somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: রাজনীতি [স্পয়লার অ্যালার্ট!]

২৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই বছরের সবচে বহুল প্রত্যাশিত বলিউডি মুভি ছিল রাজনীতি।গুণী পরিচালক,ভালো কাস্টিং,ভালো গল্প-সব মিলিয়ে জমজমাট এক মুভির হাতছানি।সে প্রত্যাশা কতখানি পূরণ হলো,তা পরে বলছি।তার আগে রাজনীতি'র গল্পটা বলি।একটু জটিল গল্প।গুছিয়ে বলা মুশকিল।তাও চেষ্টা করছি।

নানা পাটেকার,অর্জুন রামপাল,মনোজ বাজপেয়ি সবাই একই রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আত্নীয়।রণবীর কাপুর,অর্জুন রামপালের পড়ুয়া,ক্যারিয়ারিস্টিক,প্রবাসী ছোট ভাই।তাদের গাড়ির ড্রাইভারের ছেলে অজয় দেভগান (যে কিনা আসলে,অর্জুন-রণবীরের বড়ভাই,তাদের মায়ের কুমারী জীবনের ভুল।যদিও এই কথাটা কেউ জানে না)।ক্যাটরিনার বাবা রণবীরদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড।কে কি,কার সাথে কার কি সম্পর্ক এটা বুঝতে বুঝতেই মুভির প্রথম ২৫ মিনিট শেষ।

অর্জুন-রণবীরের মা নিখিলা প্রথম জীবনে বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।নাসিরউদ্দিন শাহ্‌ ছিলেন তার কাছে ঈশ্বরতুল্য নেতা।এক বৃষ্টির রাতে দুজনে অনেক কাছে চলে এলেন (আগেই বলেছি,যার ফলস্বরূপ পৃথিবীতে আসলেন অজয়)।অনুতপ্ত হয়ে তুখোড় নেতা নাসিরউদ্দিন শাহ্‌ তার রাজনীতি,তার দুঃখী জনতা সব ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে তপস্যায় চলে গেলেন।অজয়ের জন্মের পর তার "মামা" নানা পাটেকার,তাকে বেনারসের ঘাটে ফেলে আসলেন।অজয়ের মা,এক সময়ের মাঠ কাঁপানো নেত্রী,তিনিও রাজনীতি ছেড়ে আরেক রাজনৈতিক পরিবারে বিয়ে করে ঘরকন্যা শুরু করলেন।(কি আর বলবো :| )

৩০ বছর পর সময়ের পালাবদলে দলের নেতৃত্ব পায় অর্জুন রামপাল ও তার বাবা।এতে নাখোশ হয়ে যান মনোজ সাহেব।কেন্দ্রীয় কমিটির এহেন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ ঢুকে পড়েন অর্জুনদের ড্রাইভারের ছেলে,কাবাডি চ্যাম্পিয়ন অজয়।নিজের দল ভারী করার জন্য,তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে নিলেন মনোজ।:|

অর্জুনের বাবা,দলের বর্তমান নেতা একদিন চলতি পথে গুলি খেয়ে বসলেন।তার হাসপাতালে যাওয়ার পর হঠাৎই মুভির গল্প পাল্টে গেল।"হাসপাতালে কোনো সিকিউরিটির লোক নেই দেখে রেগে যায় মাথা গরম বড় ভাই,শান্ত-হিসেবী ছোট ছেলে রণবীর পুলিশকে এ নিয়ে কিছু বলতে গেলে,পুলিশ তাকে চড় মারে।রণবীরের গালে দাগ বসে যায়।" ঘটনাগুলো একটু চেনা লাগছে কি?হু,এই অংশটা গডফাদার থেকে কপি করা (ভাবছি আরও কতদিন গডফাদারের বিভিন্ন ভার্শন দেখতে হবে X( )।

পলিটিকাল গেমের অংশ হিসেবে ক্যাটরিনাকে বড় ভাই অর্জুনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় রণবীর।কিন্তু ক্যাটরিনার একমাত্র পছন্দ ছিলো রণবীর।এটা বুঝতে পেরে অর্জুন,৮০ দশকের বাংলা ছবির নায়কের মতো,সোফা-ডিভানে ঘুমানো শুরু করে।:|

