
।। ১।।
হেরা এইগুলান করে হেগো কোনো দুষ নাই! আমি দেখলেই দুষ কথাগুলো বলে চোখ রগড়ায় টগর। এখন ওর বাড়ন্ত শরীর। এ বয়সে মানা না-মানা বিষয়ের মধ্যে অনেক কিছুই থাকে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা বিষয় নিয়েই আজ তোলপাড় শুরু হয়েছে পিতা পুত্রের মাঝে। তরমুজ আলী তার ছেলে টগরকে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সারা দুপুর দৌড়িয়েছেন। পরিশেষে হাঁপিয়ে গিয়ে এখন থেমে পড়েছেন। তরমুজ আলীর একমাত্র ছেলে টগর। একমাত্র ছেলে হয় খুব ভালো হয়। নয়তো খুব খারাপ। টগর দুষ্টের মধ্যমণি। এ বয়সে যা যা করা যায় তার সব কিছুই সে রপ্ত করেছে। টগর কোন রকমে স্কুলের সাত ক্লাস পাড়ি দিয়েছে। তারপর তার আর ইচ্ছে হয়নি পড়ার। তাতে সে যতটুকু চালাক হতে পেরেছে তা নেহায়েত একেবারে কম নয়। চালাক হবার সব রকম লক্ষণই তার মাঝে মজুদ।
এই ভর দুপুরে তরমুজ আলী ছেলের জন্য শুধু চিন্তাই করছেন না সেই সাথে ভীষন রকমের ক্ষোভও জন্মেছে ভেতরে ভেতরে। এই বয়সেই এই সব দেখে- ছিঃ ছিঃ বলে আরেকটি বার থু থু ফেললেন তিনি। গত পরশু টগর গঞ্জের বাজার থেকে ফেরতা পথে তার সদ্য কেনা মোবাইল ফোনের মেমরি কার্ডে করে ভরে এনেছে কিছু ভিডিও ফাইল। যে সে ফাইল নয় সেগুলো রগরগে ইংলিশ ছবির কাটপিস ও সেই সাথে বর্তমান দেশিও পর্নো মুভির ভিডিও ক্লিপ। লুকিয়ে লুকিয়ে এগুলো দেখার সময় টগর তরমুজ আলীর হাতে একবার ধরা খেয়ে যায়। লজ্জার মাথা খেয়ে তরমুজ আলী তাকে প্রথম বারের মতো শারীরিক প্রহার করে। কিন্তু তাতে টগর দমে যায় নি দু’হাতে চোখ মুছে সে জবাব দিয়েছে, হেরা এই গুলান করে হেগো কোন দুষ নাই আমি দেখলেই দুষ! তরমুজ আলী কি বলবে ভেবে পায়না, চোখ দু’খানা অবশ হয়ে যায় তার। অভিমানে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে হেরা তো বয়সে তোর চে বড়, আর হেরা হইলো গিয়া খারাপ মানুষ। টগরও পাল্টা জবাব দেয় খারাপ মানুষ হইছে তো কি হইছে? একদিন আমিও বড় হমু তাই আগে থাইকাই দেখতাছি। তোমার ভয় পাওনের কোন কাম নাই; হেগ মতো আমি খারাপ হইলেও আমারে কেউ এমুন কইরা ভিডিও করবো না। আমি তো গেরামে থাকি হের জন্যি।
তরমুজ আলী নিরুপায় হয়ে দাড়িয়ে থাকে তার দৃষ্টি পড়ে দূরের গাছ গুলির দিকে মানুষ বড় অসভ্য তার’ চে গাছ অনেক সভ্য। তার মনে হতে থাকে যত দিন যাচ্ছে মানুষ যেন তত অসভ্য হয়ে আসছে। টগরের বয়সী বয়সে সে এরকম কথা ভাবতেই পারতো না। কিন্তু এ যুগে এটা দিনকে দিন পাপরভাজার মতো হয়ে আসছে। সেদিন মাঝ রাতে টগর ভিডিও ক্লিপ দেখতে দেখতে একটা ম্যাসেজ পায় পর্নোষ্টার জেসমিন চৌধুরীর ফোন নাম্বার তাতে দেয়া আছে একটা ক্লিপে। সেটা এতদিন দেখেও সে খেয়াল করেনি। ফোন নাম্বার দেখে সে ভীষন ভাবে পুলকিত হয়। মনের মাঝে তরঙ্গায়িত হতে থাকে সুপ্ত ঢেউ গুলো। টগরের মন এক ধাপে উঠে যায় জেসমিনের ঘরের পর্দার সামনে।
।। ২।।
-দোস্ত ডিভিডি টা কোথায় রাখছিস?
