আমার চৌর্যবৃত্তির প্রথম ধাপ সেই পিচ্চি বেলা থেকেই।। যার শিক্ষক একপ্রকার বলা চলে আমার আব্বাই। বইয়ের নেশা তিনিই ধরিয়েছেন বলে।। সেই ছোটবেলায় অফিসে যাওয়ার পূর্বে বলে যেতেন ১০টি অংক,একপাতা করে বাংলা ও ইংরেজী লিখলে ১টাকা পাবো।। করে রাখতাম তাই।।না করলে আব্বা আর মা কোথায় টাকা লুকিয়ে রাখতো তা জেনে সেখান থেকে ১ টাকা নিয়ে একদৌড়ে চলে যেতাম কমলাপুর স্টেশনের বুকষ্টলে।। আটআনা,কখনো চার বা ছয়আনা দিয়ে বই কিনে বাকি পয়সা রেখে দিতাম যথাস্থানে।।আব্বা-মা বুঝতো তাদের ছেলের নেশা কোথায়।। তাই ছিলো না এনিয়ে কোন উচ্চবাচ্য।। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে সাথে এর পরিধীও বিস্তৃত হলো।।
স্কুলে পড়ি।। একটু দূর্মদ বলে বলে বদনাম ছিলো বরাবরই।। এমনকি প্রধান শিক্ষক ফয়জুর স্যার থেকে নিয়ে বক্সী,হক,খলিল,এমনকি আপনভোলা বিশ্বাস স্যার পর্যন্ত।।কেহই ঠিক “একান্ত বাধ্যগত” ছা্ত্র হিসাবে আমাকে মেনে নিতে পারেন নি।।শুধু পড়া-শুনায় ভুল হতো না বলে কিছু বলতেও পারতেন না।।
একবার কোলকাতার ইষ্টবেঙ্গল না মোহনবাগান টিমের সাথে ঢাকা মোহামেডানের খেলা।। আর সেদিনই আমাদের ত্রৈমাসিক পরীক্ষা।।আর তা ছিল আবদর রহমান বিশ্বাস স্যারের।। আমি অর্ধেক উত্তর দেওয়ার পরই দেয়ালের ওপার থেকে এলো টমে মানে মুকুলের ঈঙ্গিত।। দাড়িয়ে স্যারকে বললাম বাথরুমে যাবো।। জবাবে জানলাম পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরপরই বাথরুমে যাওয়ার নিয়ম নেই।। ওদিকে সিগন্যালের পর সিগন্যাল আসছে।। বাধ্য হয়ে স্যার যেই সিগন্যালে অতিষ্ট হয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন, সেই ফাকে টেবিলে খাতা রেখে আমি এক দৌড়ে স্কুলের গন্ডীর বাহিরে।।পরে রেজাল্টে এমন এক মার্ক পেলাম যা তিন ও একএর মাঝামাঝি।।স্যারকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলে,বললেন কি উত্তর দিয়েছিস?? বললাম একটি প্রশ্নের অর্ধেক দিয়েছি।। উনি একগাল হেসে জানালেন আমিও তাই তোকে অর্ধেক শুন্যই দিয়েছি।।পুরোটা না।।আমি পাতালে না মাটিতে বুঝতে পারি নি।।
বাৎসরিক স্পোর্সট বলে একটা ইভেন্ট ছিলো।। সেদিন ছুটির দিন।। প্রধান শিক্ষক ফয়জুর স্যারের বাসভবন ছিলো স্কুল গন্ডীর ভিতরেই।।তাতে ছিলো একটা লোভ জাগানিয়া নারিকেল গাছ।। প্রচুর লন ছিলো হয়তো প্রধানশিক্ষক বলেই।। নজর থাকতো সেদিকেই।। সুযোগ পেতাম না।।স্যারতো স্কুল শেষ হলে ঘরেই থাকতেন।। স্পোটপর্ষের দিনগুলিতেও তিনি আমাকে স্বেচ্ছাসেবক দলে ফেলে দিতেন।।কয়েকবছর এভাবে নজরবন্দী থকার পর ভাবলাম এবার শেকল ভাঙ্গার সময় এসেছে।।টেষ্টও শেষ।।এই সুযোগে সেই বিশেষদিনটিতে নিের ল নিয়ে একফাকে এসে সব নারিকেল দিলাম সাফ করে।। গাছ কদম ন্যাড়া।। সবশেষে ঘরে ফিরে উনি কি বুঝলেন জানি না,আমিসহ স্বেচ্ছাসেবক সবাইকে “মুরগা”(মানে ঠ্যাংয়ের নীচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কান ধরে রাখা) বানিয়ে রাখলেন প্রায় ১০/১৫ মিনিট।।ঔ সিনিয়র বয়সের অপমানের কথা মনে পড়ে এখনো।।
