somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ

২০ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম অংশ
১. (এক)
প্রতিদিন দশ ঘন্টা গায়ের জোর আর মগজের যৌবন বিক্রি করি টাকার জন্য। এসব টাকা কেবলই ঠাসাঠাসি বেঁচে থাকার কাজে ব্যবহার করি। সামান্য একটু উদ্বৃত্ত থাকলে সিগারেট কিনি। ফুল কেনা হয় না, রঙিন পাথরও না। একবার একটা সুগন্ধি কিনেছিলাম। ক’দিন পর দেখি আগের গন্ধ আর নেই, তারপর ফেলে দিই। একদিন হালকা সম্পর্কের এক বান্ধবী থিয়েটারের টিকিট কিনতে বলেছিলো, পাত্তা দিইনি। কারণ ওই টাকা দিয়ে আমার দু’দিনের বিড়ির খরচ সেরে যাবে।

ভাড়া বাসায় একা থাকি। বাড়িওয়ালা খুব ভালো। এক বছর হওয়ার আর ২ মাস বাকি আছে, এখনও একা থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করেনি। কিন্তু তার বউটা ভালো না। গতকালও আমাকে বিরক্ত করেছে। অফিস থেকে আনা মাগনা কী এক বস্তু শ্যাম্পু না টমেটো সস, তা জানার জন্য আমার কাছে নিয়ে এসেছে। সবে দরজা বন্ধ করে জামা কাপড় খুলে স্বাধীন হচ্ছিলাম। এ সময় বাড়িওয়ালার বৌ'তো নস্যি, স্বয়ং যিশুকেও পাত্তা দেয়ার ইচ্ছা থাকে না। কিন্তু তাকে দয়া করলাম। কিচ্ছু বলিনি। বোতলটা সসের নাকি শ্যাম্পুর, তাও বলিনি। সে বোধ হয় মনে মনে কি একটা বলেছে। ‘পাগল’ই বলেছে হয়তো। এর বাইরে তার শাস্ত্রীয় জ্ঞান নেই। মহিলা বইয়ের ভাষায় কথা বলে। সেদিন ঝগড়া করে স্বামীকে বলতে শুনেছি এক বিদঘুটে কথা। ‘যে দিকে দু'চোখ যায় চলে যাবো’- এমন আনস্মার্ট কথা শুনার পর গা’ গিরগির করে উঠলো।

অফিসে আনন্দে থাকি। তারপর বাসায় ফিরে সুখে থাকি। পথে পথে দারুন অসুখ। বাসে চড়তে আর ভালো লাগে না। পুরো বাস খুঁজে কোন সাধারণ যাত্রী পাওয়া যায় না। সীট ভর্তি দার্শনিকের কংকাল। বাসায় ফিরে মাথা থেকে সেসব দর্শন খুলতেই যা একটু সময় লাগে। কাপড় খুলতে অতো সময় লাগে না। হকারদের রেকর্ড করা বুলি মাথা থেকে খুলে রাখি; অন্ধ, আধা অন্ধ আর অন্যান্য অমানুষদের অসহায়ের ভাষা খুলতে খুলতে হাঁফিয়ে উঠি। এরপর শুরু হয় প্রতিবেশী কলিগের দীর্ঘশ্বাস খুলে নেয়ার সাবধানতা। এ দীর্ঘশ্বাস আবার রেফ্রিজারেটরে রাখতে হয়। কোনো এক বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকারে পড়েছি, দেহকে বস্ত্রমুক্ত করে নাকি অন্যের চাইতে আলাদা সুখী হওয়া যায়। তার বলার ঢঙেই বুঝেছি এ ভীষণ ভাল কথা। মিষ্টি কথা এবং অবশ্যই দরকারি কথা। আসলেই সুখ। একেবারেই হার্ডকোর সুখ। সুখের বেলাজ মাখামাখি এপার ওপারের।

এ রকম সুখের কালে বন্ধুকে খুব মিস করছি। আমার একমাত্র বন্ধু। তার নাম দিয়েছি ছত্রাক। এরকম নামের কোন কারণ নেই। বারো বছর বয়সের পর তার আর বয়স বাড়ে না। বাড়বে না। বাড়াবাড়ি সে একদম পছন্দ করে না। আমাকে বিধাতা মানে। আমিও সে রকমই মনে করি। তার সবকিছু আমি বানিয়েছি। লিঙ্গ বানাতে গিয়ে কোনো ভাবনা ছাড়াই পুরুষ লিঙ্গ বানিয়েছি। এখন আমার কাছে নেই। অন্য কোথাও আছে। আসার কথা আরো আগে। দু’ বেডরুমের বাসা নিয়েছি এ জন্যই। তার দেরির কারণ জানি না। বিধাতা হিসেবে এখানে আমি খুব উদার। তার সব খবর রাখি না। ব্যক্তিগত কিছু অবশ্যই থাকতে পারে। তবে তাকে যৌন মৈথুনের ক্ষমতা আমি দিই নি। সে দিক দিয়ে নির্ভাবনা।

