somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনামূল্যে ট্যাবলেট কম্পিউটার অতঃপর সত্যিকারের ডিজিটাল হয়ে উঠা গ্রামটির কথা

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যারা শিক্ষিত কম্পু মালিক, তারা চাইলেই নেট থেকে যেকোনো বিষয়ে সাহায্য নিতে পারি। কিভাবে বারবিকিউ বানাতে হয়, স্প্যানিশে দু-চারটা শব্দ ঝাড়তে হয় কিংবা ভূমিকম্প হলে কি করতে হয়। কিন্তু যারা অশিক্ষিত-গরীব? শুধুমাত্র একটা কম্পিউটার নেই বলে তারা কেনো প্রযুক্তি ব্যাবহার থেকে দূরে থাকবে? স্টিভ জবসের প্রযুক্তির দর্শন কিন্তু তা বলে না!

আমাদের ক্লাউড একটা বেসরকারী সফটওয়ার ডেভলপার প্রতিষ্ঠান। আমার কয়েকটা বন্ধু এখানে এন্ড্রয়েড ডেভলপার হিসাবে কাজ করে বিধায় ওদের "চুপিসারে শেষ হওয়া" প্রজেক্ট Digits To All -এর ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে যাই। ১৭ ই জুন হাতে নেয়া এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষা এবং প্রযুক্তি ব্যাবহারের অজ্ঞতার কারনে সৃষ্ট বিভাজন দূর করা। এই প্রোগ্রামের আওতায় এসিএল এটা প্রমান করে দেখায় যে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শিক্ষিত হওয়াটা জরুরী নয়।






তিন মাসের একটি প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের নিজমাওনা গ্রাম সিলেক্ট করা হয়। এই গ্রামের ১৫০ জন সিলেক্টেড ফ্যামিলিকে ১৫০টি এন্ড্রয়েড ট্যাব দেয়া হয় বিনামূল্যে ব্যাবহারের জন্য। যাকে-তাকে তো আর ট্যাব দেয়া যায় না, তাই নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা ছিলো:

✔ কম শিক্ষিত এবং দরিদ্র পরিবার যারা সাহায্য পেলে উন্নতি করতে পারে।
✔ কৃষিজীবি পরিবার যারা সেচ্ছায় নতুন ধরনের কৃষি পদ্ধতি বা পশুপালনে আগ্রহী।
✔ যাদের বাড়ির আশেপাশে বিদ্যুত ব্যবস্থা আছে।



বাঙালী হওয়ায় প্রথমেই আমার মনের মধ্যে সন্দেহ হতে লাগলো ঠিক কি কারনে এই কোম্পানির মালিক ফ্রি ফ্রি ট্যাব বিলায় যাইতেছে! বন্ধুদের ঘাটিয়ে জানলাম, ওদের বসের নাকি টাকা-পয়সা বেশী। তো সে গ্রামের মূর্খ চাষাদের আমাদের মত কম্পু-সুফলভোগী-geek বানাতে চাইলো। আমরা নেট থেকে ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগ বানানো শিখি, ওরা শিখবে অ-আ! আমরা কিভাবে উবুন্টু ইনস্টল করা লাগে শিখি, ওরা শিখবে ট্রাক্টর কিভাবে ঠিক করতে হয়!!

"আমাদের ট্যাবলেট"-এ দেয়া হয় সিএল সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট টিম দ্বারা তৈরীকৃত "লিটারেসি প্রুফ" এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন। অর্থাৎ ট্যাব চালানোর জন্য আপনাকে পড়াশোনা জানা লাগবে না। প্রতিটি মেনু যদি হয় কৃষি সম্পর্কিত তাহলে আইকন হবে কৃষি সম্পর্কিত ছবিসহ। সেখানে চাপ দিলেই একটা অডিও ক্লিপ বলবে "কৃষি"। এতে করে যে পড়াশোনা জানে না সেও এটা ব্যাবহার করতে পারে।

