somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেন্ট মার্টিন ভ্রমন কাহিনী সাথে হোটেল লোকেশন ম্যাপ আর ছবি (পর্ব-২)

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রথম পর্ব

জাহাজ থেকে নামার পর


সেন্ট মার্টিনে দুইবার যেয়েও অল্প সময়ে বুঝে ওঠা কঠিন কোনদিক রেখে কোনদিকে যাব ! একারনেই ফিরে আসার পর সেন্টমার্টিনের মূল অংশের (আমি নাম দিয়েছি নর্থ পোল;)) একটা ম্যাপ দাড় করার চেষ্টা করেছি।
জাহাজ যেখানটায় ভিড়ে সে পাশটা হল পূর্বদিক। জাহাজঘাট বা জেটি থেকে নেমেই প্রথমে যেটা চোখে পড়বে সেটা খুব একটা আকর্ষনীয় অংশ নয়। সত্যিকার অর্থে যারা দিনে যেয়ে দিনেই ফিরে আসেন তারা এই ৩ ঘন্টার মেয়াদে শুধু সারি সারি খাবার হোটেল,বাজারের হাকডাক আর কুকুরে সয়লাব জায়গা দেখে ভাবতে শুরু করে, সেন্টমার্টিনে আহামরি আছেটা কি?

কিন্তু সেন্টমার্টিনের আসল মজা একরাত না থাকলে উপভোগ করা সম্ভব না। আরো ভাল হয় দুইরাত থাকলে। সেক্ষেত্রে ১টা দিন ছেড়া দ্বীপের জন্য, আরেকটা দিন সেন্টমার্টিনের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
রাতটা দ্বীপে থাকলে রিসোর্টের বাইরে বেরুতে হবে যখন "ডেইলী প্যাসেন্জার" অর্থাৎ দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার ট্যুরিস্টটা ফিরে যাবে তখন আর পরদিনের ডেইলী প্যাসেঞ্জার আসা পর্যন্ত দ্বীপ আপনার। (অবশ্য কার কাছে শুনলাম শীতের সিজনে তিনদিনের টানা ছুটির সময়ে ওখানে পৌছে দেখে দ্বীপে কোন বালু দেখা যাচ্ছে না খালি মানুষ আর মানুষ)। আমি গিয়েছিলাম জানয়ারীর এক অফ ডে তে। কাজেই দ্বীপটা ছিল মোটামুটি আমাদের দখলে:)


থাকার জায়গার মধ্যে ভাল, মাঝারি, সাধারন সবই আছে। তবে প্রথম ক্লাস থাকার জায়গা সম্ববতঃ দুটো-
১) ব্লু মেরিন
২) প্রাসাদ প্যারাডাইস
প্রসিদ্ধ আরো যে কয়েকটা জায়গা আছে থাকার সেগুলো-
৩) অবকাশ
৪) সমুদ্র বিলাস (হুমায়ুন আহমেদ)
৫)নীল দিগন্ত রিসোর্ট

(দুঃখজনক ভাবে ২ আর ৫ সমদ্ধে আমি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিতে পারিনি-সময়ের অভাবে)
যে লাইট হাউজ ম্যাপেও দেয়া আছে সেটাকে দেখলে লাইট হাউজ মনে হয় না, মনে হয় মোবাইলের টাওয়ার।আমার ক্যামেরায় এটাকে তুলতে পারিনি বলে বাংলা উইকির ছবিটা দিয়ে দিলাম। (উইকির আপত্তি আছে নাকি?)


ব্লুমেরিনের পেছনে লাইটহাউজ ছবিসূত্রঃ উইকিপেডিয়া

তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় (যেখানে আমি থেকেছিলাম) একটা ভাল জায়গার কথা বলতে পারি যেটা নতুন গড়ে উঠছে সেটা হল

৬) ব্লু সী ইষ্টার্ণ রিসোর্ট


বড় করে দেখুনঃ
উপরের ম্যাপে দেখতে পাবেন জেটি থেকে নেমে বালুভূমির উপর দিয়ে হেটে গেলে মাত্র ৫-৭ মিনিটেই পৌছে যাওয়া যায় এই রিসোর্টে।


ব্লুসী ইষ্টার্ন রিসোর্টের সামনে বার বি কিউ চূল্লী

ব্লু -সী ইস্টার্ন রিসোর্টে থাকলে আরেকটা সুবিধা হল সকাল বেলায় সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখার সুবিধাটা পাবেন যেহেতু এটা পূর্ব্বদিকের বীচ সংলগ্ন। ব্লু মেরিন থেকেও এই ভিঊটা পাবেন। কিন্তু অবকাশ,সমুদ্র বিলাস যেহেতু পশ্চিম দিকের বীচ সংলগ্ন কাজেই সেখানে সূর্যোদয় নয় বরং সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্যোদয় দেখার জন্য যেহেতু সময় কম পাওয়া যায় (ঘুম থেকে ঊঠে দ্বীপের এক মাথা থেকে আরেক মাথা যাওয়া কি সহজ কথা?) কাজেই পূর্ব্বদিকের বীচ সংলগ্ন এই রিসোর্টটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আর সূর্যাস্ত ধরা তো সহজ। বিকালের মধ্যেই পশ্চিমের বীচে পৌছে গেলেই চলে ।

আমরা যেটা করেছিলাম তা হল, জাহাজ থেকে সাড়ে বারটায় নেমে দশ মিনিট হেটে (সাথে বাচ্চা-কাচ্চা,লাগেজ ছিল বলে নইলে পাচ মিনিটেই সম্ভব) রিসোর্টে পৌছে ফ্রেশ হয়ে, লাঞ্চ সেরে তিনটার দিকে পশ্চিমের বীচে পৌছে গেলাম ভ্যানে করে। এর আগ পর্যন্ত সময়টুকু ছেড়ে দিয়েছিলাম ডেইলি প্যাসেঞ্জারদের জন্যB-) ২০টাকা ভাড়ায় ১০মিনিটেই পৌছে গেলাম দ্বীপের পশ্চিম সাইডে।