-দেখ বালিশের নিচেই আছে
সুহাস বালিশ সরিয়ে হাতে তুলে নেয় র্যাপিং পেপারে মোড়া সদ্য প্রকাশিত দেশিও সেক্স মুভির ডিভিডি ক্যাসেটটি। তারপর ঘরের জানালা গুলো ভেজিয়ে দিয়ে পিসি অন করে ডিভিডি চালু করে। পর্দায় ভেসে উঠে রমনকৃত নীল দৃশ্য। যে দৃশ্যগুলো পর্দা ছাপিয়ে আস্তে আস্তে সুহাসের মুখ অবয়বে বিভিন্ন রুপ নেয়। সুহাসের মগ্নতা ক্রমশই বাড়ে। সে মুভির বিভিন্ন অংশে নিজেকে চিত্রিত করে নেয়। আবার কখনো ভাবে নাহ্ এটা অধঃপতনের একটা নিকৃষ্ট সিড়ি যেখানে পা পিছলে গেলে, উঠে আসা খুব কঠিন। ওর মনের ভেতকার শয়তান বলে উঠে, সুহাস এটা সবারই কাম্য জিনিস। এটা সবাই উপভোগ করে; তোমার তো যৌবনের মৌ-বনে বেড়াবার সময় হয়ে এসেছে। সুহাস এসব ভাবছে আর পর্দায় চোখ নাড়ছে। কিছুক্ষণ পর সুহাসের মগ্নতায় যোগ দেয় তারই রুমমেট সীমান্ত।
সীমান্ত বিছানায় বসতে বসতে বলে দোস্ত আমাদের দেশটা ক্যামন যেন! আনকালচারড! সেক্সুয়াল বিষয়গুলোকে পর্দায় ঢেকে রাখে অথচ দেখ ওই দিন আমেরিকান পাই মুভি দেখলাম ওদের কত্ত মজা! উদোম হয়ে স্যার, মাডাম, ছাত্র-ছাত্রী একসাথে র্যালী দেয়। এদেশে কবে যে এমন হবে। পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে সুহাস বলে আর বেশি দিন বাকী নেই দোস্ত; তুই দেখিসনি এ দেশেই তো এখন সেক্সি মুভি তৈরি হচ্ছে। এ দেশের পর্নো ষ্টারের নাম বোধহয় শুনিস নি। সীমান্ত প্যাকেট থেকে এক শলা সিগারেট বের করে তাতে অগ্নিকরন করে ধোয়ার রিং ছেড়ে দেয় বলে তাই নাকি! দেশটা তাহলে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পঙ্গপালের দলেরা ঘরে বাইরে সমান তালে বিনোদন বিকিয়ে বেরাচ্ছে। সেই বিনোদনের খোরাক হতে মা-মেয়ে কেউ বাদ যাচ্ছেনা।
সীমান্তর কথাগুলো শেষ হবার আগেই সুহাস কথা ছুড়ে দেয়, -তোকে তো বলাই হয়নি কাল নেটে ওই পর্নো ষ্টারের ফোন নাম্বারও পেয়েছি।
-কোনটা দেশি
-হ্যা
-তাই নাকি বিস্ময় প্রকাশ করে সীমান্ত
-আমি ভাবছি একটিবার সামনে থেকে তাকে দেখব। পর্দায় যার এত আস্ফালন দেখতে পাই, সামনে গেলে হয়তো আরও কিছু দেখতে পাব। সীমান্তের কাধে চাপ দিযে উঠে দাড়ায় সুহাস। যাবি নাকি আমার সাথে।
-ঝামেলা হবে না’তো কোন?