২. (দুই)
ওই মেয়েটা আর আসেনি। শরীর বেচতে এসে ঠিকানা ভুল করে বাড়ির মালিকের দরজায় মূর্ছা খেয়েছিলো। দেখে মনে হলো নিজেকে খুব ভালোবাসে। অন্য মেয়েরা যেন তাকে দেখে হিংসা করে, এ জন্য কতো ছলনার পা ধরেছে সে! আহারে, সে যে কতো সুখী! নিজেকে কতো ভালোবাসে! নাকের ছিদ্র দুটোকে কর্মঠ রাখার জন্য, সামান্য একটু বাতাস আনা নেয়ার জন্য সে খাদ্য গ্রহণ করে। খাদ্য কেনার টাকার জন্য লুতপুতু শরীরটাকে নাচাতে নাচাতে কিছু পুরুষ শরীরের দ্বারস্থ হয়। চেহারা দেখে নিশ্চিত, সে কাউকে ঠকায় না। চূড়ান্ত মৈথুনের পরই টাকা নেয়। নিশ্চিত বেশি বেশি বকশিশ পায়। মেয়েটার রাজনৈতিক জ্ঞান ভালো। অহেতুক দেমাগ না দেখিয়ে বরং নিজেও একটু সুখ নেয়ার চেষ্টা করে। কেবল চিত হয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছুক না। তাতেই আমদানি অনেকটা বাড়ে। এসব মেয়েদের দেখার পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বুড়ো মেয়েদের আর কিছু বলি না। ঠিকই একদিন দেশটাকে সোনার দেশ বানিয়ে দেবে।

আমার বন্ধু ছত্রাকের সাথে ওই দেহ ব্যবসায়ীর কোনো সম্পর্ক নেই। মেয়েটির সম্পর্ক আমার সাথে। তার কাছে রাজনীতির দীক্ষা নেয়া যেতো। জীবনে রাজনৈতিক মার খেয়ে কয়েকবার হাঁড় ভেঙেছে। সর্বশেষ দস্তখত রাজনীতিতে বৌয়ের কাছে নাকে খত দিয়েছি। আরেকবার ইজ্জত হারিয়েছি হরিজন পাড়ার সুপারী বনে। ছত্রাক এসব কথা জানে না। অথবা জানে। কিন্তু, সে আসে না কেন?

ইচ্ছে করলে ছত্রাককে দাঁতছাড়া বয়সে আটকে দিতে পারতাম। বারোতে না আনলেও চলতো। কিন্তু দাঁত ছাড়া শিশু গুলোকে ভয় লাগে। একবার চামড়া ছাড়ানো সজারু দেখেছি। আমার দেখা প্রথম নবজাতক মারজাহানের মতো। মারজাহানের পেট থেকে বের হওয়া পাপিয়াকেও দেখেছি। একই রকম। এসব শিশুর গায়ের বড়ো বড়ো কাঁটাগুলো গোপন থাকে। যৌবনে বের করে আনে। ভীষণ ব্যথাগো..., অনেক ব্যথা। একেবারে অন্দরে লাগে। শিশুর চাইতে বড়ো প্রতারক আর হিংস্র কিছু নেই। তাদের কেবল চোখ আর যৌনাঙ্গ সুন্দর। চোখের মাঝখানের কালো বৃত্তটি মারবেলের মতো। আর যৌনাঙ্গে কোনো পুণ্য থাকে না। পাপও না। না, তবুও শিশুর সাথে বসবাস করা যাবে না। কোনমতেই না। ঠিকই একেকটা চামড়া ছাড়ানো সজারু।

আচ্ছা, দেহ বেচতে আসা ওই মেয়েটির কি শিশু হবে? না, না, প্রশ্ন এটা না। প্রশ্ন হচ্ছে, আচ্ছা ছেলেরা কেন মেয়েদের কাছে শরীর বেচে না? হে, হে -আমি কিন্তু এর উত্তর জানি। শরীর তারা ঠিকই বেচে, কিন্তু স্বীকার করে না। কেউ বলে লজ্জা পায়, কেউ বলে স্বীকার করা অপমানজনক। আমার পুরোনো বন্ধু মাসুদ বিক্রি করে। কক্সবাজারের এক গৃহীনির কাছে বিক্রি করেছে। মহিলার স্বামী বিদেশে থাকে। মাসুদের সাথে সম্পর্ক হয়েছে মোবাইলে। একবার শরীর বিক্রি করে আসার সময় মহিলা তাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছে। এরপর থেকে পনের হাজার করে দেয়। দামটা অনেক বেশি হয়েছে। মাসুদের শরীরটা মেদে ভরা। এ রকম শরীরের এতো টাকা দাম হয়!

