somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমৃত স্যারের জন্য বেহেশ্তটা কতদূর ?

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা কথাগুলো পুটলিতে বেঁধে রাখতেন। কড়াইয়ের গরম তেলে কচিকচি বোধ বিধ্বস্ত হতে দেখে ‌"বেহেশত মেজো ফুফুর বাড়ির চাইতে অনেক দূর" - বলেই বেঁচে যেতেন। ডাংগুলির বরইদানা খালি লক্ষচ্যুত হতো এবং আমাদের পুকুরে শাপলায় আমার ঢিলগুলো পড়তো না। পানির ভেতর পাড়ের গাছের ছায়া অজগর হয়ে যেতো। পানি দ্রুত নাড়ালে গোখরা হতো। গায়ের হোসিয়ারি বস্তুটির কাঁধ বন্ধনী ছিঁড়ে ফেললেও আমার প্রশ্নে কারো মন বসতো না। বাবার আয়না দেখার মাঝে টুপির সঠিক বসা না বসা আর কপালের কালোদাগে হাতবোলানো ছাড়া অন্য কিছু ছিলো না, এমনকি আমার মায়ের প্রেমও না। প্রশ্নে সাহস হতো না। বাবাকে তাই বোকা বোকা মনে হতো। তাঁর চেহারাটাও একটু সরল সিদা ধরনের। একেবারে আমাদের অলস বিড়ালটির মতো।

আমার লম্বা চুলের ভেতর বেত ঢুকিয়ে অমৃত স্যার যখন ঘুরাতেন তখন আমি ক্রমশ: স্যারের বুকের দিকে চলে যেতাম। আমাকে বলতেন "সুমন মিয়া"। আমিও জানতাম "মিয়া" খুব সম্ভ্রান্ত বিষয়। যদিও এখন কেমন জানি গোবেচারা ধরনের মনে হয়। পেটের চামড়া ধরে খুব টানা হেঁচড়া করতেন। স্যারের ধরার সুবিধার্থেই বোধহয় প্রচুর ফ্যাটফুড খেয়েও চামড়া মোটা হয়নি। এক স্কুলের দু'আড়াই'শ ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে প্রতিদিনই কোন না কোন ভাবে মনে রাখার মতো কিছু একটা করতেন অমৃত লাল ঘোষ। মায়ের ভাত মাখানো হাত চেটে খাওয়ার বিষয়টি আমার প্রিয় হওয়ার পরেই স্যারও আমার খুব প্রিয় ছিলেন। প্রিয় বলতে তেমন কিছু বুঝতামই না তখন। শুধু স্যার কখনো স্কুলে না এলে দল বেঁধে স্যারের বাড়ি চলে যেতাম।

শীতকালটা খুব ভালো যেতো। স্যারের বাড়ি আমাদের বাড়ির পেছনে বলে প্রতিদিন বিকালে একসাথে রোদ পোহাতাম। তখনো আমাকে একদিন নামতা মুখস্ত করার সহজ পদ্দতি শিখিয়েছিলেন। আবার সুন্দর করে ডালের নামতা বলতেন, ডাল ১-এ ডাল, ডাল ২গুনে খেসারী, ৩ ডালে মসুরী...... এমন সুন্দর করে...।

সন্ধ্যায় হাত পা ধুয়ে এসে ঝিকির করা ছিলো বাধ্যতামূলক। নইলে দোযখে যাওয়ার ভয় দেখাতো মা। আর ঝিকির করলে বেহেশ্তে যাওয়ার লোভ। আমি সুযোগ পেলেই মায়ের সাথে স্যারের কথা বলতাম। মাকে একদিন বললাম " আমি বেহেশতে গেলে শীতকালের বিকেলটা স্যারের সাথে রোদ পোহাতে চলে যাবো"। মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন "কিন্তু বাবা, ওনিতো কখনোই বেহেশ্তে যাবেন না, হিন্দুরা কখনোই বেহেশ্তে যান না"। আমার আর ঝিকির করা হয় না। মনের ভেতর খালি প্রশ্ন-"স্যার কেন বেহেশ্তে যাবেন না?"। মা আরো বললেন, "মুসলমানরা একদিন না একদিন বেহেশ্তে যাবেনই"। ভাবনা এবার খুব জটিল মনে হলো- সিনেমার ভিলেন রাজীব, ফরিদী, এটিএম শামছুজ্জামানরা এতো খারাপ হয়েও বেহেশ্তে যাবে, গ্রামের ছাদু মেম্বার, বাচ্চু মেম্বাররা বাজারে মানুষের মাথা ফাটিয়েও বেহেশ্তে যাবে অথচ অমৃত স্যার বেহেশ্তে যাবেন না!!

আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা। মাকে বললাম " আমাকে বলো বেহেশ্তটা কোথায়? আমি গিয়ে দেখে আসবো কোন হিন্দু বেহেশতে আছেন কিনা।" বেহেশ্ত অনেক দূরে বলে বলে মা আমাকে নিভৃত করে রাখতে চাইতেন। কতদূর? জিজ্ঞেস করতেই বলতেন "বেহেশ্ত তোর মেজো ফুফুর বাড়ির চাইতেও অনেক দূর।" ফুফুর বাড়ি অনেকদূর বলে জীবনে প্রথমবার যাবার পর আমাকে আমাকে আর সে বাড়িতে নিতে পারেনি। ওই বাড়ির চাইতেও বেহেশ্ত অনেক দূরে বলে আমি চুপসে গেছিলাম।

আসলে বেহেশ্ত কতদূর??
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১২ রাত ২:০২
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×