somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুসং দূর্গাপুর/বিরিসিরি যেতে চান?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথমেই দূর্গাপূর আর বিরিসিরি দুইটা নাম পরিষ্কার করে নেই কারন আমি নিজেও সেখানে যাবার আগে এটা নিয়ে দ্বন্দে ছিলাম। দূর্গাপূর হচ্ছে উপজেলা যার মধ্যে আছে বিরিসিরি নামের একটা জায়গা যেটা মূল দূর্গাপুরে ঢোকার কয়েক কি.মি. আগে পড়ে। এ জায়গাটি মূলতঃ গারো উপজাতি অধ্যুষিত। এখানেই আছে উপজাতি কালচালারাল একাডেমী। দূর্গাপূরের থাকার ভাল জায়গাগুলো এখানে পাবেন। ওয়াই.এম.সি.এ. এবং ওয়াই.ডব্লিউ.সি.এ এদুটিও এখানেই অবস্থিত।

কিভাবে যাবেনঃ
মহাখালী থেকে বিরিসিরির ডাইরেক্ট বাস আছে, প্রথম বাস সকাল ৭:৩০ মিনিটে ছাড়ে। এরপর প্রতি ৪৫ মিনিট অন্তর একটা বাস ছেড়ে যায়।ভাড়া নেবে ১৮০ টাকা। সেমিলোকাল বলা চলে। সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। বিরিসিরি বাজার পর্যন্ত বাস যাবে। বিকল্প হিসাবে ঢাকা থেকে ভাল বাসে (এনা-১২০ টাকা/এ.সি. শামীম-১৬০ টাকা) ময়মনসিংহ গিয়ে ওখান থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া নিতে পারেন। খুব সকালে (৬টা) ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে এভাবে হয়তো ১১টার দিকে পৌছাতে পারবেন দূর্গাপূর। শেষের ৮-১০ কি.মি. রাস্তা খুবই খারাপ।

[শীতকালে পথটা সহজ হলেও বর্ষাকালে (অর্থাৎ মে-নভেম্বর) যাওয়াটা একটু সমস্যা। বাস যেখান পর্যন্ত যাবে (জারিয়া/জাইরার বাজার/ঝাঞ্ঝাইল/শুকনা খড়ি) সেখানে নেমে সামান্য একটু হেটে কিম্বা রিক্সায় গিয়ে আবার একটা ছোট্ট নদী (কংশ) পার হতে হবে ইঞ্জিন বোটে। ৫ মিনিটে এই নদী পার হয়ে ওপাশ থেকে সবচেয়ে দ্রুতগতির যানবাহন হিসাবে মটরসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় (বাস আর টেম্পুর কথা নাইবা বললাম) । একেক মটরসাইকেল ৭০-৮০ টাকা নেবে। দুইজন তাতে চড়তে পারবেন (একজন গেলেও তাই)। মটর সাইকেল এ ৮-১০ কি.মি. ভাঙ্গাচোরা পথ পেরিয়ে প্রায় ২০ মিনিট পর পৌছুবেন বিরিসিরি কিম্বা দূর্গাপুর ।]

সোমেশ্বরীর পাড়ে নদী থেকে তোলা কয়লার স্তুপ


শেষ বিকালে সোমেশ্বর নদী

কোথায় থাকবেনঃ
ছোট গ্রুপের (২-৪জন) জন্য যেটা সবচেয়ে ভাল থাকার জায়গা হবে সেটা হচ্ছে স্বর্ণা রেস্ট হাউজ। বাস যেখানে থামবে সেখানেই এটা নতুন গড়ে উঠেছে। বাইরে থেকে দেখতে যদিও খুব একটা আহামরি কিছু না। ৪০০ টাকার মত ভাড়া পড়বে ডাবল বেডের একেকটা রুম। এ.সি. রুমও খুব শীঘ্রি বোধহয় এরা চালু করবে।
YWCA এর জায়গাটাও ভাল। বাগান আছে সামনে। কনফারেন্স রুম, মঞ্চ এসবও আছে। তবে এটা মূল রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা ঝোপঝাড়ের ভিতর দিয়ে হেটে গিয়ে পৌছতে হবে। খাওয়া দাওয়া এবং ঘুরতে হলে বারবার বাইরে আসা ঝামেলার হবে। যদি বড় দলবল নিয়ে যাওয়া হয়, তবে এটা ঠিক আছে। নতুবা এটার চিন্তা বাদ দেওয়াই ভাল এখানে ভাড়া একেক বেড ৩০০ টাকা করে পুরা রুম ৬০০ টাকা। এ.সি. রুম একটা আছে যেটা ৭০০ টাকা।
YMCA রেস্ট হাউজ অনেক পুরান। সেজন্য সুযোগ-সুবিধা অনেকটাই মান্ধাতা আমলের। ভাড়াও গুনতে হবে প্রায় ৩০০ থেকে ৬০০।
উপজেলা ডাকবাংলো ও আছে যেখানে সরকারী কেউ হলেই শুধুমাত্র সুবিধা পাবেন।


এটা কিন্তু আফগানিস্থান কিম্বা রাজস্থান নয়


কমলা পাহাড়- খুব বড় নয়, কিন্তু মাটি কেটে নেয়ার পর এরকম রঙ দেখা যায় (ছবিটি বন্ধু আরিফের থেকে নেওয়া)


গোলাপী পাহাড়


এইটা আসল চিনামাটির পাহাড়


এই ছবিটি গুগল আর্থ থেক নিয়েছি। এরকম নীল অবশ্য আমি পাইনি

খাওয়া-দাওয়াঃ

নিরালা হোটেলটা বোধহয় সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। তবে আরো কয়েকটা ছোটখাট হোটেল আছে। পরাটা আর ডিম এগুলো দিয়ে খাওয়ার কাজ সারাটাই বোধহয় বুদ্ধিমানের কাজ।

