সম্পর্ক- ১
সম্পর্ক নিয়ে তত্ত্বীয় অনেক কিছু বলে ফেলেছি। তত্ত্বীয় বিষয়গুলো থেকে মানুষের মনোযোগ এখন আর নেই। কিন্তু কোন কিছুর শুরুতে ভুমিকা লিখতে গেলে তত্ত্বীয় বিষয়কে তুলে আনতে হয়। এটা এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা। সম্পর্কের গহিনে প্রবেশ করতে আগে বাবার প্রসঙ্গ তুলে আনতে চাই। এই ভদ্র লোকটার সাথে আমার এতটাই দূরত্ব ছিল যে কখনও অনুধাবন করতে পারি নি তার সাথে আমার সম্পর্কের ধরন। আমার জন্ম ক্ষণেই তার সাথে যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেটা অনুধাবন করতে তাকে জীবনটাই দিতে হয়েছে। লোক মুখে শুনেছি আমার জন্মের খবর তাকে এতটাই উদ্বেলিত করেছিল যে গনহারে সে মিষ্টি বিতরণ করেছিল। বাসার জন্য নতুন নতুন আসবাবপত্র কিনে এনে নতুন করে ঘর সাজিয়েছিল। যখন বড় হলাম তার সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হল। অনুভব করলাম বাবার প্রতি আমার মনে কোন ভালবাসা নেই। আছে অনেক ভয়। ভয়ের ধরনটা কেমন আমি জানি না। বাবা কোনদিন এই ভয় ভেঙ্গে দেয় নি। কখনও তার কাছে ঘেষতে দেয় নি। আমার প্রতি তার ভালবাসার প্রকাশ কোন দিন দেখে নি। আমি যখন গিটার চর্চা করি সে সময়েও তার উপস্থিতি টের পেয়ে খাটের নিচে গিটার লুকিয়ে রাখতাম। ব্যাপারটা এমন ছিল না যে সে অপছন্দ করে, কিংবা সে অনেক মেজাজি ছিলেন। আসলে সম্পর্কের ভেতর দূরত্ব ছিল বলেই কখনও নিরাপদ বোধ করতাম না। বাবার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল তার জীবনের শেষ ৩ বছরে। তাকে প্রতি দিন সন্ধ্যায় গিটার বাজিয়ে গান শুনাতাম। আমার গান শুনে তার চোখ জোড়া ভিজে যেত। হয়ত আফসোস হত এই ভেবে যে এমন সম্পর্কটা চাইলেও দীর্ঘায়িত করা সম্ভব ছিল না। বাবার মৃত্যু শয্যায় তার বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া পা ধরে থেকে হয়তো ক্ষমা চেয়েছি তাকে ভালবেসেছি তার জীবনের শেষ কটা বছর। আজ সে নেই কিন্তু আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি যার বীজ বপন তিনি করে দিয়েছেন। সম্পর্কের অদ্ভুত টানে তাকে প্রতিনিয়ত খুঁজে যায় মন। সম্পর্কটা গড়ে উঠতে গিয়েও ভেঙ্গে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



