এই বছরের সবচে বহুল প্রত্যাশিত বলিউডি মুভি ছিল রাজনীতি।গুণী পরিচালক,ভালো কাস্টিং,ভালো গল্প-সব মিলিয়ে জমজমাট এক মুভির হাতছানি।সে প্রত্যাশা কতখানি পূরণ হলো,তা পরে বলছি।তার আগে রাজনীতি'র গল্পটা বলি।একটু জটিল গল্প।গুছিয়ে বলা মুশকিল।তাও চেষ্টা করছি।
নানা পাটেকার,অর্জুন রামপাল,মনোজ বাজপেয়ি সবাই একই রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আত্নীয়।রণবীর কাপুর,অর্জুন রামপালের পড়ুয়া,ক্যারিয়ারিস্টিক,প্রবাসী ছোট ভাই।তাদের গাড়ির ড্রাইভারের ছেলে অজয় দেভগান (যে কিনা আসলে,অর্জুন-রণবীরের বড়ভাই,তাদের মায়ের কুমারী জীবনের ভুল।যদিও এই কথাটা কেউ জানে না)।ক্যাটরিনার বাবা রণবীরদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড।কে কি,কার সাথে কার কি সম্পর্ক এটা বুঝতে বুঝতেই মুভির প্রথম ২৫ মিনিট শেষ।
অর্জুন-রণবীরের মা নিখিলা প্রথম জীবনে বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।নাসিরউদ্দিন শাহ্ ছিলেন তার কাছে ঈশ্বরতুল্য নেতা।এক বৃষ্টির রাতে দুজনে অনেক কাছে চলে এলেন (আগেই বলেছি,যার ফলস্বরূপ পৃথিবীতে আসলেন অজয়)।অনুতপ্ত হয়ে তুখোড় নেতা নাসিরউদ্দিন শাহ্ তার রাজনীতি,তার দুঃখী জনতা সব ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে তপস্যায় চলে গেলেন।অজয়ের জন্মের পর তার "মামা" নানা পাটেকার,তাকে বেনারসের ঘাটে ফেলে আসলেন।অজয়ের মা,এক সময়ের মাঠ কাঁপানো নেত্রী,তিনিও রাজনীতি ছেড়ে আরেক রাজনৈতিক পরিবারে বিয়ে করে ঘরকন্যা শুরু করলেন।(কি আর বলবো
৩০ বছর পর সময়ের পালাবদলে দলের নেতৃত্ব পায় অর্জুন রামপাল ও তার বাবা।এতে নাখোশ হয়ে যান মনোজ সাহেব।কেন্দ্রীয় কমিটির এহেন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ ঢুকে পড়েন অর্জুনদের ড্রাইভারের ছেলে,কাবাডি চ্যাম্পিয়ন অজয়।নিজের দল ভারী করার জন্য,তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে নিলেন মনোজ।
অর্জুনের বাবা,দলের বর্তমান নেতা একদিন চলতি পথে গুলি খেয়ে বসলেন।তার হাসপাতালে যাওয়ার পর হঠাৎই মুভির গল্প পাল্টে গেল।"হাসপাতালে কোনো সিকিউরিটির লোক নেই দেখে রেগে যায় মাথা গরম বড় ভাই,শান্ত-হিসেবী ছোট ছেলে রণবীর পুলিশকে এ নিয়ে কিছু বলতে গেলে,পুলিশ তাকে চড় মারে।রণবীরের গালে দাগ বসে যায়।" ঘটনাগুলো একটু চেনা লাগছে কি?হু,এই অংশটা গডফাদার থেকে কপি করা (ভাবছি আরও কতদিন গডফাদারের বিভিন্ন ভার্শন দেখতে হবে
পলিটিকাল গেমের অংশ হিসেবে ক্যাটরিনাকে বড় ভাই অর্জুনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় রণবীর।কিন্তু ক্যাটরিনার একমাত্র পছন্দ ছিলো রণবীর।এটা বুঝতে পেরে অর্জুন,৮০ দশকের বাংলা ছবির নায়কের মতো,সোফা-ডিভানে ঘুমানো শুরু করে।
অন্যদিকে রণবীরের অ্যামেরিকান গার্লফ্রেন্ড ভারতে এসে উপস্হিত হয়।মুভিতে দেখানো হয়েছে তার বাড়ি আয়ারল্যান্ড।যদিও তার উচ্চারণ শুনে সেটা বোঝার উপায় নেই।
একদিন সুযোগ বুঝে অর্জুন সেই পুলিশ অফিসারটাকে (হাসপাতালে যে রণবীরকে চড় মেরেছিল) পিটিয়ে মেরে ফেলে,ফিজিক্যালি অবিউস করে তার সাবেক নারী সহযোগীকে (শ্রুতি শেঠ)।মজার ব্যাপার হলো,এতোদিন বিপক্ষ দলের ছোট্ট ছোট্ট ইস্যু নিয়েই,যেখানে দুইপক্ষ তুলকালাম বাধিয়ে দিচ্ছিল,সেখানে অর্জুনের এতো বড় দুটো অপরাধ নিয়ে কোনো কথাই হলো না।
এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতে গিয়ে,বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় রণবীরের প্রেগন্যান্ট গার্লফ্রেন্ড (আবারও গডফাদার