অন্যদিকে রণবীরের অ্যামেরিকান গার্লফ্রেন্ড ভারতে এসে উপস্হিত হয়।মুভিতে দেখানো হয়েছে তার বাড়ি আয়ারল্যান্ড।যদিও তার উচ্চারণ শুনে সেটা বোঝার উপায় নেই।:|

একদিন সুযোগ বুঝে অর্জুন সেই পুলিশ অফিসারটাকে (হাসপাতালে যে রণবীরকে চড় মেরেছিল) পিটিয়ে মেরে ফেলে,ফিজিক্যালি অবিউস করে তার সাবেক নারী সহযোগীকে (শ্রুতি শেঠ)।মজার ব্যাপার হলো,এতোদিন বিপক্ষ দলের ছোট্ট ছোট্ট ইস্যু নিয়েই,যেখানে দুইপক্ষ তুলকালাম বাধিয়ে দিচ্ছিল,সেখানে অর্জুনের এতো বড় দুটো অপরাধ নিয়ে কোনো কথাই হলো না।:-*

এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতে গিয়ে,বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় রণবীরের প্রেগন্যান্ট গার্লফ্রেন্ড (আবারও গডফাদার /:)!মাইকেলের সিসিলিয়ান স্ত্রী অ্যাপোলোনিয়া)।বোনাস হিসেবে অর্জুন রামপালকেও সাথে নিয়ে যায়।রণবীর-ক্যাটের রাস্তা ক্লিয়ার!;)

রাগে অন্ধ হয়ে নানা পাটেকার অজয় দেভগানকে গুলি করতে গিয়ে,তার আসল পরিচয় জানতে পারে।৩০ বছর আগে বেনারসের ঘাটে অজয়কে কুড়ি্যে পেয়েছিল,অর্জুনদেরই গাড়ির ড্রাইভার X(( (পুরানো হয়ে যাওয়ায়,এমনকি বাংলা মুভিতেও এখন এই ফর্মুলা ব্যবহার করা হয় না)।আপন বোনের ছেলের পরিচয় পেয়ে,গুলি না করে ফিরে আসলেন নানা।

দলের হাল ধরলেন ক্যাটরিনা।কিছুদিন আগ পর্যন্ত ২০০ কিলোমটারে লেক্সাস কনভার্টিবল চালানো,মিনি স্কার্ট পরে ডিজে পার্টিতে নাচতে থাকা এক বাবার এক মেয়ে হয়ে গেলেন জনগণের নেত্রী।শাড়ী পড়ে,এক গরীব বাচ্চাকে কোলে নিয়ে,"হিংলিশ" ভাষায় (অ্যাংলিসাইসড্‌ হিন্দিতে‌) ভাষণ দিয়ে নির্বাচনেও জিতে আসলেন।হয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী B-)! বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রীর মতো পদে বসতে হলে নির্দিষ্ট বয়স (৩৫ ও ২৫ বছর) প্রয়োজন।ভারতীয় সংবিধানে অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী হতে হলে ৩০ বছর বয়স হতে হয় (আমি যতদূর জানি)।সেখানে ২৬ বছরের ক্যাটরিনা কিভাবে এই পদে নিযুক্ত হলেন,তাও আরেক রহস্য।

এই পর্যন্ত সব হজম করে নেয়া গেলো।তারপর যা হলো,সেই সিচুয়েশনকে শুধুমাত্র "কস কিরে মবিন" বাক্য দিয়েই বোঝানো সম্ভব।মাইকেল কর্লিয়নি,দুঃখিত,রণবীর কাপুর ঠিক করলেন প্রতিশোধ নিবেন।মনোজ ও অজয়কে ফাঁদে ফেলে এক পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিতে নিয়ে আসলেন।শীর্ষস্হানীয় রাজনীতিবিদরা শুরু করলেন কার ক্রাশ,কিল শট টাইপ "ডাই হার্ড" অ্যাকশন।যার ফলস্বরূপ পটল তুললেন মনোজ।রণবীর ঠিক করলেন অজয়কে গুলি করবেন না।পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নানা পাটেকার।ভাগ্নে অজয়কে নিজে গুলি করতে না পারলেও,রণবীরকে বিরতিহীনভাবে প্ররোচনা দিতে থাকলেন ফায়ার করার জন্য।রণবীর বুঝতে পারলেন,গুলি না করলে নানা থামবেন না :#)।এক প্রকার বাধ্য হয়ে রণবীর গুলি চালালেন,অজয়ও শেষ।

