somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউইয়র্কে -৩

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কনি আইল্যান্ড
পরদিন শনিবার বিকেলে সী বীচ গেলাম, ছুটির দিন। নিউইয়র্কের এই বীচ আটলান্টিকের পাড়ে। মোটকথা আটলান্টিক মহাসাগর আল্ল¬াহতায়ালা আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশ থেকে দেখার সৌভাগ্য দিলেন । অনেকদুর হেঁটে সাগর পাড়ে যেতে হয়। রাস্তা থেকে সিড়ি দিয়ে নীচে নামার ব্যবস্থা আছে । তারপর বালুর উপর দিয়ে হেঁটে সাগর পারে, সাগর এখানে বেশ শান্ত কালচে নীল রং এর পরিস্কার পানি ,কেমন যেন অন্য রকম লাগে । সাগর পাড়ে বড় বড় বোল্ডার আছে, সেখানে ২/১ টা জুটি গভীর গল্পে মশগুল । বালুতে মেট বিছিয়ে সূর্যøান করছে কেউ কেউ। বাচ্চারা বালু দিয়ে শহর বাড়ীঘর বানাচ্ছে । লোকজন নেই তেমন। বিশাল দেশ আরো বিশাল তার এলাকা, সে তুলনায় মানুষ অনেক কম । প্রত্যেকে নিজেদের প্রাইভেসি নিয়ে আছে। কেউ কাউকে ডিসটার্ব করছে না । আমরাও সবাই মিলে মেট বিছিয়ে বসে গেলাম । বাসা থেকে খাবার দাবার ও ড্রিংকস আনা হয়েছে । সেগুলো সবাই মিলে মজা করে খেলাম । বীচ তেমন পরিস্কার মনে হলোনা । তবে আমরা আমাদের ময়লা গুলো প্যাকেট করে নিয়ে নিলাম । ব্র“কলিনের কনি আইল্যান্ডের কাছে এইটথ ষ্ট্রীট অ্যাকুরিয়াম এলাকাতে ছবি তুললাম। আটলান্টিকের পাড়ে এই জায়গাটা । আজ ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল। বাচ্চারা সাথে লাগানো পার্কের রাইড গুলোতে চড়ল । ২ ডলার পার রাইড, ছোট ভাইয়ের গাড়ীতে করে গেলাম । সন্ধ্যায় মার্কেট থেকে কিছু জিনিষ পত্র কেনা হলো । রাতে গল্প গুজব করে সময় কাটল ।

ইউএন সদর দপ্তর
নিউইয়র্কে থাকাকালীন ইউএন সদর দপ্তরে বেড়ানোর ইচ্ছা ছিল । দুপুরে খেয়ে ইউএন সদর দপ্তরে গেলাম। গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল ষ্টেশনের কাছে ইউনাইটেড নেশনস এর সদর দপ্তর । আগেই একজন পরিচিত কর্মকর্তার অ্যাপয়েনমেন্ট করা ছিল, আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। পরে ২ জন মিলে সব হলগুলো ঘুরে দেখলাম। নিরাপত্তা পরিষদ, জেনারেল এসেম্বলি, অছি পরিষদ ইত্যাদি।

