somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ ব্যাকস্টেজ (ভ্যালেন্টাইন্স ডে স্পেশাল :D )

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬। নীরা – সাইফের বিয়ের দুই বছর পূর্ণ হলো, লাভ ম্যারেজ। নীরা শিল্পকলা একাডেমির একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ত্বরত…সাইফ বর্তমানে পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ওদের প্রেমের শুরুটা হয় বেশ অদ্ভুত ভাবেই … স্কুল্, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবই আলাদা ছিল ওদের। কিন্তু একটা ব্যাপার ওদের ভিতরে কমন ছিল , সেটা ‘মিউজিক’। নীরা খুব ভালো রবীন্দ্রসংগীত করত, ছোট থেকেই শিল্পকলায় অনেক নামডাক ছিল রবীন্দ্র সংগীতের জন্য ওর। শোকেজ ভর্তি পুরষ্কার । কিন্তু সাইফ গানের মানুষ হলেও তার ধারাটা ছিল একদম ব্যাতিক্রম। সে মূলত একজন গিটারিস্ট এবং ভোকালিস্ট … তার নিজের একটি রক ব্যান্ডও আছে। নাম Innominate । নীরা সাইফের পরিচয় একটা মঞ্চ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে “ব্যাকস্টেজ”।

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে একটা ফাংশানে সাইফ এসেছিল ওর ব্যান্ড নিয়ে পারফর্ম করতে, ঐ একই মঞ্চে নীরারও পারফর্ম ছিল। ব্যাকস্টেজে নীরাকে প্রথম সাইফই আবিষ্কার করে, হলুদ শাড়ীতে একটা দুধের মত সাদা মেয়ে হাত গুনছে আর পায়চারি করছে। হেসে ফেলল সাইফ, বোকার মত প্রশ্ন করে বসলঃ
- কি ?? খুব টেনশানে আছেন ? স্টেজে কি প্রথমবার ?
- উহু… তা হবে কেন ? আমি আমার গান নিয়ে মোটেও চিন্তিত না। আমি অডিয়েন্স নিয়ে চিন্তিত। সবাই রবীন্দ্রসংগীত শোনার মত মন মানুষিকতা নিয়ে এসব প্রোগ্রামে আসেও না। তারা কিভাবে এপ্রিসিয়েট করবে এটা নিয়েই নার্ভাস আছি। এখন তো কত সস্তা গানের জেনারেশান এসেছে… রক, মেটাল কি সব হাবিজাবি। আচ্ছ আপ্নিই বলেন রবীঠাকুরের মত কেউ কি দ্বিতীয়বার আসবে ? আমিতো মনে করি যারা নিজেদের মন মত মিউজিক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে তাদেরকে মিউজিক করতে দেওয়াই উচিৎ না। আপনাকে তো বেশ সমঝদার মনে হচ্ছে… আপনি কি বলেন ?
- (খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে) আমি কি বলব … আপ্নিই তো বলে দিলেন।
- ইশ … এসব চিন্তায় আপনার পরিচয়টা জানতেই ভুলে গিয়েছি। আপনি ব্যাকস্টেজে ?? কোন কাজে ?
- (গলাটা পরিষ্কার করে) জ্বি … আমিই সেই অধম রক মিউজিশিয়ানদের একজন যাদের নিয়ে আপনি এতক্ষন গালমন্দ করলেন। আপনার পারফর্ম শেষ হলেই আমি আমার ব্যান্ড নিয়ে উঠব … অনেকক্ষন পায়চারী করতে দেখলাম আপনাকে, তাই মনে হল কিছু কথা বলে আসি।
- (আমতা আমতা করে) না … মানে … আমি … মানে … তা বলিনি যে আপ্নারা যারা রক মিউজিক করেন তারা খারাপ, আমি বোঝাতে চেয়েছি জাস্ট …
- (খানিকটা ধমকের সুরে)শুনুন, বাকিটুকু আমি বলি। আমরা যারা রক কিংবা মেটার মিউজিকের সাথে জড়িত, তারা যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা করি না এটা আপনার ভুল ধারনা। আমরা সব মিউজিক সব মিউজিশিয়ানদেরকেই শ্রদ্ধা করি। হ্যা … মানছি আমরা মিউজিক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি, তবে সেটা মিউজিককে এনরিচড করবার জন্য, ধ্বংস করবার জন্য নয়।
খানিকটা মনের জ্বালা মিটিয়েই ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যদের দিকে হনহন করে হাটা দিল সাইফ। যাই ঘটুক না কেন, নিজের মিউজিক্যাল আদর্শকে ছোট হতে দেখতে পারবেনা সে। বিটলস, বব ডেলান, জন ডেনভার, গানস এন রোজেজ শুনে বড় হয়েছে সাইফ, পৃথিবীকে একটা আলাদা দৃষ্টিক্ষমতা দিয়ে দেখতে শিখেছে সে। তাই তার মিউকিক্যাল আদর্শ কে অপমান করা মানেই এই মানুষ গুলোকে অপমান করা। একটা সিগারেট ধরাল সাইফ। একটানে যতটুকু নেওয়া সম্ভব তার খানিকটা বেশিই ধোয়া নিল … শরীরটা এলিয়ে দিল দেয়ালের সাথে। কয়েক মিনিট অনিবাহিত হল … হঠাৎ সাইফ দেখতে পেল একটা মেয়ে ওদের দিকে হেটে আসছে। কিছুক্ষন পর মেয়েটার অবয়ব স্পষ্ট হল, মেয়েটা নীরাই। সাইফের কাছে এসে বললঃ
- একটু এদিকে আসবেন, কথা ছিল।
- (ব্যান্ডমেট দের থেকে একটু দূরে গিয়ে) জ্বি বলুন …
- আচ্ছা আপনি যেটা খাচ্ছেন এটা কি গাজা ?
- হোয়াট দ্যা ** , আপনি এ কথাটা জিজ্ঞাসা করবার জন্য এসেছেন ?
- না মানে সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয়না আমার, আর তাছাড়া আমি শুনেছি যারা এসব টাইপের মিউজিক করে তারা অনেক কিছুই খায়।
- (সিগারেটটা জুতার নিচে পিষতে পিষতে)সবাইকে এক পাল্লায় মাপাটা কি জন্মগত অভ্যেস আপনার ?
- না মানে আমি আপনার কাছে সরি চেয়ে নেবার জন্যই এসেছি, আপনার সিগারেট খাওয়া নিয়ে কোন কথা বলতে নয়। আমি সত্যিই অনেক সরি, আসলে তখন ওভাবে বলা আমার উচিৎ হয়নি একদমই। আর তাছাড়া আপনি মিউজিশিয়ান বুঝতে পারিনি।
- (খানিকটা শান্ত হয়ে) আপনার কি দোষ বলুন, যদি কখনো মন থেকে শ্রদ্ধা আসে করবেন। আদারওয়াইজ ফর্মালিটির প্রয়োজন নেই। আচ্ছা একটা কথা আস্ক করি আপনাকে, আপনার গানের সাথে ইন্সট্রুমেন্ট বাজাবে কারা আজ ? কি কি ইন্সট্রুমেন্ট থাকছে ?
- বাজাবে কারা আমি ঠিক জানিনা, রিহার্সেল করলাম। সব ওকে। থাকছে হারমোনিয়াম, ডুগি-তবলা অর্থাৎ আমাদের শাস্ত্রীয় সংগীতের ট্রেডিশনাল ইন্সট্রুমেন্ট গুলোই আর কি।
- একটা প্রস্তাব দিব আপনাকে ?
- মানে ?
- আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলে ভয় পেলেন ?? হা হা হা হা । না না প্রেমের প্রস্তাব না, বলছিলাম আপনি রাজি থাকলে আপনার গানটা আজ আপনি আমাদের ব্যান্ডের সাথে করতে পারেন।
- মানে ??? রবীন্দ্রসংগীতের ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকবে গিটার, কিবোর্ড, ড্রামস, বেস ?? আপনার মাথা ঠিক আছে ? না না এটা সম্ভব নয়। আমি নিজ হাতে আমার মিউজিকের ক্যারিয়ার মাটি দিতে পারব না।
- আপনি বোঝার চেষ্টা করুন, আমরা বেশ কয়েকটা রবীন্দ্র সংগীত কাভার করেছি। তেমন কোন সমানলোচনা শুনিনি কখনো, আর তাছাড়া আজ এখানে যারা উপস্থিত তারা মনে হয়না আপনার লিসেনার। আর আমরা প্রফেশনাল … কোন মিউজিকে কেমনভাবে ইন্সট্রুমেন্ট ব্যাবহার করতে হবে আমরা জানি। ভেবে বসেন না আপনার গানের মাঝে আমি গিটারে ডিসটোরশান ইফেক্ট নিয়ে বাজিয়ে বসব। সো প্লিজ … আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।
- আপনাকে আজ প্রথম দেখলাম … কেন বিশ্বাস করব বলতে পারেন ?
- হয়ত ‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’ … সেজন্য।

