বাংলাদেশের গত কয়েক যুগ ধরে চলে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় নানা উপায়ে সমাধান করে আসছে, এ সমস্যাকে ধরে নেয়া হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। অর্থাৎ এ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সমস্যা। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা কখনই ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীর সমস্যার মতো নয়। এ কোন মতেই দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়। সমস্যাটি সম্পূর্ণরূপে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তাদের দেশের নাগরিক বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোন দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে যদি ওই দেশের নাগরিক ভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়, তখন প্রথমেই দায়িত্ব পড়ে যে দেশের মানুষ শরণার্থী হয়েছে- তাকেই ওই সমস্যা সমাধান করা। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার, জাতিগত, ধর্মগত বা গোষ্ঠীগত কারণে কোন মানবগোষ্ঠী যখন চরম সমস্যার মুখে পড়ে, তাদের জীবন বিপন্ন হয়, তখনই তারা শরণার্থী হয়। তখন তাদের কিছু অংশ প্রতিবেশী কোন দেশে বা অনেকগুলো দেশে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। আর কিছু অংশ বিদ্রোহী হয়। এই বিদ্রোহীদের যাই শক্তি থাকুক না কেন, তা নিয়ে প্রতিরোধে নেমে পড়ে। কখনও কখনও এই প্রতিরোধ সশস্ত্র হয়, কখনও তা বিচ্ছিন্নতাবাদীতেও রূপ নেয়, কখনও সন্ত্রাসের আকার ধারণ করে। এর ভিতর কাছাকাছি সময়ে এই অঞ্চলে এ ধরনের দুটি সমস্যা দেখা গেছে একটি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা অপরটি শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের নিয়ে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭৫ সালের পরে। তাদের একটি অংশ সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে যায়, একটি অংশ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। শুধু তাই নয়, গোষ্ঠীগত কারণে এই উপজাতিরা ভারতীয় উপজাতিদের কাছ থেকে নানান সহায়তাও পায়। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা সমস্যার শিকড়ে কেউই যেন হাত দিতে চান না। সকলে এর কেবল কয়েকটি ক্ষত স্থানের একটি স্থানে পানি ঢালার বিষয়ে কথা বলছেন। কোন একটি সমস্যার কারণে যখন মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়, প্রতিবেশী কোন দেশে আশ্রয় নেয়, তখন গোটা বিশ্বের দায় পড়ে ওই মানুষগুলোকে আগে বাঁচানো। পাশাপাশি গোটা বিশ্বেরই দায় পড়ে কেন ওই মানুষগুলো বাস্তুভিটে ছেড়ে, শত শত বছরের তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পদ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে সেই সমস্যার সমাধান করা। এ ধরনের সমস্যাগুলো সম্পূর্ণরূপে বিশ্ব ফোরামের বা বিশ্বের সকল দেশের দায়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৯