প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমার পিসিতে বাংলা লেখাতে সমস্যার কারনে যুক্তাক্ষরে সমস্যা হবে দয়া করে আপনারা বুঝে নিয়েন কি বোঝাতে চাইছি । আর না বুঝলে কমেন্টস করবেন । আমি আমার নেপালের ভ্রমনলিপি এক টানা লিখবো না পয়েন্ট অনুসারে লিখবো যাতে করে পরবরতিতে যারা ভ্রমন করবেন তাদের কাজে লাগে ।
************************************************
সময়টা ছিল অক্টোবর ২০১৩ , দিনটা ছিল ১৯ শে অক্টোবর । সবে মাত্র নেপালে টুরিস্ট সিজন শুরু চলবে ফেব্রুয়ারী পরযন্ত । আমরা ২ জন, যাচ্ছি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে । বিকেল ৪ টা ফ্লাইট । ২ ঘন্টা আগেই এয়ারপোরটে পোউছলাম । আমার মতে বাংলাদেশ থেকে কোন প্যকেজ এ যাওয়া লস , ওই জায়গাটা পুরোই টুরিস্ট প্রধান সুতরাং যারা ১ম যাবেন তাদের জন্য কোন ভয় নেই শুধু নিজের সচেতনতাই যথেস্ট । আমরা ও কোন প্যকেজে যাইনি নিজেরা নিজেদের প্যকেজ তৈরী করে নিয়েছি আমার মতে সেটাই ভাল হবে ।
ভিসা
ভিসা সংক্রান্ত তথ্যের জন্য আমার প্রকাশিত ব্লগটি দেখুন ।
নেপাল ভ্রমণ - বাংলাদেশীদের জন্য তথ্য -
Click Here
এয়ারটিকিট
বাংলাদেশ থেকে বরতমানে ২ টি বিমানই নেপালে যায় সেটি হলো - বাংলাদেশ বিমান এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ । ভাড়া বেশী ডিফারেন্স না তবে বাংলাদেশ বিমানই ভাল এবং বড়। ইউনাইটেড ও খারাপ না । সময় লাগে ছাড়ার পর ১ ঘন্টা । এয়ার টিকিট কাটার সময় ২ -১ টি ট্রাভেল এজেন্সী দেখে টিকিটের দাম যাচাই করে নিলে দামে ৫০০-১০০০ টাকা কমে পাওয়া যাবে যা সরাসরি অফিস থেকে নিলে সম্ভব না । আমরা টিকিট কেটেছি ট্রাভেল এজেন্সী থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ থেকে ভাড়া – ১৬,৮৮৮/= টাকা আপ – ডাউন । টুরিস্ট রা সরবোচ্চ ২০০ ডলার এনডোস করাতে পারবে আর বাকি ডলার লুকিয়ে নিতে হবে তাতে কোথাও কোন সমস্যা হবে না ।
ঢাকা টু কাঠমুন্ডু যাত্রা
সময় মত বিমান ছাড়লে ১ ঘন্টায় কাঠমুন্ডু এয়ারপোরট । প্লেন থেকে নেমে আমাদেরকে একটি এয়ার বাস এসে এয়ারপোরটের ভেতর নিয়ে গেল । তাদের এয়ারপোরট দেখতে খুবই বাজে সেই তুলনায় বাংলাদেশের এয়ারপোরট অনেক অনেক বেশী সুন্দর। ইমিগ্রেশনের কাছাকাছি যেতেই পড়ে গেল হুড়হুড়ি । বাংলাদেশীদের জন্য “ অন এরাইভেল ভিসা” সুতরাং সেখানে কিছু ফরমালিটিজ আছে । বড় একটা আর ছোট একটা ফরম পুরন করতে হবে। এই সময়টিতে যা লাগবেই সেটি অবশ্যই সাথে নিয়ে যাবেন তা না হলে প্রথম খরচ শুরু হয়ে যাবে । ফরমালিটিজ শেষ করতে ১ ঘন্টার ও বেশী সময় লাগবে । পাশেই মানি একচেঞ্জ আছে ১০০ ডলার ভাঙ্গিয়ে নিবেন অবশ্যই । আমাদের ডলার রেট দিয়েছে –
