somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী বিখ্যাত রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনা: নরমাংস ভক্ষণ করে বেঁচে থাকার এক অত্যাশ্চর্য আর লোমহর্ষক কাহিনী

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্ঘটনার পর ফেয়ারচাইল্ড

ক্যারিবিয়ান সাগরের তীর থেকে ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ কেপ হর্ন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার মাইল লম্বা, তিনশো মাইল গড় প্রস্থ আর তের হাজার ফুট গড় উচ্চতাসম্পন্ন বৈরী পার্বত্য এলাকা- অ্যান্ডেজ পর্বতমালা, পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালার গর্ব মিশ্রিত আভিজাত্য নিয়ে দুর্লঙ্ঘ বাধার প্রাচীর হয়ে লম্বালম্বি দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটা দেশের উপর।

১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর চির রহস্যময়তায় মোড়া এই অ্যান্ডেজ পর্বতমালা নিজের ভীতিকর সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে রাখা সম্মোহনী মায়ার জালে আটকে, নিজের অপার রহস্যের অবগুন্ঠনের ভেতর টেনে নিয়েছিল কিছু উচ্ছল, তরুণ, প্রাণশক্তিময় তাজা প্রাণকে। তারপর নিষ্ঠুরতার চরম রূপ দেখিয়ে কিছু প্রাণকে অকালে ঝরিয়ে দিয়ে আবার কিছু প্রাণকে মুক্তির ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল; যাতে বিশ্ববাসী তাকে কখনও আন্ডার এস্টিমেট না করে।

চিলির একটি রাগবি টিম ওল্ড বয়েজের আমন্ত্রণে উরুগুয়ের আরেক রাগবি টিম, ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালের চ্যাম্পিয়ন ও ১৯৭২ সালের রানার্স আপ ওল্ড ক্রিশ্চিয়ানের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের যাত্রা যে এতটা অশুভ হবে সেটা কেউ কস্মিনকালেও ভেবে উঠতে পারেনি। অ্যান্ডেজের হিমশীতল ভয়াবহতার ছোবল থেকে পাঁচজন মহিলা ও চল্লিশজন পুরুষসহ ৪৫ জন যাত্রী ও ক্রু'র মধ্যে প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছিল মাত্র ১৬ জন। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা বিপর্যয় কোনটি এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর অ্যান্ডেজ পর্বতমালার প্লেন দুর্ঘটনাটি যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের তালিকার মধ্যে একেবারে সামনের সারিতে থাকবে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সন্দেহের অবকাশ খুব কমই আছে।

ওল্ড ক্রিশ্চিয়ান রাগবি টিম

উরুগুয়ে বিমান বাহিনীর কাছ থেকে চার্টার করা, মাত্র ৯৭২ ঘন্টা আকাশে ওড়া ও টিপটপ অবস্থায় থাকা ৫৭১ নাম্বার বিমান এফ-২২৭ ফেয়ারচাইল্ডে চড়ে চিলির রাগবি টিম ওল্ড বয়েজের আমন্ত্রণে উরুগুয়ের রাগবি টিম ওল্ড ক্রিশ্চিয়ানের খেলোয়াড়, তাদের কিছু আত্মীয় ও সমর্থক এবং পাঁচজন ক্রু'র এই যাত্রাটা শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর। উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিও থেকে কোথাও না থেমে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স হয়ে মেন্ডোজা, তারপর অ্যান্ডেজ পাড়ি দিয়ে চিলির রাজধানী সান্টিয়াগো পৌঁছুনোর জন্য পশ্চিমা বাতাসের বাধা ঠেলে প্রায় নয়শ' মাইল পাড়ি দেয়ার কাজটা যে মর্মান্তিক এক ট্র্যাজেডিতে রূপ নেবে তা কে ভাবতে পেরেছিল?


