somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুজুম্বুরা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিনপর আজ আবার প্রিয় ব্লগে অল্প কিছু লিখলাম। কি এক অজানা কারনে বেশ কয়েক মাস লগ ইন করতে পারছিলাম না। এই লিখার পর এখন বুরুন্ডি কিছুটা শান্ত হয়েছে তবে রুয়ান্ডার মত উন্নয়নের জোয়ার আসতে সে দেশে অনেক সময় নেবে।


বুরুন্ডির আকাশে শেষ বিকেলের সূর্য ডুবি ডুবি করছে।এই সময়টাতে লেক টাংগানিকার উপর দিয়ে বয়ে আসা হালকা শীতল বাতাস ছুটির দিনের সময় কাটানোতে ব্যাস্ত মানুষগুলোর মাঝে কিছুটা সুখের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। রাজধানী শহর বুজুম্বুরার ক্লাবগুলোতে এই সন্ধালগ্নে মিউজিকের তালে তালে ক্লাবের আঙ্গিনায় বসা যুবক যুবতীদের মনে আনন্দের হিন্দোল নিয়ে এসেছে। হালকা বিয়ার পানের পর তাদের চিত্ত উৎফুল্ল, একটু হাসি তামাশা হয়ত তাদের জমে থাকা অনেক দুঃখকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। এই সন্ধ্যা তারা সবাই মিলে খুশীতে কাটাবে, তারপর আবার পরের সপ্তাহের কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করে নেবে।

একটু বিত্তশালীরা লেক টাংগানিকার পাড়ের রিসোর্ট গুলোতে ভিড় করছে। সেখানকার পুল সাইড পার্টিগুলো মিউজিকের সাথে তাল মেলানো নাচের আসরে বেশ জমজমাট। লেকের পাশে বীচে বসেও সময় কাটাচ্ছে কেউ কেউ। সেই সাথে শেষ বিকেলের আলোতে লেকের মিষ্টি পানিতে জলকেলিও করছে অনেকে। সেখানে বিদেশীদের প্রাধান্য একটু বেশি হলেও এদেশি ধনীরাও আছে এখানে। মিষ্টি পানির এই লেক আফ্রিকার অনেকগুলো দেশের সীমানা ছুঁয়ে আনন্দের পরশ নিয়ে ছড়িয়ে আছে।

জুন ২০১৪ সালে বেশ লম্বা সফরে উগান্ডা থেকে কঙ্গো হয়ে রুয়ান্ডার ভেতর দিয়ে বুরুন্ডির রাজধানী বুজুম্বুরাতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকার দুটো লেক, লেক কিভু আর লেক টাঙ্গানিকা দেখা।সে সময় দেশের উন্নয়নের জন্য কাজকর্ম চলছিল দেখেছিলাম। মানুষগুলো অনেকদিন যুদ্ধ করে সেই বিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে একটু স্থির হচ্ছিল। নির্বাচিত সরকার দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রেখে অগ্রগতির পথে দেশকে চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল। বুরুন্ডিতে বিদ্রোহের খবরে তাই মনটা একটু খারাপ লেগেছিল। দেশটা কি আবার ঝামেলাতে জড়িয়ে গিয়ে পেছনে পড়ে যাবে।



দক্ষিণ পূর্ব আফ্রিকার একটা দরিদ্র দেশ বুরুন্ডি। পাশের দেশ রুয়ান্ডা দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে এখন শান্তির সুবাতাসে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এই দুটো দেশ দেখলেই বোঝা যায় আফ্রিকার ইউরোপীয় ধাঁচে উন্নয়ন আর সেই পুরানো অবহেলিত আফ্রিকার জনপদ। ১৪ মে ২০১৫ তে বুরুন্ডিতে আবারও দেশের নিয়ন্ত্রন নিয়ে সমস্যা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এনকুরুনজিজা তখন তাঞ্জানিয়াতে আফ্রিকান নেতাদের সাথে বৈঠক করছিলেন। সেনাপ্রধান প্রাইম নিয়োনগাবো তাঁর সাথেই ছিলেন। তবে সুখের কথা বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে এবং নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আছে।বুরুন্ডিতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে সহিংসতা শুরু হয়। এই সহিংসতায় ২০ জনের বেশি নাগরিক নিহত হয়। এই অশান্ত পরিস্থিতিতে দেশের হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পিয়ের এনকুরুনজিজা রাজধানী বুজুম্বুরায় ফিরে এসেছেন। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন দলের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই চলার পর অভ্যুত্থানকারীরা পরাজয় স্বীকার করে।
২০০৫ সালে বুরুন্ডিতে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। সে সময় থেকে প্রেসিডেন্ট এনকুরুনজিজার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। দেশের সেনাবাহিনী সংখ্যা লঘু সম্প্রদায় টুটসিদের নিয়ন্ত্রনে ছিল । সেনাবাহিনী সংখ্যাগুরু হুতুদের বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর সাথে লড়াই করে। গৃহযুদ্ধের শেষে নানামুখী সংস্কার চলছিল তবে ভেতরে ভেতরে কিছু সমস্যা রয়েই গিয়েছিল। আফ্রিকান ইউনিয়ন এই অভ্যুত্থান চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপারসন এনকোসাজানা দেশটিতে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঞ্জানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানার্ড মেম্বে বলেছেন, আফ্রিকা চায় না অস্ত্রের মুখে কেউ ক্ষমতা দখল করুক। লেক টাংগানিকার পাড়ের এই দেশে আরও অনেক পর্যটক আসুক, মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হউক এবং শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক এটাই চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×