১০০ ডলার = ৯৬৬০ নেপালী রুপী ।
১। কলম ২। আপনার এক কপি ছবি ৩। পারলে ছোট স্টেপ্লার ।
ওখানে ছবি তোলা যায় সেক্ষেত্রে ২০০ রুপি জরিমানা দিতে হবে । তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে সেই ফরম জমা দেবার পর পেয়ে যাবেন ৩০ দিনের ভিসা । তারপর শুধু ঘুরা আর ঘুরা ।
* ঢাকা এয়ারপোরটের ভেতরে ।
* এটা হচ্ছে এয়ারবাস এতে করেই আমাদেরকে প্লেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।
* এইটা হচ্ছে আমাদের বিমান যেটাতে করে কাঠমুন্ডু এয়ারপোরটে গিয়েছিলাম ।
* এইটা হচ্ছে নেপালের এয়ারপোরট ( বাইরে ফিট ফাট ভিতরে সদরঘাট )
* এসে পড়লাম নেপাল
* এয়ারপোরট এসেই শুরু করতে হবে লেখা পড়া
* তারপর সোজা যাদের ভিসা নেই তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে
এয়ারপোরট থেকে হোটেল
এয়ারপোরট থেকে মুক্তি পাবার পর এয়ারপরটের সামনে দেখি অনেক টেক্সি ওয়ালাদের হাক ডাক আর গেইটেই আছে বিশাল এক টেক্সি ভাড়া দেওয়ার বুথ ফিক্সড প্রাইজ !! কিন্ত বাইরের তুলনায় অনেক বেশী ভাড়া চায় । আমাদেরকে ও ঘিরে ধরলো টেক্সিওয়ালারা কিন্তু তারা জানে না আমরা কি জিনিস !! সবাই ভাড়া চায় ডলারে । আমরা যাব কাঠমুন্ডুর টুরিস্টদের প্রধান এলাকা “থামেল” এ । সবাই ১ম এ এখানেই যাবেন যদি হোটেলে ওঠেন। আমি সবার উদ্দেশ্যে চিতকার করে বল্লাম “ ৩০০ রুপি মে কহি যায়েঙ্গে থামেল ?” কথা শোনা মাত্রই আমাদের পাশ থেকে সবাই চলে গেল । আমরা ও সাইডে দাঁড়িয়ে মনের সুখে বিড়ি টানছি । আমার ইনফরমেশন অনুযায়ী এয়ারপোরট থেকে থামেল ভাড়া ৩০০ রুপি এর বেশী নয় সুতরাং আমি ৩০০ বলে দাঁড়িয়ে রইলাম , মোটামোটি প্লেনের সব যাত্রী চলে গেছে আমারা ২ জন ছাড়া । আমাদের কথা হলো এখন বাজে ৭ টা রাতে তো কোথাও ঘুরতে যাবো না সুতরাং অপেক্ষা করতে দোষ কি ? অবশেষে একজন ড্রাইভার এগিয়ে এসে বলল ৩০০ রুপির বেশী দিবেন না ? আমি বললাম , ‘না” সে বলল চলেন তাহলে যাই । তারপর আমরা গাড়িতে করে সোজা থামেল গেলাম এবং স্টেট ব্যংক এর সামনে নামলাম ।
হোটেল ইন কাঠমুন্ডু ঃ
কাঠমুন্ডুতে হোটেল এবং খাবার খরচ অনেক বেশী । আমরা মোটামুটি মানের একটি হোটেলে উঠলাম, পার নাইট ভাড়া ডাবল রুম – ১৫ ডলার = ১৪৫০ রুপি ইনক্লুডিং ভ্যট । এটা সিজনের প্রাইজ অফ সিজনে ১০ ডলারে পাওয়া যাবে ।
আমাদের এই হোটেলের পরিবেশ ভাল এবং নিরিবিলি । কেউ চাইলে সেখানে থাকতে পারেন আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি ।
Choice Hotel P. Ltd.
Tridevi Marg, Thamel , Kathmundu.
