আমি যদি একটি বিশ্ববিদ্যালয় খুলি তবে সেখানে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই রাখব। সেগুলো হবে বাংলাদেশে প্রথম এবং অনন্য। আসুন দেখি সেই বিষয়গুলো কী কী।
১। ব্যাচেলর অব ইলেকশন ইন্জিনিয়ারিং: বাংলাদেহসের পরিপ্রক্ষিতে এটি হবে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। পাঁচ বছর বা সাত বছর পর পর কীভাবে নিজের দলকে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করা যায় সেগুলোই এখানে শেখানো হবে। এ বিষয়ে পড়ে বেকার থাকার কোন সম্ভাবনাই নেই। পাশ করার সাথে সাথে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে আছে চাকুরীর অপূর্ব সুযোগ। পুরো পাঁচ বছর ধরে নীল নকশা করার দায়িত্ব থাকবে ইলেকশন প্রকৌশলীদের হাতে। এখানে মূলত পড়ানো হবে কীভাবে ভোট কেন্দ্র দখল করতে হয়, কীভাবে ব্যালট বাক্সে সব ব্যালট পেপারে কাঙ্ক্ষিত মার্কায় সব সিল দিতে হয়, কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীকে নিজ দলের প্রতি হেলানো যায় ইত্যাদি।
২। ব্যাচেলর অব ফুড অ্যাডাল্টারেটিং (সম্মান): এ বিষয়টির কর্মক্ষেত্র বিশাল। পাশ করার পর পাতি থেকে শুরু করে বৃহৎ খাদ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকুরীর সুযোগ। কীভাবে খাবারে ভেজাল মেশানো যায়, কীভাবে নিজ প্রতিষ্ঠানের খাবারকে বছরের পর বছর সতেজ ও সজীব মেশানো যায়, কীভাবে ভেজাল মেশালে সরকারের স্যানিটারী ইন্সপেকশন টিম তা ধরতে পারবে না, কীভাবে নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবারকে আকর্ষনীয় চেহারা দেয়া যায়, কীভাবে এক কেজি তরল খাবার থেকে এক মণ বানানো যায় এসবই এখানে শেখানো হবে।
৩। ব্যচেলর অব অজ্ঞান এন্ড মলম সায়েন্স(সম্মান): নিঃসন্দেহে এটি একটি অনন্য ও মৌলিক বিষয়। দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে গড়ে ওঠা বিশাল অজ্ঞান ও মলম পার্টি হবে আপনার সম্মানিত(?) ক্লায়েন্ট। কীভাবে অল্প খরচে উন্নত মানের অজ্ঞান করার ওষুধ প্রস্তুত এবং চোখে ডলার মলম তৈরি করা যায়, কীভাবে সিএনজি এবং ট্যাক্সি চালকদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হয়, কীভাবে কাঙ্ক্ষিত সিএনজি ও ট্যাক্সিকে নেভিগেট করতে হয়, কীভাবে অভিনব কায়দায় টার্গেটকে অ্যাটাক করতে হয়, কীভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলো দেয়া যায়- এসবই এখানকার প্রতিপাদ্য। তাছাড়া টার্গেটের সাথে বিহেভিয়ার সেখানোর জন্য
এখানে মার্কেটিংয়ের কোর্স করানো হবে।
৪। ব্যাচেলর অব রিভার এন্ড ক্যানাল গ্র্যাবিং(সম্মান): এ সাবজেক্টটিতে পড়ানো হবে কীভাবে স্থানীয় পেশীবহুল শ্রেনীতে নাম লেখাতে হয়, কীভাবে নিজ দেশের নদী ও খালকে নিজ মনে করে ভরাট করে দালান-কোঠা নির্মাণ করতে হয়, কীভাবে নদীর পাশের জমিকে নিজ করার জন্য রাজউক বা এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে হাত করতে হয়, কীভাবে মিডিয়াকে হাত করতে হয়, কীভাবে ভরাট করা নদীতে বস্তি তৈরি করে মানুষের সিমপ্যাথি তৈরি করে তার দখল নিতে হয়, কীভাবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিজেকে ঢাকতে হয়, কীভাবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে নিজের জমিকে রাস্তা বা লেক বা খালের মধ্যে প্রবেশ করাতে হয় ইত্যাদি।