৩. (তিন)
: প্রভুর দেশে বিধাতার জন্মাংক আশাতীত উর্দ্ধগামী। ঘনত্ব প্রতি এক আবাসে পাঁচ জনেরও অধিক। তাঁদের সৃষ্টিও অবিরাম। আপনি অতিশয় নিকৃষ্টমানের বিধাতা। এবং অবাধ্য বটে। সৃষ্টির সঠিক যতœাতি এবং বিনোদনাদির আয়োজনে অক্ষম। উপরন্তু মানের অপকাম করতে ভালোবাসেন। সঠিক সম্বোধন সহায় না হয়ে অপমানকর সম্বোধনে লাঞ্ছিত করেন। প্রভু হয়েও নিজ সৃষ্টিকে বন্ধু বলে ডাকেন। আপনি ভিন্ন কোন বিধাতাকে এমন দেখিনি। ওইসব বিধাতারা; আহা! কি মোহনীয় শিকলে হস্তোপদ বেঁধে তেল মাখানো দড়িতে ছান্দসিক স্পর্শ। আর সৃষ্টিরা জীবন ঘনিষ্ঠ সুরে গীত গায়, উচ্চারণ করে। আপনি শিল্পহীন কদাকার। আমাকে সংগীত শেখাননি। এখানে থাকবো না। যে দিকে দু’চোখ যায় চলে যাবো! দিগন্তে হারিয়ে যাবো। আপনাকে আমি ঘৃনা করি। কখনো ভালোবাসিনি। আমাকে ঠকিয়েছেন। প্রতারণা করেছেন। আমি বুক ফাটিয়ে কান্না করবো, মাটিতে গড়াগড়ি খাবো। আহার নিদ্রা ছেড়ে নিশ্চিত বনবাসী হবো।
: না, তুই বাড়ির মালিকের বৌয়ের সাথে যাবি না।
: আপনি আমার সাথে আর রাজনীতি করবেন না।
: না, এসব মিথ্যা কথা। আমি খুব অসহায়।
: প্রভু হয়ে প্রভুর মতো আচরণ করবেন। আপনি আমার প্রভু, আমি আপনার সৃষ্টি। আমার বন্ধু মিসেস মনিকা। আই লাভ হার।
: তবে কি আমার বৌয়ের সাথেও তোর দেখা হয়েছে!
: না, উনি ঘুমে ছিলেন। পায়ের একজিমা ভালো হয়েছে। তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। বিয়ের সময় কেনা জুতো জোড়া খাটের পাশে দেখেছি। আগের প্রেমিক ছাড়া মাত্র দু’জন প্রেমিকের আগমন ঘটেছে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
: তবে কি তার গায়ে কোন চাদর ছিলো? অথবা নীল রঙের মাসাক্কালি?
: উঁ হু... জ্বর ছিলো বলে পাতলা কাঁথা ছিলো, আর খানিক আগের মোবাইলে প্রেমিকের সাথে বলা কথাগুলো ঠোটের আশে পাশে ছিলো। ঝুলে থাকা বুকের চারপাশে তুমুল সুখ ছিলো। আর কিছু ছিলো না।

... তখন চোখ বুঁজে বিয়ের রাতের কথাবার্তা জাবর কাটছিলাম। সন্ধ্যায় ধুয়ে নেয়া বৌয়ের শরীর থেকে মিটমিটে আলো নেমেছিলো অকথ্য। শস্যখেত আর পুকুর পাড়ে সে লজ্জা পেয়েছিলো। ভেঙেছিলো আমগাছের ঢালে। পড়েছিলো একেবারে ডালসহ, ডালের নিচে আমি। এ রকম আরো আরো কি সব ভেবেছি। এসবের আগে তিনটি কবিতা লিখেছি। কাস্টমারের অর্ডার ছিলো। তারও আগে সপ্তাহ পুরোনো গাঁজা শেষ করেছি। পাশের বাসায় জোর শব্দে বাজানো এ সময়ের নাগরিক সঙ্গীত ‘ভিতর বলে দূরে থাকো, বাহির বলে আসুক না’ গানটি শুনেছি। বুঝি না, এতো ভিতর বাহির গমনাগনে লাভ হচ্ছে কার? ভাবতে ভাবতে যখন আমিও ভিতরে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন দুয়ারে খট খট শুনে আশা করেছিলাম সে দেহ ব্যবসায়ীকে। আজ হয়তো ঠিকানা ভুল করে আমার ঘরেই আসলো। দুয়ারে গিয়ে ‘প্রভু’ ‘প্রভু’ শুনে হতাশ হলাম ভীষন। এখন ছত্রাকের কোন প্রয়োজন ছিলো না। প্রেমের দরকার ছিলো খুব। বিয়ের রাতের বৌয়ের লাজ মাখানো কপটমুখ আমার চামড়া জাগিয়ে দিলো। চামড়াতে সে কি তুফান! আমি আরেকবার; না, না, বারবার হারতে চেয়েছিলাম। দুয়ার খুলে দিতেই ঘরে ঢুকে বন্ধু ছাত্রাক তার সাহিত্যগন্ধা এ মহা বক্তব্য শুনিয়ে ছাড়লো। কথার আগা ধরতে পারিনি বলে মাথায়ও যেতে পারিনি। ঘুম আসার আগ পর্যন্ত তাকে উত্তেজিত দেখেছি। বুকের কি উঠানামা! তার বুকের উঠানামার ছন্দেই আমার ঘুম এসে যায়। পরে সে আমার পায়ের কাছে বসেছিলো।

কিন্তু ছত্রাকের হঠাত বাড়াবাড়ি কপালে অন্তত তিনটি ভাঁজ ফেলে দিলো! এসবের কয়েকটা বিহিত করতে হবে। নারী সংস্পর্শ জণিত ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় না এনেই সমস্যা। ছত্রাককে মেরে ফেলা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। যেহেতু এসব ভিন্ন প্রজাতির জারজদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোন আইন নেই, সেহেতু ভয়ের কিছু নেই। কিচ্ছু হবে না মেরে ফেললে। রোজি বুবু যেবার আমার কাকাতুয়া মেরে ফেলালো সামান্যই ভয় পেয়েছিলাম পক্ষীলাশ দেখে, এই যা। স্কুলে যাইনি দু’দিন। ভাতের গরম মাড়ে বিড়াল ছানার মৃত্যুর পর কেঁদেছিলাম। তাই বলে এখন!! এর মাঝেইতো অনন্ত বিয়েটা সারলাম। বিয়ের পর কান্না করলে দূর্ঘটনা বশত সন্তান আসলে তারা লজ্জা দেবে। মাই গড! নো, নো... নেভার!!

