somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গেন্তিং-১

০৯ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকাল বেলায় উঠেই গেন্তিং যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম । ড্রাইভার মোহাম্মদ ৯ টার মধ্যেই হোটেলের সামনে চলে এসেছে । আমাদেরই একটু দেরী হলো । নাস্তা খেতে বাইরে গিয়েছিলাম । ফিরে এসেই গাড়ীতে বসলাম । এই নিয়ে আমার দ্বিতীয়বার গেন্তিং যাওয়া । তবে এবার বাচ্চাদের মজাটাই দেখব বলে এই বেড়ানো।
সকালবেলা, তাই রাস্তায় তেমন জ্যাম নেই, ঈদুল ফিতরের পর ছুটির আমেজ এখনো রয়েছে । সবাই একটু আয়েস করেই আনন্দ ফুর্তি করছে । কিছুক্ষন চলার পর মেইন হাইওয়ে থেকে গেন্তিং যাওয়ার রাস্তায় চলে এলাম । পথে টোল প্লাজা আছে। সব টোল বক্সে একজন মহিলা/মেয়ে নিশ্চিন্তে তার এই দায়িত্ব পালন করছে । মোহাম্মদ জানালো মেয়ে বলে কোন রকম সমস্যাই হয় না এত দূরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে । উন্নয়নের পথে মালেশিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে । রাস্তাটা একটু পাহাড়ী গাড়ী নিজ গতিতে চলছে । মোহাম্মদের ড্রাইভিং স্ফিল বেশ উন্নত । বাচ্চারা রাস্তায় দুদিকের দৃশ্য দেখে দেখে যাচ্ছে । ঘন্টদেড়/দুই লাগে ক্যাবল কার ষ্টেশনে যেতে । কে এল থেকে বাসে করেও গেন্তিং যাওয়া যায় । বেশ উন্নত এসি বাস সার্ভিস রয়েছে । অনেক পর্যটক বাসে করে যাচ্ছে । পথে অনেক পর্যটক দেখলাম যারা এই দশটার মধ্যেই গেন্তিং ছেড়ে কে এল কিংবা অন্য গন্তব্যের দিকে চলছে ।

গেন্তিং হাইল্যান্ড রিসোর্টটা প্রায় ৬১০০ ফুট উচু পাহাড়ের চূড়ায় তৈরী হয়েছে। এই পাহাড় চূড়া তিতি ওয়াং সা পর্বতমালায় অবস্থিত । এই পর্বতমালা মালেশিয়ার পাহাং এবং সেলাংগর প্রদেশের মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত । প্রায় ১৫০০০ একর পাহাড়ী এলাকা নিয়ে এই পর্যটনের রিসোর্ট তৈরী করা হয়েছে । ১৯৬৫ সালের দিকে এই বিনোদন রিসোর্টটির প্রতিষ্ঠাতা লিম গোহ তং এটা তৈরীর পরিকল্পনা নেয় এবং ১৯৬১ সালে মালেয়শিয়ার প্রধান মন্ত্রী টেংকু আব্দুর রহমান এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ১৯৭১ সালে গেন্তিং হাইল্যান্ডের প্রথম হোটেল নির্মাণ শেষ হয় । মালেশিয়ার তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী প্রাইভেট সেকটরের অর্থায়নে এত বিশাল কর্মকান্ড দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন । উল্লেখ্য যে এতে কোন সরকারী আর্থিক সহায়তা নেয়া হয়নি । এই রিসোর্ট মালেশিয়ার মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থার পাশাপাশি অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে জেনে তিনি আরো আশাবাদী হয়ে উঠেন।

১৯৯৭ সালে প্রায় ৩.৩৮ কিলোমিটার দুরত্বের গেন্তিং স্কাইওয়ে নিমিত হয় । এটা দিয়ে ক্যাবল কারে করে রিসোর্টে যাওয়া সহজ হয়। গেন্তিং হাইল্যান্ডে এখন প্রায় ৫টি হোটেল আছে এবং এসব হোটেলে ৬ হাজারের উপর রুম আছে। গেন্তিং থিম পার্কে প্রায় ২০ টার মত আকর্ষনীয় আইটেম আছে । গেন্তিং এর ৩টা থিম পার্ক হলো আউটডোর থিম পার্ক, ফাষ্ট ওয়াল্ড ইনডোর থিম পার্ক এবং ওয়াটার পার্ক। যথা সময়ে ক্যাবল ক্যার ষ্টেশনে চলে এলাম । প্রায় সবাই প্রথমে ফাষ্ট ওয়াল্ড ইনডোর থিম পার্কে যায় তার পর অন্যান্য জায়গাগুলো ঘুরে দেখে ।