৫। ব্যাচেলর অব কোচিং সেন্টার ম্যানেজমেন্ট(সম্মান): এটি হবে সব চাইতে হট সাবজেক্ট। এতে থাকবে কীভাবে ফার্মগেট এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিতে হয়, বাড়ি কিনলে কী কী ঝুঁকি থাকবে, কীভাবে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে প্রসপেক্টাস, সিডি, কলম, গিফট আইটেম দিয়ে পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের নিজ কোচিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে হয়, কীভাবে চটকদার বিজ্ঞাপন তৈরি করতে হয়, কীভাবে চান্স পাওয়া ছাত্রদের দিয়ে "আমি অমুক, এই কুচিংএ পড়ে এইখানে চান্স পাইছি" জাতীয় লেখা লেখাতে হয়, কীভাবে বুয়েট বা মেডিকেলে চান্স পেয়ে আর কোনদিন পাস না করে নামকরা কোচিংয়ের মালিক বা ভাইয়া হওয়া যায়, কীভাবে স্যারদের পড়ানোর জায়গাগুলোতে নিজ কোচিংয়ের নাম সম্বলিত ক্যালেন্ডার ও ঘড়ি সাপ্লাই দিতে হয় ইত্যাদি।
৬। ব্যাচেলর অব তদন্ত কমিটি ফরমেশন(সম্মান): এটিও একটি অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন বিষয় হবে বলে আশা করা যায়। এর আওতায় থাকবে কীভাবে বিতর্কিত ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হলে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয়, তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে কীভাবে মিডিয়ার সামনে ভাব নিয়ে কথা বলতে হয়, কীভাবে সিলগালা করা কাগজপত্র নিয়ে দ্রুতগতিতে চলাফেরা করতে হয়, কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত রিপোর্টের প্রকাশের তারিখ বছরের পর পেছান যায়, কীভাবে তদন্ত ফাইল অন্যান্য ফাইলের নীচে চাপা দেয়া যায়, কীভাবে সকলের মন থেকে ঘটনা মুছে ফেলতে হয় ইত্যাদি।
৭। ব্যাচেলর অব সিভিল সোসাইটি(সম্মান): এ বিষয়ে থাকবে কীভাবে নিজেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, কীভাবে সাংবাদিকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্রের সংকটকালে টিভি খবরে এসে বক্তব্য দিতে হয়, কীভাবে পেপারে কলাম লিখতে হয়, কীভাবে নিয়মিত টক শোতে উপস্থিত হতে হয়, কীভাবে সাক্ষাতকার দেয়ার ঘরে মোটা মোটা বই সাজাতে হয়, কীভাবে অল্প জেনেও অধিক বক্তব্য দেয়া যায়, কীভাবে মুখে মুখে সব সমস্যার সমাধান দিতে হয়, কীভাবে সর্ববিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া যায় ইত্যাদি।
৮। ব্যাচেলর অব মার্শালাইজেশন(সম্মান): এটি একটি অত্যন্ত হাই প্রোফাইল সাবজেক্ট। এখানে পড়ানো হবে কীভাবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক পদে সামরিক ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া যায়, কীভাবে সামরিক বাহিনীর সুযোগ সুবিধা দিন দিন বাড়ানো যায়, কীভাবে টিভিতে প্রচার করার জন্য সামরিক বাহিনীর মিউজিক ভিডিও তৈরি করতে হয়, কীভাবে সামরিক সদস্যদের রাষ্ট্রের সবচাইতে ট্যালেন্টেড বানাতে হয়, কীভাবে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পরিধি বাড়াতে হয়, কীভাবে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেটের বরাদ্দ বাড়াতে হয়, কীভাবে সামরিক সদস্যদের বেশি বেশি পার্টিতে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হয়, কীভাবে সারা বছর খেটে মরা অন্যান্য বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের চাইতে বসে থাকা সামরিক বাহিনীকে জনগণের কাছে "জনগণের জন্য খেটে মরা বাহিনী" হিসেবে প্রপাগান্ডা চালাতে হয়, কীভাবে সামরিক বাহিনীর মর্যাদা সবচেয়ে উপরে রাখা যায় ইত্যাদি।
আর হ্যাঁ, বিবিএ ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশল তো থাকছেই।
পাঠক, ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই চাহিদা সম্পন্ন এসব বিষয় সম্পর্কে আপনাদের স্পষ্ট ধারণা হয়েছে। এসব বিষয় খুলে আমার বিশ্ববিদ্যালয়টি নিশ্চয়ই খুব অল্প দিনে একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে। ধন্যবাদ।
*****ব্লগবিধিবদ্ধ সতর্কীরণ: এটি একটি ফানপোস্ট। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল থাকলে তা অনভিপ্রেত কাকতালমাত্র। সেজন্য এই ব্লগার দায়ী থাকবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:১৬