একবার বাবা অযথা ধানের জমির বীজ পরিবর্তন করেছিলেন। বি আর ১৬ ধান সে জমিতে ভালো ফলন দিতো। বাবা সেটাতে বি আর ২৯ দিলেন। গাছগুলো লম্বা, ধানের ফলও লম্বা কিন্তু ফলন ভালো হয়নি। সে ধানের জমির মাঝখান বরাবর কিছু ছোটছোট হাড়গোড় পাওয়া গেছে। পঁচা মাংসও ছিলো। কারো জারজ সন্তান আন্দাজ করে আর কোন শ্রমিক সেই অংশের ধান কাটতে রাজি হয়নি। আচ্ছা, আমি যদি জেনে যাই- যাকে এখন বাবা ডাকি সে আসলে আমাকে জন্ম দেয়নি; অন্য কোন পুরুষের বীর্যে আমার জন্ম- তাহলে কি ছত্রাককে দিয়ে আমার প্রাণনাশ করবো? না, ছত্রাক ন্যডির পোলারে এর সাথে জড়ানো যাবে না। না, না, তাকে ন্যডির পোলাও বলা যাবে না। ন্যডির পরিচয় চাইলে কি দেবো? তারতো মা বাবা কেউ নেই। তারপর আবার বাড়িওয়ালা এবং আমার বৌ দেখা তার শেষ। এ দুই অমানুষকে দেখার পরও যে বাসায় ফিরে এসেছে, সেইতো ঢের।

৪. (চার)
: আমার জন্মদিন কবে?
: ৩১ জুলাই দিবাগত রাত
: মৃত্যুদিন?
: ৩০ জুলাই যেকোন প্রহর
: একটাও ঠিক হয়নি
: আমি নিরূপায়, এ রকমই নির্ধারিত ছিলো। আপনার পিতাকে জিজ্ঞেস করুন। আমাকে দোষ দিবেন না। আমার কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন কেন? আপনার পিতা কোথায়?

ওহ্! তবে কি আমার সন্দেহ ঠিক? বাবা বা মা কারো চেহারার সাথে আমার মিল নেই কি এজন্য? কিন্তু আশেপাশের কারোর সাথেও মিল নেই। আমার কি এখন খুব দু:খ পাওয়া উচিত? বাবাকে ঘৃনা করা উচিত? অবশ্য বাবাকেতো কখনোই শ্রদ্ধা করিনি। ভালোবাসিনি। কিন্তু ছত্রাক এসব কিভাবে জানে!

: গাঁজা খাবি?
: না, সেটা প্রভুদের খাবার।
: আমার শরীরটা টিপে দিবি?
: না, এখন মোড নেই।
: বৌ কে নিয়ে লেখা সর্বশেষ কবিতার সাথে নাচবি।
: আমাকে নাচ করার অনুমতি দিতে ভুলেছিলেন।
: চল, ছাদে চল।
: না, আমি ছাদ থেকে পড়ে মরতে চাই না।
: কখনো ইলিশ মাছ খেয়েছিস?
: মনে নেই। তবে, আর কোনদিন যে খেতে পারবো না, তা জানি।
: পর্নো মুভি দেখেছিস।
: এ বস্তু চিনি না। শনাক্ত করতে কষ্ট হচ্ছে। তবে, আর কোনদিন যে দেখবো না, তা জানি।
: চল আমরা বনে চলে যাই।
: না। এবং কোন দিন যে যেতে পারবো না, তা জানি।
: মনিকা...
: না, সেটা আমার ব্যক্তিগত।
: আমার বৌ...
: না, সেটা আপনার বৌ আর তার পুরাতন প্রেমিকের বিষয়।

ছত্রাক এটা অন্তত মিথ্যা বলে। আমার বৌ আমি ছাড়া অন্য কাউকে স্পর্শ দিতে পারবে না। ছত্রাক এ বিষয়ে না জেনেই বলছে। অযথা আমাকে বিভ্রান্ত করছে। আমি জানি বৌ আমাকে ছাড়া আর কাউকে চায় না।

: প্রভু, চাওয়া চাই’র বিষয়টা সুন্দর না। আপনি যা যা চাইলেন, বৌয়ের গর্ভনিরোধে কোন কাজেই আসেনি। উল্টো হাসপাতালে গিয়ে অপ-অস্ত্রাচার হয়েছে। সম্ভবত অস্ত্রবিষে প্রভুনী অশ্র“ ফেলেছিলেন। অনুশোচনা নয়। বরং সে শীতের রাতে এ ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না। সত্যি ছিলো না। পাশের বাড়ির মইনুল আর গ্রামে ফিরে আসেনি। আপনার স্ত্রী আপনার কাছে আসতে ব্যকুল। বসন্তের আগমন উনি টের পেয়েছেন। এবং কোকিলের ডাক যে খুব পরিচিত সেও বুঝে ফেলছেন।

: চুপ কর ন্যডির পোলা। একদম চুপ।
: ন্যডি মানে বেশ্যা। আপনিই আমার মা বাপ। আপনি আমাকে গালি দিতে পারেন।

