somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরতে ঘুরতে খাগড়াছড়ি......... সংক্ষিপ্ত একটি ভ্রমণ + ট্র্যাভেল হেল্প

১৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অসংখ্য ঝর্ণা আর বুনো পাহাড় মিলিয়ে এক জানা-অজানা রহস্যের নাম খাগড়াছড়িতে একটা চক্কর দিয়ে আসার ইচ্ছাটা বহুদিনের। আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে পর্যটনের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে এই জেলাটিই, কারণ জানি না। যাওয়ার পথে বাসে আলাপ হলো এক ত্রিপুরা তরুণের সাথে, কিংবা শহরের বাঙ্গালী দোকানদার, চাকমা ট্যাক্সিচালক বা সাধারণ পথচারী......... সবাই একটা কথাই বলছিলো বার বার, এখানে কোন ভয় নাই, কোন সমস্যা নাই !!! আরে বাবা ভয়ের কি আছে ? অবশ্য দেয়ালে দেয়ালে রাইটিংগুলো কিঞ্চিত ইয়ে...... “সংঘাত নয়, শান্তি চাই, পাহাড়ী বাঙ্গালী ভাই ভাই” এইসব আরকি :P। সম্ভবত পার্বত্য সংঘাতের কিছু দিক এখানে এখনো রয়ে গেছে। শান্তিবাহিনীর আত্নসমর্পণ হয়েছিলো এই খাগড়াছড়ির জেলা স্টেডিয়ামেই।

২০ ফেব্রুয়ারির রাতে শান্তি পরিবহনের টিকেট কেটে আমরা পাঁচজন দাঁড়িয়ে আছি কমলাপুরে। সাড়ে দশটার গাড়ি এসে কাউন্টারে দাড়ালো পৌনে একটার সময়। ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙ্গে দেখি, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ !! যাত্রাপথের মহাকাব্যিক বর্ণনা আর নাই বা দিলাম, ২১শে ফেব্রুয়ারী বিকেল তিনটার দিকে কুমিল্লা আর রাত সাড়ে আটটায় আমরা নামলাম খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে। আপনারা আর যে যাই করেন ভাই, মেঘনা ব্রীজ বন্ধ থাকলে (আজকে থেকে আবার বন্ধ, ২১ মার্চ পর্যন্ত) চিটাগাং ডিভিশনে যাওয়ার চিন্তাও কইরেন না X((X((

খাগড়াছড়ি - ম্যাপ

আমাদের প্ল্যান ছিলো মূলত সাজেক যাওয়ার, সেই মোতাবেক রওনা দিয়ে প্রথমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে রাঙ্গামাটির বাঘাইহাট এসে পৌছাতেই ধরা খেয়ে গেলাম। আগামীকাল সাজেকে প্রধাণমন্ত্রী আসছেন, সর্বসাধারণের চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ। যাক, কপাল যে খারাপ সেটা ঢাকাতেই টের পেয়েছিলাম......... চাঁদের গাড়ীর ছাঁদে বসে বসে ফিরে আসলাম খাগড়াছড়ি শহরে, বাঘাইহাট চেকপোস্টের মিলিটারীদের ভাষায় যার ডাকনাম - কে সি !

সময় নষ্ট করে লাভ নেই, দ্রুত এইবার রিসাং ঝর্ণার দিকে। মেইন রোড থেকে কিঃমিঃ দুয়েক ভেতরে ঢুকে খাড়া পাহাড় বেয়ে নামা। কিছুদূর গিয়ে সিড়িও পাওয়া গেল...... নেমে গিয়ে পাওয়া গেল রিসাং ঝর্ণা। অবশ্য শীতের শেষ, বসন্তের শুরুতে ঝর্ণায় পানি খুব কম......... যে জায়গাটা দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে, প্রায় ৬০ ডিগ্রী খাড়া ঢাল আর অসম্ভব পিচ্ছিল। মানুষজন স্লিপারের মত স্লিপ কেটে যাচ্ছে সমানে, যার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল আমরা আমাদের চারপাশেই দেখছি...... অসংখ্য তলা ফাটা জিন্স ! কারা যেন একেবারে ঝর্নার গোড়ায় কাঠকয়লা দিয়ে পিকনিকের রান্না করে গেছে......... আমরা বাঙ্গালীরা কোন জায়গা পেলে সেটাকে পচিয়ে দিতে খুবই সুদক্ষ।


রিসাং ঝর্ণা

আলুটিলা - প্রধাণ ফটক

এরপর আলুটিলা ! খাগড়াছড়ির ট্যুরিস্ট স্পট বলতে মূলত এই আলুটিলাই বোঝানো হয়। পাঁচ টাকায় টিকেট আর দশ টাকায় মশাল কিনে আমরা আলুটিলা পাহাড় (টিলা আবার পাহাড় হয় কেমনে ?) বেয়ে নামা শুরু করলাম। এইটা নাকি খাগড়াছড়ির উচ্চতম পাহাড়। তবে টপ থেকে শহরের একটা দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায়। আমরা সিড়ি বেয়ে পৌছালাম গুহার মুখে। ভিতর থেকে ধোয়া বেরিয়ে আসছে। মশালের ধোয়া। মশালগুলো জ্বালিয়ে প্যান্ট গুটিয়ে আমরা ঢুকে গেলাম ভেতরে। হাটু পানি, উচু নিচু পাথুরে বোল্ডার আর ঘুটঘুটে অন্ধকার।

গুহার মুখ। এই চেহারা দেখে ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছাটা কিঞ্চিত কমে যায় কি ?


