somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত শরীরের ঠোঙা এবং অভিশাপের গল্প

০২ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ : কাকশালিখচড়াইগাঙচিল

মৃত শরীরের ঠোঙা পাহারায় অপরিচিত নিজ আত্মা। আমিও সামান্য এগিয়ে মুচকী হেসে অভিশাপ দিয়েছি তখনকার পরিস্কার অমাবশ্যায়। ততক্ষণে অস্তিত্বের মারা যাবার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছিলাম। এমন একটি মধ্যরাত মেনে নিতে বিশেষ কোন অসুবিধা হয়নি। যদিও সাথে কোন প্রেতাত্মা বা তদসংশ্লিষ্ট ভুত প্রেত ছিলো না। এসময় বনের ভেতর এতোটা নিরবতা থাকা স্বাভাবিক নয়। অন্তত একটি নির্বিষ সাপ আমাকে সঙ্গ দিতে পারতো। অথবা কিছু ডানাভাঙা হলুদ মাছি।

সেই আহলাদী নগরের ঘ্রানবিক্রেতাদের উদ্ভট পোশাকের চেহারায় রাস্তার দুপাশের গাছজিরানি এবং অল্পবিস্তর টায়ারপোড়া গন্ধ আমাকে কোন সাহসই দিতে পারলো না। অথচ একসময় নিয়মিত রেললাইনে কান পেতে মিছিলের শব্দ শুনতাম, তাদের কাছাকাছি থাকার ভান ধরতাম। বিনা প্ররোচনায় জ্বলে পুড়ে যেতে চেয়ে ধোঁয়ার যন্ত্রনা মেনে নেয়ার মূল্য পরিশোধে একটিও বাড়তি পূর্ণিমার জন্ম হয়নি। পৃথিবীর কি বৈসাদৃশ্য উল্টোপিঠ! এভাবেই কি বখাটে দু:স্বপ্নরা সঞ্চয়ে মনযোগী হতো? কতোই না বিরল নৈ:শব্দ্য ঝরঝর ছন্দে ঝনঝন করে গেয়ে উঠতো। আঁধারের নিজস্ব সংগীত আছে- এমন আবিষ্কারও আমার পক্ষে সম্ভব হলো!

এ রাত সম্পর্কে সতর্ক করেছিলো বালিকার দৌড়ানি খাওয়া জোনাক। যারা কাঁচের বোতলে মলত্যাগ করতো। হলুদ সুন্দর আর ছায়ার আলোয় বালিকারা যৌবনের সন্ধান নিতো। যৌনসুখে প্রচুর রাত থেমে যেতো তাদের হাতের মুঠে। ওসব সতর্কতা রোদপোহানো ভোরে উমের অত্যাচারে মারা যাওয়ার পর মাত্র এক ষোড়শীর ওড়নার ঘ্রাণ নিয়ে বিজয়ী হলাম। আমার নাম লেখা আছে জলপাই বনের কচিপাতাগায়ে। প্রতি সন্ধ্যায় একবার করে নবঘনজলে চোখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। অলক্ষনের ছুতায় মধ্যরাতেই আমাকে জাগিয়ে নিতো সনাতন সংস্কার। ভুতের চোখে লুকিয়ে পড়লে পৃথিবীর গায়ে দাউদাউ আগুন জ্বলতে দেখতাম।

বন্ধু,
তোদের ঘরে এবেলায় দলবেঁধে অভিশাপ প্রবেশ করে। জানিসতো আমি এখন মধ্যরাতেই পত্র লেখায় ব্যস্ত। আগত দল তোর শোবার ঘরে গিয়ে কয়েকটা পুজো শেষ করে মায়ের গালে কিছু অট্টহাসি ছুঁড়ে মেরে রাস্তায় নেমে পড়ে। পাড়ার সকল যুবকের ভাবনা ডাকাতি করে তারা পাশের গ্রামে চলে যায়।