৫. (পাঁচ)
যখন গল্প লিখতাম, অনেক লিখতাম। রেস্তরার পোড়া তেলের গল্প, তৃতীয় বা চতুর্থবার প্রেমে পড়ার গল্প, ফোনে গল্প করতে করতে প্রেমিকার ঘুমিয়ে যাবার গল্প- আরো আরো। এখন লিখি না। এখন লিখলে গল্পগুলো কোম্পানিগঞ্জের বাদল আর কোম্পানিহাটের জান্নাতুল নাঈমের মতো হয়ে যায়। তারা কেজির মাপে জামা কেনে, টাকার ওজনে চুমু বিক্রি করে। তাদের গানে ভিতরে যাওয়া আর বের হবার কথা বাজে। একদিন টের পেলাম কোন কারণ ছাড়াই নিজের লেখা গল্পের সবগুলো চরিত্রের ভেতর ঢুকে যাই। এমনকি অতিথি চরিত্রগুলোকেও ছাড়ি না। নিজের কোন না কোন অভ্যাস, দর্শন প্রবেশ করিয়ে দিতাম গল্প চরিত্রে। একবার নতুন দম্পতির প্রেমের গল্পে নায়িকার চরিত্রে ঢুকে গিয়ে স্বামীর কাছে বিয়ের আগে মামাতো ভাইয়ের সাথে সেক্স করার কথা স্বীকার করে দিই। অথচ কোন মেয়েই অকারণে এমন স্বীকারে যাবে না। পরে এ দম্পতির দু’জনকে দু’পথে পাঠিয়ে গল্প শেষ করি। অথচ মেয়েটির মা হবার খুব ইচ্ছে ছিলো। আমার বৌয়েরও মা হবার খুব ইচ্ছা। আবার একবার বললো- মা হবে, এমন বিদঘুটে ভাবনার ভাবার মতো সে নয়! দু’কথার এক কথাও বিশ্বাস করিনি। আবার অবিশ্বাসের প্রয়োজনবোধও করিনি। আসলে আমি নিজেই বাবা হবার কোন ইচ্ছা করি না। না, না, স্বজনপ্রীতি করে আর যা হোক, সাহিত্য কখনোই হবে না। তাই গল্প লেখা বন্ধ।

মাঝে মাঝে খুব কথা বলতে ইচ্ছে হলে আমার গল্পের চরিত্রগুলোকে নিয়ে আড্ডায় বসে পড়ি। রাজনৈতিক আলাপ থেকে শুরু করে জানালার থাই গ্লাস নিয়েও আলোচনা চলে। তিলক নামের এক চরিত্র আমাকে খুব পছন্দ করে। একবার এক গল্পে তাকে দিয়ে প্রচুর নানরুটি খাওয়াই। পরে জানলাম নানরুটি নাকি তার খুব পছন্দ। আরেকবার আরেক চরিত্রকে দরজার ফাঁক দিয়ে তার বৌয়ের গোসল করা দেখিয়ে দিই। তারপর বিকেলে নদীর ধারে ঘুরতে গিয়ে নাকি সে খুব বিব্রত এবং অশান্তিবোধ করেছিলো। অথচ গল্পে ঠিকই সে নদীর ধারে প্রেমিকার বুকে ঝুকেঁ পড়ার কবিতা পাঠ করেছিলো। আমার সৃষ্ট চরিত্র দর্শনের ভেতর আরেক দর্শন। এখানে কোন না কোন ঘাপলা আছে। এসব আর ভালো লাগে না। কোথাও শান্তি নেই। প্যাঁচ আর প্যাঁচ। মিলন নামের এক বন্ধু সুতোর প্যাঁচ ভালো খুলতে পারতো। কিন্তু শেষে এক প্যাঁচে পড়ে আত্মহত্যায় শেষ হলো। তাই প্যাঁচ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়িতে যাই না। প্যাঁচ দেখলেই দৌড়াই। আজ রাতে আরেকটা প্যাঁচ খুলতে হবে। ছত্রাকের বিষয়টা সমাধান দিয়ে বাড়িওয়ালাকে চাবি বুঝিয়ে দেবো। বাসাটা ছেড়ে দিবো।

৬. (ছয়)
: তুই বিষয়টা বুঝতে পারছিস? ...তুই কি বুঝতে পারছিস? ওই...!
: এখনই যাবো, নাকি আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজব করবো? আরেকবার ভেবে দেখুন প্রভু। মিসেস মনিকা আমাকে মিথ্যা বলতে বারণ করেছে। সে খুব ভালো মেয়ে। আপনার স্ত্রীও। আপনি জিজ্ঞাসা করে দেখুন, মইনুলের সে শীতের রাতের শীৎকার নিয়ে কোন ভন্ডামিতে যাবে না।
: কুত্তার বাচ্চা, ইন্দুরের বাচ্ছা... ওই ন্যডির পোলা.. যেখান থেকে বের করে এনেছি, আবার সেখানেই ঢুকিয়ে দেবো। ওই, তুই আমারে চিনস!! আমি...
: কে আপনি? চিনেন? কোনটা চিনবেন? আপনিতো এক পিস না, কয়েক পিস! কোনটা আপনি?
: এই, এই ...খবরদার স্পর্শ করবি না।
: তা করলাম না, আমি কখন যাবো?
: এতোক্ষণ গেলি না কেন!! এখনো যাচ্ছিস না কেন!!
: প্রভু, আমার মা থাকলে কি তিনি যেতে দিতেন? মা, অসতী হলেও। প্রভু, আমার মায়ের চেহারা কি আমার মতো হতো? সেও কি আপনার মায়ের মতো পান খেতো? অথবা আপনার স্ত্রীর মতো খুদার্ত হতো? অথবা সেওকি অঙ্কুরিত শিশু হত্যার জন্য হাসপাতালে কাতরাতো?