গুহার ভেতর মশাল মিছিল - রাজাকারের ফাসি চাই !


বের হবার মুখটা অবশ্য বেশ চওড়া।


বের হবার পর দেখি স্পেকট্যাকুলার ব্যাপার স্যাপার !!!


আলুটিলা পাহাড়ের উপর থেকে খাগড়াছড়ি শহর

যাক, অন্তত এই সুড়ঙ্গ পার হবার পর আমাদের মনের জমে থাকা ব্যথা (??!!) কিঞ্চিত লাঘব হলো। এরপর একটা নতুন বৌদ্ধমন্দির হয়েছে, সেইটা দেখার পালা। পানছড়ি উপজেলায় অবশ্য বাংলাদেশের উচ্চতম বৌদ্ধমূর্তিটা আছে, বিহারের নাম সম্ভবত অরণ্য কুটির। সেটা এ যাত্রায় দেখা হবে না। আর সাইজের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় মূর্তিটা ছিলো সীমা বৌদ্ধ বিহার, কক্সবাজারের উখিয়ায়। রামুর সহিংসতায় সেটাকে ধবংস করে ফেলা হয়েছে। খাগড়াছড়ির এই মূর্তির উচ্চতা ৩৭ ফিট।

৩৭ ফিট উচু গৌতম বুদ্ধ


মূর্তির গায়ে ছোট ছোট বুদ্ধ।

এরপর আমরা চলে আসলাম শহরের নতুন হওয়া হরটিকালচার পার্কে, এখানে নাকি একটা ঝুলন্ত ব্রীজ আছে।


দুই টিলার মাঝখানে ঝুলন্ত ব্রীজ।

শর্ট এই ভিজিটে খাগড়াছড়িতে আমাদের শেষ বিকেল। চলে আসলাম নিউজীল্যান্ড পাড়ায় !!! এই পাহাড় আর খোলা মাঠে ঘেরা এই এলাকার নামই নিউজীল্যান্ড, কারণ এখানকার বাতাস নাকি নিউজীল্যান্ডের মত :|:|! হাটাহাটি শুধু আমরাই করছি না, আরও বহু লোকজন এসেছে।

নিউজীল্যান্ডে সূর্যাস্ত দেখছি খাগড়াছড়িতে দাঁড়িয়ে ;)

অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত হয়ে গেলো এই ট্যুর। যাক, জীবন মানেই অভিজ্ঞতা B-)B-)B-)!

ট্র্যাভেল হেল্পঃ
যারা যেতে চান...... ঢাকা থেকে শ্যামলী, সৌদিয়া, এস আলম আর শান্তি - এই চারটা বাসই খাগড়াছড়িতে যায়, ভাড়া ৫২০ টাকা। শহরের শাপলা চত্বর হলো চৌরঙ্গী টাইপের, ভালো - মাঝারী - খারাপ হোটেলগুলো সব এখানেই ছড়ানো ছিটানো। টিম মেম্বার কতজন সেই সাপেক্ষে আপনি বাহন ঠিক করুন, সিএনজি, মাহেন্দ্র টেম্পো (৭ জন) কিংবা চাদের গাড়ী। আমাদের সিএনজি (রাজু - ০১৮২৩২৮৭৪৮৪) নিয়েছিলো ৭০০ টাকা, ঐ সব স্পটগুলো ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য।

বর্ষাকালে গেলে অবশ্যই ঝর্না দেখতে যাবেন, সেগুলো মূলত দীঘিনালায়। শাপলা চত্বর থেকেই চাঁদের গাড়ী ছাড়ে, দীঘিনালায় ভাড়া ৪৫ টাকা। সময় লাগে ঘন্টাখানেক আর ফার্স্ট ট্রিপ ছটা চল্লিশে।ওখান থেকে গাইড ঠিক করে বাইক নিয়ে দেখে আসতে পারবেন তৈদু ঝর্না, হাজাছড়া ঝর্না কিংবা সিজুক ঝর্না। হাজাছড়া ঝর্নায় যাওয়াটা সহজ, অন্য দুটো কিঞ্চিত এক্সট্রিম। এছাড়া শহর থেকে একটু দূরে আছে দেবতার পুকুর (৭০০ ফিট উচুতে পুকুর)। এছাড়া মহালছড়ি হ্রদ (কাপ্তাই লেকের এক্সটেনশন) কিংবা পানছড়ির অরণ্যকুটির বা মানিকছড়ির মং রাজবাড়ি......... ম্যাপে খেয়াল করবেন, তিনটা তিনদিকে :P তবে সবগুলোর গাড়িই বাসস্ট্যান্ড থেকে পেয়ে যাবেন।

শহরের পানখাইয়া পাড়ায় আছে বিখ্যাত "সিস্টেম" রেস্টুরেন্ট যা আদিবাসী পাহাড়ী মেন্যুর জন্য খুবই বিখ্যাত; সেখানে টেস্ট করে আসতে পারেন বাঁশ ভাজা !!! আমরা এবার যাইনি অবশ্য, কন্টিনুয়াসলি বাঁশ খেতে খেতে আমাদের অবস্থা এম্নিতেই কাহিল ছিলো।

একটা জরুরী বিষয়, ঢাকায় ফেরার পথে সবগুলো বাসই কিন্তু একসাথে ছাড়ে, রাত সাড়ে ন'টায় এবং সিকিউরিটি প্রবলেমের কারণে বাসগুলো এক লাইন ধরে যায়, এটা মাথায় রেখে ফেরার প্ল্যান করবেন।

হ্যাপি ট্র্যাভেলিং :D
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×