ইতি
বন্ধু


যোগাযোগের সুযোগ থাকলে এমন কয়েকটি লাইন ক’দিন পরপরই পেতাম। জানি ঘরে রেখে আসা বড় খয়েরি টিপ, নিউজপ্রিন্টের সংলাপ আর একটি মাত্র লাল তারা কেউই খুঁজে পাবে না। এখবর কারো গল্পের যোগান দিবে না। আমি মুছে যেতে থাকবো কচিপাতা শরীরের মানচিত্র থেকে।

এ পথ ধরে বাণিজ্যে যাওয়া বণিকের গতির সাথে গোল্লাছুটের কোন মিল নেই। যেবার প্রচুর বাণিজ্যিক রঙ ঘরের দেয়ালে ভবিষ্যত আঁকার অপচেষ্টা করেছিলো, নিরবে একবার ওইসব বণিকের দুর্দশা দেখার লোভ হয়েছে। এখন ওসব ভুলে গেছি। কখনোই পানীয় আর প্রেমের মতো দু’টি প্রিয় বিষয়কে পাশাপাশি রাখার সাহস হয়নি বলে জলসাঘরের সদর পেরোনো সম্ভব হয়নি। তাই বলে দৃষ্টির ভুলে লাল তারার দিকে তাকিয়ে পতাকা অথবা মনচিত্র নির্মাণের মতো দু:সাহস দেখাইনি। মিছিল অথবা মুষ্টিবদ্ধ হাত এবং অনেক দূর পর্যন্ত পায়ের যানযট দেখার আশা করতাম। সামান্য পিছুটান রাখতেও মন চাইতো। এসব চাওয়া একেবারেই অন্দরের, একেবারেই কাছের।

কখনোই শারিরীক অস্তিত্বে মায়ের কপালে চুমু খাইনি। নিজের বেশিরভাগকে নিয়ন্ত্রনে রেখেই কিছু উষ্ণতা বিলিয়ে দিতাম এবং মায়ের খুশি হওয়া দেখার আগেই অন্য কোথাও, যেমন- শিমুল গাছের কাঁটার ফাঁকে ফাঁকে রোদ কুড়াতে চলে যেতাম। তেমনই এক দুপুরে কপালের খয়েরি টিপের প্রশংসা করতেই আমার হাতে টিপ বিসর্জন দিয়ে চলে গেলো। সামান্য স্পর্শ না হয় নাই হলো, আমার চোখের কোনের নিরীহ নরোম রোদটুকু নিয়ে যেতে পারতো। এতো অল্পতেই তুষ্ট হওয়া অন্যায়, ভীষণ অন্যায়।

অপ্রত্যাশিত শুভকামনা আমার জন্য, অন্যায়ে মাথানত করা বিচ্ছিন্ন তারার হাত থেকে; যারা আকাশের উল্টোপিঠে গেঁথে রেখেছে থোক থোক অন্ধকার- যেখানে আত্মাখানি লুকিয়ে আছে। নেমে যেতে পারতাম সমুদ্র ফাঁদে, ভেঙে দিতে পারতাম রাত পোহাবার ভয়, ডোরাকাটা ট্রাফিক দাগে আরো কয়েকবার রক্তবমি এবং সে পথে তার আসা যাওয়া থামিয়ে দিতে পারতাম। একবারও মনে হচ্ছে না যে, আমি খুব দয়া করে ফেলেছি। শহর ছেড়ে আসা সে মধ্য রাতে শহরের মাত্র কয়েকটি রিকশার মধ্যে কোন একটির সাথে ধাক্কা খেতে পারতাম, ছুঁয়ে দেখা উচিত ছিলো স্বাভাবিক ঢংয়ে বলে যাওয়া ওসব কথার শরীর। অপবিত্র করে দিতে পারতাম একমাত্র মায়ের অপেক্ষার দৃষ্টিকদম। হুম, ওখানেই শেষ হতে পারতো আমার দ্বিতীয় মৃত্যু যা আরো অনেক পরে সার্থক করতে পারে।

যারা আমাকে ছোটগল্পের মতো জীবনের পোশাক পরতে প্ররোচিত করেছে, ওদের জন্য এখন একাধিক সূর্য শ্রম দিতে রাজি হয়েছে কিনা- এমন খবর এখনো এ পথে ছড়ায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:৫১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×