somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

ভাই

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈভান আমার ভাই। শাহবাগ থেকে আসার সময় কার্জন হলের পাশে এক রাজাকার তাকে পথ আটকালো।

‘আসসালামুওলাইকুম। আপনার নাম কি ঈভান?’ খুব শান্ত ভাবে এক বর্ষীয়ান তাকে সালাম দেয়।

‘অলাইকুমআসসালাম। আপনাকে তো চিনতে পারলাম না’ ঈভান খুব শান্ত ভাবে উত্তর দেয়। সন্ধ্যা তখন নেমে আসছে। আবছা আলো ছায়ায় কিছুটা দূরে দু একজন কে দেখা যাচ্ছে।

‘আমি জামাতের শহর কমিটির প্রচার সম্পাদক, আপনি কেন এই সবের মধ্যে আছেন? বাড়ীর ছেলে বাড়ী যান। বিভিন্ন ব্লগে আপানার লেখা আমাদের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি করছে, কেন করছেন’? খুব নির্বিকার ভাবে বলে উক্ত জামাত নেতা।

স্বাভাবিক ভাবেই ঈভান ভয় পেল। আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু মনে মনে রাগে গজরাচ্ছে। কি এত বড় সাহস এই প্রজন্ম চত্বরের পাশে কার্জন হলের গেটে আমাকে হুমকি দেয় জামাত?

‘শুনুন, আপনি মুরব্বী মানুষ আপনারা যে ভূল অতীতে করছেন সেই ভুল আর করবেন না। নিজেকে শুধরান’। ঈভান খুব আস্তে আস্তে উত্তর দেয়।

‘কি এত বড় কথা, শালা মালাউন’। বলে কোমড় থেকে বড় একখানা মাংস কাটার দাও বের করে রাজাকারটা। নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ঈভান। একাত্তরে বাবা শহীদ হয়ে ছিল। আজ এক শহীদের সন্তানকে প্রজন্ম চত্বরের পাশে হুমকি। প্রচন্ড আক্রোশে ঝাপিয়ে পড়ে ঈভান রাজাকারটার ওপরে। রাজাকারে প্রচন্ড আর্ত চিৎকারে সন্ধ্যার অন্ধকার বিদীর্ন হয়ে যায়। হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে বড় একটা ইট দিয়ে মনের সমস্ত আক্রোশ মিটিয়ে ঈভান আঘাত করে রাজাকারটাকে। গোটা পাচ আঘাত করার পর নিস্তেজ হয়ে যায় রাজাকার টা।

ঈভান যেন বাস্তবে ফিরে আসে কি করলাম। এ আমি কি করলাম। আমি একটা মানূষ মেরে ফেললাম। প্রচন্ড কাপুনি চ লে আসে ঈভানের দেহে। আস্তে আস্তে এক জন দু জন করে মানূষ জমতে থাকে। চার পাশে। কে যেন মোবাইল থকে ফোন করে পুলিশে। হাত থেকে ইট পরে যায় ঈভানের।

আমি তখন প্রজন্ম চত্বরে বসে আছি সবার সাথে। আমার কানে কানে কে যেন ফিস ফিস করে বলল ঈভান কার্জন হলের কাছে এক রাজাকার মেরে ফেলছে। পুলিশ চলে আসছে।

বাতাসের আগে আমি চলে গেলাম কার্জন হলের গেটের কাছে। ঈভান কে জড়িয়ে ধরলাম। ‘ভাই আমার কোন ভয় নাই। যা হবার তা হয়েছে। কোন ভয় নাই, ফিস ফিস করে ঈভানের কানে কানে বললাম’।

আমাকে আমার ভাই জড়িয়ে ধরল। আমি ও ওকে শক্ত করে জ়ড়িয়ে ধরলাম। বললাম ‘ শোন ভাই, তুই পুলিশের কাছে কোন অবস্থাতেই বলবিনা তুই খুন করছিস, তুই শুধু বলবি এক আধা পাগল লোক যার সামনের দুই দাত নেই, এক পা ল্যাংড়া সে হঠাৎ তুই রাজাকার বলে ওকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করছে। কি পারবি না’? আমি জড়িয় ধরি জোরে ঈভান কে।‘বল ভাই, বল শুধু এইটুকু বলবি আর কিছু না’।

পুলিশের গাড়ীর সাইরেন খুব কাছে চলে এসেছে। আমি ঈভান কে জড়িয়ে ধরে আবারো বললাম তুই পুলিশকে বলবি এক আধা পাগল লোক যার সামনের দুই দাত নেই, এক পা ল্যাংড়া সে হঠাৎ তুই রাজাকার বলে ওকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করছে, মনে রাখিস শুধু এইটুকু বলবি এর বেশি কিছু না আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি তোকে বের করে নিয়ে আসব’।

ঝট করে আমাদের সামনে পুলিশের গাড়ী থামে। আসে পাশে তখন অসংখ্য মানূষ জমে গেছে। আমি ঈভানের কানে কানে শুধু ফিস ফিস করতে থাকি তুই শুধু বলবি এক আধা পাগল লোক যার সামনের দুই দাত নেই, এক পা ল্যাংড়া সে হঠাৎ তুই রাজাকার বলে ওকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করছে, আর কিছু না। পুলিশ এসে ঈভানের হাতে কড়া পরায়। প্রায় আচ্ছন্নের মত ঈভান পুলিশের গাড়িতে ওঠে।

