somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার নীল মনি'র "সেফটিপিন"

২৭ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ব্লগের অত্যন্ত প্রিয়মুখ এবং সুপরিচিত ব্লগার রুবাইদা গুলশান (নীল মনি) এর গল্পগ্রন্থ "সেফটিপিন" বইটি কিছুদিন আগে আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁর লেখা এ বইটি পড়ে নিজস্ব উপলব্ধির ব্যাপারে আলোকপাত করার উদ্দেশ্যেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। রিভিউ বলতে আসলে যা বোঝায় এই লেখাটা ঠিক তা নয়। তবুও কেউ যদি এটাকে রিভিউ হিসেবে ধরে নেন তাহলে তাঁকে বলব- এটা আমার জীবনের তথাকথিত প্রথম বুক রিভিউ। তাই সকল ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় একান্তই আমার নিজস্ব।

ছোট এবং মাঝারি মিলিয়ে সর্বমোট আটাশটি জীবনঘনিষ্ঠ বিভিন্নরকম গল্প নিয়ে সেফটিপিন। লেখিকা তুলনামূলক নবীন হলেও তাঁর লেখায় পরিপক্কতার ছাপ সুস্পষ্ট। পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি সফল। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই আর টানাপোড়েনের চিত্রগুলো অসাধারণ মুন্সিয়ানায় ফুটিয়ে তুলেছেন! সমাজের বিভিন্ন ছোটখাট অসঙ্গতিও উঠে এসেছে তাঁর অসাধারণ লেখনিতে। তিনি নিজস্ব স্বকীয়তাকে উদ্ভাসিত করে ভাবনার গভীরতায় ডুবে গিয়ে প্রতিটি গল্প সযত্নে দাঁড় করিয়েছেন! মানবিক গুণাবলীর ব্যাপারে তাঁর উপলব্ধিও অসাধারণ! এ ব্যাপারটাকে তিনি প্রায় সব স্থানেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছেন।

বইয়ের প্রায় প্রতিটি গল্প মূলত নারীদেরকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। বইটি একবার পড়া শুরু করলে পুরো শেষ না করা পর্যন্ত মনোসংযোগ কিছুতেই বাধাগ্রস্ত হবে না; অমোঘ আকর্ষণে শেষ পর্যন্ত বেঁধে রাখবে পাঠককে। পড়া শেষ হওয়ার পরও গল্পগুলোর অন্তর্নিহিত আবেদন, জীবনের নানা অক্ষমতা আর অপূর্ণতার সহজসরল চিত্রায়ন এবং সর্বোপরি ছোটখাট পূর্ণতা আর তৃপ্তিকর অভিজ্ঞতাগুলো অনেকদিন ধরে পাঠককে বিমোহিত করে রাখবে। গল্পগুলোতে আমাদের নিজেদেরই জীবনের নানা প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে। তিনি যেমন নারীদের জীবনের বিভিন্ন সময়কে শক্তিশালী লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তেমনি তিনি প্রেম-ভালোবাসাকেও সযত্নে পরিচর্যার চেষ্টা করেছেন। জীবনের এদিকটাকে মোটেও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি; বরং প্রেম আর ভালোবাসাকে বিভিন্ন রূপ আর আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন!

সেফটিপিন গল্পগ্রন্থের প্রথম ছোটগল্প। এ নামেই বইটির নামকরণ করা হয়েছে। সমাজের সুযোগসন্ধানী পুরুষ নামক দানবের লোলুপ কলুষতা থেকে একটি কিশোরীর আত্মরক্ষার খুবই কার্যকরী অস্ত্র হিসেবে সেফটিপিন ব্যবহার করার ধারণা এককথায় খুবই চমকপ্রদ! তেমনি দ্বিতীয় গল্পটিতেও মৌনতা নামের আরেকজন মেয়ের ঘুণেধরা সমাজের হিংস্র থাবা থেকে আত্মরক্ষার অধিকারের বিষয়ে লেখিকা খুবই হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা দিয়েছেন!

বাঁশ গল্পটি পাঠককে অস্ত্বিত্ব ধরে ঝাঁকি দিয়ে যাবে। পাঠক ধাক্কা খেয়ে অনেকক্ষণ নিজেকে ভাবনার জগতে হারিয়ে ফেলবেন; নিজের ভেতরের অক্ষমতায় লজ্জিত হয়ে নিজেকে শাণিয়ে নিতে অন্যরকম শক্তির অস্ত্বিত্ব অনুভব করবেন!

চোখ গল্পটিতে সমাজের চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ‌একটি শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে খুবই শক্তিশালী মেসেজ দেয়া হয়েছে। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত যেসব দুর্নীতি আর অবক্ষয়ের বিস্তার ঘটে চলেছে চোখ গল্পটি তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ।

দূরত্বের শেষ প্রহরে বইটির সর্বশেষ গল্প। এক কিশোরীর প্রথম প্রেমের প্রস্ফূটিত পাঁপড়ি অকালেই ঝরে যাওয়া আর প্রেমিকের সকরুণ পরিণতির এক মর্মন্তুদ আখ্যান! পাঠককে জোর করে এক অভাবনীয় ভাবনার জগতে প্রবিষ্ট করবে।

এমনিভাবে প্রতিটি গল্প শেষে পাঠক গল্পের পরিধির একেবারে ভেতরে ঢুকে গিয়ে প্রত্যেক ঘটনার সাথে বারংবার নিজেকে মূল চরিত্র হিসেবে আবিষ্কার করবেন! পাঠকের মনে হবে- আরে! এ যে আমার নিজের জীবনেরই গল্প!

লেখিকার আরও দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। একটি কাব্যগ্রন্থ আর একটি উপন্যাস। সে হিসেবে লেখিকাকে একেবারে নবীন বলা যাবে না। তাই তাঁর গল্পগ্রন্থ পড়তে গিয়ে পাঠককে আচমকা হোঁচট খেতে হবে না এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তিনি লেখায় নিজস্ব লিখনশৈলীর যথোপযুক্ত প্রয়োগের প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি পাঠককে টানতে পারবেন তাঁর নিজের ভাবনা আর বোধের সাথে; আর পাঠকও লেখিকার নিজস্ব জগতের সাথে একাত্ম হয়ে মোহাবিষ্ট হতে পারবেন- একজন পাঠক হিসেবে এ কথা বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না।

সবশেষে লেখিকার লেখার হাত আরও অনেক অনেক শক্তিশালী হোক এবং তাঁর সুন্দর ভবিষ্যত আরও সাফল্যমণ্ডিত হোক এই কামনা করে এখানেই সমাপ্তি টানলাম। সবাইকে ধন্যবাদ!

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×