দ্বীপের এই পশ্চিম সাইডে আছে অবকাশ আর সমুদ্র বিলাস


সমুদ্র বিলাসের পেছন দিক

{এর সামনের দিকের ছবি আমি তুলতে পারিনি এই লিঙ্ক এ সেটা পাবেন}
সাইকেল ভাড়াঃ
দ্বীপের কয়েক জায়গা বিশেষ করে পশ্চিম বীচ থেকে সাইকেল ভাড়া নেওয়া যায় ঘন্টা প্রতি ৬০-৮০টাকায়। তবে এসব সাইকেলের ব্রেক নাই,বেলও নাই। বীচ ধরে ঘুরতে পারবেন কিন্তু দ্বীপের সরু রাস্তায় ভ্যানের সাথে চলতে পারবেন না।

এবার আমি ভাস্কোদা গামা আর কলম্বাসের ভূমিকায়ঃ
সাইকেল পেয়ে ভাবতে থাকলাম কোন দিকে যাওয়া যায়। তখনও দ্বীপের মানচিত্র সমন্ধে ধারনা নাই। অস্তগামী সূর্য দেখে শুধু বুঝতে পারা যাচ্ছে পশ্চিম প্রান্তে আছি কিন্তু উত্তর দিকে যাব না দক্ষিন দিকে যাব? বিসমিল্লাহ বলে উত্তরে যাত্রা শুরু করলাম। বালুর মধ্যে দিয়ে সাইকেল চালান মাঝে মাঝে বেশ কষ্টকর। কোন কোন জায়গায় প্রবাল,কোন জায়গায় মাছ শুকানোর মাচা এসব পেরিয়ে প্রায় ১ঘন্টায় উত্তর দিক ঘুরে আমাদের রিসোর্টে এসে পৌছান সম্ভব হল। তবে আগে থেকে ম্যাপ জানা না থাকলেও দ্বীপ Explore করতে বেরিয়ে যদি উল্টো দিকে রওনা করতাম অর্থাৎ দক্ষিন দিক দিয়ে তবে কিন্তু সারা দিনেও পৌছুতে পারতাম কিনা সন্দেহ! দ্বীপের দক্ষিন দিক যেটা দক্ষিন পাড়া নামে পরিচিত সেটা বেশ এবড়োথেবড়ো, কৃষি জমিও আছে বোধহয় অনেক জায়গায়। আর সবচাইতে বড় কথা পুরোটা বোধহয় sandbeach নাই। সাইকেল চালানো আর একদফা সমুদ্রে গোছল করে কাটল বিকালটা।

বলেন তো সূযাস্ত না সূর্যোদয় কিভাবে চেনা যায়?

রাতের বেলাঃ
সেন্ট মার্টিনে পিডিবি বা পল্লী-বিদ্যুত এর সংযোগ নাই। পুরোটাই জেনারেটর নির্ভর। রিসোর্ট-হোটেলগুলো সন্ধ্যা থেকে সাধারনতঃ রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত জেনারেটর চালায়। দিনের বেলায় পানির পাম্প ছাড়ার জন্য কিছুটা সময় চালু রাখতে পারে। শীতকালে ফ্যান লাগে না বলে দিনে কারেন্টের অভাব টের পাওয়াও যায় না। সমস্যা হয় মোবাইল, ক্যামেরা ল্যাপটপ এসব চার্জ করা নিয়ে ।

সন্ধ্যার কিছু পরে হোটেলে ফিরে এসে বাথরুমে ঢুকে আবার গোছল সারতে হল। তবে কক্সবাজারের সমুদ্রে নেমে কাপড়ে যে পরিমান বালু লেগে থাকে এখানে দেখলাম অতটা নেই। মনে হয় নীচে প্রধানতঃ প্রবাল বলেই পানিও অনেকটা পরিষ্কার আর বালুমুক্ত।

রাতের বেলা জেটি অর্থাত জাহাজ ঘাটে সারি সারি রেস্টুরেন্টের আলো-ঝলমলে পরিবেশে মনেই হয়না দ্বীপে কারেন্ট নাই। এরা অনেক রাত অবধি জেনারেটরে এসব চালু রাখে। এখানে হোটেলের বাইরে টেবিলে সাজিয়ে রাখা হরেক রকমের জ্যান্ত মাছ থেকে বেছে নিয়ে অর্ডার দিতে পারবেন। এই প্রথম জানলাম রূপচান্দা ছাড়াও টেকচান্দা আর কালাচান্দা মাছের কথা।

দুটো মাছ গ্রিলের অর্ডার দিয়ে আধাঘন্টা একদম জাহাজ ভেড়ার জায়গাটায় কাটিয়ে আসলাম পূর্নিমার আলোয়। প্রায় দশটার দিকে আবার ফিরে এলাম রেস্টুরেন্টে । আমার পুচ্চিটা সহ আমাদের সাতজনের দলটা গ্রিল করা দুটো টেকচান্দা (রূপচান্দার বড় ভাই, কিন্তু দামে একটু সস্তা) সহ পরাটা খেলাম ৬৫০ টাকায়। তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে রিসোর্টে পৌছুলাম যখন তখন কারেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কাছে ছোট চার্জার লাইট ছিল। ওটা দিয়েই শোবার প্রস্ততিটা সেরে গভীর ঘুমের অতলে পৌছে গেলাম ১১টার মধ্যেই।
তৃতীয় ও শেষ পর্বের জন্য রইল ডে-টু
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৭
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×