somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইল্যান্ড হপিং

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পরদিন সকালে আকাশ মেঘলা, অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছিল । খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হোটেলের জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিলাম । নীচের সুইমিং পুলে বৃষ্টির ফোটা কখন বন্ধ হয় তা অধীর আগ্রহে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম । ভাগ্য তত ভাল ছিল না তবুও রেডি হয়ে নীচে নাস্তা খেতে এলাম । নাস্তা খেতে খেতে ভাবছিলাম যদি বৃষ্টি থেমে যায় । মুসা সময়মত চলে এলো । আবহাওয়া আরো খারাপের দিকে, বাতাসের বেগ ও বেশী । আইল্যান্ড হপিং এর বোট গতকালই ভাড়া করা হয়েছে । একটা বোট চার ঘন্টার জন্য ভাড়া করতে ৩৫০ রিংগিত লেগেছে।

সাগরের ঢেউগুলো বেশ বড় তবে মুসা অভয় দিয়ে বলল কোন সমস্যা হবে না । কে শোনে কার কথা। এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই হয়তবা বেরসিক ক্যামেরাম্যান আমাদের পরিবারের আলাদা আলাদা ভাবে ছবি তুলে নিল ।

যাক অবশেষে বোটে উঠলাম । হালকা বৃষ্টি বাতাস এবং সাগরের ঢেউ। বোটের ভ্রমনকারী আমরা চারজন । বোটম্যান ইব্রাহিম এই দ্বীপের ছেলে । বেশ সুঠাম, বলল কোন সমস্যা নেই । তবে আমাদের ভাবগতিক দেখে বলল ঠিক আছে একটা দ্বীপ দেখে এসো । বাকী না হই নাই দেখলে ।

অবশেষে রওয়ানা হলাম । গাইড আমাদের ভাবগতিক দেখে বলল, ঠিক আছে একটা দ্বীপে আগে চল, পরে ভাল লাগলে অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখা হবে । এই প্যাকেজে চারঘন্টায় তিনটা দ্বীপ দেখা এবং সাগরের পাড়ে ঈগল পাখিদের সিকার বা ঈগল ফিডিং দেখার ব্যবস্থা রয়েছে । স্পীডবোর্ট ঢেউ এর বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছে । হালকা বৃষ্টি, বড় ঢেউ এবং স্পিড বোর্টের ছিটকে আসা পানিতে সবাই বিরক্ত ও আতংকিত । আমি কেন তাদের এই ভ্রমনে আনলাম এই নিয়ে আমাকে দোষারোপ চলছে । কিছুদুর চলতে বৃষ্টি থেমে গেল, সূর্যের মুখ দেখলাম । আহ কি শান্তি । ঢেউ না কমলেও এখন একটু হাসি দেখছি সবার মুখে ।



প্রথমে প্রেগন্যাট মেইডেন দ্বীপে এলাম । এটাকে দেখে মনে হয় একজন প্রেগনেট মহিলা শুয়ে আছে । বহু পর্যটক স্পিডবোর্টে করে আমাদের কাছে দিয়ে যাওয়া আসা করছে । বৃষ্টি ঢেউ তাদের কাছে কোন ব্যাপারই না । আসার পথে অনেক খাড়া ছোট ছোট পাযুরে দ্বীপ দেখলাম । দ্বীপ গুলোর গা মাঝে মাঝে সবুজে ছাওয়া কখনো পাথর বেরিয়ে এসেছে । নীচে মাঝে মাঝে এক চিলতে বিচ কখনো গুহা ও দেখা যায় । আধাঘন্টা বোট রাইড শেষে দ্বীপের জেটিতে এসে বোট লাগল । আমাদের আগে বহু লোকজন এখানে এসে গেছে, কারও যাবার প্রস্ততি চলছে । অনেক লম্বা সিমেন্টের ঢালাই করা জেটি পেরিয়ে মূল দ্বীপে যেতে হয় ।

এই দ্বীপের আশ্চর্য দিক হলো এটার মাঝখানে একটা বিশাল গভীর মিষ্টি পানির লেক আছে । সাগরের লোনা পানি এবং এই লেকের মাঝে দ্বীপের পাতলা পাযুরে দেয়ালই একমাত্র বাধা । অপূর্ব সৃষ্টির এই নিদর্শন । জেটি শেষ হতেই একটু বিশ্রামের জায়গা এবং ওয়াকওয়ে । দ্বীপের বানরগুলো একদিকে ঘোরাঘুরি করে । একটু এগিয়ে গেলে পাথরের সিড়ি । ধাপে ধাপে উপরে উঠে গেছে, মাঝে মাঝে বসার জন্য সেড বানানো আছে । তার পাশে টয়লেট । পয়সার বিনিময়ে টয়লেট ব্যবহারের সুব্যবস্থা আছে । বেশ কিছুক্ষন চলার পর নীচের দিকে নামতে থাকলাম ।


সামনেই বিশাল লেক । গভীর সবুজ পানি, সতর্কবানী লিখা অনেক সাইন বোর্ড । সাঁতার না জানলে যেন পানির কাছে কেউ না আসে এ ব্যাপারে কড়া সতর্কতা রয়েছে । লেকের পানিতে ভাসমান পাটাতন দিয়ে জেটির মত বানানো । অজস্ত্র পর্যটক, কেউ বসে পানিতে পা ডুবিয়ে গল্প করছে, কেউ কৃত্রিমভাবে এই পাটাতনের মাঝে বানানো পুলে বাচ্চাসহ খেলছে । কেউবা বোট চালাচ্ছে । এখানে দুটো শপে ড্রাইভিং গিয়ার । সুইমিং জ্যাকেট, লাইফ জ্যাকেট এবং প্যাডেল বোট ভাড়া পাওয়া যায় । সোলার চার্জার সহ বোটও অনেক আছে । ঘন্টায় ৩০ থেকে ৫০ রিংগিত ভাড়ায় লেকটার আরো গভীরে দুজন মিলে ঘুরে আসা যায় । ঘন্টা খানেক সময় এরই মধ্যে কেটে গেল । সূর্যের আলোর তেজ বেশ এবং বদ্ধ এলাকা বলে এখানে অনেক গরম ।

এবার ফেরার পালা আবার উঠছি সিড়ি বেয়ে । তারপর পাহাড়ের ওপারে যাওয়ার জন্য আবার নামছি । এরমাঝে হঠাৎ মেঘ ডেকে বৃষ্টি শুরু হলো । কি প্রচন্ড বৃষ্টি সাথে বজ্রপাত । সবার মুখ সাদা হয়ে গেলো আরেকবার । এতক্ষণ যে মজা পাচ্ছিল তা নিমেষে হাওয়া । ফেরত যাত্রার দুর্ভাবনায় সবাই অস্থির । বিশ্রাম এলাকায় বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য ঢুকে পড়লাম । কাপড় চোপড় কিছুটা ভিজে গেছে ।

৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×