-ধুর কিসের ঝামেলা। ফ্রি নাকি। নজরানা দেব তো।
।। ৩।।
বাসা খুজে পেতে একটু কষ্টই হয়েছে টগরের এর আগে সে দু’বার ঢাকায় এসেছে কিন্তু সেটা একা নয় তরমুজ আলীর সাথে এসেছিল। এবার একা এসেছে। বাসার গেটের কাছে দাড়িয়ে থাকা দারোয়ান প্রথমে তাকে ঢুকতেই দেয়নি। তার মতো কত টগর যে এখানে এসেছে গেছে সে খবর হয়তো টগরের জানা নেই তাই প্রথমে কিছুটা অবাকই হয়েছে। জেসমিন চৌধুরীর মোবাইলে সে যখন পুরো বর্ণনা দিয়ে উল্লেখিত তারিখে তার সাথে দেখা হবার কথা ছিল তা জানালো তখন তাকে ঢুকতে দেয়া হলো। গ্রামের ছেলে টগর লিফট ব্যবহার না করেই সে পায়ে হেটে সিড়ি বেয়ে ছ’তলায় চলে গেল।
আর এদিকে সুহাস আর সীমান্ত ততক্ষণে লিফটে চড়ে ছ’তলার ফ্লাটে পৌছে গেছে। গৃহ পরিচারিকার কাছে পরিচয় দিতেই খুলে গেল দরজা সুহাস আর সীমান্ত কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গি নিয়েই প্রবেশ করলো অন্দরে। বেশ পরিপাটি আর ছিমছাম করে সাজানো ঘরটি। আর দশটা ঘরের মতো হলেও একটু ব্যাতিক্রম আছে তা হলো টেবিলে বিভিন্ন রকমের ছোট ছোট গ্লাস সেই সাথে বেশ কয়েকটা অ্যাশট্রে। তরল পান করবার গ্লাস গুলো দেখেই বুঝা যায় বিভিন্ন শ্রেণীর লোকরাজদের আনাগোনাই এখানে। তবে একটা বিষয়ে খুব অবাক হয়েছে সেটা হলো পুরো ঘর জুড়েই পিনপতন নীরবতা। যেন এখনি কেউ এখানে নিরবতা বিছিয়ে দিয়ে গেছে। বিস্ময়ের রেশ কেটে যাবার আগেই গৃহপরিচারিকা ওদের অন্য আরেকটি রুমে যাবার ইঙ্গিত করলো। ততক্ষণে সুহাসের বুকের ভেতর ক্যামন যেন ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। যার সাথে দেখা করতে এসেছে সে কি সত্যিই পর্নো ষ্টার নাকি অন্য কেউ। সীমান্তর মুখের হাবভাবে তেমন কোন লক্ষন নেই বলেই মনে হচ্ছে। যদিও সে এইরকম পরিবেশে আরও বেশ ক’বার এসেছে তথাপি আজ সে কেমন যেন মুষড়ে পড়েছে। সুহাসের মনে কিন্তু সেই এক চিন্তা কাঙ্খিত ব্যক্তিটিকে একনজর দেখার আশায় আজ আসা। দেখা হবে তো?
হাওয়ার দাপট নেই আজ তাই মনে হচ্ছে বাইরের অংশটাও আজ শুনশান। সুহাসের কালক্ষেপণ শেষ করবার জন্যই অবশেষে নুপূরের রিনিঝিনি শব্দ নিয়ে ওদের চোখের সামনে হাজির হলো জেসমিন চৌধুরী। দেশের একমাত্র পর্নোষ্টার। সেই চোখ , সেই রহস্যময়ী হাসি সেই শিহরণ জাগানো চাওনি। সুহাসের মনে হচ্ছিল যেন পর্দা থেকে স্বয়ং নেমে এসেছে এই বুঝি ওকে ধরে ফেলবে। তবে সীমান্তর বেলায় ঘটছে তার উল্টো সে সামনা-সামনি তাকে দেখে বরফের মতো হয়ে গেল। সেই সাথে কিছুটা ঘৃণাও মনের ভেতর ঘুরপাক খেতে লাগলো এই হর্নি নারীর কতো নষ্ট পুরুষের আহবানে ভেসেছে। আজ সেও কি তাদের দলে এসে যাচ্ছে সেও কি তবে নষ্ট পুরুষ? জেসমিন চৌধুরীর চোখের দিকে তাকায় ও কি নির্লিপ্ত সে দৃষ্টি! কিসের অভাব এই নারীর? স্বামী-সংসার নিয়ে তো সুখি হতে পারতো তবে কেন সে এ পথে? আরও কিছু ভাবনা সীমান্ত’র মনে বাসা বাধতো কিন্তু হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখে দেয়ালে লেখা রয়েছে “যৌবনের মৌ বনে তোমায় স্বাগতম”। সুহাসের ভাবনারা এলোমেলো হয়ে গেছে। নাহ! এ নারী তবে ইচ্ছাকৃত ভাবেই দেহ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, আর তার জন্য নিজের সম্মান এখন ফুলের পাপড়ীর মতো ছুড়ে দিয়েছে আনাচে কানাচে।
কিছুক্ষণ পর সীমান্ত দেখলো সুহাস আর জেসমিন রোমান্সে ব্যাস্ত হতে যাচ্ছে। বিষয়টা ওকে কিছুতেই টানতে পারছে না কেমন যেন অনেকটা আন-ইজি লাগছে ওর। যদিও জানে এখানে কেন আসা হয় সবার তবুও সীমান্ত অনেকটা অবুঝের মতো করে কথা ছুড়ে দিল আপনার এখানে কি হয়?
