এ লেখাটি মূলত তাদের খানিকটা সাহায্য করতে পারে যাদের ফটোগ্রাফ কোনো না কোনো কারণে ঠিক "ভালো ফটোগ্রাফারদের মতো" হয় না। একটি কথা মনে রাখা জরুরী, সেটা হলো একটি ভালো ফটো তুলে পুরস্কার পাওয়া যতোটা গুরুত্বপূর্ণ ততোটাই দরকারি অপর ফটোটি কেন ভালো হলো না, সেটি জানা। মনে রাখবেন, একই বিষয়ের একই অ্যাঙ্গল থেকে তোলা দু’জনের দুটি ফটোগ্রাফ মান বিচারে দুই রকম হতে পারে। আসুন একটি উদাহরণ থেকে সেটি বিবেচনা করা যাক।
চায়নার তিয়েনআনমেন স্কয়ারে সাঁজোয়া ট্যাংক বহরের সামনে দাঁড়ানো নির্ভীক সেই সাদা শার্ট গায়ে যুবকের কথা হয়তো অনেকেরই মনে থাকবে। সে দিনের সেই ঘটনার ফটো প্রায় একই অ্যাঙ্গল থেকে তুলেছিলেন অনেকেই। এপি, এএফপি, রয়টার্স, ম্যাগনাম, বাঘা বাঘা সব নিউজ মিডিয়ার ফটোগ্রাফার ছিলেন সেখানে। কিন্তু শেষ বিচারে ওই বছরের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো জিতে নেন নিউজউইক ম্যাগাজিনের চার্লি কোল। একই ফটো তো অনেকেই তুলেছিলেন, তাহলে নিউজউইকের ফটোগ্রাফার কেন পাবেন পুরস্কার? বাকিরা কি দোষ করলো? কারণটি দেখুন ওপরের উদাহরণে।
এপির ফটোগ্রাফার জেফ ওয়াইডেনার যে ছবি তুলেছেন তাতে চোখ বারবার চলে যায় সাদা স্ট্রিট লাইটের দিকে। এই ছবিটার ওপরের দিকে বেশ খানিকটা জায়গা অন্ধকার হয়ে আছে, সেখানে একটি গাড়ির কেবল বাম্পারটি দেখা যাচ্ছে- তাও আপনার দৃষ্টি খানিকটা কেড়ে নেবে। অপরদিকে চার্লি কোলের তোলা ছবিতে আপনি দুটো ‘ঝামেলা’র কোনোটিই পাবেন না। সেইসঙ্গে চার্লি আরো চালাকি করেছেন কম্পেজিশনে। ওয়াইডেনারের ছবিতে সবচেয়ে পেছনের ট্যাংকের পর দেখুন খানিকটা খালি জায়গা আছে। এ খালি জায়গা বলে দেয় ট্যাংক ওখানে চারটিই ছিল। অপরদিকে চার্লি কোলের ছবিতে চার নম্বর ট্যাংকের ফিগারটি ইচ্ছে করেই পুরোটা রাখা হয়নি। এ ছবিটি দেখলে এমন অনুভূতি জাগে যে, ওই লাইনে অসংখ্য আর্টিলারি ট্যাংক ছিল। সামনে দাঁড়ানো যুবকের সাহস বোঝানোর জন্য চার্লির ছবিটি অনেক পাওয়ারফুল। অথচ, আলাদা আলাদাভাবে দেখলে ছবি দুটিকে অনভিজ্ঞ চোখে মনে হবে একই রকম।
নিউজ ফটোগ্রাফি বিচার করলে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।
শেষ করার আগে চলুন কম্পোজিশন বিষয়ে কিছু টিপসের খোঁজ নেয়া যাক। এ টিপসগুলো বিভিন্ন বইতে হরহামেশাই পাওয়া যায়, অনলাইন নাগালের মধ্যে থাকলে সেখানেও পাবেন অনেক টিপস। এমন অনেক টিপস থেকে লাগসই কয়েকটা মিলিয়ে নিন নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে।
০১· ফ্রেমের ভেতরে পুরো স্থানটুকু ফিল আপ রাখার চেষ্টা করুন। আর যদি স্পেস খালি রাখতে চান, তবে ভেবে দেখুন খালি রাখার জন্য যথেষ্ট যুক্তি আছে কি না।
০২· সাবজেক্ট যতোটা গুরুত্বপূর্ণ ততোটাই গুরুত্ব দিন ব্যাকগ্রাউন্ডকে। খুব ভালো সাবজেক্টের ছবিও ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ হওয়ার কারণে আবেদন হারাতে পারে।
০৩·ভিউফাইন্ডারে তাকানোর আগেই কল্পনায় বোঝার চেষ্টা করুন ঠিক কতোটুকু অংশ আপনি ফ্রেমের মধ্যে রাখবেন। আর কোন বিষয়গুলি অবশ্যই ফ্রেমের বাইরে রাখা উচিৎ।
০৪·ছবি তোলার সময় একটি পোর্টেট (খাড়া) ও একটি ল্যান্ডস্কেপ (আড়াআড়ি) ফরম্যাটে স্ন্যাপ নিয়ে রাখুন।
০৫· আলো কম বেশি, রঙের তীব্রতা কম-বেশির মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকুন।
০৬· ভালো ফটোগ্রাফার হতে হলে ভালো ছবি দেখার কোনো বিকল্প নেই। যখন কোনো ফটোগ্রাফ আপনার খুব ভালো লাগে তখন সেই ফটোগ্রাফটির কম্পোজিশন খেয়াল করুন। চারকোনা ফ্রেমের ভেতর দরকারি এলিমেন্টগুলোর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করুন।
০৭· খালি চোখে আমরা যতো বিষয় দেখি তার সবই মাটি থেকে মোটামুটিভাবে সাড়ে পাঁচ ফিট ওপর থেকে দেখি। ছবি তোলার সময় সব সাবজেক্টই যে একই উচ্চতা থেকে তুলতে হবে তেমন কোনো আইন নেই। চেষ্টা করম্নন সাধারণ উচ্চতা থেকে বেশ খানিকটা নিচে বা উপরে ক্যামেরা রেখে ছবি তুললে ফলাফল কি দাঁড়ায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা নাটকীয় ছবি তৈরি করে। মোট কথা, সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে বিষয়টি অন্য কোনো ভাবে, অন্য কোনো এঙ্গলে দর্শককে দেখানো যায় কিনা যাচাই করুন।
=======================================
এ আর্টিকলটি এর আগে ছাপা হয়েছিল যায়যায়দিনের ক্যামেরা পাতায়
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:১১