হাঙ্গেরী, সময়টা ১৯৩৩ সাল।হাঙ্গেরীয়ান কবি লাজলো জাভোর এর একটি কবিতাকে উপজীব্য করে পিয়ানিস্ট রেজসো সেরেস সৃষ্টি করলেন একটি মোহনীয় সুর ‘গ্লুমি সান্ ডে’ বা ‘বিষণ্ন রবিবার’।এরপর সেরেসের সেই সুরের বিষন্নতায় ঘটে গেলো একে একে ১৭টি আত্মহত্যা।হাঙ্গেরীয়ান সরকার বাধ্য হলো সুরটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে !! কিন্ত আইন কানুন এর বালাই উপেক্ষা করে সে সুরের জাল ছড়িয়ে পড়লো হাঙ্গেরীর বাইরে।ইউরোপ, আমেরিকা মিলিয়ে প্রায় ২০০ আত্মাহুতির সঙ্গে এই সুরের সম্পর্ক রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।এক পর্যায়ে সেরেস নিজেকে দায়ী করতে শুরু করলেন এতগুলি প্রাণের আত্মাহুতির জন্য।ফল স্বরূপ তিনি নিজে্ও আত্মহত্যা করেন জানালা থেকে লাফিয়ে। কি আছে এই সুরে? আমার কাছে মেলডিয়াস মেলান্কলিক একটা এটমোষ্ফেয়ার এর জন্য সুরটিকে বেশ মনে হয়েছে, কিন্তু আমি এখনও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছি এবং আত্ম হননের বিন্দু মাত্র ইচ্ছাও আমার মনে জাগ্রত হয়নি
এই সত্য ঘটনাটির সঙ্গে হাঙ্গেরীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর নাজিদের অত্যাচার, আর একটি ত্রিভূজ প্রেম এই তিনটি ব্যাপারের সমন্বয় ঘটিয়ে পরিচালক রলফ সুবেল এর তৈরী মুভি ‘গ্লুমি সান ডে’।মুভিটিকে বলতে পারেন ফিক্শন এবং ইতিহাসের সমন্বয়।ফিকশন বলছি এই কারনে যে ইতিহাসের কিছু পরিবর্তন পরিচালক স্বেচ্ছায় পরিবর্তন করেছেন।যেমন সেরেস এর আত্মহত্যাটা দেখানো হয় পিস্তল এর মাধ্যমে (তিনি জানালা থেকে লাফ দিয়েছিলেন)।এরকম আরও কিছু ইতিহাস এর ব্যত্য় আছে সেগুলিতে যাচ্ছিনা, আপাতত মূল কাহিনীতে যাই।
মূল কাহিনীটা লাজলো নামের এক ইহুদি ব্যবসায়ীর (লক্ষ্য করুন, নামটি কিন্তু সুরটি যে কবিতাটিকে উপজীব্য করে সৃষ্টি তার কবির নাম)।লাজলোর রেষ্টুরেন্টে পিয়ানিষ্ট হিসেবে কাজ নেয় আন্দ্রাজ (সেরেসের চরিত্রটি)।লাজলো আর তার বান্ধবী ইলোনা দু’জনে মিলে রেষ্টুরেন্টটি পরিচালনা করে।পুরো ছবিটিতে লাজলোকে বলতে পারেন সিম্বল অব প্রো-সেমিটিসিম।অর্থ্যাৎ,সমগ্র পৃথিবীতে সে সময় নাজিরা ইহুদী নিধনের যে মেসেজটি ছড়িয়েছিলো, লাজলোর সহজ সরল সাধারণ চরিত্রটি তার নীরব প্রতিবাদ (ইহুদী মাত্রই কি খারাপ?)।