পাশে থাকা সিগারেটের প্যাকেট থেকে এক শলা সিগারেট অগ্নি সংযোগ করে জেসমিন চৌধুরী বলে উঠলে এখানে যৌবন বিক্রি করা হয়। তুমি ভিডিও ক্লিপে দেখনি ন্যাকা বেড়াল! তুমি জাননা আমি পুরুষ চিবিয়ে খাই! বলেই হেসে উঠলো। দেয়াল থেকে দেয়ালে সে হাসিটা ঘুরে বেড়ালো; সেই সাথে জেসমিনের শরীরে পারফিউম ততক্ষনে সীমান্তকেও টলিয়ে দিয়েছে।
ওদিকে টগর দাড়িয়ে আছে সে খবর দিতেই গৃহ পরিচারিকা এসেছিল কিন্ত ততক্ষণে অন্দর মহলের লাইট নিভে গেছে। দেয়ালের চারপাশ রমনক্রীড়া দেখতে ততক্ষণে জ্বেলে দিয়েছে বিবেকের ফ্লাশ লাইট।
দুপুর ফুরিয়ে যখন বিকেল হয়ে এসেছে। উপর তলার সিড়ি থেকে ওদেরকে নামতে দেখা গেল সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘামের আভাস। আনন্দ ক্লান্তি নিয়ে পথ চলাটা ওদের কাছে তখন যেন হাওয়া উড়ার মত মনে হচ্ছিল। কিন্তু ওরা ভাবতেই পারছিল না এভাবে উড়তে গিয়ে যদি ছিটকে পড়ে যায় তাহলে কেমন হবে?
।। ৪।।
কয়েক বছর পর....
পর্নোষ্টার জেসমিন এর জায়গায় আরও বেশ ক’জন নামী দামি পর্নোষ্টার ইতিমধ্যে বাংলার অভ্যন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পর্নো সামগ্রী সরবরাহকারী হিসাবে বাংলাদেশ ২য় স্থানে এসে গেছে। যুগের তরীতে সব কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। সব পাল্টেছে। আরো নতুনত্ব। আরো বিশালত্ব। সেই সাথে আরো অভিনবত্ব দিয়েই প্রকাশিত হয়ে চলেছে দেশীয় পর্নো মুভির কারখানা। এটা আর এখন রাখ-ঢাকের কিছু নেই। সুহাস ও সীমান্তের জীবনও পাল্টেছে। শরীরে ক্ষয় বীজের বাসা বেঁধেছে। আর বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান টগর এইচ আইভি ভাইরাস নিয়ে গ্রাম ছাড়া। ফুটপাতও তাকে জায়গা দিতে নারাজ। সে এখন পাগলপ্রায়। এই সব পরিবর্তনের মাঝে পর্নো ম্যাগজিন গুলো প্রায়ই হতাশা কলাম প্রকাশ করে, পর্নোষ্টার জেসমিনের খবর অনেকদিন ধরে কেউ জানেনা? জানেনা সে এখন কেমন আছে?
==============================================
গল্পগ্রন্থ: এই নগরের ছন্নছাড়া

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



