্যাম্প। আধো ছায়া আধো আলোতে চেনে পৃথিবী অচেনা মনে হত। প্রান লাভ করত ছোপ ছোপ কালো অন্ধকার। আধারের বাসিন্দারা নেমে আসত চেনা পৃথিবীতে।

আবুর জ্বীনে পাওয়া

সন্ধ্যা থেকে আবুকে পাওয়া যাচ্ছে না। সারা বাড়ীতে খোজ খোজ রব পরে গেল। না কোথাও নেই আবু। তন্নতন্ন করে খোজ চলছে আবুর। রাত তখন আটটা প্রায়, আলম বাড়ীর আর এক কামলার হৈ চৈ এ সবাই ভেতর বাড়ীর পুকুর পাড়ে এক হল। কি ব্যাপার না আবু কে পাওয়া গেছে। পুকুর পাড়ের ঊত্তর দিকের যে নারকেল গাছ আছে সেখানে একটা ডালের ওপর আবু বেহুশ হয়ে শুয়ে আছে। নারকেল গাছটা আর না হলেও ৫০/৬০ ফুট উচু।

বাড়ীর সবাই ওখানে জমায়েত হল। খবর দেয়া হল ফরাজী মামুকে। ফরাজী মামু ছিলেন একই সাথে বাড়ীর পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমাম আর কামেল মানুষ।

ফারাজী মামু এসে প্রথমেই সবাইকে চুপ করতে, আর গাছ থেকে দূরে সরে যেতে বললেন। বাড়ীর সবাই কি এক অজানা আতঙ্কে কাপছে, সবাই গাছ ঘিরে বৃত্তটা বড় করে আনল। ফরাজী মামু শুরু করলেন বিড় বিড় করে সুরা পড়া। আর গাছের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে পুরা গাছটা বন্ধক দিয়ে ফেলল। এক মনে সুরা পড়ে যাচ্ছেন গাছ তলায় বসে। আবু নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে নারকেল গাছের ডালে।

আমরা সবাই মায়ের কোলের কাছে ঘেসে বসলাম আর মা নানুর আরো কাছ ঘেসে বসল। বাড়ীর সবাই কি এক অজানা আতঙ্কে কেপে উঠছে। আস্তে আস্তে আবু সেই নারকেল গাছের পাতার ওপর উঠে বসল। ফারাজী মামু তখনও চোখ বন্ধ করে এক মনে সুরা পড়ে যাচ্ছে।

এরপর আবু যা করল এক কথায় অকল্পনীয়। কোন এক অজানা শক্তির বলে যেন আবু পা উপরে দিয়ে মাথা নীচের দিকে দিয়ে বিড়ালের মত নামতে লাগল। কতক্ষন পর পর গলার মধ্য দিয়ে এক অজানা ঘড় ঘড় শব্দ বের হচ্ছিল।

নামার সময় শরীর টাকে সাপের মত গাছের সাথে পেচিয়ে ধরা। মাথাটা বিড়ালের মত মাঝে মাঝে ঘুড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছে। কখনো কখনো খলখল করে হেসে উঠছে। আর সহ্য করতে পারলাম না নিজের চোখ বন্ধ করে দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরলাম।

ওদিকে ফরাজী মামু এক নাগাড়ে সুরা কেরাত পড়ছিলেন। আবু নেমেই চার হাত পায়ের ফরাজী মামুর দিকে ছুটে গেল মনে হচ্ছিল কোন ব্ড়সড় বেড়াল চার হাত পায়ে ছুটে চলছে সাবলীল ভাবে।

ফরাজী মামুর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। কয় পা ছোটার পরে মনে হল আবু যেন কোন এক অদৃশ্য হাতের থাপ্পড় খেয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল।

এরপর যা হল সে আরো ভয়ংকর। এক ছুটে আবু পুকুরের মধ্যে নেমে গেল। ওই আমি প্রথম দেখলাম পানির ওপর কেঊ চার হাত পায়ে ভর দিয়ে চলতে পারে। ফরাজী মামুকে দেখলাম উঠে দাড়াচ্ছে। চেহারার মধ্যে কেমন যেন একটু দ্বিধা। এরপর জোরে জোরে দোয়া কালাম পড়তে লাগলেন আর কি যেন পানিতে ছুড়ে মারছিলেন।

মনে হলে আবু যেন আর এগোতে পারছে না, কে যেন ওকে পেছন থেকে টেনে পুকুর পাড়ের দিকে নিয়ে আসছে। অথচ ওর ইচ্ছে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ব্যাপারটা অনেকটা একটা ছাগল সামনের দিকে আগাতে চাচ্ছে কিন্তু এর পিছনের পা ধরে টেনে উল্টাদিকে নেয়া। ভেবে দেখুন এটা যদি মাটিতে হত তা হলে বিশেষ কোন ব্যাপার হতনা। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা ঘটছে পুকুরের পানির ওপর।

কিছুক্ষন পরপর আবুর গলার মধ্য থেকে ঘড়ঘড় শব্দ বের হচ্ছিল। পরিস্কার বুজা যাচ্ছে দুটো অদৃশ্য ভিন্ন শক্তির মধ্যে এক প্রচন্ড সংঘর্ষ যাচ্ছে আবু কে কেন্দ্র করে। আস্তে আস্তে আবুকে কে যেন পানির ঊপর থেকে টেনে পুকুর পাড়ে এনে ফেলল। আর আবু ফরাজী মামুর পায়ের কাছে এসে জ্ঞান হারাল।

এরপরের ঘটনা খুব সাধারন আপনাদের আর বিবরন দিয়ে বিরক্তি বাড়াব না। আবুকে সারা জীবনের জন্য গলায় ফরাজী মামুর তাবিজ পড়তে হয়েছে। আর পুরা পুকুর পাড় মামু বন্ধক দিয়ে দিল। পরে জেনেছিলাম ফরাজী মামুর বেশ কিছু ভাল পোষ জ্বীন আছে।

এটা আপানাদের আমার ভয় দেবার প্রথম প্রয়াস। ভয় পেলে আরো ভয় দেব। ( অফ টপিকঃ অনেক বছর আগে এক পত্রিকায় আমার এ রকম একটা লেখা প্রকাশ হয়েছিল, সেখান থেকে মাঝ রাতে রেডিও ভুতে এই কাহিনী পড়া হয়েছিল। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো এই কাহিনী সত্য কিনা? আমার উত্তর ছিল ………কেন যেন আর টাইপ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না)


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৫৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×