Tel – 4423530 , Cell – 9841450976
Attn : Mr. Karan. ( Director) Mail- [email protected] ( for pre-booking)
আগে বুকিং এর চেয়ে ভাল বুদ্ধি হলো – কাঠমুন্ডু এয়ারপোরটে নেমে দেখবেন ফোন বুথ আছে তাদের দেশে লোকাল কল ফ্রি !! সেখান থেকে হোটেলে ফোন করে দর দাম করে বলবেন আমরা এয়ারপরটে আছি গাড়ি পাঠান তারা গাড়ী পাঠিয়ে দিবে। জানিয়ে রাখা ভাল – নেপালে প্রত্যেক হোটেলে তাদের নিজস্ব গাড়ী রয়েছে । সাথে সাথে এয়ারপোরট থেকে হোটেল পরজন্ত ফ্রি!
* আমাদের হোটেলে ম্যনেজার সহ
খাবার দাবার –
কাঠমুন্ডুতে যে হোটেলে থাকবেন সেই হো্টেলে খাবার খাওয়াই আমি মনে করি উত্তম আর দাম বাইরের চেয়ে কম হবে । খাবার খাওয়াতে কিছু টিপস অবলম্বন করলে ভাল খাওয়া যাবে নতুবা টাকায় টাকা যাবে কিন্তু পেট ভরবে না । স্পেশাল টিপস ফর ফুড – খাবার অরডারের সময় ওয়েটারকে আমরা বলে দিয়েছি - শোন ১ম এ ভাত এর ব্যপারে – ভাত একটু নরম হবে , তাদের অধিকাংশ জায়গায় ভাত অনেক শক্ত । ২য় ডাল – ডালে শুধু পেয়াজ , কাচা মরিচ , হলুদ , লবন দিবা অন্য কিছু দিবা না । ৩য় – মাংশ , মাছ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে একই টিপস আর কিছু না বললে এমন জঘন্য কিছু উগ্র গন্ধ ওয়ালা মসলা দিবে খানা খাওয়ার ইচ্ছাই চলে যাবে ।
শুরু করলাম নেপাল ভ্রমন –
কাঠমুন্ডু হোটেলে কথা বলে হোটেল ম্যনেজারের সাথে আলোচনা করে একটা পুরো সময়ের একটা ট্যুর প্লান নিয়ে নিলে খুব বেশী ভাল হবে , নো চিন্তা শুধু ঘুরা আর ঘুরা । আমরা ও তার ব্যতিক্রম করিনি । যাদের হাতে সময় ৫ দিন আছে তারা আমাদের এই ট্যুর প্লানটি নিতে পারেন অনেক মজা হবে এবং পুরা নেপাল ভ্রমন ও শেষ ক রতে পারবেন ।
১ম দিন – কাঠমুন্ডূ টু পোখরা – ( যাওয়ার বাস ভাড়া সহ ) – সকাল – ৭।৩০ এ গাড়ী ছাড়বে দুপুর ৩ টায় পোউছবে । থাকার হোটেল সহ । খাবার নিজের ।
২য় দিন – পোখরা সাইট সিয়িং
৩য় দিন – সকালে – পোখরা টু চিতওয়ান ( বাস + হোটেল + রাতে খাবার + সকালের নাস্তা ) সময় – ৬ ঘন্টা
৪থ দিন – সকাল ১০ টায় চিতওয়ান টু কাঠমুন্ডু ( বাস + হোটেল ভাড়া , খাবার নিজের )
৫ম দিন – কাঠমুন্ডু সাইট সিয়িং + নাগরকোট সুরযাস্ত দেখা ( সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা ) জিপ + হোটেল ভাড়া সহ । ( খাওয়া নিজের )
এই প্যকেজের মুল্য পড়েছে – ১৬০ ডলার / পারসন । তবে একা গেলে অনেক বেশী ঝামেলা হতো এবং খরচ ও বেশী পড়তো ।
পরের পরবে- নেপালের রানী পোখরা ভ্রমনের বিস্তারিত লিখবো ।
সকলকে অনেক ধন্যবাদ ।।
চ ল বে ( তবে কতকাল সেটা জানি না !! )
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৮