somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদের মোল্লার ফাঁসী এবং এক লেখকের একটি সুখ স্বপ্ন...

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার প্রহসনের রায় বাতিল এবং সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসীর দাবিতে যে গণজাগরণ সূচীত হয়েছিল শাহবাগে, নানা ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দূরদর্শিতার অভাবে সে আন্দোলন স্তিমিত হয়েছে বহু আগেই। নানা ধারায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলা সে আন্দোলন এখন কেবল জায়গায় জায়গায় সভা সমাবেশ আর নামকাওয়াস্তে কিছু কর্মসূচীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের পরে ষাট দিন পেরিয়ে গেছে খুব নীরবেই। মানুষ যেন ভুলেই গেছে শাহবাগের সেসব আগুন ঝরানো দিনের কথা। ক্ষণে ক্ষণে মুহুর্মুহু শ্লোগান, আদিগন্ত বিস্তৃত সমাবেশ, ফাঁসীর দাবিতে প্রকম্পিত রাজপথ; সবই ভুলে গেছে এই দেশের ভুলোমনা মানুষগুলো। সেই সাথে ভুলে গেছে প্রিজন ভ্যানে দু’আঙুলে ভি চিহ্ন দেখানো কাদের মোল্লার সেই চেহারাটাও। দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের হলুদ সাংবাদিকতার মুখোশে ডাকা মিডিয়াও আজ তাই নিশ্চুপ, নিশ্চুপ সরকার বাহাদুর। কেউই নাস্তিক অথবা ধর্মবিরোধী ট্যাগ খেতে চায় না, নিজের আখের গোছানোতে ব্যস্ত সবাই। জামাত-শিবিরের প্রোপাগান্ডা তাই সফল, শাহবাগ খাঁ খাঁ করে, কিছু কাক কা কা করে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী সত্যিকার অর্থেই চেয়েছিল যারা, যারা কিনা দেশ মাতৃকাকে কলঙ্কমুক্ত করার অভিপ্রায়ে জমায়েত হয়েছিল শাহবাগে, তাদের কারোই মন ভালো নেই। বিষণ্ণতা গ্রাস করেছে তাদের সবাইকেই। এদের দলে আছে আমাদের এ গল্পের নায়কও। নাহ, সে বিখ্যাত কেউ না, তাকে নিয়ে কেউ গল্প লেখে নি। ফেসবুকে সেও নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় তার লেখার একমাত্র পাঠক থাকে সে নিজেই! ব্লগেও মাঝে মাঝে লেখে, খুব কম মানুষেই পড়ে তার লেখা। এক কথায়, আমাদের এই গল্পের নায়ক এক অতি সাধারণ অনলাইন এক্টিভিস্ট, দেশের হাজারো ক্ষুদ্র এক্টিভিস্টদের মাঝে সেও একজন, অতি সাধারণ একজন মানুষ। তার চাওয়া গুলোও তাই অন্যান্য সাধারণ মানুষ, যারা কিনা অল্পতেই খুশি থাকে, অন্যায়কারী যেই হোক তার শাস্তির দাবি করতে যারা পেছপা হয় না, তাদের মতোই। ধরে নেই তার নাম ধ্রুব।