যথাসময়ে কেবল কার ষ্টেশনে চলে এলাম । অনেক সুন্দর ব্যবস্থা হয়েছে এখন । লাইনে দাড়িয়ে সবার জন্য টিকেট কেনা হলো । এর পর ল্যাডিং ষ্টেশনে যাওয়ার জন্য কিউ এর ব্যবস্থা । মোটা এসএস পাইপ লাইন দিয়ে বিশাল ঘরের মধ্যে জটিল পাজেলের মত কিউ । সারা ঘর মানুষে ভর্তি একজনের পেছনে আরেক জন । এই কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের সুভ্যেনিরের ও খাবারের দোকান রয়েছে । বেচাকেনা ও চলছে দেদার । লাভ জনক বানিজ্য চলছে পুরো এলাকা জুড়ে।

প্রায় চল্লিশ মিনিট একটু একটু করে আমরা এগিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কেবল কারের দেখা মিলল। টিকেট চেক করে একটা কারে উঠলাম। আবহাওয়া একটু মেঘলা, হালকা বৃষ্টি ও আছে । যাত্রা শুরু হলো উপরের দিকে গেন্তিং এর পাহাড়ী পথে । এক দিক থেকে কারগুলো আসছে আর আমরা উপরে যাচ্ছি । বাচ্চারা ভয় ও রোমাঞ্চ মিলিয়ে বেশ আমোদেই আছে । মেঘের রাজ্যে চলে এলাম । মেঘ আমাদের কারের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। বাতাস ও আছে বেশ । নীচে গভীর পাহাড়ী খাদ । একবার পড়ে গেলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে রেহাই নেই । রক্ষনাবেক্ষনের ভাল ব্যবস্থা আছে। মাঝে মাঝে টাওয়ার গুলো বেশ বিপদজনক কোনে পাহাড়ের গায়ে লাগানো । শেষ দিকে বেশ খাড়া ভাবেই কার উপরে উঠে যায় । অবশেষে কেবল কারে করে গেন্তিং পৌছে গেলাম । এখানে এলাহি কারবার । মানুষকে চুম্বকের মতো টেনে এনে নানা রকম চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ, গেন্তিং হাইল্যান্ডের ইতিহাস নিয়ে একটা মিউজিয়াম আছে । এখানে এই স্থাপনার শুরু হতে সব পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বানানোর নানা ছবির মডেল এবং এর প্রতিষ্ঠাতার সফল জীবন কাহিনী দর্শকদের জন্য মনোমুগ্ধকর ভাবে উপস্থাপিত । গেন্তিং হাইল্যান্ডের আনাচে কানাচে একদিনে ঘোরা কোনো মতেই সম্ভব নয় । তাই এক দিনে এই মিউজিয়ামে এসে এর বিশালতা ও এর পেছনের সাফল্য দেখা যায় ।

লিম গোহ তং - একজন চীনা বংশদভুত মালেশিয়ান এর প্রতিষ্টাতা । ছোট বেলায় চীনের মূল ভুখন্ড থেকে নৌকা যোগে প্রচন্ড বিপদ আপদ অগ্রাহ্য করে মালয় ভুখন্ডে এসে নানা ঘাত প্রতিঘাত ও ব্যবসায়ী বুদ্ধির জোরে প্রতিষ্টিত হয়ে পর্যটকদের জন্য এই রিসোর্ট স্থাপন করে ছিলেন । তার জীবনি গ্রন্থ এখানে বিক্রির ব্যবস্থা আছে । ৩২ রিংগিতের মত দাম । সেখান থেকে বের হয়ে একটু খোলা আকাশ দেখার ইচ্ছা হলো । বাইরে বেরিয়ে মেঘলা আকাশ, রাস্তা ঘাট ও হোটেল দেখলাম । জমজমাট কর্মকান্ড । কার, বাস, মানুষ চলছে তো চলছে । দিন, রাত, ঝড়, বৃষ্টি ও রোদ কোন কিছুই মানুষের জন্য বাধা নয় । আনন্দ আস্বাদনই সবার মনের আকুতি ।



অপূর্ব সুন্দর করে রিসোর্টকে সাজানো । অত্যাধুনিক মূল্যবান এবং সু-রুচির পরিচয় প্রতিটি বাঁকে এবং সব এলাকায় কফি সফ, ফাষ্টফুড স্টোর রয়েছে । অত্যাধুনিক ফোয়ারা দেখে মনে হয় দেয়াল চুইয়ে পানি পড়ছে । এছাড়াও নানাবিধ বিনোদনের ও ছবি তোলার স্পটতো রয়েছেই । দৃষ্টি নন্দন এবং সব বয়সের মানুষকে বিনোদনের ব্যবস্থা সর্বত্র । একসেলেটরে করে উপরের ক্যাসিনোতে গেলাম । ১৯৯৭ সালে বেড়ানোর সময় ভেতর গিরে স্লট মেশিনে খেলেছি কিছুক্ষন। এবার দেখলাম ক্যাসিনো এলাকায় প্রচন্ড নিরাপত্তা ব্যবস্থা, চারি দিকে সিসি ক্যামেরা তো আছেই গেইটে ইউনিফর্ম পড়া পাহারা দার, বডি চেক করে ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা ।

২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×