somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ : পান্না বালা, একটি ‘আত্মহনন’ এবং সমাজ পরিবারের দায়

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফরিদপুরের সাংবাদিক পান্না বালার স্ত্রী আত্মহত্যা করার পর, আরো অনেক পরিবারের মতোই স্ত্রীর পরিবার তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। বিয়েতে একটাকাও যৌতুক না নিলেও, তার বিরুদ্ধেই যৌতুক দাবির অভিযোগ আনা হলো।
স্থানীয় একজন মন্ত্রীর প্রত্যক্ষ ভুমিকা, টেলিফোনে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করল। অনেক স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাতেই স্বামীকে পুলিশ আটক করে। কিন্তু এখানে আরো অস্বাভাবিক এই যে, কে বা কারা লাখ টাকা খরচ করে চার রঙা পোস্টার ছাপিয়ে শহর ছেয়ে ফেলল।
এতেই বোঝা যায় যে, কোন একটি মহল তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। কারণ পান্না বালার বস্তুনিষ্ঠ আর সৎ সাংবাদিকতা অনেকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল।

পান্না বালার বোন ডাক্তার তৃপ্তি বালার একটি লেখা এখানে হুবহু তুলে দিলাম।

প্রসঙ্গ : পান্না বালা, একটি ‘আত্মহনন’ এবং সমাজ পরিবারের দায়
তৃপ্তি বালা

আত্মহত্যা’ মানুষের মনের চরম হতাশাগ্রস্ত এক অবস্থার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া। একজন মানুষ যখন আত্মহত্যা করে, কাছে-দূরের সম্পর্কিত সব মানুষকেই তা নাড়িয়ে দিয়ে যায়। বিরূপ বিশ্বের নিদারুন সব অসঙ্গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার যে গ্লানি মর্মযাতনা একজন দুর্বল চিত্তের মানুষকে তাড়িত করে; চূড়ান্ত হতাশায় আক্রান্ত একজন মানুষ যখন মানসিক বৈকল্যের কাছে পরাজিত হয়; ক্ষোভ ঘৃনা হিংসা-প্রতিহিংসা এবং জেদের বশবর্তী হয়েও মানুষ যখন আত্ম সংযম হারায়-- আত্মহত্যার মতো গর্হিত কাজটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে।
কারণ যা-ই হোক না কেন, আত্মহত্যার একটি ঘটনা পরিবার-সমাজ সকলকেই স্পর্শ করে যায়, অপরাধী করে তোলে। আত্মহননকারী মানুষটি যদি ঘূনাক্ষরেও অনুমান করতে পারতেন-- তার ঐ আত্মহনন গোটা পরিবার-পরিজনকে কতোখানি মর্ম যাতনার মধ্যে নিয়ে ফেলতে পারে-- তা হলে বোধকরি কোনদিনও তিনি তা করে উঠতে পারতেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যুক্তি-তর্ক বিচার-বুদ্ধি কোনো কিছুই তাকে তাৎক্ষনিক ঐ অবস্থা থেকে বিরত করতে পারেনা। জগতের সমস্ত মানবিক বোধ-চেতনা তার কাছে ব্যর্থ প্রমানিত হয়। দেহ-মনোগত অসহায়ত্বের কাছে আত্ম সমর্পনই অনিবার্য পরিণতি হয়ে দাঁড়ায়।