না, তারপর আর সহ্য করিনি। তুমুল বৃষ্টির রাতে যে সানসেটের ধারে বসে তাকে বানিয়েছি, আজ আবার সে সানসেটে শুইয়ে দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়েছি। ছত্রাক এখন স্বর্গ আর নরকের মাঝামাঝি ঈশ্বরের পা ধরে বসে আছে। ছত্রাককে বানিয়েছি নাকি স্বপ্নে পেয়েছি- ঠিক ধরতে পারছি না। ক’দিন পর হয়তো ‘শেষ পর্যন্ত তাকে কি করেছি’- তাও ধরতে পারবো না। তবে ভাগ্য ভালো যে কোন রক্তারক্তি হয়নি। রক্তের রংটা ভালো না। কালো হলে সুন্দর লাগতো। স্বাদও ভালো না। একটু টক হলে সুস্বাধু হতো। তাহলে অবশ্য বিপদও হতো। মহিলারা প্রতিযোগিতা করে রক্ত খাওয়া শুরু করতো। স্রষ্টা বলে কেউ আছে? থাকলে তিনি ভালো একটা কাজ করেছেন। রক্তের স্বাদ ঝাল অথবা টক দেননি। আমার বৌ খুব টক খেতে পছন্দ করে। প্রেমের শুরুতে যে দিন আমাদের ফলগাছ সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছিলাম, সে দিন অনেকক্ষণ বাড়তি কথা বলেছিলো। লজ্জায় আমাকে আপনি আপনি করা মেয়েটা সেদিন মুখ ফুটে ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করেছে। আমার খুব লজ্জা হয়েছিলো। ভাতের মতো তেতুল খাওয়া এ মেয়েটা হয়তো আমার রক্তই চুষে খেতো।

কিন্তু, আমার বৌ কেমন আছে? সেই পুরোনো সীমকার্ডটা লাগালে কি তার কল পাওয়া যাবে? কি একটা কারণে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করলাম, মনে পড়ছে না। শুধু মনে আছে, পুরুষদের প্রতি সে খুব প্রতিশোধ পরায়ন ছিলো। পুরুষ শিক্ষক, পুরুষ বাবা, পুরুষ বন্ধু, পুরুষ স্বামী, সবাইকে অকাতরে ঠকাতো। ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত ঝড়ের বেগে সব অস্বীকার করতো, প্রচুর ছল করতো। প্রমানিত হয়ে গেলে ‘আই ডোন্ট কেয়ার’ হয়ে যেতো। গায়ের জোরে অথবা মাখনের মতো শরীরের জোরে উড়িয়ে দিতো সমস্ত ভন্ডামি। দম ধরে, ঘাড় সোজা করে খুব স্পষ্ট ভাবে বলতো ‘থাকলে থাক, না থাকলে যা; এর চাইতে ভালো হবে না’। বিষয়টা আমার কাছে কাবাডি খেলার মতো মনে হতো। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে স্পর্শ করার জন্য অনেক কৌশলের পর যখন ধরা পড়ে যেতো, তখন চৌদ্দ গোষ্ঠীর শক্তি এক সাথ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে।

৭. (সাত)
না জানিয়ে চাকুরী ছেড়ে দিলে কি হবে? কিছুই হবে না। কয়েকদিন যখন দেখবে আমি আর আসি না, তখন নিশ্চিত নতুন লোক নিয়োগ দেবে। তেমন সমালোচনাও হবে না। অফিসে সবার সাথে ভালো পরিচয় না থাকলেও তাদেরকে বিরক্ততো করতাম না। কাজও ঠিকমতো করতাম। আবার যেহেতু তাদের টাকা পয়সা কিছু নিয়ে যাবো না, সেহেতু “ধরিয়ে দিন” টাইপের কিছু হবে না। শান্তিতেই হাঁটাচলা করা যাবে। বড়জোর স্যারকে একটা এসএমএস পাঠাতে পারি। এসএমএস পাঠানোর বিষয়টা ননস্মার্ট হলেও এইতো শেষ। উনিতো আর আমাকে পাচ্ছেন না। সেখানে আর স্মার্টনেসের চর্চা করে লাভ কি।

আগামীকাল রাতে ভালো ঘুম দিতে হবে। সকালে উঠে হাঁটা দিবো। যতদূর হাটা যায়। হাটতে হাটতে সিদ্ধান্ত নেবো, কোথায় যাওয়া যায়।

দ্বিতীয় অংশ

১. (এক)
পথ ধরে চলি, নেমে যাই জলে, কামড়ে ধরি বাতাসের আস্তিন। বুড়ো হয়ে আসা কাশবন, বট কটের কোটর, বৃদ্ধের লাঠির দাগ সব দেখি। পা থেকে বয়স খুলে রাখি হাইওয়ের কার্ণিশে তরুন ঘাসের চিকিমিকিতে। নিজেকে নিয়ে সবকিছু ভুলে থাকলেও দ্বিতীয় সত্ত্বার তৃতীয় চোখের পরিচর্যা ভুলি না। এ চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখা নিরাপদ। অসুন্দর দেখা যায় না। বৌকে এ চোখে দেখি না। আমার কপালও দেখি না। কথা ছিলো মানুষ হবো। কিন্তু আকাশ বা বৃক্ষ হতে পারিনি, নির্বিচারে মানুষই রইলাম। মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে কবিতা লিখতে গিয়ে কবিতা আমাকে খেয়ে ফেলে। একবার এক খুনী আমার গলা কেটে দিলে উঠেছিলো কবিতার ফিনকি, বিরতিহীন। কিন্তু কবিতা হবার কোন কথা ছিলো না। কবিতা না হয়ে ভোর অথবা সন্ধ্যা হবো, এমনই কথা ছিলো। কোন কথায়ই থাকে না। প্রেমিকা না, আমিও না। সবই কেবল চলে যায়। সন্ধ্যার পর ছুটি হওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকদের মতো ঘাড় সোজা পা বাড়ানো ঠনঠনে চলে যাওয়া।