আর তাই আন্দ্রাজের প্রতি ইলোনার আসক্তিতে আক্রোশের পরিবর্তে লাজলোর প্রতিক্রিয়াটা শুনুন ‘কোন ইলোনা ছাড়া বেচেঁ থাকার চেয়ে আমি অর্ধেক ইলোনা নিয়েই বাঁচতে চাই’।ত্রিভূজ সম্পর্কের সহাবস্থানের যে উদাহরণ পরিচালক দেখালেন এটাকে ওই সময়কার রাজনীতিতে ক্রিশ্চিয়ানিটি এবং সেমিটিসম এর সহাবস্থানের প্রতীক বললে খুব একটা ভুল হবেনা (আন্দ্রাজ এর চরিত্রটি ক্রিশ্চিয়ান)। এরপর আন্দ্রাজের সেই বিখ্যাত সুর সৃষ্টি, লাজলোর সহায়তায় তার বিখ্যাত হয়ে যাওয়া এবং একটার পর একটা আত্মহত্যা এগুলি গতানুগতিক সিনেমাটিক্যাল হাইপ।কিন্তু এর মধ্যেও সংলাপের গভীরতায়্ বিশ্ব রাজনীতিতে মানবতার সংকট আপনাকে ছুয়েঁ যাবে।যেমন এক পর্যায়ে লাজলোর উপর এক ইহুদী জেনারেলের আক্রমণ এর ফলে ইলোনার কাছে লাজলোর সহজ সরল কৌতুহলী প্রশ্ন ‘আমার মা-বাবা ইহুদী, তাই আমিও ইহুদী, তারা অন্য ধর্মের হলে আমিও অন্য ধর্মের হতাম। যা আমি আমার জন্ম সূত্রে পেয়েছি, যার জন্য আমি দায়ী নই, তার জন্য কেনো আমাকে মরতে হবে?”…অবশ্যম্ভাবী ভাবেই ইলোনার কাছে এই উত্তর নেই কারন প্রশ্নটি অডিয়েন্সকে করা।পরিচালকের অ্যান্টি নাৎসিজম্ পুরো ছবিটিতে বেশ স্পষ্ট। যেমন হ্যান্স চরিত্রটির দ্বারা পরিচালক বোধ হয় বোঝালেন, নাজিরা আর যাই হোক বন্ধুত্ব তাদের দ্বারা হবেনা।এরপর লাজলোর মৃত্যু এবং ইলোনার একা হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে সেই রেষ্টুরেন্ট পরিচালনার মাধ্যমে আবার প্রায় ষাট বছর পরে হ্যান্সকে হত্যার মাধ্যমে লাজলো ও আন্দ্রাজ এর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার মধ্যে শেষ হয় ছবিটি।মজার ব্যাপার একদম শেষ দৃশ্যে সিন্কে থালাবাসন ধোয়ার দৃশ্যটি ভালো করে না দেখলে আপনি বুঝবেনইনা যে হ্যান্সের মৃত্যুটি স্বাভাবিক নয়, ইলোনাই তাকে হত্যা করেছে।
ছবিটির মেকিং এবং স্ক্রিপ্ট খুব সুন্দর।স্ক্রিপ্টে গভীরতা আছে।প্রত্যেকের অভিনয় অসাধারণ।ইলোনার পোশাকে নীল রং এর প্রাধান্যটা চোখে পড়ার মতো (হয়তো বিষণ্ণতার বার্তা)।আর ইলোনার রূপ, আহা ওটা আপনারাই বিচার করুন।
পোষ্টটি বোধ হয় বেশী বড় হয়ে গেলো।মাফ করবেন।আজকেই মাত্র সেইফ হয়েছি মডুরা না আবার আমার ডিমোশন দিয়ে দেয়।ধন্যবাদ।
যারা ছবিটি ডাউনলোড করতে চান, এইখানে টরেন্ট লিন্ক: এই খানে খোঁচা হবে।
সাবটাইটেলএর জন্য এইখান থেকে *.এসআরটি ফাইলটি নামিয়ে নিন: এই খানে গুঁতা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



