somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : শূন্যে শুরু শূন্যে শেষ

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুকনো কাশিতে মতিন তেমন আরাম পায় না। কাশির সাথে কফ না এলে সে কাশিটা বংশধর হয় না। জমাট কফকে দাঁতে পিশে ভাঙতে ভাঙতে লালা বানিয়ে গালের ডান বাম করে আবার গিলে খায়। করার মতো আর কিচ্ছু নাই। সারাদিন খাটে শুয়ে থেকে এর চাইতে ভালো কিছু করা মতিনের পক্ষে সম্ভব নয়। আবদুল মতিন। বাবা খালি আবদুল। মায়ের তৃতীয় পোলা। বর্তমানে প্রথম। আগের দু'টো- মাসুম আর মাসুদ মরে গেলো। প্রেমের শুরুর দিকে মতিনের বৌ মমতা এ নিয়ে বেশ মশকরা করতো। সে বলতো ম-৩।


"তোরে কইয়াতো কোন লাভ নাই, কিছু কইতে পারস না। বুঝি না- কষ্ট পেলি, নাকি পেলি না। বাবারে তুই একটু কাঁনতেও পারস না? আমারে আধাফোটা চোখের জল দেখাইস, শান্তিতে চুলার দুয়ারে যাইতে পারুম। কাইল নামাজের মোসলা ধুয়ে রাখছি, তোর বৌয়ে আইজ সকালে সেটা দখল করলো। আমারে আধোয়াটা দিয়া আইলো..." কথাটা শুইনা মতিন খট খট করে হেসে উঠলো। খাটের পায়াগুলা নড়ে উঠে মতিনের হাসির ধাক্কায়। "তোর উপ্রে আল্লার গজোব পড়ক" - মতিনের মুখের উপর কথাটা আছাড় খেলো।


আঙ্গুলের সাথে সুতার প্যাঁচে গিট্টু বানানোর খেলা বারো তেরতে একবার ছেড়েছিলো। আঙ্গুলের ডগায় গুড় মেখে চুষে খাওয়াও। আবার ধরেছে বৌয়ের জন্য ডাব পাড়তে গিয়ে পা ভাঙার পরে। অনেকেই বলে কলকাতা নিয়ে গেলে পা'টা জোড়া লাগতো। ঢাকায় নিলো বলেই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। মতিন ছিলো গ্রামের সেরা কাবাডি প্লেয়ার। ইয়া আলী বলে টান মেরে দৌড় দিয়ে ইইই দিয়ে শেষ করতো, সাথে আনতো পয়েন্ট। সেসব মেডেলগুলো পায়ের কাছে শোকেসে সাজানো আছে। শুয়ে থেকেই দেখতে পারে। কাবাডি খেলেই প্রেম হয়েছিলো মতিনের। গ্রামের স্কুল মাস্টারের মেয়ে। বিয়ের আগে বাগিছায় রাতের দু'ঘন্টার পর মমতার নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কবুল আয়োজন করা হয়। মতিন বাগিছায়ও মেডেল পেলো। মমতাকে দেখলে নাকি আশি নব্বইয়ের বুড়ারাও ২০১ ধর্মতলার ক্যাপসুলের জোর পায়। মসজিদের ইমামের ছেলে আর মাতব্বরের নাতি পরাণ বাবুর মদের দোকানে দশ হাজার সামান্য বাকি করেছিলো বিয়ের রাতে।