এখন আমাকে বহন করে কম দামের টাটা এঞ্জিনের বাস চলছে। বাস চলছে রাস্তায়, আমি চলছি সবুজ মাছির পীঠে। আমার নিচে মাছি, মাছির নিচে পৃথিবীতে ছোপ ছোপ মানুষের দাগ। তার নিচেই স্বর্গ এবং প্রহসন পাশাপাশি। পেছনে ফেলে যাচ্ছি অভাব আর মানুষের ভন্ডামি। সব ব্লাউজ ছাড়া মহিলারা পথের ধারে রঙিন সুতো শুকাতে দিচ্ছে। আড়ালে তাদের শুষ্ক হাসি, শুষ্ক জীবন। কয়েক কিলোমিটার ধরে সারি সারি ফেরীওয়ালার বিলাপ। দু’একটা পাখির ডাক টিকতে পাচ্ছে না মানুষের ডাকের কাছে। তার চাইতেও ভয়ংকর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে এ মাছি। আমাকে বহন করার কোন শক্তিই তার নেই। সাথে থাকা গানের কথা বা আমার মগজ, কোন কিছুই তার জন্য নিরাপদ না। অথচ সে পরমানন্দে আমাকে বহন করে চলছে। উড়ছে আর ভাসাচ্ছে।

কোনভাবেই মাছির পীঠে বসে সিগারেট ধরাতে পারছি না। একটা সিগারেটের খুব প্রয়োজন ছিলো। বিশেষ বিশেষ মূহুর্তে সিগারেট আর প্রস্রাব আমার আমদানি বাড়িয়ে দেয়। পস্রাবের দৌড়ানি নেই বটে, কিন্তু সিগারেটের সুড়সুড়ি ঠিকই আছে। যার পীঠে চড়ে আছি, এ নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। একটা সিগারেট ধরাতে পারলেই স্বর্গের ভেতরের প্রাণী আর উদ্ভিদগুলো দেখা যেতো। আমি নিশ্চিত সেখানে তারা সুখে নেই। এখন খুব শীতবৃষ্টি হচ্ছে আর গরম বাতাস বইছে। কোন কবি বা বাউল সেখানে যেতে রাজি হয়নি। আমিও যাবো না। তার চাইতে এখন আমার শহরে যাওয়া খুবই দরকার।

** এখান পর্যন্ত পড়ে খ্যামা দেন। গল্প শেষ! বাকিটা না পড়লেও চলবে। অযথা টাইনা গল্পটারে বড় করছিলাম মনে হয়।

ছত্রাক পর্বের পতনের পর বাউল পাড়ায় এসেছি পুরো দশদিন। আর যাবো না। বাউলের মেয়ে... না না, ঠিক মেয়ে বলা যাবে না। বাউলকন্যা আমার চোখের সামনে থাকে। অবিরাম থাকে। তাকে সরাতে গেলে মাটি এবং বায়ু সহ পুরো ক্যানভাস সরে যায়। সে ভালো, সুন্দর। আমার স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মনের খবরও নেয়। এবঙ ফাগুন কেমন লাগছে, তাও জিজ্ঞেস করে। এ কাজটি আমার বৌ কখনো করতো কি না, সে হিসেবে গেলাম না। কিন্তু আমার খুব মনে ধরে এমন করলে। অবশ্য প্রথম ক’দিন গাঁজা খেতে খুব কষ্ট হয়েছে। এখানকার গাঁজাগুলো আমার বৌয়ের গালির চাইতেও কড়া। চৈত্রারোদ পোড়া গাছের পাতার মতো। শুধু পাতা, কোন বিচি নেই। ওহ্! বাউলকন্যার নাম বলিনি। নিরুয়া। নিরুয়া নামেই অন্যরা তাকে ডাকে। আমি বলি সখি। আমাকে সখা বলে ডেকে তার সমর্থন জানানোর পরইতো হাত স্পর্শ করেছি এবং চোখে নেশা এসেছিলো, তারপর নিরুয়ার কন্ঠে তুফান লেগেছিলো; অনেক গান হয়েছিলো। নিরুয়া তখন পরী হয়েছিলো আর আমি পাগল। ভাগ্য ভালো চাঁদ ছিলো, সাথে রাত ছিলো আর নিরুয়ার সুয়া সুয়া সুখ ছিলো। এখন আমি আছি নিরুয়া আছে আর অনেক প্রেম আছে আর গান আছে।