দ্বিতিয় চুরি আমাদের এক বন্ধু বাবুদের বাগানে।। সেই ডাব বা নারিকেলই।। চুপিচুপি রাতের আধরে গাছে উঠে পুড়ো ছড়াটা কেটে রশিতে বেধে ধীরে ধীরে নীচে নামালাম।।এরপর কাধেঁ করে নেওয়ার সময় মল মানে সোজাভাষায় গুয়ের গন্ধে টিকতে না পেরে সবাই জুতো-স্যান্ডেল চেক করছি।। নাহ্ কিছুই নেই।।তারপর সি টাইপের আড্ডায় যেয়ে একটা করে কাটছি আর খাচ্ছি।।হঠাৎ করেই একটা ডাব পিছলে পড়লো হাত থেকে।। কেন??সেটা তুলে কাটতে যেয়েই একই বিপত্তি।। আর মলের গন্ধটাও প্রকট হয়ে দেখা দিলো।। সাথের লাইটার জ্বালাতেই সব রহস্যের শেষ।।আসলে মলের গন্ধ আসছিলো ছড়া থেকেই।। কারন ছড়াটা কেটে যখন নামাই তখন তা মালির ঘাড়ের বদলে কোন ছন্নছাড়ার মলের উপরেই পড়েছিলো।।
পরিনত হলাম।। এখন পিকনিক করতে দরকার হাস-মুরগী,ছাগলের।। প্রথম দুইটা এলাকাতেই পাওয়া যেতো অহরহ।। কিন্তু খাশী বা ছাগল ধরতে আমাদের অভিযান চলতো মোহাম্মদপুর,মীরপুর এলাকার বিরান চরে।।গাড়ী নিয়ে যেতাম,ধরতে পারলেই পাজকোলা করে সোজা তুলে এনে চলতো মজাদার পিকনিক।।
মনে পড়ছে এলাকার একজন নামকরা লোকের(জামানভাই,মুক্তিযোদ্ধাও) মুরগী খাওয়া নিয়ে বিপত্বির কথা।।উনার হুমকি শুনে কেমন যেন জেদ চেপে গেলো।। পরদিনই গায়েব করে দিলাম ৯/১০টি মুরগীসহ পুরো খোয়াড়।। ম্যাসেজ বুঝে প্রতিবাদ আর হলো না।।
একবার কোথাও কিছু পাওয়া গেলো না।। কিছুপরই দেখি আজাদ(নিহত) বগলে করে রাজহাস ধরে আনছে।। পিছনে ওর মা বসার ব্যালকনী থেকে চিৎকার করছেন।। বুঝলাম কিছুই না পেয়ে ও নিজেদেরই হাস ধরে আনছিলো।।
আরেকবার মুরগীর মাংস খেয়ে স্বপন(অপঘাতে মৃত্যু)বাসায় যেতেই ওর ভাবীর অভিযোগ বড় মোরগটা পাওয়া যাচ্ছে না।।বেচারা কি বলতে পারে যে ওরই মাংস মাত্র খেয়ে এলো।।দেখানোর জন্য খুজতে বেড়িয়ে আমাদের কাছ থেকে শুধু জানলো কোথা থেকে ধরেছি!!
এস কি পির বাসা ছিলো আমাদের ক্লাবঘর তথা আড্ডাখানা।।এখানেই ছিলো আমাদের সব।।
পুরো ঢকার এমন কেউ ছিল না,যার এখানে আসা হয় নি।। পরবর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (মাঠের পানির পাম্পের আশেপাশের অংশ)।।কে এখানে আসে নি।।কেউ মুক্তিযোদ্ধার নামে,কেউ বা শুধু নিজ নিজ এলাকায় “নামের” কারনে।।ফলশ্রুতিতে সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি নামকরাদের।।যারা পরবর্তিতে ছিলো শুধু করুনার পাত্র।। ২/১ ছাড়া।। কারন এই ভূবনে জীবনের আর যে ভীতু তার কোনই মূল্য নেই।।বুকভরা সাহসই হয়ে থাকে একমাত্র সম্বল।। কিন্তু কালের গতিতে একসময় এটাও থাকে না।।
সিনিয়ররা ব্যাবহার করতো আমাদের আর আমরা জুনিয়রদের।।ঠিক যেন চেইন অব কমান্ডের মত।।অভাব,অভিযোগ,অনুযোগ সবই মেটাতাম আমরা।।আবার বিপদ দেখলে “চাচা আপন প্রান বাচা”ও বেচেঁছি।।
ধুর ধান ভানতে শীবের গীত শুরু করছি।।পাঠকরা ভুলওতো বুঝতে পারে।।কিন্তু এসব পথে এটাই বাধা নিয়তি।। এর বাহিরে কেউ যেতে পারে না।।
শততম পোষ্টটি কি এক ছেলেমানুষী লেখায় সাজালাম।। নিজেই অবাক!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