মতিনের মামাতো ভাইয়ের কোন দোষ নেই। ছেলেটা বয়সে ছোট। এখনো লিঙ্গ দেখে সাবালকি চেক করে। তবে আছানক শরীর তার। একেবারে খাঁসা পোলা। দোষ করেছে মতিনের বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি। নইলে মতিনকে টের পাইয়ে সজলকে ক্লান্ত করার কাজে মমতা থাকতো না। সম্পত্তি মমতাকে নিরাপদ করেছে, সজল করেছে সুখী। ইচ্ছে করেই দরজা ফাঁক রেখেছে কি না বলতে পারে না। তবে দু'টো শরীরের নড়াছড়া মতিনের দৃষ্টি এড়ায় না। গোঁৎ গোঁৎ করতে থাকা মতিন খাটের পায়ার শীর্ষে গোলনকশা ভেঙে নেয়। ছুঁড়ে মারে টিনের বেড়ায়। যে গতি উঠেছে পঁচা মাটিতে, তা থামার নয়। এখন মতিনের কাজ গোঁৎ গোঁৎ করা। আর মতিনের মা বিছানায় গিয়ে ঘুমের বড়ি মেশানো পানি খেয়ে এখন মৃত স্বামীর সাথে প্রেমালাপ করছে।


"জানো মা, কাল রাতে মমতা আমার পায়ে তেল রসুন মালিশ করেছে। বসে বসে মাথার চুল টেনেছে। তুমি অযথাই বৌকে বকা দাও..." কোন হিসেব মেলাতে না পেরে মতিনের মা উঠোনের দিকে হাঁটতে থাকে, পেছনে হাতে ধরা চুলের খোঁপা।


ভালো পা দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। শুকিয়ে আসছে। মতিন সকাল থেকে পা মেরামত করছে। একটু নাড়াছাড়া করে। দুপুরের আগে মতিনকে দেখতে এলে মাকে বলে বৌয়ের শাড়ি দু'খান খাটের ডানপাশের আলনায় আনিয়ে রাখে।


"ওই... রাইতে এরকম করচস ক্যান? সজল আইলেই শরীরে দৈত্য নামে! অন্যদিনতো মরার মতো শুয়ে থা..." - আলনা থেকে শাড়ী নিতে পারেনি, কথাটাও শেষ করতে পারেনি। তার আগেই শোকেসের সামনে গিয়ে পড়ে মমতা। হাতের কাছে থাকা গামছা গুঁজে শুয়ে থাকে মতিন। পড়া থেকে উঠে মতিনের ভাঙা পায়ে লাত্থি মারলেও মতিনের চিৎকার বেরোয় না। অন্য সময় নয়, এসময় মতিন খুব কাঁদে।


খাটের পাশে টিনের বেড়ায় থুথু পড়তে পড়তে বেশ মরিচা পড়েছে। সেদিকে তাকিয়ে থাকাও মতিনের রুটিনের মধ্যে পড়ে। মমতার বাবা এসেছে মেয়েকে দেখতে। মতিনের রুমে এলে বাবার পাশে দাঁড়ানো সতর ঢাকা মমতাকে দেখে বেড়ায় থুথু পড়লো। জেদ বা জীবন যন্ত্রনা প্রকাশের এর চাইতে উন্নত পন্থা মতিনের জানা নেই। দা, বটি সব রান্না ঘরে থাকে।


সকাল থেকে কোরআন তেলাওয়াত করছে মমতা। চারদিকে মমতার গুনগানের গুঞ্জরন। বিয়ের প্রথম বছরে পঙ্গু হওয়া স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে যায়নি। ছয় বছর স্বামীকে টেনেটুনে আজ মৃত্যুর পরও সে ভাঙ্গেনি। স্বামীর আত্মার মাগফেরাতে কোরআনের পাতাগুনেই যাচ্ছে। কবর দেয়ার পর সবাই একটু ডালভাত খাচ্ছে। মতিনের মা অজ্ঞান হওয়ার আগে দরজাটা ভালোভাবে লাগিয়েছিলেন। কবর দেয়া শেষে সজল চলে গেছে ঢাকার পথে। মাঠভর্তি দর্শকের মাতম, দু'চারটি জ্যোৎস্নারাত, মতিনের লেখা কবিতার লাইন, মমতার প্রেমপত্র- এসব জারজ হয়ে গেছে মতিনের "লা ইলাহা...." পড়ার পর।
শেষ গোসলের খাটের পাশে শিমফুলগুলোর গায়ে রোদ পড়েছে। পাশের নারিকেল গাছে ছোটছোট ডাব। গাছটি ঝুটানো প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:২২
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×