সেদিন নীরা বিশ্বাস করেছিল সাইফকে। কেন সেটা সে নিজেও জানেনা। সেদিন নীরা রবী ঠাকুরের “গানের ওপারে” গানটি গেয়েছিল সাইফের Innominate ব্যান্ড এর সাথে । আর সাইফও শতভাগ রেখেছিল নীরার বিশ্বাস, দর্শক একটা গান করে বিদায় নিতে দেয়নি নীরাকে… অনুরোধের চাপে কয়েকটি গান করতে বাধ্য হয়েছিল নীরা। সাইফও থেমে থাকেনি, “তোমার খোলা হাওয়া” গানটি সে নিজেও গেয়েছিল … বুঝিয়ে দিয়েছিল রবী ঠাকুরকে সেও ঠিক ততটা না হলেও বেশ চর্চা করে। গানটি করার পুরোটা সময় এক নাগাড়ে নীরা তাকিয়ে ছিল সাইফের দিকে। যেন গানটি তাকেই ডেডিকেট করে গাওয়া হচ্ছে, যেন নীরাকে কিছু বলতে চাচ্ছে সাইফ। ব্যাস … ঐখান থেকে শুরু দুই মেরুর দুটি মানুষের কাছে আসার। অবশ্য প্রপোজ পাওয়ার দিন নীরা একটা প্রশ্ন করেছিল সাইফকে “ এভাবে কিন্তু সারাজীবন বোকার মত তোমার উপরে বিশ্বাস করে যাব… আমার বিশ্বাস রাখতে পারবে তো ?? ” সাইফ হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিল “তোমার ভয় নেই … নির্ভয়ে বিশ্বাস করতে পারো, স্টেজে আমি অনেক প্রফেশনাল। ”

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৭
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×