somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামাযে রুকু ও সেজদার নিয়ম

২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পবিত্র কুরআনে রুকু শব্দটি ১৩ বার আছে ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْۤ وَٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمۡ وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ۩ ٧٧﴾[الحج:77 ]
“হে মুমিনগণ, তোমরা রুক কর, সিজদা কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে” (হজ্জঃ আয়াত ৭৭)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সেজদায় কুরআন থেকে নিষেধ করে বলেন:
«ألا وإني نُهيت أن أقرأ القرآن راكعًا أو ساجدًا، وأما الركوع فعظِّموا فيه الرب ، وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء فقَمِنٌ أن يُستجاب لكم».
“আমি তোমাদেরকে রুকু ও সেজদা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করছি, তোমরা রুকুতে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা কর এবং সেজদায় বেশী বেশী দো‘আ কর । এটা দো‘আ কবুলের উপযুক্ত সময়” (মুসলিম: ৪৭৯)

রুকুর দোয়াঃ سبحان ربي العظيم সুবহানা রাব্বিআল আজিম (তিরমিযী, আবু দাউদ, মেশকাত ৮৩ পৃঃ)

রুকু থেকে উঠার সময় سمع الله لمن حمده সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা (বুখারী, মেশকাত ৭৫ পৃঃ)

বলার পর-
ربنا لك الحمد»
«حمدًا كثيرًا طيبًا مُباركًا فيه»
রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাছীরান তায়্যিবাম মুবারাকান ফীহ (বুখারী ১১০ পৃঃ; মেশকাত ৮২ পৃঃ)

উচ্চঃস্বরে ربنا لك الحمد» রাব্বানা লাকাল হাম্‌দ বলা যায় দেখুন (মেশকাত মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ২য় খন্ড হাঃ ৮১৪, ৮১৫, ৮১৭; মেশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ৮১৪ হতে ৮১৭ পর্যন্ত)

সেজদা
পবিত্র কুরআনে সেজদা শব্দটি ৯২ বার আছে ।
এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এই জন্য যাতে আমি এবং আমার অনুসারীরা সাজদা দিতে পারি (বুখারী ১ম খন্ড বুক অফ সালাহ ৫৬ অধ্যায় হাঃ নং ৪২৯)

ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أمرت أن أسجد على سبعة أعظم: على الجبهة – وأشار بيده على أنفه – واليدين، والركبتين، وأطراف القدمين، ولا نكفُت الثياب والشعر» وفي لفظ لمسلم: «ولا أكفّ ثوبًا ولا شعرًا»
“আমাকে সাত অঙ্গের উপর সেজদা করার নিদের্শ দেয়া হয়েছে: কপাল- এর সাথে তিনি ইশারা করে নাকের দিকে ঈঙ্গিত করেছেন- দু’হাত, দু’হাটু, দু’পায়ের সম্মুখভাগ, আর আমরা কাপড় ও চুল আটকে রাখব না”; মুসলিমের বর্ণনায় আছে: “আমি যেন কাপড় ও চুল আটকে না রাখি” (বুখারি: ৮১২; মুসলিম: ৪৯০)

প্রথমে দুই হাত মাটিতে রাখতেন (সহীহ ইবনে খুযায়মা, দারা কুতনী, মুসতাদরাকে হাকিম, মেশকাত হাঃ নং ৮৯৯)

তারপর হাটু রাখতেন, হাতের তালু মাটিতে বিছিয়ে রাখতেন (আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, বায়হাকী, মেশকাত হাঃ নং ৯০৫)

সেজদায় যেতে প্রথমে হাত পরে হাটু রাখার আরও দলিল দেখুন (মেশকাত মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ২য় খন্ড হাঃ ৮২৯; মেশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ৮২৯; মুসলিম শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৯৮৫)

আবু হুমাইদ সায়েদি থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে:
«فإذا سجد وضع يديه غير مفترشٍ ولا قابضهما، واستقبل بأطراف أصابع رجليه القبلة»
“যখন সেজদা করবে উভয় হাতকে বিছিয়ে রাখবে না, আবার মুষ্টিবদ্ধ করেও রাখবে না, পাযের আঙ্গুলগুলো কিবলামূখী করে রাখবে” (বুখারি: ৮২৮)

