সুরা ফাতেহার এক নাম নামায (মুসলিম ১ম খন্ড ১৬৯ পৃঃ)
«لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب».
যে ব্যাক্তি ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়বে না তার নামায হবে না (কেতাবুত কেরাত বায়হাকী ৪৭ পৃঃ)
রাসুল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের পিছনে নামায পড়বে সে যেন সুরা ফাতেহা পড়ে (জামেউস সগির ১ম খন্ড ১৪৯ পৃঃ)
আল্লামা আল-কেমি (রহঃ) বলেন, সুরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না । তাই সে ফরজ নামায হোক, সুন্নত নামায হোক আর নফল নামায হোক । আর সে নামাযী ইমাম হোক, মুক্তাদী হোক আর মুনফারিদ হোক । আর সে নামায জোরের হোক বা আস্তের হোক, পুরুষ হোক বা মহিলা হোক, মুসাফের হোক, মুকিম হোক বা বাচ্চা হোক । আর সে নামায দাঁড়িয়ে পড়ুক, বসে পড়ুক বা শুয়ে পড়ুক । আর সে নামায ভয়ের মধ্যে পড়ুক বা নির্ভয়ে পড়ুক সবার জন্য সমান (তাহকীকুল কালাম ১ম খন্ড ৪৪ পৃঃ)
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) বলেছেন- ইমামের সাথে যতটুকু পাবে সেটুকু পড়ে নাও এবং যেটা বাকি থাকে সেটা ইমামের সালাম ফিরানোর পর পড়ে নাও (বুখারী ১ম খন্ড ৮৮ পৃঃ; মুসলিম ১ম খন্ড ২২০ পৃঃ; যুয বুখারী ২২ পৃঃ)
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) এর এই হাদিস দ্বারা দলিল গ্রহন করা হয়েছে যে, রুকু পাওয়া ব্যাক্তি যেন ঐ রাকাত কে যেন রাকাত বলে গণ্য না করে (মির’আত ১ম খন্ড ৪৪৯ পৃঃ)
এই হাদিস সামনে রেখে ইমাম বুখারি বলেন- যে ব্যক্তির দুটি ফরজ কেয়াম এবং কেরাত ছুটে গেছে রাসুল (সঃ) এর হুকুম অনুযায়ী সে ব্যক্তির কেয়াম এবং কেরাত পরে পূর্ণ করে নেওয়া ওয়াজিব (যুয বুখারী ২০ পৃঃ; কেতাবুত কেরাত বায়হাকী ১৫৭ পৃঃ)
আল্লামা যুরকানী বলেন আবু হুরায়রাহ (রাঃ) এর এই হাদিস দ্বারা দলিল গ্রহন করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়েছে তার রাকাত হয় নাই (যুরকানী ১ম খন্ড ১৪১ পৃঃ)
আল্লামা ইবনে হযম লিখেছেন- আবু হুরায়রাহ (রাঃ) এর এই হাদিসের দৃষ্টিতে রাকাত গণ্য করার জন্য কেয়াম এবং কেরাত পাওয়া জরুরী- তার উদ্ধৃতি দিয়েছে, (নাইলুল আওতার ২য় খন্ড ২২৭-২২৮ পৃঃ)
হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, হযরত আনাস ও হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন তোমরা নামাযে আসবে তখন যা পাবে সেটা পড়ে নেবে এবং যা ছুটে যাবে সেটা পুর্ণ করে নেবে । আতঃপর যার থেকে ফরয কেয়াম এবং কেরাত ছুটে গেছে তার ওয়াযেব হল সেটা পুর্ণ করে নেওয়া যেভাবে নবী (সঃ) নির্দেশ দিয়েছেন (যুয বুখারী ৮০ পৃঃ)
ডাঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব লিখেছেন, ইমামের পিছনে কেবল রুকু পেলে রাকাত পাওয়া হবে না । বরং উভয় হাদিসের উপর আমলের জন্য মুক্তাদীকে কেয়াম সহ কেরাতে ফাতেহা ও রুকু দুটিই পেতে হবে (সলাতুর রাসুল ৩৮ পৃঃ)
আবু সাঈদ খুদরী ও আয়শা (রাঃ) বলেছেন, সুরা ফাতেহা না পড়ে কেউ যেন রুকু না করে (যুয বুখারী ১৪ পৃঃ)
আ’রাজ (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে যতক্ষণ তুমি ইমামকে রুকুর আগে দাঁড়ান অবস্থায় না পাবে ততক্ষণ তোমার ঐ রাকাত হবে না (যুযউল কেরাত ৪ ও ১৭ পৃঃ)