এপ্লিকেশনে থাকে নানান ধরনের তথ্য। যেমন কৃষি, আইন, সাস্থ্য এবং শিক্ষা সম্পর্কিত ভিডিও টিউটোরিয়াল, লার্নিং এপ্লিকেশন, প্রেজেন্টেশন, বই ইত্যাদি। ভিডিও টিউটিরিয়ালগুলো তৈরী করে আমাদের ক্লাউড এর কন্টেন্ট ডেভেলপাররা। এই তথ্যগুলো ঢাকার মেইন সার্ভার থেকে আপলোড করে দেয়া হয়, যা নিজমাওনায় বসানো সার্ভারে পোস্ট হয়ে যায়। আমাদের ক্লাউড এর নেটওয়ার্ক টিম সেখানে একটি ওয়ার্লেস মেশ নেটওয়ার্ক বসিয়ে দেয় যা দ্বারা সেখানকার লোকাল সার্ভার থেকে গ্রামবাসীরা ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে এপ্লিকেশন দ্বারা খুব সহজেই নামিয়ে নেয়।




নতুন তথ্য ঢাকা থেকে পুশ করা হলে যখনই একটি ট্যাব নিয়ে ইউজার ওয়াফাই জোনে ঢুকে তখনই এপ্লিকেশনে একটি আপডেট বাটন ভিজিবল হয়। যা চাপার সাথে সাথে নতুন তথ্য অটোমেটিক ডাউনলোড হতে থাকে। সাথে সাথে ইউজারের ব্যাবহার সম্পর্কিত তথ্য যেমন কতবার কোন ভিডিও টিউটোরিয়ালে ইউজার ব্রাউজ করেছে তা আপলোড হয়ে যায় সার্ভারে- যা পরবর্তীতে ঢাকার সার্ভার থেকে এনালাইজ করা হয়।



কি ধরনের ভিডিও টিউটোরিয়াল থাকে

✖ সাস্থ্য বিষয়ক যেমন যক্ষা হলে কি করতে হবে, ডেংগু কিভাবে প্রতিরোধ করতে হয়, পেটের পীড়া ইত্যাদি অসুখ এর সিম্পটম সম্পর্কে তথ্য এবং করনীয়। তাছাড়া আছে ফার্স্ট এইড যেমন এসিড ছুড়লে কি করতে হবে ইত্যাদি। সাথে এলাকার সরকারী বেসরকারি হাসপাতালের নাম্বার ও ডাক্তারদের নাম্বারের তালিকা।




✖ শিক্ষা বিষয়ক: অশিক্ষিত মানুষদের বর্নমালা সেখানোর জন্য "অক্ষর" নামের একটি এপ্লিকেশন যা একটি টাচ সেন্সিটিভ স্লেট। এটা দিয়ে স্লেটে লিখে বর্নমালা শেখার মতো করে যে কেউ তা শিখতে পারে। তার সাথে আছে স্কুলের বই এর পিডিএফ ফাইল সহ অন্যান্য টিউটোরিয়াল।




✖ কৃষিবিষয়কঃ পশুপালন, সবজি চাষ, সার ব্যাবহার ইত্যাদি।

✖ আইন সম্পর্কিতঃ নারী অধিকার, সাধারন আইন যেমন জিডি কিভাবে করতে হয়, এসিড মারলে কি হয়।



প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন টিউটোরিয়াল আপলোড করা হয় যাতে ব্যাবহারকারীরা পর্যাপ্ত পরিমানে তথ্য পায়। সব কন্টেন্ট ডাউনলোড হওয়ার সাথে সাথে ডিভাইসে ক্যাশ হয়ে যায় যার কারনে অফলাইন ব্রাউজ করা যায়।

ট্যাব ডিস্ট্রিবিউশন এবং গ্রামবাসীদের ট্রেইনিং এর কাজগুলো করে ছাত্রছাত্রীদের গড়া ভলেন্টিয়ার অর্গানাইজেশন ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ



