বন্ধুর ধাক্কাধাক্কিতে অনেক কষ্টে চোখ খুললো অয়ন। মাথার পাশে রাখা মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ৮ টা বাজে। হঠাতই মনে পড়লো আজকে তাদের খুব গুরুত্বপূর্ন প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস এবং সে বরাবরের মতই ভুলে গিয়েছে।
"উফফফ......"
কি যেন বিড়বিড় করতে করতে বাথরুমে ঢুকে গেলো। আজকে সারাদিন কলেজে থাকতে হবে, নয়তো গোসল করার প্রয়োজন মনে করতো না।
একটা রংচটা শার্ট আর কালো আধ্ময়লা ঢোলা প্যান্ট পড়ে দেয়ালে ঝোলানো আয়নার সামনে দাড়ালো, চোখে ঘুমের ছাপ এখনো স্পষ্ট। চুল ঠিক করবে কি না ভাবতে ভাবতেই তার বন্ধু ফাহিমকে বলতে শুনলো...
"শালা রেডি হ তাড়াতাড়ি, চেহারা ঠিক করা লাগবে না । আর দুই মিনিট সময় দিলাম । এরপর তোকে কোলে করে নিয়ে যাবো।"
ফাহিমের দিকে তাকিয়ে অয়ন একটা নিষ্পাপ হাসি দেয়...আর ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে যায়। আসলেই বেশি দেরি করা উচিত হবে না...
মিশন: বাস ধরতে হবে!
ফাহিম আর অয়নের বন্ধুত্ব এই কলেজ জীবনের না। অয়নের স্কুল জীবনের কথা যা মনে আছে, তার মধ্যে কোথাও ফাহিম অনুপস্থিত নেই, এটা নিশ্চিত...
ক্লাস ওয়ান থেকে কলেজ... সেই শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত তারা একসাথেই আছে...
অয়নের পরিচিতি সবার কাছে "জিনিয়াস" হিসেবে। সে খুব বেশি পড়ুয়া না হলেও অনেক কিছুই জানে এবং যাই জানে...তার কোন কিছুই ফেলনা নয়,ক্লাসমেট থেকে শুরু করে সিনিওর রা...এমন কি কিছু কিছু শিক্ষকও তাকে যথেষ্ট সমীহ করেন। পড়াশোনা যাই করুক, পরীক্ষার রেজাল্ট তার খুবই ভালো...
কিন্তু এর বাইরেও তার নিজস্ব একটা জগত আছে... যেখানে যে কবিতা লেখে...ছোটখাটো গল্প লেখার চেষ্টা করে... বিভিন্ন গল্পের বই পড়া তার অন্যতম শখ...এছাড়াও ক্লাসিক গান, ইংলিশ রক, মেটাল শোনা এবং উদ্দেশ্যহীনভাবে দীর্ঘসময়ের জন্য রাস্তায় হাটাহাটি করা তার বিশেষ প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে পড়ে... আলাভোলা স্বভাবের ছেলেটা নিজেকে নিয়ে দিনের বেশ কিছুটা সময় ব্যস্ত থাকে। এই "বিশেষ" সময়টা সে ব্যয় করে অনেক রকম চিন্তা ভাবনা করে...মাঝে মাঝে সেসব চিন্তাভাবনার তাল এমনকি সে নিজেও খুঁজে পায় না...
খুব গোছানো স্বভাবের এবং একটা বিশেষ নীতি সে মেনে চলার চেষ্টা করে... তার জীবনে খুব বেশি মানুষের প্রয়োজন নেই, চাওয়া পাওয়া কম রাখাই ভালো।
কলেজের গেটে পা দিয়েই একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললো। আজকে দীর্ঘ একটা দিন কাটাতে হবে। দীর্ঘ একটা দিন...
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