যে সময়ে বিমানটির যাত্রার প্ল্যান করা হচ্ছিল তখন পশ্চিম দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস আছড়ে পড়ছিল অ্যান্ডেজে। অ্যান্টার্কটিকা থেকে ধেয়ে আসা এই হিম বাতাস চিলিতে প্রচন্ড শীত নামিয়ে দিয়েছিল, আর সান্টিয়াগোতে ঝরছিল তুষার।

অ্যান্ডেজের উপর দিয়ে বিমান চলাচল শুরু হয় ১৯২০ সালে। তখন থেকেই পাইলটরা এই পর্বতমালাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে। এ অঞ্চলে সবসময়ই প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ধেয়ে আসা গড়ে ৩০-৪০ নট গতিতে প্রচন্ড বাতাস বইতে থাকে। গিরিখাতের মাঝ দিয়ে প্রবাহের সময় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায়ই বাতাসের গতিবেগ ৬০-৭০ নটে উঠে গিয়ে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সৃষ্টি করে। তাই অত্যন্ত দক্ষ বৈমানিক ছাড়া এ পথে বিমান চালনা আত্মহত্যারই নামান্তর। এ ঘটনার আগেও অনেকগুলো বিমান অ্যান্ডেজ টেনে নিয়েছিল নিজের বুকে, যার মধ্যে অনেকগুলোই চিরদিনের জন্য চাপা পড়ে গেছে অ্যান্ডেজের তুষারমোড়া গিরিখাদের গভীরে। তাই সকাল এগারটার পর অ্যান্ডেজ পাড়ি দেয়ার ব্যাপারে এ এলাকার পাইলটদের মধ্যে একরকম অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু প্রাক্তন জেট পাইলট, ১৯৮৪ ঘন্টা আকাশে ওড়ার ও দশবার অ্যান্ডেজ পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ফেয়ারচাইল্ডের কো-পাইলট লেঃ কর্নেল দান্তে হেক্টর লাগুরারা গিয়াদো সে নিষেধাজ্ঞা না মেনে এতগুলো যাত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন।

(উরুগুয়ে বিমান বাহিনীর রীতি অনুযায়ী ট্র্যান্সপোর্ট ডিভিশনে কম অভিজ্ঞ পাইলটদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য কো-পাইলট হিসেবে দেয়া হত। বিমানের কমান্ডার তথা পাইলট নিজের আসন ছেড়ে কো-পাইলটের সীটে বসে বিমান চালাত আর বামের সীটে বসে থাকা কো-পাইলট কমান্ডারের কাছ থেকে শিক্ষা নিত। বিমান বাহিনীর প্রত্যেক ট্রান্সপোর্ট ফ্লাইটকে এক অর্থে ট্রেনিং ফ্লাইটও বলা যায়। আর বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ রীতি অনুযায়ী কো-পাইলটকে উড্ডয়ন পরিকল্পনা দিতে হয়, তাই ফেয়ারচাইল্ডের উড্ডয়ন পরিকল্পনা তৈরী করেন কো-পাইলট লাগুরারা)

অক্টোবরের ১২ তারিখে মন্টেভিডিও থেকে রওনা হওয়ার পর বুয়েন্স আয়ার্স হয়ে মেন্ডোজাতে যাত্রাবিরতি করতে হয় খারাপ আবহাওয়ার কারণে। যাত্রীরা শহরে গিয়ে পছন্দমত কেনাকাটা আর খাওয়াদাওয়া করে রাতটা মেন্ডোজাতেই বিভিন্ন হোটেলে কাটিয়ে দেয়। পরদিন অর্থাৎ ১৩ অক্টোবর আবহাওয়া কিছুটা ভালোর দিকে দেখে বিমানের পাঁচজন ক্রু যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। দুপুর দুটো বেজে আঠারো মিনিটে মেন্ডোজা থেকে টেক অফ করে বিমানটি। এবার ফেয়ারচাইল্ডের যাত্রাপথ হল মেন্ডোজা থেকে সোজা দক্ষিণে চিলেসিতো হয়ে মালার্গ, মালার্গ থেকে পশ্চিমে মোড় নিয়ে প্লানচন গিরিপথ দিয়ে অ্যান্ডেজ ডিঙিয়ে চিলির কিউরিকো এবং কিউরিকো থেকে উত্তরে মোড় নিয়ে সোজা সান্টিয়াগো।

