somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রথম প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার যৌবনের প্রথম প্রেমিক

শ্যামল সোম

আমার ভালোবাসার কবির সাথে বহু যোগ 1965 সালে আগে হঠাৎ দেখা হলো, পঁচিশে বৈশাখের গভীর রাতে, সে কথাকথায় পরে আসা যাবে।
সূর্যোদয় নবীন প্রভাতে, বেদ, উপনিষদ থেকে সমবেত কন্ঠে আমাদের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ব বিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ছাত্র ছাত্রী গাহিলেন।
সারাদিন জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি প্রাঙ্গণে গানে, কবিতা আবৃত্তি শুনে অসম্ভব আনন্দে রবীন্দ্র স্রোতে ভেসে ভেসে অবগাহন করছিলাম।

কবি নজরুলের কনিষ্ঠ পুত্র সব্যসাচী আমাদের প্রিয় সানিদা উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করছিলেন " উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে, স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে
নতুন সৃষ্টিসৃষ্টিতে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত, তাঁর সেই অধৈর্য ঘন ঘন মাথা নাড়ার দিনে
রুদ্র সমুদ্রের বাহু -- প্রাচী ধরিত্রী বুকের থেকে/ ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফিকা--।" পরে " আমি ছেড়েই দিতে রাজি আছি সুসভ্যতার আলোক,
আমি চাই না হতে নব বঙ্গে নবযুগের চালক।"
শ্রোতাদের বিপুল হর্ষ ধ্বনি মধ্যে অনুরোধে শুরু করলেন " ---

সুচিত্রা মিত্র এর নাম ঘোষণা করা মাত্র আমরা আনন্দিত হয়ে হাততালি অভিনন্দন জানালাম। সাদা শাড়ি, চোখে চশমা করজোড়ে দ্রুত মঞ্চে উঠেই " যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে !" ঋজুতা কন্ঠে তীক্ষ্ণ কন্ঠে গাহিলেন " ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে বন্ধু আমার। না পেয়ে তোমার দেখা একা একা দিন যে আমার কাটে নারে।"
সাদাধূতি, ধূসর তসরের পাঞ্জাবি শম্ভু মিত্রের সাথে, তীরের শাড়ী দক্ষিণ ভারতের,অপূর্ব সৃজনশীল সাজ, রক্ত করবী গুচ্ছ কুন্তলে, আমাদের নন্দিনী, তৃপ্তি মিত্র উল্লাসে হর্ষ ধ্বনি হরতালি মধ্যে মঞ্চে উঠে বসলেন হাঁটু পেছনে মুড়ে।
শরীরে শিহরণ বয়ে গেল আবৃত্তির শিক্ষক আমাদের রবীন্দ্র ভারতীর নাট্য বিভাগের--"যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সবাই সংগীত ইঙ্গিতে থামিয়া,
যদিও সঙ্গি নাহি অনন্ত অম্বর, যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে ননামিয়া,
মহা- আশঙ্কা জপিতে মৌন মন্তরে, দিক- দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা--
তবু বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।।"
শব্দে ! শব্দের উচ্চারণে গলার মাধুর্যে, কন্ঠের মায়াবী প্রক্ষেপণ, শ্রোতাদের হৃদয়ের তন্ত্রীতে
বাজলো যে সুর, সেই সুরের রেশ ধরে মঞ্চের অন্যদিকে গেরুয়া পাঞ্জাবি হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে এসরাজে সাথে গাহিতেন আমার প্রিয় শিল্পী জর্জ বিশ্বাস, দিনের বেলায় রাত্রি এলো নেমে --" আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ, তাহারি মাঝখানে আমিও পেয়েছি মোর স্থান, বিস্ময়ে তাই জাগে আমার প্রাণ।সকল শ্রোতার সাথে ধ্যানমগ্ন হয়ে শুনছেন শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র। এখনকার গায়ে মতো বিশাল অর্থ উপার্জন ছিলো না কিন্তু সহৃদয় ব্যক্তিত্ব, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই শুনতেন তাই তাঁরা শাশ্বত ইতিহাসের স্বদেশ ও বিদেশে আজো এ প্রজন্মের কাছেও স্বঘোষিত স্বর্ণাক্ষরে উজ্জ্বল নাম।
বিরামহীন গেহে চলেছেন, " যখন আমি তাঁর দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই, "
" বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে নাও,"
কেতকী মৃদু স্বরে বললে চল সৌমেন, রমেনের ডাক্তারী কলেজের সহপাঠিনী পরে সহধর্মিণী হয়েছিল। রমেনের আমি দুজনে কেতকীর বাড়ি থেকে বহে আনা
চিকন স্যানডুইচ আর মালপো, পাটি সাপটি, জননী মতো মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে কেতকী ভীষণ বড়লোক একমাত্র কন্যা, সুন্দরী ললনা, কিন্তু আশ্চর্য এতটুকু অহংকারের লেশ মাত্র নেই।
মঞ্চে দেবব্রত বা জর্জ বিশ্বাস গাহিছেন, " কেন চেয়ে আছো গো মা মুখ পানে"
পরক্ষণেই " আমার সকল দুখের, প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করবো নিবেদন, আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন।" শ্রোতাদের প্রার্থনায়--" কেন তোমরা আমায় ডাকো--" কেতকী নয়নে অশ্রু টল টল করছে, ভীষণ আবেগ প্রবণ ডাক্তারীর ছাত্রী রমেশ ঠাট্টা করলো, কিন্তু আমার চোখেও জল।
দৈত আবৃত্তি কর্ণ কুন্তি সংবাদ --" কর্ণ-- পুণ্য জাহ্নবীর তীরে সন্ধ্যা সবিতা
বন্দনায় আছি রত। কর্ণ নাম যার,অধিরথসূত পুত্র, রাধা গর্ভ জাত-- সেই আমি-- করে মোরে তুমি কে গো মাতা!
কুন্তি--বৎস, তোর জীবনের প্রথম প্রভাতে--পরিচয় করায়েছি তোরে বিশ্ব - সাথে, -- সেই আমি আসিয়াছি ছাড়ি সবাই লাজ-- তোরে দিতে আপনার পরিচয় আজ।
সংলাপে, নাটকীয় মুহূর্তে যেন মহাভারতের পাতা থেকে উঠে দুটি চরিত্র, কন্ঠ স্বর সুরের ঐকতানে পরস্পরের বাচিক শ্রুতি নাটকের নূতন আবির্ভাব হলো এ একটি ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক সত্য। আমরা স্পন্দন হীন নিষ্পলক নেত্রে রুদ্ধ শ্বাসে শুনতে শুনতে শিহরিত হচ্ছিলাম, কখন যে নিজের রুমাল নিয়ে দাঁতে চেপে ধরে আছি জানি না, কেতকীর মৃদু হেসে স্পর্শে ইশারা করে তখন সেন্স এলো সম্বরণ করলাম নিজেকে।
শেষে দুজনে যত আবৃত্তি করলেন, -এক গাঁয়ে -" আমারা দুজনে একটি গাঁয়ে থাকি, সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ।তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখী--তাহার গানে আমার নাচে বুক---
আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা, -- আমাদের এই নদী নামটি অঞ্জনা, --
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে-
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×