somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরোপের কুখ্যাত রাজা লিওপোল্ডের গনহত্যার ইতিহাস

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেলজিয়াম রাজা ২য় লিওপোল্ড । এই কুখ্যাত রাজা লিওপোল্ড ছিলেন বেলজিয়ামের সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রধান। ইতিহাসের পাতায় এই কুখ্যাত খুনির নাম উচ্চারিত হয় না। হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের নিধনযজ্ঞ বা হলোকাস্ট নিয়ে কত হৈ চৈ । এই কুখ্যাত খুনি রাজা লিওপোল্ডের আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক উন্মত্ততা, সাম্রাজ্যবাদ, দাসপ্রথা ও গণহত্যা চালানোর ইতিহাস কোথাও লেখা হয় না ।

পুঁজিবাদী পরাশক্তির আজ্ঞাবহ আধুনিক মিডিয়ায় কখনো আফ্রিকার এই করুণ অধ্যায় তুলে ধরা হয় না, হাজার হাজার মানুষের করুন আর্তনাদ চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে ইতিহাসের ধুলোর আস্তরণে।

এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু জায়গায় উপনিবেশ গড়তে ব্যর্থ হয়ে সে প্রতারনা করে স্টেনলি (local chiefs) নামে এক কর্মকর্তা লিওপোল্ডের নির্দেশে তিনি স্থানীয় সমাজপতিদের

কাছ থেকে এ মর্মে দলিল লিখিয়ে নেন যে, তাদের দখলে যত সম্পদ ও সম্পত্তি রয়েছে তার শতভাগ স্বত্বাধিকার রাজা লিওপোল্ডের কাছে বিক্রি করা হলো। এসব দলিলে আসলে কী লেখা ছিল, তা ঘুণাক্ষরেও "কঙ্গো" অশিক্ষিত সমাজপতিরা বুঝতে পারে নাই।



"কঙ্গো" কিনে নিয়ে সে দেশের জনগণকে দাসে পরিণত করে। একটি পুরো দেশের জনগণকে নিজের ব্যক্তিগত দাসে পরিণত করার মত এমন নজির ইতিহাসে একেবারেই বিরল।

! এই কুখ্যাত রাজা International African Society নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে । সেই সংগঠনের মাধ্যমে তথাকথিত ‘মানবহিতৈষী’ ও ‘বৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের’ আড়ালে সে কুখ্যাত দাস ব্যবসা চালায়। সে কঙ্গোর মানুষদেরকে দিয়েই কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের করায়। তার একনায়কতন্ত্র কঙ্গোর উপর চাপিয়ে দিয়েছিল ভয়াবহ অত্যাচার, অঙ্গচ্ছেদ, মৃত্যুদণ্ড। এসব কিছুই সে করত তার নিজস্ব সেনাবাহিনী দ্বারা ।


কঙ্গোতে তার নিজস্ব বাহিনীর নাম ছিল ফোর্স পাবলিক [Force Publique (FP)]। রাজা লিওপোল্ডের নির্দেশে ফোর্স পাবলিকের অফিসাররা জনপ্রতি আইভরি (হাতির দাঁত) ও রাবার সংগ্রহের কোটা ধার্য করে দিত। নির্দিষ্ট পরিমাণ আইভরি বা রাবার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড। তবে সেনাবাহিনীর অফিসারদের দয়া হলে কুমিরের চামড়ার চাবুক খেয়েই অনেকে বেঁচে যেত।



এতে তার নৃশংস হত্যাকান্ডে নিহত হয়েছিল আফ্রিকার কঙ্গোর প্রায় ১০ মিলিয়নেরও ( এক কোটি ) বেশি মানুষ ।

মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য সেনাবাহিনীর গুলি যাতে অপচয় না হয়, সে জন্য সরকারের নির্দেশে প্রত্যেকটি গুলির বিপরীতে একটি করে মানুষের কাটা কব্জি জমা দিতে হতো। এ ব্যবস্থার সুফল হিসেবে মনে করা হতো হাত কাটার ভয়ে কেউ রাবার সংগ্রহে আলসেমি করবে না। যা অত্যন্ত লোমহর্ষক হলেও তাদের কাছে অযৌক্তিক ছিল না। কিন্তু একটা কুফল দেখা দিয়েছিল, বনের ভেতর থেকে রাবার সংগ্রহের তুলনায় কাটা হাত সংগ্রহ করা অনেকটা সহজ ছিল। ফলে কঙ্গোলিজদের মধ্যে যারা সন্ত্রাসী ছিল, তারা অন্যদের ওপর আক্রমণ করে বিজিত গোত্রের লোকদের হাত কেটে জমা দিত।