রাগে অন্ধ হয়ে নানা পাটেকার অজয় দেভগানকে গুলি করতে গিয়ে,তার আসল পরিচয় জানতে পারে।৩০ বছর আগে বেনারসের ঘাটে অজয়কে কুড়ি্যে পেয়েছিল,অর্জুনদেরই গাড়ির ড্রাইভার
দলের হাল ধরলেন ক্যাটরিনা।কিছুদিন আগ পর্যন্ত ২০০ কিলোমটারে লেক্সাস কনভার্টিবল চালানো,মিনি স্কার্ট পরে ডিজে পার্টিতে নাচতে থাকা এক বাবার এক মেয়ে হয়ে গেলেন জনগণের নেত্রী।শাড়ী পড়ে,এক গরীব বাচ্চাকে কোলে নিয়ে,"হিংলিশ" ভাষায় (অ্যাংলিসাইসড্ হিন্দিতে) ভাষণ দিয়ে নির্বাচনেও জিতে আসলেন।হয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী
এই পর্যন্ত সব হজম করে নেয়া গেলো।তারপর যা হলো,সেই সিচুয়েশনকে শুধুমাত্র "কস কিরে মবিন" বাক্য দিয়েই বোঝানো সম্ভব।মাইকেল কর্লিয়নি,দুঃখিত,রণবীর কাপুর ঠিক করলেন প্রতিশোধ নিবেন।মনোজ ও অজয়কে ফাঁদে ফেলে এক পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিতে নিয়ে আসলেন।শীর্ষস্হানীয় রাজনীতিবিদরা শুরু করলেন কার ক্রাশ,কিল শট টাইপ "ডাই হার্ড" অ্যাকশন।যার ফলস্বরূপ পটল তুললেন মনোজ।রণবীর ঠিক করলেন অজয়কে গুলি করবেন না।পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নানা পাটেকার।ভাগ্নে অজয়কে নিজে গুলি করতে না পারলেও,রণবীরকে বিরতিহীনভাবে প্ররোচনা দিতে থাকলেন ফায়ার করার জন্য।রণবীর বুঝতে পারলেন,গুলি না করলে নানা থামবেন না
রণবীর ঠিক করলেন,বিদেশে ফিরে যাবেন।রাজনীতি করবেন না।কারণ,রাজনীতি তার মাঝের জানোয়ারটাকে বের করে আনে।ইউ.এস.এ.'র টিচিং অফার আছে,সেটাও করবেন না।আয়ারল্যান্ডে গিয়ে তার গার্লফ্রেন্ডের মায়ের দেখা-শোনা করবেন
মোটা দাগে এই হলো রাজনীতির গল্প।মুভিটিতে প্রচুর "ফল্ট লাইন" আছে।মাঝে মাঝে গল্প খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে।কাহিনীবিন্যাস খারাপ।অনেকগুলো দৃশ্যের অবতারণা ও উদ্দেশ্য অস্পষ্ট।তবে,এখনকার যুগের অন্য দশটা হিন্দি মুভির চে,অনেক সাহসী,অনেক উন্নত।চিত্রগ্রহণ ভালো।গানের ব্যবহার অ্যাপ্রোপ্রিয়েট।বাস্তবতা ধরে রাখার জন্য কোনো গানে লিপসিং নেই।সব কয়টি গানই ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজেছে।ভালো প্রচেষ্টা।অনেকদিন পর নানা পাটেকারের দুর্দান্ত অভিনয় দেখার সুযোগ হলো।মনোজ ও অজয়ও ভালো।সবাই এই মুভিতে রণবীর কাপুর এর অভিনয়ের খুব প্রশংসা করলো।হাসির দৃশ্য,আনন্দের দৃশ্য,ঘৃণার দৃশ্য,কান্নার দৃশ্য-সব দৃশ্যেই মুখ পাথরের মতো এক্সপ্রেশনলেস করে রাখাকে ভালো অভিনয় বলে কিনা আমার জানা নেই।সে তুলনায়,অর্জুন রামপালকে আমার ডার্ক হর্স মনে হয়েছে।আরেকটি কথা মুভিটা দীর্ঘ হলেও বোরিং না,প্রচুর টুইস্ট আছে।শুনেছি,রেটিং সেন্সর স্বাভাবিক রাখতে,শ্রুতি শেঠ'র বেশ কয়েকটি দৃশ্য কেটে দেওয়া হয়েছে।তার পরেও কিছু এরোটিক ও ভায়োলেন্ট দৃশ্য রয়ে গিয়েছে
সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে,যারা হিন্দি মুভি দেখেন রাজনীতি তাদের জন্য নতুন এক স্বাদের উৎস।
***আমি সাধারণত হল প্রিন্টের মুভি দেখিনা।তবে,ইন্ডিয়ান,বিশেষ করে রোম্যান্টিক মুভি হলে হল প্রিন্টে খুব একটা ১৯-২০ হয়না।কথা বুঝতে পারলেই যথেষ্ট।কারণ,টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো এখনো এখানে অবহেলিত।রাজনীতি দেখার ইচ্ছে ছিলো।ভাবিনি এতো তাড়াতাড়ি সে সুযোগ পাবো।কারণ,হল প্রিন্ট মুভি টাকা দিয়ে অথবা ডাউনলোড করার মতো আগ্রহ আমার কখনো ছিলোনা (ফ্রি পেলে অবশ্য অন্য কথা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৯:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