গ্রীষ্মের তীব্র গরমে পরিপূর্ণ এক দুপুরে নিজের রুমে বসে ছিল ধ্রুব। আজ কাদের মোল্লার আপিলের রায় হবার কথা। জামাতের হরতাল চলছে। করার মতো কাজ নেই ধ্রুবর হাতে। নেট প্যাকেজ শেষ, তাই অনলাইনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। থাকলেও লাভ হতো না অবশ্য, কারেন্ট এর লুকোচুরি খেলা বেশ ভালোই চলছে। জানালাটা খুলে দিল সে, একটু বাতাসের আশায়। হতাশ হতে হল তাকে। আবার এসে ঝিম মেরে বসলো বিছানায়। কিছু একটা করতে হবে। এভাবে হাজারো মানুষের সর্বনাশ করা, নিজের দেশকে অস্বীকার করা মানুষেরা হেসে খেলে বেঁচে থাকবে দেশেরই মাটিতে, এ মেনে নেয়া যায় না। বার বার চোখে ভেসে উঠে কাদের মোল্লার ভি দেখানো সেই ছবিটা। দেখে আর নিজের অজান্তেই হাতের মুঠিগুলো শক্ত হয়ে আসে। এর মধ্যেই হঠাৎ জানালা দিয়ে ভেসে আসে এক পশলা হাওয়া। আহ! গরমে কি সুশীতল পরশ! বিছানায় গা’টা এলিয়ে দেয়। আরামে চোখ দু’টো বুজে আসে।
হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে, অগ্নিকন্যার কণ্ঠে সেই আগুন ঝরানো শ্লোগান, “ক-তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার, তু...” ঘুম ভেঙেই চমকে উঠে, এই রিংটোন তো সেট করা ছিল না! কলারের নামটা দেখে আরো চমকে যায়! শান্তাদি! এক মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ফেব্রুয়ারীর সেই ছবির হাট, চায়ের আড্ডায় পরিচয়, একসাথে কত শ্লোগান, কত প্ল্যাকার্ড লেখা সে’দিনগুলোতে। শান্তাদির ফোন বন্ধ ছিল গত দু’মাস, রাজাকারের দোসর জামাত-শিবিরের কুত্তারা তাকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে আসছিলো, বাধ্য হয়ে ফোন বন্ধ রাখতে হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে কেটে গেল ফোনটা, পরক্ষনেই আবার ফোন। এবার প্রথম বারেই রিসিভ করলো ধ্রুব। কথা শেষ করে ফোনটা রাখার পরে কিছুক্ষণ নিজেকে আবিষ্কার করলো ঘোরের ভেতর। এ কি খবর দিল শান্তাদি! কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায় নাকি বহাল আছে!! হায়! মিথ্যা হয়ে গেল শাহবাগের গণজাগরণ, মিথ্যা হয়ে গেল রাজীব আর শান্তর জীবন, মিথ্যা হয়ে গেল লাখো মানুষের প্রাণের আকুতি, মিথ্যা হয়ে গেল লাল-সবুজের পতাকার সম্মান। ধ্রুব ড্রয়ার থেকে বের করল ওর পতাকাটা। শাহবাগে এটা মাথায় বেঁধে শ্লোগান দিয়েছে প্রচুর। পতাকাটাকে খুবই বিবর্ণ দেখাচ্ছে, পতাকাটা যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে তিরিশ লক্ষ শহীদের চোখ দিয়ে, দু’লক্ষ ধর্ষিতা বীরাঙ্গনার চোখ দিয়ে, যেন ওকে নিঃশব্দে বলছে, আজ আরেকবার ধর্ষিত হলাম আমি, ধর্ষিত হল প্রাণপ্রিয় দেশমাতা। নাহ আর ভাবতে পারে না ধ্রুব। কিছু একটা করতেই হবে। শান্তাদি যেমন খবর দিল তাতে শাহবাগে সভা সমাবেশ বন্ধ, গণজাগরণের মঞ্চের নেতারা সরকারের সাথে আলোচনা করে অনুমতি চাচ্ছে, কিন্তু অনুমতি মিলেনি এখনও। সুতরাং এভাবে হবে না। ওর এখন ইচ্ছে করছে কাদের মোল্লাকে নিজের হাতে খুন করতে! কিন্তু সেটা তো সম্ভব না! সে একটা পুঁচকে মানুষ, সে কিভাবে করবে এই কাজ! অথচ দেশ মাতা যে তাকে ডাক দিয়েছে! এ ডাক সে উপেক্ষা করে কি করে।
একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে বসে ধ্রুব। কি করা যায়, কি করা যায়! হঠাৎ মনে পড়লো সালাম ভাইয়ের কথা। সালাম ভাইয়ের সাথে পরিচয় এই শাহবাগেই। পাশাপাশি বসে স্লোগান দিচ্ছিল খেটে খাওয়া মানুষটা, পরে পরিচয় হয়ে জানতে পারে সে জেলখানায় নাইট-গার্ডের কাজ করে। তার কাছ থেকে জেলখানার অনেক গল্প শুনেছে ধ্রুব, লোকটা অনেক সহজ-সরল, দেশের আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই। কাদের মোল্লাকে যদি খুন করতেই হয়, তবে এই লোকটার সাহায্য দরকার হবে তার। কিন্তু সে কি রাজী হবে সাহায্য করতে? এ যে আইন বিরুদ্ধ কাজ! যাই হক, চেষ্টা করে দেখাই যাক না। সালাম ভাইকে ফোন দিতে গিয়েও থেমে গেল সে। নাহ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ইউজ করাটা ঠিক হবে না, বলা যায় না, দেয়ালেরও কান আছে। পরিচিত কাউকেই কিছু জানালো না, বাসায় বাবা-মাকেও না। শুধু শুধু তাদের ঝামেলায় ফেলার প্রয়োজন নেই, সারাজীবন তো তাদের একটার পর একটা ঝামেলায় ফেলেই আসছে। বেরুবার সময় কি মনে করে পতাকাটাও পকেটে গুঁজে নিল, থাকুক সাথেই। গন্তব্য জেলখানা কোয়ার্টার।
হরতাল, তাও জ্যামে জ্যামে দুই ঘণ্টা লাগলো পৌঁছাতে। বাসায় গিয়ে জানল সালাম ভাই ডিউটিতে, ফিরতে সন্ধ্যা হবে। তার বউ গেছে বাপের বাড়ী। কি আর করা, মোড়ের চায়ের দোকানে বসলো । খবর দেখাচ্ছে টিভিতে। সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানান হচ্ছে। জামাত-শিবির বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা চালাচ্ছে, তারা কাদের মোল্লার নিঃশর্ত মুক্তি চায়। “শুয়োরের বাচ্চারা...” আপনমনে বিড়বিড় করে ধ্রুব। হঠাৎ খবরের মাঝে বিরতি, ইসলামি ব্যাঙ্কের সৌজন্যে! “বাঞ্চুত মিডিয়া...” মনে মনে গু কালারের মিডিয়ার উদ্দেশ্যে একগাদা গালি ছাড়ে ধ্রুব। অসহ্য লাগছে। সৌভাগ্যক্রমে একটু পরেই সালাম ভাইয়ের আগমন, সে তো আকাশ থেকে পড়ল ধ্রুবকে দেখে! পরম আন্তরিকতায় নিয়ে গেল তাদের বাসায়।
জামাই-বৌয়ের ছোট্ট সংসার। অভাবের ছাপ স্পষ্ট, তবু মুখের হাসিটা অমলিন। এটা সেটা কথার পরে আসল কথাটা জানাল ধ্রুব তাকে। ভেবেছিল হেসেই উড়িয়ে দেবে বুঝি ওর কথা। কিন্তু ওকে অবাক করে দিল সালাম ভাই। কথাটা শুনেই খুব গম্ভীর হয়ে বলল, “তুমি কি সিরিয়াস? আসলেই করবার চাও কামটা?” ধ্রুবর উত্তর হ্যাঁসুচক দেখে সে কথা চালিয়ে যায়,
-তুমি ভাইবা দেখসো সব? করতে পারবা ত? তুমার ফেমিলির কথা ভাবসো? ধরা খাইলে তোমার কি হইতে পারে ভাইবা দেখসো?