কি দেখবেনঃ

সোমেশ্বরী নদী,
নদীর ওপারে চিনামাটির এবং আরও নানা রঙের পাহাড় –সাদা,গোলাপী এবং কমলা,
বিজয়পুর বিডিআর ক্যাম্প।
রানীক্ষং চার্চ,
পুটিমারী মিশন।
কালচারাল একাডেমি আর উপজাতীয় যাদুঘর।



বিজয়পুর বি.ডি.আর ক্যাম্পের পাশে নদী, ওপাশে একটু দূরেই ভারত

দুপুর বারটা-একটায় পৌছে সেইদিন জায়গাগুলো ঘোরা কঠিন হবে। এদিন শহরের আশপাশটা একটু দেখতে পারেন। পাহাড়ের পাদদেশেও বোধহয় অনেকে ঘুরতে যায়। তবে এগুলো পাহাড় না বলে টিলা বলাই ভাল, সেহেতু আহামরি কিছু মনে হয়নি বলে আমি সেদিকে যাইনি।
পরের দিন খুব সকালে হোটেল থেকে বেরিয়ে রিক্সা/টেম্পু/বাসে যাবেন উপজেলা শহরে। এরপর নাস্তা শেষে সোমেশ্বর নদীর পাড়ে যাবেন। দূর দিগন্তে উচু পাহাড় দেখা যাবে। (যেগুলো অন্যান্য সব সীমান্তের মতই বাংলাদেশের বাইরে)। নদীর পানি শীতকালে শুকিয়ে প্রায় হেটে পারাপারের অবস্থায় চলে আসে। নদীতে দেখবেন মোটা বালু তোলা হচ্ছে। আবার নদীর তলদেশ থেকে কয়লাও তোলা হচ্ছে। নদী থেকেও যে কয়লা তোলা যায় এটা আগে কোনদিনই জানতাম না। ওপারেই আছে
১) চিনামাটির পাহাড় (সাদা মাটির পাহাড়)
২) গোলাপি পাহাড় এবং কমলা পাহাড়
৩) পুটিমারী মিশন (এটা এডভেন্টিস্ট খ্রীস্টান সম্প্রদায় পরিচালিত একটা স্কুল, যেটা এত নিপুনভাবে সাজানো গোছানো যে এরকম জায়গায় এই জিনিষ আছে সেটা কল্পনাতেও আসে না। সেখানে ঢুকতে অবশ্য ছোটখাট একটু অনুমতি লাগবে।)
৪) রানীক্ষং মিশন-ক্যাথলিক মিশন।
৫) নীল পানি (ব্লগে ছবি দেখে এই জিনিষের আকর্ষন বোধ করছিলাম অনেক আগে থেকেই। কিন্তু গুগল আর্থে যে ছবিটা দেয়া সেটা সবচেয়ে গাঢ় নীল।)
৬) বিজয়পুর বিডিআর ক্যাম্প কিম্বা এর আশপাশ থেকে অনন্য সুন্দর দৃশ্য।
৭) উপজাতীয় কালচালারাল একাডেমি-বিরিসিরি


বিজয়পুর বিডিআর ক্যাম্প

অপশন ১-বেশীরভাগ জায়গার যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা মটরসাইকেল। দূর্গাপুরের নাজিরপুর মোড় থেকেই ভাড়া নিতে পারেন। ৪০০-৫০০টাকা নেবে এই সবজায়গা ঘোরার জন্য। এক মটরসাইকেলে দুজন। সময় লাগবে প্রায় ৪-৫ঘন্টা। নৌকায় নদী পার হয়ে মাটির রাস্তা ধরে এইসব ঘোরাঘুরি শেষে গায়ে ধুলো জমে যাবে। সাথে মাস্ক নিয়ে যাওয়া ভাল অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিষের সাথে।

অপশন ২-দূর্গাপুরে ঘোরাটা এখন পর্যন্ত খুব একটা আরামদায়ক ভ্রমন নয়। মেয়েদের নিয়ে গেলে আরেকটা রুট বেছে নিতে পারেন। সেটা হোল সোমেশ্বরী নদী দিয়ে ইঞ্জিন বোটে বিজয়পুর বি.ডি.আর. ক্যাম্প পর্যন্ত যাওয়া। এতে করে যাবার পথে দূর্গাপুরের আসল সৌন্দর্য সোমেশ্বর নদী আর দূরের পাহাড় নয়ন ভরে দেখতে পাবেন। সব জায়গা হয়তো এতে কাভার করা যাবে না। তবে এই ‘জার্নি বাই বোট’ নিঃসন্দেহে চমতকার হবে। এভাবে গেলে বিজয়পুরের কাছে কামারখালী ঘাট বলে একটা জায়গা আছে, সেখানে নৌকা থামিয়ে মটর সাইকেল অথবা ভ্যান নিয়ে চিনামাটির পাহাড় আর মিশন দেখে আসা হয়তো সম্ভব হতে পারে।


বিজয়পুর বিডিআর ক্যাম্প থেকে দূরে উচু পাহাড়

এভাবে দেড় দিনেই বিরিসিরি ভ্রমন সেরে ৩য় দিন খুব সকালেই বিরিসিরি থেকে বিদায় নিতে পারবেন।
তবে আবারো বলছি-একটু এডভেঞ্চারাস প্রকৃতির না হলে দূর্গাপুরে বেড়ানোটা এখন পর্যন্ত খুব একটা আরামদায়ক ভ্রমন নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৩৩
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×