এই কেস টা বিরাট আলোড়ন তোলে কারন অনেক মানূষ ই আশে পাশে ছিল যখন ঈভান ঐ রাজাকার টা হত্যা করছিলো যদিও নিজ চোখে কেউ কিছু দেখেনি, কেউ কিছু শুনেনি শুধু রাজাকারটার আর্ত চিৎকার ছাড়া।

জামাত ভাবাপন্ন পত্রিকা একে বিরাট কাভারেজ দিল দেশে গৃহ যুদ্ধ লেগে গেছে এই বলে। ওরা এক বারো বললনা ওই হারামজাদা গেছিল এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কে হত্যা করতে।

যথারীতি কেস কোর্টে উঠল ঈভান আর ওর উকিল শুধু এক কথা বলছে এই হত্যা ঈভান করেনি করতে পারেনা, যে কিনা এক সামান্য চাকুরী করে। জীবনে কাউকে কোন গালিও দেয়নি হত্যা করছে এক আধা পাগল লোক যার সামনের দুই দাত নেই, এক পা ল্যাংড়া সে হঠাৎ তুই রাজাকার বলে ওকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করছে।

দিন যায় ঈভান ধীরে ধীরে আমার ওপর আর বিশ্বাস রাখতে পারছে না আমি বুজতে পারছি। রায়ের দিন ঘনিয়ে আসছে, আইন চলে আইনের গতিতে। রাজনীতিবিদদের অতীত ভুলের মাসুল টেনে আজ আর এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নিশ্চিত ফাসির দিকে এগিয়ে চলছে। রাজাকারদের ত খন ক্ষ মা আর রাজ নীতিতে পূর্নবাসন না করলে আজ এরকম হতনা

রায়ের আর বেশী দেরী নেই। মাসখানেকের মধ্যে রায় হয়ে যাবে সবাই জানে রায় কি হবে। কেউ নিজের চোখে না দেখলেও পরিবেশ পরিস্থিতি বলে কে হত্যা করেছে সবার বুজতে বাকী নেই।

এই সময় পরিস্থিতি সম্পূর্ন ভিন্ন দিকে মোড় নিল। রায়ের ঠিক এক সপ্তাহ আগে জামাতের আর এক নেতা খুন হল তার বাসার সামনে। বাসার দারোয়ান সাক্ষ্য দিল এক আধা পাগল লোক যার সামনের দুই দাত নেই, এক পা ল্যাংড়া সে হঠাৎ তুই রাজাকার বলে হঠাৎ আক্রমন করে ওই রাজাকার টাকে হত্যা করছে।

পেপারে বড় করে হেডিং হল। পরের দিন জামাতের আর এক নেতা চিহ্নিত রাজাকার খুন হল, রাস্তার এক পথচারী হলফ করে সাক্ষী দিল এক আধা পাগল লোক যার সামনের দুই দাত নেই, এক পা ল্যাংড়া সে হঠাৎ তুই রাজাকার বলে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করছে।

সমস্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আবার নড়ে চড়ে বসল। মিছিল শুরু হল ঈভানের মুক্তির জন্য। ঈভান এই হত্যা করেনি, কারন ঈভান যা বলছে তাই সত্য। কোন এক পাগল এই হত্যা করছে। চারিদিকে ফিস ফাস শুরু হল, শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা আর সহ্য করতে পারছেনা তাদের সন্তানের ওপর এই রকম অবিচার।তাই তারা প্রতিশোধ নিতে শুরু করছে। শহরে ফিসফাস কানাকানি। রাজাকাররা দেশ ছাড়তে শুরু করছে।

কিন্তু কোন ক্ষমা নেই, পরের পাচ দিন আরো ৭ জন চিহ্নিত রাজাকার খুন হল বিভিন্ন ভাবে প্রতক্ষ্যদর্শীদের এক মাত্র বর্ননা এক আধা পাগল লোক যার সামনের দুই দাত নেই, এক পা ল্যাংড়া সে হঠাৎ তুই রাজাকার বলে এদের খুন করছে।

রায় ঘোষনার দিন এসে গেল। ঈভান বেকসুর খালাস। আমি ও কে নিয়ে বাসায় আসলাম। জানলা দিয়ে আস্তে করে রক্ত মাখানো ইট আর দাতে রং করার সরঞ্জামাদি বাইরে ফেলে দিলাম। ঈভান আমার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল।

‘ভাই, তুই আমার জন্য এত গুলো খুন করলি? ঈভানের মুখ থেকে অস্ফুটে বের হল।

হ্যা ভাই, আমি তোর ভাই না, তোর জন্য দরকার হলে আমি এই বাংলা রাজাকার শূন্য করে ফেলতাম। ওদের ভাগ্য তুই ছাড়া পেয়ে গেছিস।

‘ভাই,’ ঈভান আবার অস্ফুটে বলল।

‘হ্যা ভাইতো’…………

একটা ঘোরের মধ্যে আমি এই গল্প লিখছি। আমার এক ভাই কে আজ এক রাজাকার হুমকি দিছে এটা সত্য কিন্তু কাহিনীর সাথে কোন বাস্তবতার মিল নেই। আমার পঞ্চম গল্প। এ গল্প আমি উৎসর্গ করলাম কান্ডারী অথর্ব কে যার অনুপ্রেরনা না থাকলে আমি হয়ত গল্প লিখতাম না আর যাকে কিনা এক রাজাকার হুমকি দিয়েছে


ইচ্ছামৃত্যু
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:০৩
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×