রণবীর ঠিক করলেন,বিদেশে ফিরে যাবেন।রাজনীতি করবেন না।কারণ,রাজনীতি তার মাঝের জানোয়ারটাকে বের করে আনে।ইউ.এস.এ.'র টিচিং অফার আছে,সেটাও করবেন না।আয়ারল্যান্ডে গিয়ে তার গার্লফ্রেন্ডের মায়ের দেখা-শোনা করবেন :|।কিংফিশার এয়ারওয়েজের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে (প্লেনে করে রণবীর বিদেশ যাচ্ছেন) শেষ হয় ৩ ঘন্টা ৮ মিনিটের রাজনীতি।


মোটা দাগে এই হলো রাজনীতির গল্প।মুভিটিতে প্রচুর "ফল্ট লাইন" আছে।মাঝে মাঝে গল্প খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে।কাহিনীবিন্যাস খারাপ।অনেকগুলো দৃশ্যের অবতারণা ও উদ্দেশ্য অস্পষ্ট।তবে,এখনকার যুগের অন্য দশটা হিন্দি মুভির চে,অনেক সাহসী,অনেক উন্নত।চিত্রগ্রহণ ভালো।গানের ব্যবহার অ্যাপ্রোপ্রিয়েট।বাস্তবতা ধরে রাখার জন্য কোনো গানে লিপসিং নেই।সব কয়টি গানই ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজেছে।ভালো প্রচেষ্টা।অনেকদিন পর নানা পাটেকারের দুর্দান্ত অভিনয় দেখার সুযোগ হলো।মনোজ ও অজয়ও ভালো।সবাই এই মুভিতে রণবীর কাপুর এর অভিনয়ের খুব প্রশংসা করলো।হাসির দৃশ্য,আনন্দের দৃশ্য,ঘৃণার দৃশ্য,কান্নার দৃশ্য-সব দৃশ্যেই মুখ পাথরের মতো এক্সপ্রেশনলেস করে রাখাকে ভালো অভিনয় বলে কিনা আমার জানা নেই।সে তুলনায়,অর্জুন রামপালকে আমার ডার্ক হর্স মনে হয়েছে।আরেকটি কথা মুভিটা দীর্ঘ হলেও বোরিং না,প্রচুর টুইস্ট আছে।শুনেছি,রেটিং সেন্সর স্বাভাবিক রাখতে,শ্রুতি শেঠ'র বেশ কয়েকটি দৃশ্য কেটে দেওয়া হয়েছে।তার পরেও কিছু এরোটিক ও ভায়োলেন্ট দৃশ্য রয়ে গিয়েছে B-)

সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে,যারা হিন্দি মুভি দেখেন রাজনীতি তাদের জন্য নতুন এক স্বাদের উৎস।


***আমি সাধারণত হল প্রিন্টের মুভি দেখিনা।তবে,ইন্ডিয়ান,বিশেষ করে রোম্যান্টিক মুভি হলে হল প্রিন্টে খুব একটা ১৯-২০ হয়না।কথা বুঝতে পারলেই যথেষ্ট।কারণ,টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো এখনো এখানে অবহেলিত।রাজনীতি দেখার ইচ্ছে ছিলো।ভাবিনি এতো তাড়াতাড়ি সে সুযোগ পাবো।কারণ,হল প্রিন্ট মুভি টাকা দিয়ে অথবা ডাউনলোড করার মতো আগ্রহ আমার কখনো ছিলোনা (ফ্রি পেলে অবশ্য অন্য কথা ;)) সেদিন এক বন্ধুর বাসায় পাঁচ ঘন্টা একা বসে থাকতে হয়েছিল।তখন রাজনীতি দেখলাম (আমার এই বন্ধুটি আবার হল প্রিন্ট ছাড়া অন্য কিছু দেখেন না :) )।তার কাছ থেকে আরও ৩টি মুভি এনেছি।সময় পেলে সেগুলো নিয়েও লিখবো।


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৯:১৮
১০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×