রাবার সংগ্রহের পদ্ধতি ছিল লোমহর্ষক ও নিষ্ঠুরতায় ভরা । রাবার সংগ্রহকারীরা রাবার গাছের জঙ্গলে, গাছের পাতায় ও লতায় লম্ব্বা দা দিয়ে আঘাত করত সেই আঘাতে অনেক সময় তরল রাবার ছিটকে এসে তাদের গায়ে আটকে যেত। এসব রাবার পরে দা কিংবা ছুরি দিয়ে শরীর থেকে উঠানো হতো। উঠানোর সময় বেশিরভাগ সময়ই কঙ্গোবাসীর গায়ের চামড়া পশমসহ উঠে আসত। নিগ্রোদের কালো চামড়ার ব্যথা সাদারা গায়ে মাখত না। কারণ রাষ্ট্রীয় দলিলে এভাবেই তাদের দলপতিরা স্বগোত্রীয়দের ভাগ্য নির্ধারণ করে গেছে।

আমেরিকার বিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েন রাজা লিওপোল্ডকে নিয়ে একটি বিদ্রূপাত্মক বই লিখেন “King Leopold’s Soliloquy; A Defense of His Congo Rule”। মাত্র ৪৯ পৃষ্ঠার এই বইতে রাজা লিওপোল্ডের কঙ্গো শাসনামলে সেদেশের মানুষের দূর্দশার কথা তুলে ধরেন।

মার্ক টোয়েন আমেরিকার সর্বত্রই খুব জনপ্রিয় লেখক ছিলেন । সারা বিশ্বের স্কুলে পাঠ্য বই হিসাবে তার লেখা ‘হাকলবেরি ফিন’ কিংবা ‘টম সয়ার’ পড়ানো হয়, কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে লিওপোল্ডকে নিয়ে লেখা বই “King Leopold’s Soliloquy; A Defense of His Congo Rule” পাঠ্যতালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। সচেতনভাবেই এটা করা হয় কারণ স্কুলের পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণকারী কমিটির মতে ‘আফ্রিকার কোন ইতিহাস নেই।“

আফ্রিকার মহাযুদ্ধ কিংবা রাজা লিওপোল্ডের কুখ্যাত শাসনামলে কত মানুষ মারা গিয়েছে সেটি কখনো কোথাও উচ্চারিত হয় না। দ্বিতীয় কঙ্গোযুদ্ধ যা কিনা আফ্রিকার মহাযুদ্ধ নামেও পরিচিত তাতে নিহত হয় অসংখ্য মানুষ। এই মহাযুদ্ধে বাম্বেঙ্গা নামে একটি আঞ্চলিক নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী দাসে পরিণত হয়েছিল ও নরমাংস ভক্ষণকারীতে রূপান্তরিত হয়েছিল। দাসপ্রথা ও নরমাংস ভক্ষণ-এ দুটিই ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু কেউ জানতে চায় না কিংবা চেষ্টা করে না এই দুটি ঘটনার জন্য আসলেই দায়ী কে বা কারা ?

আফ্রিকার জনগণের বিভক্তি কাদের স্বার্থ করা করেছিল ?

শ্বেতাঙ্গ ইতিহাসবিদরা শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশ স্থাপনকারীদের কথা বলেছে, বলেনি সেই শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশ স্থাপনকারী কথা ,যাদের কাছে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরা ‘অর্ধেক মানুষ’ বা সাব-হিউম্যান স্পিসিস বলে গণ্য হত !

পুরো একটি দেশকে নিজের ব্যক্তিগত দাসে পরিণত করা, দশ মিলিয়ন আফ্রিকানকে হত্যা করার পরও সেসময়কার পরাশক্তিদের সমর্থনের কারণে, তাই রাজা লিওপোল্ডের নাম হিটলারের সাথে উচ্চারিত হয় না, তার ছবি ভয় কিংবা ঘৃণা উদ্রেক করে না, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া মানুষদের কথা কোথাও উচ্চারিত হয় না।

এই কুখ্যাত রাজা লিওপোল্ডের কুখ্যাতি ধামাচাপা দিয়ে রাখার কারন এতে, আধুনিক ইউরোপের মেকি ‘ভদ্র’ চেহারাটির পেছনের আসল স্বার্থবাদী ও স্বৈরাচারী চেহারা উন্মোচিত হয়ে পড়বে। যা বর্তমান মানবতার ধ্বজাধারী ইউরোপিয়দের জন্য লজ্জাকর ও কলংকময় ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×