যাত্রাপথ

বিশ মিনিট ওড়ার পর দুটো বেজে আটত্রিশ মিনিটের সময় মেন্ডোজা থেকে বাষট্টি মাইল দূরে মধ্যবর্তী রিপোর্টিং পয়েন্ট চিলেসিতো পৌঁছে মেন্ডোজা কন্ট্রোলকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে চিলেসিতো পৌঁছার ব্যাপারে রিপোর্ট করেন কো-পাইলট লাগুরারা। পরবর্তী রিপোর্টিং পয়েন্ট মালার্গে হিসেবের চেয়ে দুমিনিট পর অর্থাৎ তিনটে বেজে আট মিনিটে পৌঁছে মেন্ডোজা কন্ট্রোলকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে রিপোর্ট করেন তিনি। তারপর চিলির কিউরিকোর উদ্দেশ্যে গভীর রহস্যে ঢাকা অ্যান্ডেজের প্লানচন গিরিপথের উপর চলে আসেন। আইএফআর* এর প্রয়োজন অনুযায়ী কমপক্ষে ষোল হাজার ফুট উপরে উঠে যান লাগুরারা। কিন্তু মেঘের স্তর চৌদ্দ থেকে সতের হাজার ফুট পর্যন্ত উঁচু থাকে বলে আরও দুহাজার ফুট অর্থাৎ আঠার হাজার ফুটে উঠে যান তিনি। তখন উত্তরদিকে কিছু চূড়া ছাড়া মেঘের স্তরের ভেতর দিয়ে অ্যান্ডেজের আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না লাগুরারা।

মালার্গ থেকে তিপ্পান্ন মাইল পশ্চিমে চিলি-আর্জেন্টিনা সীমান্তে প্লানচন গিরিপথ বাধ্যতামূলক রিপোর্টিং কেন্দ্র। কিন্তু এখানে কোন রেডিও কেন্দ্র না থাকায় এবং নিচে মেঘের স্তর থাকায় এখানে পৌঁছুনোর ব্যাপারে অনুমান ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। তাই মালার্গ ছেড়ে আসার তের মিনিট পর তিনটে একুশ মিনিটে সান্টিয়াগো কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আঠার হাজার ফুট উঁচুতে আছেন বলে জানালেন লাগুরারা। উত্তরে তখন সান্টিয়াগো কন্ট্রোল জানাল যে প্লানচন থেকে ঊনচল্লিশ মাইল পশ্চিমে বাধ্যতামূলক রিপোর্টিং কেন্দ্র কিউরিকো পৌঁছুনোর পর লাগুরারা যেন বিমান পথ অ্যাম্বার থ্রি ধরে উত্তর দিকে মোড় নেন।

কিন্তু লাগুরারার এই রিপোর্টে সম্ভবত ভুল ছিল। কারণ প্রায় একচল্লিশ নট প্রবল বাতাসের বিপরীতে উড়ছিলেন লাগুরারা। ফলে মূল গতি দুশো চল্লিশ নটের স্থানে গতি নেমে যায় দুশো নটে এবং প্লানচন গিরিপথে পৌঁছার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন মিনিট পিছিয়ে যান তিনি। ঠিক এখান থেকেই দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। তিনটে চব্বিশ মিনিটে অর্থাৎ প্লানচন অবস্থিতির তিন মিনিট পরই লাগুরারা সান্টিয়াগোকে জানান যে তিনি কিউরিকোর উপরে অবস্থান করছেন। কিন্তু ফেয়ারচাইল্ড নিয়ে মাত্র তিন মিনিটে ঊনচল্লিশ মাইল পাড়ি দিয়েছেন তিনি এ কথা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হ্যাঁ, ছয়শ মাইল বেগের জেট বিমান হলেই তা সম্ভব হতে পারত। এই ভুলের কারণ যে কী ছিল সেটা কোনদিনই জানা সম্ভব হয়নি। অনেকেই অনেককিছু অনুমান করেছেন কিন্তু ভুলের আসল কারণটা দুর্ঘটনায় লাগুরারার মৃত্যুর সাথেই চিরকালের জন্য চাপা পড়ে গেছে।