উল্লেখ্য যে ট্যাব ব্যাবহার করতে দেয়ার জন্য গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কোন প্রকার অর্থ বা অন্যকোন সুবিধা নেয়া হচ্ছে না। একটি চুক্তিপত্রের দ্বারা এই ট্যাব দেয়া হয়েছে প্রতিটি পরিবারকে। ট্যাবের দেখাশোনার সম্পুর্ন ভার পরিবারের উপর। কোন কারনে কোন ট্যাব নষ্ট হয়ে গেলে সেক্ষত্রে আমাদের ক্লাউড সেটা বদলে নতুন ট্যাব দেয়। তবে যদি ব্যাবহারকারীর অসতর্কতার কারনে তা হয়ে থাকে তবে সেই ট্যাব আর ফেরত দেয়া হয় না। তবে আশার কথা গ্রামবাসীরা এই জিনিসটিকে এখন পর্যন্ত বেশ যত্নসহকারে ব্যাবহার করে আসছে।



এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারীভাবে (দেশি বা বিদেশি) কোন আর্থিক সাহায্য দেয়া হচ্ছে না, পুরো খরচটাই বহন করছে আমাদের ক্লাউড। ট্যাবগুলো শুধু বাইরে থেকে কেনা। এছাড়া বাকি সবকিছু লোকাল এক্সপার্টদের দ্বারা করা হয়েছে।


ট্যাব দেয়ার ৩ সপ্তাহ পর আমাদের ক্লাউড সরজমিনে দেখতে গিয়েছিলো গ্রামবাসীদের কর্মকান্ড। আপনারা ২ মিনিটের ভিডিওগুলো দেখে নিজেরাই গ্রামবাসীর মুখ থেকে শুনে নিন।

একজন শিক্ষক বলছেন কিভাবে ট্যাবলেটের মাধ্যমে সে উপকার পাইছে


আরেকজন রীতিমত টিউটোরিয়াল দেখে হাসের পোল্ট্রি ফার্ম খুলে ফেলছে!


কয়েকদিন আগে গিয়ে দেখি এই বেটা হাস বড়ো করে বেইচাও দিছে। এখন সে গরু কিনছে! সে এপলিকেশন ঘাইটা দেখছে হাসপালন আর গরু পালনে নাকি অনেক মিল!!

সূর্যবানু আর তার জামাইয়ের কথা শুনেন। একজন মাছ চাষ করা শুরু করছে, আড়েকজন এখন নিজেই নিজের ট্রাক্টর ঠিক করতে পারে!



দুইমাস আগে শেষ হওয়া এই প্রজেক্টটি আসলে এখনও শেষ হয়নি। এটা কেবল শুরু। আমরা ওদের তথ্য দিয়ে যাবো আর ওরা সেটা কাজে লাগিয়ে আরেকটু স্বচ্ছল হবে। প্রযুক্তির কাজ-ই তো এটা!

সংযুক্তি:
অফিসিয়াল সাইট
ইউটিউব চ্যানেল
আমাদের ক্লাউড এর স্ট্র্যটেজিক পার্টনার এবং এডভাইজর লিস্ট
ইত্তেফাক রিভিউ
ফেসবুক পেইজ
ব্লগস্পট
প্রজেক্টের আরো ছবি


ডিসক্লেইমার: আমাদের ক্লাউডের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। তাদের এডভার্টাইজ করা আমার কাজ না। বন্ধুদের মুখে শোনা ও নেট ঘেটে যা পাইছি তুলে দিছি। আমার পোস্টের মূল উদ্দেশ্য সরকারকে এটা বোঝানো, চাইলে খুব কম বাজেটের মধ্যেই বাংলাদেশকে সত্যিকারের প্রযুক্তির সুফল ভোগ করিয়ে দেয়া যায়। এরজন্য কোটি টাকার দোয়েল ল্যাপটপ বা থ্রিজি লাইসেন্স নিয়ে ব্যাবসা করা লাগে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:০৩
৪৮টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×