somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা সময় ছিল যখন নাকি আমাদের গ্রামবাসীরা ওপার থেকে বিএসএফ তুলে আনতেন !!!

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনাটা শোনা একজন বড় ভাইয়ের কাছ থেকে … বেশ আগে। তখন বোধহয় ‘পতাকা বৈঠক’ নামক শব্দটা আমাদের তথা বাংলাদেশি সীমান্ত রক্ষীদের তরফ থেকে একপেশে ছিলনা, বিএসএফরা তাদের ক্যাম্পে হঠাৎ হঠাৎ নিজেদের কিছু সদস্য খুজে না পেয়ে (!!!!) হন্তদন্ত হয়ে পতাকা বৈঠকের আয়োজন করত। বিডিআর সদদ্যদের বাঘের মত ভয় পেত ওরা । তার অনেক পরের কথা, ফেলানি তখন ঝুলছিল কাটাতারে, সোচ্চার ছিল সারা বাংলাদেশ। যাই হোক, হোস্টেলের বারান্দায় বসে যখন সেই ঘৃণা ও ক্ষোভ যখন আমরা ঝাড়ছিলাম নিজেদের মধ্যে তখন কথা প্রসংগে ভাইয়া এই গল্পটা বলে।

ভাইয়ার বাসা ছিল বাংলাদেশের কোন একটা অঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটা গ্রামে। তিনি খুব কাছ থেকেই দেখেছিলেন এই সব। আগে নাকি বিএসএফরা আমাদের দেশের সীমান্তরক্ষীদের অনেক সমীহ করে চলতেন। একবার একটা ঘটনা ঘটেছিল যে প্রসংগে এটি লিখতে বসা … কিছু গ্রাম বাসী খেয়াল করলেন যে তাদের কিছু গবাদিপশু নাকি চুরি হয়ে গেছে। সকালে মাঠে চরতে বেরিয়েছিল, পরে বাড়ি ফেরেনি। তারা সম্ভব্য খোজাখুজি সেরে ফেলে, কিন্তু তাদের গবাদিপশু গুলো তারা পায়নি। পরে তারা নাকি বুঝতে পারে যে তাদের পশুগুলোকে ওপারের বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে … ওগুলো হয়ত ঘাস খেতে খেতে কাটাতারের দিকে চলে গেছিল, আর ওরা ঐ সুযোগে কর্ম কাবাড় করেছিল। তাছাড়াও বিএসএফের এরকম মার্কামারা কাজ হয়ত তারা আগেও এক্সপেরিয়েন্স করেছিল। যাই হোক, পরে তারা খোজ নিয়ে জানলেন ঘটনা সত্যি !!! তারা পিকনিকের জন্য নাকি কিছু গবাদি পশু এদিক থেকে তুলে নিয়েছে।

আজকের দিনে এর বিচার আশাই করা যায়না। মানুষ হত্যারই বিচার হয়না, সেখানে গবাদি পশু চুরি। কিন্তু সেদিন কি করেছিল ঐ গ্রামবাসী জানেন ?? ওরা একটা প্লান করেছিল। ওদের কিছু জন রাতের অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে, আর বিএসএফ যখন পাহারা দিতে দিতে সুবিধামত জায়গায় আসবে, তাদেরকে টেনে এদিকে নিয়ে আসবে। প্লান অনুযায়ী কাজ হল, রাতে দুজন বিএসএফ পাহারায় হেটে বেড়াচ্ছিল তখন লুকিয়ে থাকা ঐ গ্রামবাসীরা ওদের কে পাকড়াও করে। অস্ত্র, টর্চ কেড়ে নিয়ে পিডাইতে পিডাইতে গ্রামের ভিতরে নিয়ে আসে। কথা প্রসংগে বলে রাখা ভালো যে, তখন নাকি বিএসএফ দের টর্চটার খুব কদর ছিল গ্রাম বাসীর কাছে। কারন সেগুলোতে প্রচুর আলো দিত, আর সেগুলো একদম ইম্পোর্টেড। পরে ঐ বিএসএফ দের মুখ থেকে স্বীকারক্তি নিয়ে, তাদের টর্চ বাজেয়াপ্ত করে বেধে রাখে গ্রামবাসী।