যাই হোক, সান্টিয়াগো কন্ট্রোল সময়ের হিসেবের এই গরমিল ঠিকভাবে খেয়াল করতে না পেরে ফেয়ারচাইল্ডকে উত্তর দিকে ঘুরে গিয়ে উচ্চতা দশ হাজার ফুটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। কন্ট্রোল ফেয়ারচাইল্ড থেকে পাঠানো খবর পরিষ্কার এবং জোরালোভাবে শুনতে পেয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কন্ট্রোল খেয়াল করেনি যে পরপর দুটো কলের মধ্যে ব্যবধান ছিল মাত্র তিন মিনিট। অবশ্য বিমান থেকে পাওয়া নেভিগেশনাল রিপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা সান্টিয়াগো কন্ট্রোলের দায়িত্বও নয়। তারপর কন্ট্রোলের নির্দেশ মোতাবেক লাগুরারা উত্তর দিকে মোড় নিয়ে উচ্চতায় দশ হাজার ফুটে নামিয়ে আনেন ফেয়ারচাইল্ডকে। লাগুরারা হয়ত মনে করেছিলেন যে তিনি অ্যান্ডেজ পার হয়ে এসেছেন কিন্তু আসলে তাঁরা ছিলেন অ্যান্ডেজের একদম মাঝখানে।

নেভিগেশনের হিসেবে মারাত্মক ভুল করে সান্টিয়াগো কন্ট্রোলের নির্দেশে উচ্চতা দশ হাজার ফুটে নামিয়ে এনে সম্পূর্ণ অপরিচিত গড়পরতা সতের হাজার ফুট উঁচু গিরিশৃঙ্গের দিকে পঁচিশ মাইল উড়ে যান তিনি। তারপর সামনের স্ক্রীনে তাকিয়ে বরফঢাকা সুবিশাল শৃঙ্গ দেখে ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে তাঁর। ইতোমধ্যেই তিনি বুঝে ফেলেছেন, যেমন করেই হোক কোথাও মারাত্মক একটা ভুল হয়ে গেছে। থ্রটল সামনের দিকে চেপে ধরে উপরের দিকে উঠে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। চৌদ্দ হাজার একশো ফুট উচ্চতায় উঠে যাওয়ার পর বিমানটির ডান পাখা একটা পর্বতশৃঙ্গের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেয়ে কাত হয়ে যায় ফেয়ারচাইল্ড। সাথে সাথেই প্লেনটা দুটুকরো হয়ে বাঁ দিকের পাখা ও এঞ্জিনটা ছিটকে পড়ে বরফের ভেতর। লেজের দিকটাও একদিকে ছিটকে যায়। প্রধান অংশটা দু'ডানা ভাঙা অবস্থায় বুকে ভর দিয়ে বরফের উপর দিয়ে ছুটে গিয়ে ঢালু অঞ্চলে বরফের মধ্যে নাক গুঁজে থেমে যায়।

তিনটে একত্রিশ মিনিটে সান্টিয়াগো কন্ট্রোল আবার ফেয়ারচাইল্ডকে ডাকাডাকি করে, কিন্তু কোন উত্তর পায়নি।