--হ ভাই সব ভাইবাই আমি সিদ্ধান্ত নিসি, এখন তোমার হেল্পই ভরসা।
-হুম। বিশ্বাস করবানা খবরটা আমি যহন হুনসি তহন আমার মাথায় একই চিন্তা আইসিল, কিন্তুক আমি সব চিন্তা কইরা বুঝতে পারতেসিলাম না কেমনে করন যায়। এহন তুমি কইলা, খাড়াও ভাইবা দেহি।
ধ্রুব’র মাথা থেকে একটা বিশাল বোঝা নেমে যায়। যাক সালাম ভাই রাজি হল তাহলে। দু’জনে মিলে ভেবে ভেবে প্ল্যানটা দাঁড়া করায়। ঘটনাটা একয়েকদিনে করা যাবে না, কারন এ কয়েকদিন কাদের মোল্লার সেলে কড়া পাহারা থাকবে। ঠিক হয়, এক সপ্তাহ পর ওরা কাজটা করার চেষ্টা করবে। এর মধ্যে সালাম ভাই যতদূর সম্ভব ইনফরমেশন নিয়ে রাখার চেষ্টা করবে।



===========
রাত তিনটা বেজে দশ। ধ্রুব বসে আছে কাদের মোল্লার সেলে। কাদের মোল্লা মেঝেতে পড়ে আছে, মুখে স্কচটেপ। হাত পিছমোড়া করে বাঁধা।
ওদের দু’জনের প্ল্যান মতই এগিয়েছে সব, খুচরো ঝামেলাগুলো ম্যানেজ করা গেছে, বড় কোন সমস্যা হয় নি। সালাম ভাই আগেই খবর নিয়ে রেখেছিল, কাদের মোল্লার সেলের আশেপাশের এলাকায় রাতে পাহারায় থাকে রফিক ভাই আর জব্বার ভাই আর এরশাদ নামে আরেকজন। রফিক ভাই আর জব্বার ভাই দু’জনেই সালাম ভাইয়ের খুব কাছের লোক এবং তারাও চায় কাদের মোল্লার ফাঁসী হোক। তারা দু’জনেই অনেক সাহায্য করেছে ধ্রুবকে ভেতরে ঢোকার জন্যে। এরশাদকে নিয়ে সমস্যা হবার কথা ছিল কারন সে জামাত করে এবং চরম মাত্রায় মৌলবাদী। তার ভাষ্যমতে কাদের মোল্লার মত পরহেজগার লোক এমন কাজ করতেই পারে না, সব ষড়যন্ত্র! যাইহোক, আজ তার ডিউটি ছিল সকাল বেলাতে, তাই সবাই এই দিনটাকে বেছে নিয়েছে। তিনটার দিকে ধ্রুব ঢুকে কাদের মোল্লার রুমে, একাই। এই সাধারণ মানুষগুলোকে সে এই কাজে জড়িত করে ঝামেলায় ফেলতে চায় না। তারা তবুও দাঁড়িয়ে আছে সেলের বাইরে, অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ ঘটলে ওকে সতর্ক করে দেবার জন্যে। ধ্রুবর হাতে সময় আছে আর ঘড়ি ধরে বিশ মিনিট।
সাথে করে আনা দড়িটা সিলিং ফ্যানের আংটার সাথে ঝুলায় ধ্রুব। নাইলনের মজবুত দড়ি। দড়ির এক প্রান্তে ফাঁসের গেরো দেয়। অন্য প্রান্তটা হাতে ধরে রাখে। এই প্রান্ত ধরে টেনেই ফাঁসী দেবে সে। সব কাজ শেষ করে কাদের মোল্লার দিকে তাকায়। কুতকুতে চোখ দুটোতে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা। চোখেমুখে বাঁচার তীব্র আকুতি। ধ্রুব’রও চোখে ভেসে উঠে হাজারো শহীদ কিংবা বীরাঙ্গনার করুন চাহনি। তারাওতো মরার আগে এইরকম আকুতি নিয়েই তাকিয়েছিল এই রাজাকারটার দিকে। তখন সে এতটুকু দয়াও দেখায়নি তাদের প্রতি। আজ ধ্রুবও তার প্রতি দয়া দেখাবে না কোন। কাদের মোল্লার বেশভূষায় চোখ পড়ে তার। পাজামা