বাউল পাড়ায় এসে মুশকিলেই পড়েছিলাম। আসার কোন কারন দেখাতে পারিনি। পরে ব্যাগের ভেতরে থাকা বিচ্ছেদী কবিতাগুলোকে গানের কথা বলে চালিয়ে দিই। নিরুয়ার বাবা তার মতো করে কবিতাগুলো পড়ে চোখে মুখে ঝিলিক টাঙিয়ে দিলেন। পুরো পাড়াজুড়ে হাঁক পড়েছে ‘কথা এসেছেগো কথা এসেছে, ঢাকা থেকে কথা এসেছে, সাথে এক সাহেব এসেছেন’। এভাবেই শুরু। গেরুয়া রং আর গেরুয়া গন্ধের প্রতিটি ভোর আমাকে শুদ্ধ করে চলছে বিরামহীন। হতে পারে এও ঘোর বা নিছক প্রতারনা। তবুও এমনটিই চেয়ছিলাম। টেনে নিলাম নিরুয়ার থুতনি, ঘাড় উঁচা হাসির সুর আর পুরো নিরুয়া। যা বাদ দিই, পুরোপুরিই বাদ দিই। ছেড়ে আসা শহর নিয়ে কোন কথা বলতে ভালো লাগছে না। ভাবতেও না। প্রথমদিন আমাকে জল ঢেলে দেয়ার সময় নিরুয়ার থুতনির ডগায় জমাট উচ্ছ্বাস একেবারে শাঁস সহ উঠিয়ে নিয়েছে যতোসব নাগরিক বিরক্তি। আমিতো মাটি কামড়ে ধরেই নিরুয়াসহ জলে ঝাপিয়ে পড়ি। এখনো জলে। সব সময়। নিরুয়াও।

এদিকের যে শহর আছে, সে শহরে যাই এখন। আজ পূর্ণিমা। নিরুয়া সারা রাত ধরে গান গাইবে। তাকে সুন্দর এবঙ আপন দেখাবে। একটা শাড়ি আর অন্যান্য বস্ত্র আনি। দুল আর ফুলসহ বাকিসব খুশি কিনে আনি। হয়তো আমি পরাবো, নয়তো সে। নিরুয়া আজ আর কোন বিচ্ছেদী গাইবে না। আজ সে প্রেম গাইবে। লেনদেন হবে সামান্য। আমি অস্থির খুব। আমদানি নেই। মুখ আর বুক এক নেই। যা আছে তা কেবলই নিরুয়া।

২. (দুই)
শহরের দক্ষিণ পাশে এক দোকানে দুই নাম্বার গাঁজা বিক্রি করে। দুই নাম্বারে অভ্যস্ত সেবক ক’দিন ধরে এক নাম্বার খেয়ে বিরক্ত। সুযোগ পেয়ে ২টি মিনি প্যাক বাবদ ১২৫ টাকা কোরবানি দিলাম। তিন আঙুলের দুই চিপায় দুটি গঞ্জিকাঠি। আরিব্বাস! ঠাসা জোসে অরজিনাল দুই নাম্বার মাল। মাথার ভেতরে যাচ্ছে, গড়িয়ে গড়িয়ে। আহ! এ সময় বৌয়ের সাথে সর্বশেষ ফোনালাপের রেকর্ডটা কানের কাছে বাজিয়ে নিলে মন্দ হতো না। হাইব্রিড নেশার সাথে ফরমালিনমুক্ত গ্রাম্য গালির পোড়নটা খারাপ হয় না।

-কুত্তার বাচ্চা, খরচ চালাতে না পারলে বিয়ে করছস ক্যান। তোরে বিয়ার আগে আমার মা বলে নাই- আমি তিন কেজি ওজনের নিচে জামা গায়ে দিই না। ওই মাগীর পোলা, তোরে বিয়ার আগে আমার সাজগোজের ঝুড়ি দেখাইনি? ওই হারামী, তখন বুঝিস নাই- আমাকে বহন করার শক্তি তোর ঘাড়ে নাই। তুই একটা অরজিনাল কুত্তার বাচ্চা। ওই খানকীর পোলা, তোরে কইনাই কলেজ হোস্টেলের সিনিয়র ভাইয়েরা আমাকে দেখলে সেক্সী সেক্সী কইয়া ডাকতো; কই নাইরে? ওই মাগীর পোলা- মোবাইল বদলাইছিলি ক্যান? চাকরী ছাড়লি ক্যান? মাগীর পোলা... তোর আমলনামা পাঠাইছিলাম রে শুয়োরের বাচ্চা, তালাক দিছি তোরে ম্যালা আগে। গেরামে আইলে তোর গলার উপর পা দিয়ে কাবিনের টাকা উদ্ধার করবো আমার আব্বায়। শুয়োরের বাচ্চা... পকেটে টাকা নাই... মরতে পারস না। আবার বিয়া মারাইছে!!

ধুর শালা! জমলো না। রেকর্ডেতো এটা ছিলো না। চেঞ্জ হলো কিভাবে? মাইরি, কোন কিছুই ঠিক থাকে না।

শেষাংশ
এখন আমাকে বহন করে কম দামের টাটা এঞ্জিনের বাস চলছে। বাস চলছে রাস্তায়, আমি চলছি সবুজ মাছির পীঠে। আমার নিচে মাছি, মাছির নিচে পৃথিবীতে ছোপ ছোপ মানুষের দাগ। তার নিচেই স্বর্গ এবং প্রহসন পাশাপাশি। পেছনে ফেলে যাচ্ছি অভাব আর মানুষের ভন্ডামি। সব ব্লাউজ ছাড়া মহিলারা পথের ধারে রঙিন সুতো শুকাতে দিচ্ছে। আড়ালে তাদের শুষ্ক হাসি, শুষ্ক জীবন। কয়েক কিলোমিটার ধরে সারি সারি ফেরীওয়ালার বিলাপ। দু’একটা পাখির ডাক টিকতে পাচ্ছে না মানুষের ডাকের কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০২
২৮টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×