somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চামচামাল হয়ে তাকতাক

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তাকতাকের পথে
সোলেমানিয়া শহর থেকে বের হয়ে পশ্চিমে হাইওয়ে বরাবর চলতে চলতেই রাস্তাটা সামনে গিয়ে দুভাগ হয়ে গেছে সোজা পথটা চামচামাল হয়ে কিরকুকের দিকে আর ডানের রাস্তা সোলেমানিয়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরী বাঁয়ে রেখে দোখান লেক হয়ে ইরবিল ও অন্যান্য জনপদের দিকে চলে গেছে। কুর্দিরা কিরকুককে কুর্দিস্থানের অংশ বললেও এটা গভর্নমেন্ট অব ইরাকের অংশ এবং কুর্দি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত নয়। তাই বিনা অনুমতিতে যাওয়া আসা অসম্ভব। বাগদাদ থেকে সরাসরি হাইওয়ে কিরকুক হয়ে সোলেমানিয়াতে চলে এসেছে তবে এ পথে আবার রুট পারমিট নেই, তাই ইরবিল হয়েই সোলেমানিয়াতে আসতে হয়। ডহুক প্রদেশে যাওয়ার জন্য ইরাকের মসুল শহর থেকে যেতে হয় এবং অনুমতি পাওয়া যায় যাওয়ার জন্য। কিরকুক তেল সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানকার তেল ক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিনিয়ত তেল উঠানো হচ্ছে। চামচামাল পার হলেই রাস্তায় ব্যারিকেডের পর ব্যারিকেড। কুর্দিস্থানের দিকে পিউকে পেসমারগাররা পাহারা দিচ্ছে। সামনে তাকালে নোম্যান্স ল্যান্ড এবং তা পার হলে ইরাকী বর্ডার গার্ডদের চেকপোষ্ট। কোন মানুষ বা গাড়ী বিশেষ অনুমতি ছাড়া সে পথে চলতে পারে না।
চামচামাল ছোট্ট জনপদ কিছু পাকা একতলা ও দোতলা দালান,কিছু মাটির ঘর। ছোট ছোট কিছু দোকান,মাঝারী আকারের মসজিদ এবং কয়েকটা বিদেশী সাহায্য সংস্থার অফিস। অল্প কিছু বাচ্চকাচ্চা উজ্জল লাল নীল জামাকাপড় পড়ে খেলাধুলা করছে। যুবকদেÍ দেখা যায় না। স্থানীয় দোকান গুলোতে বৃদ্ধ লোকজন বসে চা পান করছে সাথে অল্প স্বল্প গল্প। পেশমারগারদের কথা একটু না বললেই নয়। এদের সবার পরনে কুর্দি পোশাক। এই পোশাকের বৈশিষ্ট হলো ঢোলা মোটা কাপড়ের পাজামা এবং উপরের জামা একই সাথে সেলাই করা। মাথায় কুর্দি পাগড়ি পায়ে জুতা বা সেন্ডেল এবং কাঁধে ঝোলানো কালাসনিকভ এবং গুলির বেল্ট। দেখলে প্রথমে হিংস্র মনে হয় তবে কুর্দিস্থানে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে হয় যে, তাদেরকে তেমন কখনই মনে হয়নি। তবে যুদ্ধ,গুলি ছোড়াছুড়িতে তাদের সাহস আছে। মাঝে মাঝে দুদলের অন্তর্ঘাতে বেশ আহত নিহত ও হচ্ছে। এরা কুর্দিস্থানের স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত যোদ্ধা। যুবকদের চাকুরী নেই,জীবন চালানো কষ্টের তাই অনেকে পেশমারগার হিসেবে যোগ দিয়েছে, কিছু মাসোহারা পাওয়া যায় সময়ও কেটে যায়। রাস্তা ঘাটে হাট বাজারে এদের সব সময় দেখা যায়। এরা খাদ্যও অন্যান্য রশদবাহী ট্রাক চলাচল চেক পয়েন্ট নিয়ন্ত্রন করে চাঁদা তোলে এবং পিডিকে পিউ্েকর মধ্যবর্তী নিজস্ব বর্ডার পাহারা দেয়। কুর্দিস্থানে ঢুকলেই এই পোশাক পড়া মিলিশিয়া দেখা যায়।