পাঞ্জাবী, মুখে সফেদ দাড়ি। এইভাবে ধর্মের লেবাস পরে দেশের মানুষকে এতদিন ধরে ধোঁকা দিয়ে আসছিল নরপিশাচগুলা। হঠাৎ পকেটে কিছু একটার অস্তিত্ব টের পায় সে। বের করে দেখে ওর সেই প্রিয় পতাকাটা। পতাকার লাল রঙটা যেন আরো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে এই আবছা অন্ধকারে। পতাকার ভেতরেও যেন জেগে উঠেছে প্রতিশোধ স্পৃহা। ৪২ বছরের পুরনো ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, পতাকাটা লাল থেকে হয়ে উঠছে আরো লাল।
শেষ মুহূর্তে প্ল্যান বদলালো ধ্রুব। নাইলনের দড়ির বদলে পতাকাটাকেই ফাঁসের মতো পেঁচিয়ে বাঁধল কাদের মোল্লার গলায়। এরপর সিলিং থেকে ঝোলানো দড়ির সাথে গেরো দিল পতাকায়, দড়ির অন্য প্রান্ত ধরে টান দিয়ে কাদের মোল্লাকে ঝুলিয়ে দিল।
গত বেয়াল্লিশটা বছর ধরে যে পতাকাটা কাদের মোল্লা সহ রাজাকার গংদের গলায় ফাঁসের মতো হয়ে ছিল, আজ কাদের মোল্লার গলায় সেই পতাকাটা আক্ষরিক অর্থেই ফাঁস হয়ে পেঁচিয়ে ধরেছে। পেঁচিয়ে ধরেছে ঘৃণায়, পেঁচিয়ে ধরেছে দু লক্ষ বোনের লাঞ্ছনায়, পেঁচিয়ে ধরেছে কোটি মানুষের নীরব অভিশাপ হয়ে, পেঁচিয়ে ধরেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া অযুত মানুষের নিযুত নীরব দীর্ঘশ্বাস হয়ে। এক টুকরো পতাকাটা তার সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে কাদের মোল্লার গলা, এদেশের বাতাস থেকে আর এক ফোঁটা অক্সিজেন নিতে দেবে না সে রাজাকারটাকে, সে অধিকারও নেই তার।
ঘড়ি ধরে দশমিনিট পার হবার পর তাকে নামিয়ে আনে ধ্রুব। ঝুলিয়ে রেখেই চলে যেত হয়ত, পতাকাটার কথা ভেবেই নামালো। কাদের মোল্লার গলায় পতাকাটা একেবারেই বেমানান, পতাকার এক ধরনের অবমাননা। পতাকাটা খুলে ফেলে ধীরপায়ে বাইরে বেরিয়ে আসে সে। আসার সময় কাদের মোল্লার মুখের উপর এক দলা থুথু ছিটিয়ে আসতে ভুলে না।

রফিক আর জব্বার ভাইয়ের সহযোগিতায় মোটামুটি নির্বিঘ্নেই জেল থেকে বেরিয়ে আসে ধ্রুব। তাদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা দেয়। ধরা পড়লে তার শাস্তি হবে হয়ত, কিন্তু জীবনে এই প্রথম দেশের জন্যে কিছু একটা করতে পেরেছে, এটা ভেবেই সকল শাস্তির কথা উবে যায় ওর মাথা থেকে। রাস্তার পাশে একটা পানির কল দেখে এগিয়ে যায়। পতাকাটা ধুয়ে ফেলতে হবে। রাজাকারের শেষ গন্ধটুকুও মুছে ফেলতে হবে এই পতাকাটা থেকে। ধোয়া শেষে ভেজা পতাকাটা গায়ে জড়িয়ে নেয় ধ্রুব। আহ, গরমের ভেতর ঠাণ্ডা শান্তির পরশ! পতাকাটাও যেন ওকে জড়িয়ে ধরে রাখে আষ্টেপৃষ্ঠে। আগলে রাখে।
মায়েরা যেমন তাদের সন্তানদের আগলে রাখে, পরম মমতায়......
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×