পরে বিএসএফের কর্তাবাবুরা খেয়াল করল যে তাদের দুটো ব্যাটারি নিখোজ। তারাও পতাকা বৈঠক করল, কিন্তু এটা শুনে নাকি বিডিআরের কর্তাবাবুরা আকাশ থেকে পড়েছিল। কারন তারা তো কাউকে আটক করেনি … আর গ্রামবাসীর ঘটনাটিও তারা জানত না। পরে যখন গ্রামবাসী এটা জানালো তখন তারা এটাও দাবী করল যে ঐ গবাদিপশুর বিনিময়ে তারা বিএসএফ সদস্যদের ফেরত দিবে !!!!!!!!!

সেদিন নাকি গবাদিপশুর বিনিময়েই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঐ বিএসএফের সদস্যদের। কিন্তু আজ কি হচ্ছে ? নির্মিচারে মানুষ মারছে ওরা সীমান্তে, ঠুনকো ঠুনকো কারনে ওরা গুলি চালাচ্ছে। মানুষ মারছে … কাটা তারে ঝুলিয়ে রাখছে, লাঠি দিয়ে জ্যান্ত মানুষ পিটিয়ে মারছে … কখনো কখনো সে লাশ পাচ সাতদিন পরে গ্রাম বাসীরা উদ্ধার করছে নর্দমা থেকে । আমি নিজেও সীমান্তবর্তী জেলার ছেলে, বিএসএফদের ছোট ছোট অনেক অকথ্য নির্যাতনের চিত্র স্থানীয় পত্রিকাগুলো আসে, সেগুলো হয়ত জাতীয় পত্রিকা পর্যন্ত পৌছায়না। কেন ??? ওদের এই সাহসটা কে দিয়েছে ?? কিন্তু আগে এমনটা ছিল না জানেন। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল, কুড়িগ্রামের রৌমারীর বড়াইবাড়ি সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের আগ্রাসন ও অনাধিকার প্রবেশ রুখে দিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে আমাদের তৎকালীন বিডিআর সদস্যরা। সেদিন ১৬ জন বিএসএফের প্রান কেড়ে নিয়ে তাদের আগ্রাসনের দাত ভাংগা জবাব দেয় আমাদের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীরা। যদিও আমাদের ৩ জন জওয়ান শহীদ হয়েছিলেন সেই ঘটনাস্থলে।

কিন্তু আজ আমাদের সীমান্ত রক্ষীরা কিভাবে সহ্য করছেন যখন তাদের দেশের নাগরিকদের কাটাতারে ঝুলতে দেখেন ? যে জওয়ানদের দেখে বিএসএফরা বাঘের মত ভয় পেত কোথায় গেল তাদের হুংকার ? হ্যা … মানি পাশ্ববর্তী দেশ শক্তিধর হতে কিছুটা ঝুকি পোহাতেই হয় … কিন্তু তাই বলে এত ?? সে সৌজন্য টুকু রক্ষা করতে কত রক্ত লাগে ? নির্বিচারে মেরে ফেলা হবে আমার দেশের মানুষ আর আমাদের সীমান্ত রক্ষীরা পতাকা বৈঠক করে লাশ নিয়ে চলে আসবে ? হ্যা … রাজনীতি আছে …মানি। কিন্তু দেশ, দেশের মানুষ, দেশের সার্বভৌমত্ত্ব রাজনীতির অনেক অনেক অনেক উদ্ধে। মাঝে মাঝে কিচ্ছু বুঝতে ইচ্ছে হয়না … শুধু ইচ্ছে হয় যদি ঐ সাহসী গ্রামবাসীদের মত ওপার থেকে কয়েকটা তুলে আনতে পারতাম … … …
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৬
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×