চামচামাল থেকে উত্তরের জনপদের দিকে ঢুকলে অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখা যায়। দুদিকে পাহাড় মধ্যখানে সমতল উপত্যকা একদিকের পাহাড়ে গা ঘেষে ও উপত্যকার উপর দিয়ে রাস্তা দু পাশের গ্রামগুলোর সাথে সংযোগ রাখছে। এই রাস্তা চলতে চলতে কাসরাকান গ্রামের কাছে এসে এক অংশ তাকতাকের দিকে চলে গেলে অন্যটি দোখান লেকের দিকে গিয়ে ইরবিল সোলেমানিয়ায় মূল রাস্তায় এসে মিশেছে। চামচামাল থেকে দুপাশের মোজাইকের মত ঘন ও হালকা সবুজ উপত্যকা দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছি। উপত্যকাতে ভেড়া,ছাগল চড়ছে। বৎসরের এ সময় খাবারের কোন সমস্যা থাকে না। ডানের খাড়া পাহাড়ের ছায়া রাস্তায় এসে পড়ছে মাঝে মাঝে। এই পাহাড় পাথুরে, সবুজ কম তবে দুরের বামদিকের পাহাড়গুলোতে সবুজের ছোয়া লেগে আছে। ্িকছু গ্রাম আছে এখানে তবে তা মূল রাস্তা থেকে ভেতরে বলে যাওয়া হয়নি। গ্রামগুলোতে ১০/১২ টা বাড়ী পাথর ও মাটি দিয়ে বানানো ঘর এবং মাঝে মাঝে সিমেন্ট দিয়ে বানানো দেয়াল। খুব সাধারণ সরল জীবন। বামে তাকতাকের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই প্রথমে গোপথাপা গ্রাম পড়ে। গ্রাম গুলো মুসলিম প্রধান গ্রামে ছোট একটা মসজিদ,কিছু ছোট ছোট দোকান আছে। চা,সাধারণ বিস্কিট,সাবান এবং নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিষ দোকানে পাওয়া যায়। রাস্তা মসৃণ ছিল এক সময়। এখন মাঝে মাঝে ভাংগা, চলতে চলতে গ্রিডখাবার সাতাকালা,কোয়াসরোক কামিশা গ্রাম পার হয়ে তাকতাক এসে পৌছাই। এটা একটু বড় জনপদ এখানে পাহাড় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা নদীর উপর বড় একটা ব্রিজ আছে। এখান দিয়ে অন্য আরেকটা পথে ইরবিলের রাস্তায় যাওয়া যায় তবে এখন এটা তেমন ব্যবহার হয় না। তাকতাকের চীফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কাকা খান নাসরুদ্দিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আমরা ফেরার পথ ধরি। এখন অর্থনৈতিক মন্দা থাকায় তাদের কাজকর্ম কমে গেছে মুখে হাসি থাকলেও চোখের ভাষায় বোঝা যায় অনেক কষ্ট। কর্মক্ষম মানুষ গুলো বেকার, সব জায়গায় জাতিসংঘের সাহায্য সময় মত আসে না। মানুষের অভাব চারিদিকে। এখানেও কিছু কিছু বিদেশী এনজিও কাজ করছে তবে তাদের সাফল্য তেমন চোখে পড়ে না। ফেরার পথে আশকান গ্রামে থেমে গ্রামটা একটু ঘুরে দেখার ইচ্ছা হলো। গ্রামটা বেশ বড় দেড় দুশো পরিবার এখানে থাকে, বড় একটা মসজিদ আছে। এখানে ইউরোপিয়ান কমিউনিটি হিউমেনি টেরিয়ান অফিসের ( ইকো ) একটা ছোট্ট শাখাও আছে। গ্রামের স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়ার সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বেতন দিতে পারছে না তাই শিক্ষক নেই। একদিকে বেকারত্ব,আরেক দিকে শিক্ষার অভাব সব মিলিয়ে মানুষের দুর্দশা বলার মতো না। তারপরও এরা হাসে,খেলাধুলা করে বিদেশীদের প্রতি সদয় এবং বলে চোয়ানী ? কেমন আছেন, উত্তরে ভগ্ন মনে বলি ‘বাসি’ ভাল আছি তু চোয়ানি ? তুমি কেমন আছো উত্তর পাই ‘চাখি’, সারচাও’ ধন্যবাদ তুমি আমার চোখের মধ্যে। হাসিমাখা উত্তর। কিছু না করতে পারার অব্যক্ত বেদনা বুকে নিয়ে ফিরে আসি সোলেমানিয়াতে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×