somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুহকিনীর জন্মদিনে

১২ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনাথ আজ মোটেও স্থির থাকতে পারছে না। যদিও উপর থেকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে না। এটি অবশ্য অনাথের নিজের মনে হচ্ছে। যতই গোপন করুক তবুও সবাই যেন কিভাবে টের পেয়ে যাচ্ছে। এই যেমন টঙের মজনু মামাকে যখন বললো," মামা একটা চা দাও।" কথাটাতো স্বাভাবিকই ছিলো। তাহলে হুট করে মামা জিজ্ঞেস করল কেন যে "মামা, কিছু হইছে ? আইজ বড় অস্হির লাগতাছে যে? "
"কই না তো "অনাথ মিথ্যে বলে। "এই কথা ক্যান জিগান? "
"না মানে, প্রতিদিন তো কন মামা দুধ চিনি বাড়ায়া একটা ঝাক্কাস চা দ্যান আর একটা গোল্ড লিফ, আর আইজকা হুদা চা চাইলেন যে? "
অনাথ বুঝতে পারে সে স্বাভাবিক আচরণ করছে না। তাকে স্বাভাবিক হতে হবে। কাকপক্ষীকেও টের পেতে দেয়া যাবেনা কিচ্ছুটি। কিন্তু সবাই তো টের পেয়ে যাচ্ছে সব। প্রকৃতিও আজ অস্থির। কোথায় শ্রাবণ মাস, ধুমায়া বৃষ্টি পড়বে তা না, ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করে এই রোদ উঠছে এই মেঘ করছে। অনাথ বুঝতে পারে না, তার মনের অস্থিরতা কি প্রকৃতিতে প্রবাহিত হয়েছে? কি জানি হতেও পারে, প্রকৃতির রহস্যময়তা বোঝা কার সাধ্য?
কিন্তু আজ অনাথের অস্থিরতার কারন কি?
সন্ধ্যা নামে। অনাথের অস্থিরতা যায় না। কারণও খুঁজে পায়না। কিন্তু অস্থিরতা বা তার কারণ অনুসন্ধান করা তো তার স্বভাবের সাথে যায়না। অনাথ আবোলতাবোল চিন্তা করতে করতে স্টেশনের সদাগর ভাইয়ের দোকানে যেয়ে চা দিতে বলে। দোকানের টিভিতে খবর চলছে, "আজ রক্তঝরা আগস্টের ১২ তারিখ। আগস্টের এই দিনে ..."
অনাথ চট করে বুঝে ফেলে অস্থিরতার কারণ। আজ তমশার জন্মদিন। সে কোনদিন তাকে জন্মদিনের উইশ করেনি। এই নিয়ে তমশার অভিমানের, অভিযোগের কমতি ছিল না। কেন উইশ করেনি, সবাই কত্ত সারপ্রাইজ গিফট করছে, বন্ধুরা কত্ত হইহুল্লোড় করছে ..ব্লা ..ব্লা ..।বিপরীতে অনাথ শুধু হেসেছে। এরকমই এক জন্মদিনে লাখখানেক অভিযোগের পাহাড় তুলে তমশা চলে যায়। এইরকম নীরস মানুষ নাকি তার দরকার নাই যে জন্মদিনে সামান্য উইশ করতে কিংবা দুটা ফুল আনতে কার্পন্য দেখায়। তমশা চলে যায় ...অনাথ নীরব বসে থাকে ...
এইসব ছাইপাশ ভাবতে ভাবতে অনাথ রেললাইনে গিয়ে বসে, আর প্রতিবারের মত চাঁদের দিকে তাকায় আর চন্দ্রাহত হতে থাকে।প্রতিবছর তমশার জন্মদিনের মত সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে কল্পনায় হারিয়ে যায় আর ফুলে ফুলে তাকে রাবিন্দ্রিক সাজে সাজায়। এই সেই কল্পনার তমশা যাকে শারিরী ভাষায় ভালবাসা প্রকাশ করতে হয়না, যাকে মুখে কিছু বলতে হয়না, যার জন্য চোখের ভাষাই এত গভীর যা মন পর্যন্ত বিনা বাধায় পৌঁছুতে পারে। বাস্তবের ছলাকলায় চাওয়াপাওয়া সর্বস্ব তমশার সাথে সম্পূর্ন ব্যস্তানুপাতিক কল্পনার তমশা। ধীরে ধীরে কল্পনার তমশা অনাথের চোখে মোহনীয় থেকেও মোহনীয় রূপে ধরা দিতে থাকে। এতই বাস্তব লাগে তাকে মনে হয় এই বুঝি হাত বাড়ালেই তাকে স্পর্শ করা যাবে। অনাথ অবাক চোখে তাকে কেবলই দেখতে থাকে ...একসময় সে কম্পিত হাত বাড়িয়ে তার হাতটি ধরে আর কানে কানে বলে, এই কুহকিনী, শুভ জন্মদিন...তমশা ভুবনমাতানো কুহকের হাসি হাসে ...

ট্রেন আসার শব্দে অনাথের কল্পনা যায় টুঁটে ...কিন্তু রেশটুকু রয়ে যায়। তার মনে বাজতে থাকে
"জাগরনে তারে না দেখিতে পাই,
থাকি স্বপনেরও আশে
ঘুমের আড়ালে যদি ধরা দেয়
বাঁধিব স্বপনও পাশে .
এত ভালবাসি এত যারে চাই
মনে হয়নাতো সে যে কাছে নাই
যেন এ বাসনা ব্যকুলও আবেগে তাহারে আনিবে ডাকি ..."

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×