করবী তুমি কেমন. আছো ( ৭ম ভাগ )
শ্যা ম ল সো ম
হে কবি তোমার কাছে আমার অনেক ঋণ, জীবনকে ভালোবাসতে, সহজ ভাবেই সব সহে যাওয়া, আমার প্রথম প্রেম যাকে চিরে দিনে মতো পেছনে ফেলে এসেছি,
শুধু মাত্র দূর থেকে ভালোবেসেছি, খুব কাছে যাওয়া থেকে বিরত ছিলাম।
কাপুরুষ ভীরু অপবাদ জুটে ছিল, আমার প্রেম কখন কোন মলিনতা, সামাজিক বৈরিতা, স্পর্শ করে নি, ছিল না কোন মন মালিন্যে- অপ্রিয়তা !
করবী তোমার ঐ অপূর্ব নিজের হাতে গড়া তুলট কাগজে,
তোমার আঁকা অলংকরণ রঙের এমন বাহার তোমার, চিঠি গুলো আজ কাছে অক্ষয় সম্পদ রয়েছে মণি কোঠায় উজ্জ্বল স্মৃতি টুকু থাক।
তোমার অকৃত্রিম প্রেম অকৃপণ ভালোবাসা ও অকপটে মেলে ধরা নিজেকে তোমার সম্পূর্ণ আত্ম সমর্পণ -- আমার জীবনের প্রথম সে প্রেমের অভিজ্ঞতা অনন্য সাধারণ, ধন্য করেছো করবী - আমার রক্ত করবীর নন্দিনী ! তোমার ঐ রক্ত করবীর গুচ্ছ দিয়ে ছিলে উপহার।
শুনিয়ে ছিলাম গান সেদিন মেঘনা পাড়ে শিমুল গাছের তলায় বসে, গোধূলির রাঙ্গা আলো ছোঁয়ায় তোমার সজল চোখে আমি গাইছি, " ও কার চোখের চোখের চাওয়ায় -হাওয়ায় দোলায় মন --" নিজের গোপন ব্যথা কান্না আড়ালে রেখে হাসছি আমি।
তুমি ঠিকই বুঝেছিলে- গেয়ে উঠলে কাঁদতে কাঁদতে --
-" চোখের জলে নামলো জোয়ার দুখের পারা পারে,
হল কানায় কানায় কানাকানি এই পারে ওই পারে।
আমার তরী ছিল চেনার কুলে, বাঁধন তাহার গেল খুলে;
তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিলে কোন অচেনার ধারে।"
নিজেকে সামলে না পেরে, তোমাকে দু হাতে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে পরস্পরের আলিঙ্গনে
কাঁদছি ---মনে পড়ে গেল একদিন বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দে মেতে দ্বৈত কন্ঠে গেয়েছিলাম ---
" কাঁদলে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে--
নিবিড় বেদনাতে পুলক লাগে গায়ে।
সেদিন ও কেঁদেছিলাম প্রথম প্রেমের অনুভবে।
তুমি বললে, " কত ? সে কি সাগরের মতো ? এত কান্না জমে থাকে চোখা না আমাদের মনে ?
আবৃত্তি করি রবীন্দ্র সঙ্গীত, --
আমার নয় তোমার নয়ন তলে মনের কথা খোঁজে,
সেথায় কালো ছায়ার মায়ার ঘোরে পথ হারাল ও যে।
নীরব দিঠে শুধায় যত পায় না সাড়া মনের মতো,
অবুঝ হয়ে রয় সে চেয়ে অশ্রু ধারায় ম'জে।
তুমি কবির ভাষায় লিখেছিলে-- লিখতে বসেছি চি ঠি, সকালেই
স্নান হয়ে গেছে।
লিখি যে কী কথা নিয়ে কিছুতেই ভেবে পাই নে তো। এক টি খবর
আছে শুধু-- তুমি চলে গেছো।
ভয়ে ভয়ে এসেছিনু দুরু দুরু বুকে তোমার সন্মুখে। তোমার ভ্রূকুটি ভঙ্গে তরঙ্গিল আস ন্ন উতপাত, নামি.আঘাত। পাঁজর উঠিল কেঁপে, বক্ষে হাত চেপে শুধালেম, ' আরো কিছু আছে নাকি, আছে বাকি শেষ ব্জ্রপাত ?' নামিল আঘাত।
( আমার স্বগত উ ক্তি, ঢাকা থেকে আমার পলায়ন, করবী তোমার
হৃদয়ে হানিবে গভীর প্রত্যাঘাত; ১৯৭২ সালে বয়স ছিল, কম, ভরা
যৌবনের অহংকারে পূ র্ণ; আত্মসন্মানে, আঘাতের. ভয়ে , তোমারে
করেছি প্রবল আঘাত। )
করবী তুমি লিখেছিলে, " কেন তবে কেড়ে নিলে লাজ -আবরণ !
হৃদয়ের দ্বার হেনে, বাহিরে আনিলে টেনে, শেষে কি পথের মাঝে
করিবে বর্জন ?
বর্ষ আসে বর্ষ যায়, গৃহকাজ করি--সুখ দুঃখ ভাগ লয়ে প্রতিদিন
যায় বয়ে, গোপন স্পন্দন লয়ে কাটে বিভাবরী। লুকানো প্রাণের প্রেম
পবিত্র সে কত !
আঁধার হৃদয় তলে মানিকের মতো জ্বলে,--ভাঙিয়া দেখিলে ছি ছি নারীর হৃদয় !
লাজে ভয়ে থর থর ভালোবাসা - সকাতর তার লুকাবার ঠাঁই কাড়িলে নিদয়।
ভালোবাসা তাও যদি ফিরে নেবে শেষে কেন লজ্জা.কেড়ে নিলে,
একাকিনী ছেড়ে দিলে বিশাল ভবের. মাঝে বিবসনা বেশে।
চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙাল, এ কথা বলিতে চাও বোলো।
যাবার সময় হলে যেয়ো সহজেই আবার আসিতে হয়. এসো,
সংশয় যদি রয় তাহে ক্ষতি নেই তবু ভালোবাসে যদি আসো কাছে,
নেই বেসো।
( আমার বিদেশে পলায়নের খবর পেয়ে করবীর লেখা দশ নম্বর
চিঠি )
" বন্ধু, কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে পাও--
তোমার পথ সন্মুখে জানি, পশ্চাতে আমি আছি বাঁধা। অশ্রু নয়নে বৃথা শিরে কর হানি যাত্রায় নাহি দিব বাধা।
আমার টুটিল সব লাজ; যত বড়ো হও, তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে
বড়ো নও।
আমি মৃত্যু চেয়ে বড়ো ' এই শেষ কথা বলে, যাব আমি চলে।"
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