somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবনা যত,আমার মতোঃপর্ব ২

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল আমাদের দেশের ফেসবুক ইউজাররা খেতে পড়তে উঠতে বসতে স্ট্যাটাস আর ছবি দেয়।আর যদি কোনো বিশেষ উপলক্ষ থাকে তাহলে তো কথাই নাই।আজকের এই বিশেষ উপলক্ষ্যে এক বন্ধু স্ট্যাটাস দিল,”সমগ্র বাঙ্গালী জাতির ফাঁসি চাই---আবার কে যেন বলল একজন স্ট্যাটাস দিয়েছে ‘চন্দ্রবাসিরাও তাহলে জেলে যায়!!!” কি আর বলবো বলুন?এসব নিয়ে কিছু বলতে গেলেই গালি খাইতে হয়।তবে এই স্ট্যাটাসে কথা শুনে মনে পড়ল,আমার স্কুলে পড়া ছোট বোন সাঈদির চন্দ্রাভিযানের সময় একটা কথা বলেছিল।সেটা হচ্ছে,নীল আমর্স্টং যদি এই খবর শুনতো তাহলে রাগে দুঃখে অভিমানে সুসাইড করে বসত।কারন সে ভদ্রলোক চাঁদে প্রথম পা দিল কিন্ত বেঈমান চাঁদ তার ছবি ডিসপ্লে না করে কিনা ডিসপ্লে করল সাঈদীর ছবি!!!!!!!!নীল আমর্স্টং তো চাঁদের উপর অভিমান করতেই পারে।


বোনের কমেন্টে তখন খুব আমোদিত হয়েছিলাম।মজা লেগেছিল তখনকার ফেসবুকের কমেন্ট আর মজার পোস্টগুলোও।তবে অবাক হয়েছিলাম এটা ভেবেও যে এমন আজগুবি কথাও মানুষ তাহলে বিশ্বাস করে!!!! এর থেকে তো এই কথাও বেশি বিশ্বাসযোগ্য যে বুড়িগঙ্গার তলদেশ থেকে এক প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসোর বের হয়ে এসে গুলিস্তান যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারে চড়ে বসে আছে।


বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিন্ত দিন দিন কমছে।আমার মত অনেকেই হয়ত ছোটবেলায় সামাজিক বিজ্ঞান বই এ পড়ে থাকবেন যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটা অন্যতম কারন হচ্ছে মানুষের বিনোদনের অভাব।য়ামাদের রাজনীতিবিদ গন আর কিছু করুক না করুক জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে অসীম গুরুত্বপূর্ন দায়ীত্ব পালন করছেন।কারন তারা কিছুদিন পর পরই এক একটা কান্ড ঘটিয়ে দেশের মানুষ অসম্ভব বিনোদন দেন।আর প্রযুক্তির কল্যানে বিচ্ছু পোলাপানগুলার তৈরী নানান ক্যারিক্যাচার বিদ্যুতবেগে সবখানে ছড়িয়ে পরে।স্বামী স্ত্রী তাদের স্মার্ট ফোনে সেই সব নতুন খবরের রস আস্বাদনে ব্যস্ত থাকে যার ফলে---এই আর কি।ঘটনা গুলোই এমন থাকে যে এন্টারটেইন্ড না হয়ে কোনো উপায় নেই।নির্দোস এন্টারটেইনমেন্টে ক্ষতি নেই কিন্ত একটা জিনিস যেন আমরা ভুলে না যাই যে মুক্তিযুদ্ধটা মোটেও কোন তামাশার বিষয় ছিল না।যারা তখনকার মানুষ ছিল যারা তাদের পরিবারের মানুষ ছিল তাদের কষ্ট আর অনুভুতিটাকে যেন আমরা বুঝতে চেষ্টা করি।


আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তারা কখনোই এর গভিরতা বা ব্যপকতা সেইভাবে বুঝতে পারবো না।আমার এক ম্যাডাম একসময় বলেছিলেন,সেই সময়টাই ছিল অন্যরকম,সেই সময়ের উন্মাদনাটাই ছিল অন্যরকম,যা তোমরা কোনোদিন জানবে না।আসলেই হয়ত তাই,কারন এ যুগে এসে দেশের অবস্থা দেখে আমি মনে মনে ভাবতাম সত্যিই কি দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল?এই ভ্যাবদা মার্কা পাবলিক কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের মত ভয়ংকর কাজ টা করেছিল??আমার বিশ্বাস করতে মাঝে মাঝে সত্যিই খুব কষ্ট হতো।কিন্ত কয় একটি ঘটনা আমার সন্দেহ কে ভুল প্রমান করে দিয়েছে।তার একটি হলো শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম সাত দিনে সাধারন মানুষের স্বতস্ফূর্ত আগমন এবং সমর্থন।আর একটি হলো রানাপ্লাজার দূর্ঘটনায় সাধারন মানুষের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।তখন একদম তৃনমূল পর্যায়ের মানুষ ও কিভাবে সরকারি সাহায্যের ধার না ধেরে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছিল তা নিশ্চয় সকলেরই মনে আছে।একেই হয়ত বলে যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া।


মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সবসময় তার লেখার মাঝে একটা কথা বলেন।সেটা হচ্ছে,আমদের দেশের সাধারন মানুষ আসলে ভাল।এসকল ঘটনা দেখে আমার আবার দেশের মানুশের উপর বিশ্বাস ফিরে আসে,মনে হয় সত্যিই আমাদের দেশের সাধারন মানুষগুলো খুব ভাল।তারা একই সাথে নরমশরম সাধারন কিন্ত প্রয়োজনে তারা মুহুর্তের মধ্যে অসাধারন হয়ে উঠতে পারে।একবার ভেবে দেখুন একাত্তরের সেই নয় মাসে এই সাধারন মানুষগুলোর কি দূর্দশা হয়েছিল।কি কষ্ট,কি দূর্ভোগ আর কি অত্যাচারটাই না তারা সয়েছে।আ্মরা কি কোনোভাবে তার প্রতিদান দিতে পারবো?মানুষের জীবন তো একটাই,তার প্রতিদান দেয়া কি কোনোভাবে সম্ভব?আমার তো মনে হয় না।হাজারটা স্মৃতিসৌধ আর লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা কোটা দিয়েও সেই কষ্ট দূর করা সম্ভব না।প্রিয়জন হারানোর বেদনা আর নয় মাসের অত্যাচারের স্মৃতি বুকে নিয়ে যে মানুষগুলো ভেতর ভেতর ধিকি ধিকি জ্বলছে অপরাধির উপযুক্ত সাজা হলে হয়ত তাদের ভেতরের আগুনটা শুধু নিভত,হয়ত আমরা পরকালে আমাদের শহীদদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারতাম,আপনাদের সুন্দর জীবনগুলো যারা অকালে কেড়ে নিয়েছিল আমরা তাদের ছেড়ে দিইনি।


বিচার হোক বা না হোক,প্রাগৈতিহাসিক কাল হোক,ইংরেজ বা মুঘল আমল হোক,হোক সেটা জঙ্গলের আইন বা আফ্রিকার অসভ্য উপজাতীয়, আইন এত মানুষের মৃত্যু আর দূর্ভোগের জন্য দায়ী ব্যক্তির সাজা তো মৃত্যুদন্ডই হওয়া স্বাভাবিক।কিন্ত আধুনিক বাংলা আমলে আমরা এর বেশ ব্যতিক্রম লক্ষ্য করছি।আমার মাঝে মাঝে চিতকার করে বলতে ইচ্ছা হয়, স্টপ অল দিস ননসেন্স!!!সত্যিকারের ইচ্ছা থাকতে সাজা দেন আর না থাকলে ছাইড়া দিয়া কোলে বসায়ে রাখেন কিন্ত বিচার করার নাম নিয়ে ঢং কইরেন না দোহায় লাগে।যুদ্ধ তো সেই কবে শেষ হইছে কিন্ত সেই যুদ্ধের নামে আর কত মানুষ মরবে???মানুষগুলো যেই স্মৃতি ভুলে থাকতে চাই সেইসব আর মনে করায়ে দিয়েন না।কারন সেই কষ্ট মুছে দেয়ার ক্ষমতা কারো নাই।বিচারের নাম করে তাদের প্রিয়জনের লাশগুলো করব খুড়ে তাদের সামনে আর বের করেন না।বর্তমানের কোনো মানুষকেও যেন তার প্রিয়জনের জন্য করর খুড়তে না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখেন।প্লিজ! এরা আমার দেশের মানুষ,এরা সাধারন,এরা অসহায়।রাজাকারের বিচার না করতে পারলে ছেড়ে দেন কিন্ত শত্রুপক্ষকে ইস্যু তৈরী করে দিয়ে হরতাল অবরোধ করে মানুষ মারার সুযোগ দিয়েন না।