নিরাপত্তা পরিষদ
ছোট বেলায় বইতে এগুলো পড়েছিলাম, আজ নিজ চোখে এগুলো দেখলাম, বেশ আনন্দ লাগল। বিশাল ভবন, অনেক চেকিং এর ব্যবস্থা । বহু ইউ এন গার্ড এর নিরাপত্তার দায়িত্বে। বাইরে ইউ এন এর সমস্ত সদস্য দেশের পতাকা উড়ছে । আমার দেশের পতাকা দেখে মনটা গর্বে ভরে উঠল । ইউএন সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন অফিসে গেলাম সেখানে কিছুক্ষণ ছিলাম। এরা বেশ কাজ করছে। বাংলাদেশর সুনাম ও ইউ এনে বাংলাদেশীদের চাকুরীর জন্য। সেখান থেকে মেট্রোতে করে ছোট ভাইয়ের অফিস। আজ বৃষ্টি ছিল । ইহুদীদের দোকান বি এন্ড এইচ থেকে ক্যামেরা কিনলাম। রাতে ল্যাপটপ আনতে নতুন জায়গাতে গেলাম । বাসায় এনে ল্যাপটপ টা চালু করলাম । এর পেছনে অনেক সময় চলে গেল।
আজ মঙ্গলবার, নিউইয়র্ক ছেড়ে যাব আজ । সকালে ঘুম থেকে দেরীতেই উঠলাম । দুপুরে আমি আগে খেয়ে নিলাম । বিকেল চারটায় পুরা ফ্যামিলি নিয়ে গাড়ীতে রওয়ানা হলাম । বিকাল পাঁচ টায় জে এফ কে এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। মালামাল জমা দিয়ে বোর্ডিং কার্ড নিলাম । এরপর টার্মিনাল-১ ঘুরে দেখলাম সবাই মিলে। ২ তলায় কফি সপ এর কাছে কাঁচ ঘেরা রুমে বসে রানওয়ে দেখছিলাম আর স্মৃতিচারণ করছিলাম । দুই ভাইয়ের এক সাথে প্রবাসে ১৪ দিন থাকার সৌভাগ্য আগে কখনো হয়নি। কত স্মৃতি কত কথা এক জীবনের। ছোটভাইয়ের দুই ছেলে খেলায় ব্যস্ত। ছোটজন কালে। ৬ টায় ইমিগ্রেশনে গেলাম । সব চেক করল । পেছনে ফিরে সবাইকে বিদায় জানালাম। সবাই দেখছে আমাকে, আস্তে আস্তে জনারন্যের বাঁকে চলে এলাম, পেছনে ছোট ভাই ও পরিবার , আর আমি ফিরে যাচ্ছি আমার কর্মস্থলে। আবিদজানে, কাসাব্ল¬াংকা হয়ে। এর মাঝে চলে গেল ১৪ টা দিন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম এ বিশাল ভূখন্ড ভ্রমনে ও অবস্থানের তৌফিক দেয়ার জন্য ও শোকর করলাম আল্ল¬াহর দেয়া রহমতের। আমেরিকা মহাদেশ দেখার সখটা পুরণ হলো এবার। বাংলাদেশী অনেক মানুষের কাছে আমেরিকাকে স্বপ্নের দেশ মনে হয় । প্রাচুর্যের আকর্ষণ আমাদের সবাইকে সেখানে টানে । চাকচিক্যের পেছনে যে কি শ্রম আছে তা নিজ চোখে না দেখলে কখনো বোঝা যায় না । মানুষ যন্ত্রের মত কাজ করছে । যা পাচ্ছে তা থেকে ট্যাক্স, প্রিমিয়াম ইত্যাদি কাটার পর সামান্যই থাকছে। আমেরিকার মানুষ যে খুব সুখী এটা ঠিক না। তবুও তো তারা আমেরিকান। এক ডলার আমাদের কাছে আশী টাকা । অসম্ভম পরিশ্রমের জীবন যাপন করে প্রবাসীরা । তবে কাজের সুযোগ থাকায় সবাই কিছু না কিছু কাজ পায়, বেকার থাকে না। তাই একবার গেলে কেউ আর দেশের বেকারত্বের কথা চিন্তা করে ফিরে আসে না । জীবন যাত্রা বেশ সাজানো তবে ফুলেও পোকা থাকে তাই এখানেও যে জীবন একদম নির্ভেজাল তা কিন্তু না। নিরাপত্তাহীনতা ,বিষাদ যে কোন সময় আসতে পারে , তার উপর কালো চামড়ার এশীয় দুর থেকেই চেনা যায়। নিউইয়র্ক শহরে অবশ্য এই ধরণের সমস্যা নেই । মোটামুটি ইমিগ্রেন্ট দিয়ে ভরা এই শহর, তবে শ্বেতাংগ প্রধান অনেক শহরে এখনো কালো বা বিদেশীরা অবাঞ্চিত । মুখে বলে না ভাবে বুঝা যায়। অনেক সাধারণ মানুষ আমেরিকায় এসে সংগ্রাম করে আজ প্রতিষ্ঠিত । আবার অনেকে জীবন সংগ্রামে কোন রকম টিকে আছে । এটাই জীবন। পৃথিবীর সব দেশেই তাই।
ইচ্ছে ছিল ইষ্টকোষ্ট থেকে ওয়েষ্টকোষ্টে গ্রে হাউন্ড বাসে করে যাব। এবারের অবস্থানে ছুটির টানাটানি ও অন্যান্য কারণে তা হলো না । তাছাড়া সবচেয়ে আকর্ষণীয় নায়াগ্রা ফলস দেখা ও কানাডা ভ্রমণ মিস করলাম। আল¬াহ যা করেন তা ভালর জন্য। নিশ্চয়ই এতে অনেক ভাল রয়েছে । প্লে¬ন সময় মত ছাড়ল । রয়েল এয়ার মরক এর বোয়িং ৭৬৭-৩০০ সুপরিসর বিমানে করে ফিরে চললাম কাসাব্ল¬াংকার উদ্দেশ্যে । ১৬ ডি আমার সিট । ৩ টা সিটই খালি । শুয়ে বসে ঘুমিয়ে সময় কাটল । বিমানে নাস্তা ও ডিনার সার্ভ করল বিমানবালা । বিদায় নিউইয়র্ক, আশা আছে ভবিষ্যতে কোনদিন উত্তর গোলার্ধের এই দেশগুলো আরো বিশদ দেখা হবে ইনশায়াল¬াহ।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×