সেজদার সময় মাটিতে হাত বিছিয়ে না দেওয়া দেখুন (মিসকাত-মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ২য় খন্ড হাঃ ৮২৮; মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ৮২৮; বাংলা অনুবাদ বুখারি মাওলানা আজীজুল হক ১ম খন্ড হাঃ ৪৭১; সহিহ আল বুখারি আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৭৬; সহিহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮২২; বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৯৮৩, ৯৮৪; আবু দাউদ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮৬২; তিরমিযী শরীফ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ২৭৫; জামে তিরমিযী মাওলানা আব্দুন নূর সালাফী ১ম খন্ড হাঃ ২৬৪, ২৬৫)

উভয় পা মিলিয়ে রাখবে । আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “আমি তাকে সেজদা অবস্থায় পেলাম, তার দু’নো গোড়ালি মিলানো ছিল এবং পায়ের আঙ্গুলগুলো ছিল কিবলামুখী” (সহিহ ইব্‌ন খুজাইমা: ৬৫৪; বায়হাকি: ২/১১৬)

সেজদার দোয়াঃ سبحان ربي الأعلى সুবহানা রাব্বিআল আ’লা (তিরমিযী, আবু দাউদ, মেশকাত ৮৩ পৃঃ; মুসলিম ২৬৪ পৃঃ)

প্রথম সেজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপর বসতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন (বুখারী, আবু দাউদ, মেশকাত হাঃ নং ৭৯২)

দুই সিজদার মাঝখানে বসে দুয়া-
اللهم اغفر لي وارحمني وعافني واهدني وارزقني» ،
আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াআফিনী, ওয়াহদিনী, ওয়ার যুক্বনী (আবু দাউদ ১২৩ পৃঃ; মেশকাত ৮৪ পৃঃ)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদিসে রয়েছে:
«ثم اسجدْ حتى تطمئنَّ ساجدًا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسًا، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدًا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسًا، ثم افعل ذلك في صلاتك كلها»، قال أبو أسامة في الأخير: «حتى تستوي قائمًا»؛
“অতঃপর স্থির হয়ে সেজদা কর, অতঃপর স্থির হয়ে বস, অতঃপর স্থির হয়ে সেজদা কর, অতঃপর মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে বস, তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক”; আবু উসামা বলেন: “অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও” (বুখারি: ৬২৫১)

«أنه رأى النبي ﷺ يصلّي فإذا كان في وتر من صلاته لم ينهض حتى يستويَ قاعدًا» ،

রাসুল (সঃ) বেজোড় রাকাতে অর্থাৎ প্রথম ও তৃতীয় রাকাতে সেজদাহ্ হতে মাথা তুলে স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে তারপর দাঁড়াতেন (বুখারী ১ম খন্ড ১১৩ পৃঃ; আবু দাউদ ১১১-১১২ পৃঃ; তিরমিযী ৩৮ পৃঃ; নাসাঈ ১৭৩ পৃঃ; ইবিনু মাযাহ ৬৪ পৃঃ; মেশকাত ৭৫ পৃঃ);

«أنه صلى بأصحابه، فكان يجلس إذا رفع رأسه من السجود قبل أن ينهض في الركعة الأولى».

১ম ও ৩য় রাকাতের সেজদাহ্ শেষ করে কিছুক্ষণ বসে তারপর দাঁড়ানোর আরও দলিল দেখুন (মেশকাত মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ২য় খন্ড হাঃ ৭৩৪, ৭৪০; মেশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ৭৩৪, ৭৪০; বাংলা অনুবাদ বুখারি মাওলানা আজীজুল হক ১ম খন্ড হাঃ ৪৭২; সহিহ আল বুখারি আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৫৮, ৭৭৩, ৭৭৭; সহিহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮০২, ৮১৮, ৮২৩;

বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৭৮৩; মুসলিম শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৭৬৯; আবু দাউদ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪; তিরমিযী শরীফ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ২৮৭; জামে তিরমিযী মাওলানা আব্দুন নূর সালাফী ১ম খন্ড হাঃ ২৭৪)

সেজদার পর দাঁড়ানোর সময় হাতে ভর করে দাঁড়ানো দেখুন (সহীহ আল বুখারী আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৭৮; সহীহুল বুখারী তাওঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮২৪; বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৭৮৩)

জানাতে পারেন
১৫) সেজদায় প্রথমে হাটু পরে হাত রাখা । এর কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল লিখিত জানাবেন ।
১৬) প্রথম ও তৃতীয় রাকাতে সেজদা হতে উঠে একটু না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়া । এর কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল লিখিত জানাবেন ।
১৭) সেজদার পর দাড়ারানোর সময় দুই হাত হাটুতে রেখে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানো । এর কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল লিখিত জানাবেন ।

নামায পড়ার সহিহ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×