আমারে একজন প্রিয় লেখক জহির রায়হানের একটা গল্প আছে ‘সময়ের প্রয়োজনে’।মুক্তিযুদ্ধটা তখন সময়ের প্রয়োজন ছিল তাই মানুষ যুদ্ধ করেছে দেশ স্বাধীন করেছে।আজ এতদিন পর রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা ইস্যু নিয়ে ক্যাচাল করার কিছু নেই।রাজাকারদের মারতে পারেন নি এটা আপনাদের ব্যর্থতা।তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছেন,ভোট দিয়েছেন এটা আপনাদের মূর্খতা। আমরা এযুগের পোলাপান আমরা তো জানিনা কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে রাজাকার ছিল।আপনারা তখনকার জেনারেশনই তো সেটা নিয়ে কনফিউসড।আপনারাই তো ডিসাইড করতে পারেন না যে অভিযুক্ত রাজাকার আসলেই দোষী কিনা।তাহলে আমরা কেন আপনাদের ভুলের মাশুল দেব?আমাদের কি দোষ?আমরা কেন চার যুগ পর আগুনে পুড়ে মরবো সেই পুরানা ইস্যু নিয়ে।যে সকল শহীদ পরিবার আছে তারা এত দিনে মেনেই নিয়েছে যে তারা বিচার পাবে না।কারন রাজাকারদের ক্ষমতায় বসাটাই তো তাদের আর একবার প্রিয়জন বিয়োগের মত গভির কষ্ট দিয়েছে।তাদের ন্যায় বিচারের আশা দিয়ে পরে ঢং করে তাদের এবং শহীদদের অপমান করবেন না।আর আমরা ইয়াং পোলাপান জন্ম থেকেই জানি আমাদের স্বাধীন দেশে রাজাকার নামক কতিপয় প্রানী আছে,যারা আবার রাজনীতিও করে।আমরা কখনো ভাবিনি এদের বিচার করা যায়(কারন যারা এতবড় অপরাধী তারা রাজনীতি করে কেমনে?) বরং জন্ম থেকে অপেক্ষায় আছি কবে এরা মরবে সে বাজ পরে হোক আর স্বাভাবিক ভাবে হোক। আমরা যখন আমাদের ---এর ওপর এই বিষফোঁড়াগুলোকে চার দশক ধরে সহ্য করেছি তখন হয়ত আরো চার দশক সহ্য করতে পারবো।কিন্ত দোহায় লাগে,বিচারের নামে এমন তামাশা আমাদের সহ্য হয় না।


আমার মনেহয় আজকাল সবকিছু নিয়েই ব্যবসা হয়।মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও আজকাল ব্যবসা হয়।সুবিধামত যে কাওকেই যেকোনো উপাধি দিয়ে দেয়া যায়।যে মহান চেতনা্য এই দেশের জন্ম হয়েছিল সেই চেতনাই ভীশনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন,যখন পুরোনো ইতিহাস দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।এখন এক একজন একেক কথা বলে।এখন ইতিহাস নিয়ে ব্যবসা হয়।ইতিহাস ব্যবহৃত হয় উদ্দেশ্য হাসিলের আর ক্ষমতা দখলের অস্ত্র হিসাবে।আমরা কার কথা বিশ্বাস করবো?দেশের কোন ইতিহাসটা সত্য বলে জানবো?মাঝে মাঝে মনে হয় কেমন হতো যদি দেশের সকলের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়া যেত যে এদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।পেছনের ইতিহাস নিয়ে মারামারি করে তাহলে নিশ্চয় বর্তমানে এত ক্ষতি হতো না,মানুষ মরতো না।তখন সময়ের প্রয়োজন ছিল দেশ স্বাধীন করার তা করা হয়েছে।এখন সময়ের প্রয়োজন দেশ গড়ার,আমরা কি সকল প্রকার ফালতু ক্যাচাল বাদ দিয়ে এদিকে মনোযোগী হতে পারিনা?
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×