যে দুর্ঘটনা আজ পান্না বালার স্ত্রী’র জীবনে ঘটলো, সমস্ত পরিবার স¦জন-পরিজনের কাছে তা এক কথায় মর্মস্পর্শী দূর্ভাগ্যজনক। পরিবারের প্রতিটি সদস্য আত্মীয়-পরিজন-- কেউই আমরা এর দায় এড়াতে পারিনা। বার বছর আগে সামাজিক দেখাশুনার মাধ্যমে যে সম্পর্কটি স্থাপিত হয়েছিল দুটি পরিবারের মধ্যে সমাজ-পরিজনকে স্বাক্ষী রেখে, বার বছর পরে তারই এই নির্মম পরিণতি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আত্মীয়-পরিজনের মনে এনে দিয়েছে নিদারুন হতাশা এবং গ্লানিবোধ।
পেশায় সাংবাদিক পান্না বালা সমাজে আত্মীয়-অনাত্মীয় মহলে অতীব আদৃত একজন মানুষ। মানুষের সহজাত সহজ প্রকাশের যে বিরল বৈশিষ্ট্য তাঁর মধ্যে-- তাই দিয়েই বুঝি জয় করে নিয়েছে সে দশ জনের মন। অন্তরে-বাইরে উৎসারিত প্রকাশে মনের যে আকুতিটি ফুটে ওঠে পান্নার-- স্বজন-পরিজন থেকে শুরু করে অনাত্মীয় অন্য মানুষ জন অতি অনায়াসেই তার অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তার উপরে আছে মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ার তীব্র মমত্ববোধ। সহপাঠি বন্ধু থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার খালাম্মা মাসিমা বোনের দল ছেলে বেলা থেকেই তার ভালবাসার মানুষ। শহরের অনেক মা খালা বোনের হৃদয়ে আছে তার অধিষ্ঠান।
বলা যায় যন্ত্রের এই বাজার বিশ্বে পান্না বালা অকৃত্রিম মানব মনের এক বিরল দৃষ্টান্তই। পান্নাকে নিয়ে যখন ভাবি, আশ্চর্য হই-- আমারই পিঠোপিঠি ভাই স্বভাবে যে কি করে আমারই বিপরীত একেবারে। সেই যে ছেলে বেলায় এক বিছানায় মানুষ আমরা অথচ স্বভাবে কি আকাশ-পাতাল ব্যবধান! এই যে আমি এক মানুষ-- বলা যায় একান্তই আত্মকেন্দ্রিক, নিজের ছাড়া অন্যের বিষয়ে কিছুই ভাবিনা-- সেই আমারই সহোদর অতখানি মানবিক বোধসম্পন্ন একজন মানুষ। বিধাতা হয়তো এক্ষেত্রে পিতার স্বভাবের প্রায় সবটাই ঢেলে দিয়েছেন ওঁর মধ্যে। আর আমি গড়ে বেড়ে উঠেছি-- বলা যায় সময়েরই এক প্রতিভূ হিসেবে, তবে অবশ্য নৈতিক পথে-- এইটুকু যা ভরসার।

মাতৃভক্ত পান্না বালা জীবন এবং জীবিকার কারনেও পিতা-মাতা থেকে দূরে সরে যায়নি। নিঃসঙ্গ পিতা-মাতার শেষ বয়সের মর্মোপলদ্ধি যে সন্তান করছেন-- তিনি পান্না বালা।
অর্থনীতিতে ¯œাতকোত্তর শ্রী গৌর চন্দ্র বালা এবং অঞ্জলি বালার কণিষ্ঠ পুত্র পান্না বালা তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটাতে সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন পরম নিষ্ঠার সাথে। নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য এরই মধ্যে তিনি সবার কাছে একজন সৎ কর্তব্য পরায়ন সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
স্ত্রী’র আত্মহননের বিষয়টিকে কতিপয় মহল যেভাবে হনন হিসেবে প্রচার করেছেন, শহরজুড়ে পোস্টারিং করে পান্না বালার মতো একজন কর্তব্য পরায়ন ভাল মানুষকে হত্যাকারী হিসেবে চি‎িহুত করতে চেয়েছেন-- তা গোটা পরিবারের জন্যই এক গ্লানির বিষয়। কে বা কাদের প্রয়োজনে ঐ প্রচার-প্রচারনা হয়েছে জানিনা। এমনিতেই ঘটনার আকম্মিকতায় আমরা পরিবারের প্রতিটি সদস্য একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছি লজ্জায় অপমানে, তার উপর এই দুঃসময়ে কতিপয় মহলের অশুভ তৎপরতা আমাদের জীবনকে যার পর নেই দুর্বিষহ করে তুলেছে।
আমরা শ্রী গৌর চন্দ্র বালার পরিবার স্বজন-পরিজন শুভানুধ্যায়ী-- সকলে সমস্ত অশুভ কার্যকলাপের আশু অবসান চাই এবং পান্না বালার নিরাপদ সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কামনা করি।
দেশ মানুষের জননী জায়া কন্যা জন নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখবেন কি? আমার প্রয়াত পিতা গৌর চন্দ্র বালা যে ছিলেন তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্দিনের (আটান্ন থেকে ঊনসত্তর, সত্তরের দিনগুলোতে) একান্ত সহচর!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×