এমন ভয়ানক ক্র্যাশের পরও বেশ কিছু যাত্রী সেই বিধ্বস্ত বিমানের ভেতর বেঁচে ছিল। টানা বাহাত্তর দিন তারা নিজেদের জীবন বাঁচানোর অবিরাম চেষ্টায় ক্ষান্ত দেয়নি। নিরলস সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত ষোলজন যাত্রী নিজেদের জীবন বাঁচিয়ে সভ্যজগতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের পর্বতের ১২ হাজার ফুট উঁচুতে জীবন ধারণের সামগ্রী ছিল নেহাতই অপ্রতুল। সঙ্গে থাকা অল্প কিছু খাদ্য এক সময় ফুরিয়ে যায়। শেষে নিরুপায় হয়ে মৃত বন্ধুদের মাংস খাওয়া শুরু করে। ৭২ দিনের টিকে থাকার এই চরম যুদ্ধে তাদের নেতৃত্ব দেন নান্দো প্যারাডো ও রবার্তো কানেজা। এই দুজনই শেষ পর্যন্ত অসংখ্য চড়াই-উৎরাইয়ে পূর্ণ বরফমোড়া অ্যান্ডেজের সুবিশাল গিরিশৃঙ্গ ডিঙিয়ে পৃথিবীর কাছে এক অবিশ্বাস্য খবর পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। বিস্ময়ে চমকে ওঠে গোটা বিশ্ব। এও কি সম্ভব!!

সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার অবিস্মরণীয় কাহিনী আসবে আগামি পর্বে।


*আইএফআর- ফেয়ারচাইল্ড স্বাভাবিক অবস্থায় বাইশ হাজার পাঁচশো ফুট উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। তার মানে ফেয়ারচাইল্ড অন্য যে কোন কমার্শিয়াল জেট বিমানের মত অ্যান্ডেজের যে কোন স্থানের উপর দিয়ে পাড়ি দিতে পারবে না, তাকে অ্যান্ডেজ পাড়ি দিতে হলে দুই পর্বতের মাঝের গিরিপথ খুঁজে নিতে হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে অর্থাৎ দৃষ্টিগোচরতা ভালো থাকলে ভিজ্যুয়াল ফ্লাইট রুলস বা ভিএফআর অনুযায়ী ফেয়ারচাইল্ডের জন্য এমন চারটে গিরিপথ আছে। জুংকাল, নিভস্, অ্যালভ্যারাদো ও প্লানচন। এদের মধ্যে মেন্ডোজা থেকে সরাসরি সান্টিয়াগো যাবার বহুল ব্যবহৃত পথ হচ্ছে জুংকাল গিরিপথ। ফেয়ারচাইল্ডের মত বিমানগুলো সান্টিয়াগো যেতে এই পথই ব্যবহার করে থাকে। অবশ্য আবহাওয়া খারাপ থাকলে দৃষ্টিগোচরতায় সীমাবদ্ধতা এসে যায়। তখন আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী ফেয়ারচাইল্ডকে ইনসট্রুমেন্ট ফ্লাইট রুল বা আইএফআর মেনে উড়তে হয়। আইএফআর মেনে যেতে হলে জুংকাল গিরিপথে ছাব্বিশ হাজার ফুট উচ্চতা রক্ষা করতে হবে যা ফেয়ারচাইল্ডের পক্ষে অসম্ভব। নিভস্ ও অ্যালভ্যারাদো গিরিপথে আইএফআর ধরে যাবার ব্যবস্থা নেই অর্থাৎ খারাপ আবহাওয়া হলে এ দুটো গিরিপথ বন্ধ থাকে। বাকি থাকে সর্ব দক্ষিণের গিরিপথ প্লানচন। এ পথে সর্বনিম্ন আইএফআর সুবিধা হচ্ছে ষোল হাজার ফুট। অর্থাৎ ফেয়ারচাইল্ড যদি আইএফআর অবস্থায় অ্যান্ডেজ অতিক্রম করতে চায় তবে মেন্ডোজা থেকে দক্ষিণে গিয়ে প্লানচন গিরিপথ হয়ে অ্যান্ডেজ পাড়ি দিতে পারবে। আর এই প্লানচন গিরিপথে পৌঁছার পরই শুরু হয় ভূতুড়ে কান্ড।

পরের পর্বে আমন্ত্রণ রইল।

সূত্র: অনলাইন ও সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই 'আন্দেজের বন্দি'।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×