আল্লামা ইবনে হযম লিখেছেন, যদি নামাযী আসে এবং ইমাম রুকুতে থাকে তাহলে নামাযী ইমামের সংগে রুকু করবে কিন্তূ সেটাকে রাকাত বলে গণ্য করবে না । যখন ইমাম সালাম ফিরাবে তখন ঐ রাকাতকে কাযা করে নিবে (আল মুহাল্লা, ইবনে হযম ২৪৩ পৃঃ)
ইমাম বায়হাকী লিখেছেন, আমি হাফেজ আবু আব্দুল্লাহ থেকে শুনেছি । তিনি বলেন, আমিতো শায়খ আবু বাকার আহমাদ বিন ইসহাক বিন আইয়ুব আযযবয়ী (রহঃ) কে ফতোয়া দিতে নিজ কানে শুনেছি যে রুকু পাওয়া ব্যক্তির রাকাত হতে পারে না (কেতাবুল কেরাত বায়হাকী ১৫৭ পৃঃ)
ইমাম শাওকানী মেনে নিয়েছেন যে রুকু পেলে রাকাত হয় না (নাইলুল আওতার ২য় খন্ড ২২৫ পৃঃ)
রুকু পেলে রাকাত হয় না এটা ওই ব্যক্তির মাযহাব যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়া জরুরী মনে করেন । জমহুরে মুহাদ্দেসিন ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়ার পক্ষপাতী । তাই রুকু পেলে রাকাত হবে না এটা হচ্ছে জমহুরে মুহাদ্দেসিনের মসলা (যুয বুখারী ৯ পৃঃ)
আল্লামা সালেহ বিন মাহদী আল মাকবেলী (রহঃ) বলেন-ফেকাহ এবং হাদিসের দৃষ্টিতে তামাম দলিল আদিল্লা সামনে রেখে আলোচনা পর্যালোচনা করে আমি এটা ছাড়া আর কিছুই পাই নাই যে, রুকু পেলে রাকাত হয় না (নাইলুল আওতার ২য় খন্ড ২২৭ পৃঃ)
আল্লামা নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভুপালী (রহঃ) বলেন-হক্ক কথা এই যে সুরা ফাতেহা ব্যতীত শুধু রুকু পেলে রাকাত হয় না (আর রওযাতুন নাদিয়া ১ম খন্ড ১২৬ পৃঃ)
আল্লামা সৈয়দ নযির হোসেন মুহাদ্দেস দেহলভী (রহঃ) বলেন- রুকু পেলে রাকাত হয় না । কেননা প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া ফরয (ফতোয়ায়ে নযীরিয়া ২য় খন্ড ২৮৬ পৃঃ)
আল্লামা শামসুল হাক মুহাদ্দেস আযিম আবাদী (রহঃ) বলেন- রুকু পেলে রাকাত হয় না (আউনুল মাবুদ ১ম খন্ড ৩৩৪ পৃঃ)
আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন- আমার নিকট তার কথাই গ্রহনযোগ্য যে ব্যক্তি বলে ইমামকে রুকু অবস্থায় পেলে ওটাকে রাকাত বলে গণ্য করবে না (তোহফাতুল আহওয়াজী ১ম খন্ড ৪০৮ পৃঃ)
আল্লামা আবু সাঈদ শরফুদ্দীন দেহলভী (রহঃ) বলেন- রাকাত কখনও হবে না এই জন্য যে, দুটি ফরয কেয়াম এবং কেরাত ছুটে গেছে । তাই এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা মোটেই উচিত হবে না (ফতোয়ায়ে সানাইয়া ১ম খন্ড ৩৬৯ পৃঃ)
আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুস দেহলভী (রহঃ) বলেন- প্রত্যেক নামাযীর জন্য সে নামাযী ইমাম হোক, মুক্তাদী হোক বা রুকু পাওয়া মুক্তাদি হোক বা মুনফারিদ হোক সে নামায ফরয হোক বা সুন্নত হোক বা নফল হোক সুরা ফাতেহা পড়া ফরয । সুরা ফাতেহা ছাড়া কোন অবস্থায় নামায হবে না, সহিহ হাদিস থেকে এটাই প্রমানিত (ফতোয়ায়ে উলামায়ে হাদিস ২য় পার্ট ১৯৫৫)
আল্লামা দাউদ রাজ দেহলভী (রহঃ) লিখেছেন-দলিলের ভিত্তিতে সঠিক কথা এটাই যে, রুকু পাওয়া ব্যক্তির ছুটে যাওয়া রাকাত ফিরে পড়ে নেওয়া জরুরী (মাহনুমা নুরুল ঈমাম দিল্লী এপ্রিল ১৯৬৯ সাল)
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিজের ফতোয়া- যতক্ষন পর্যন্ত ইমামকে দাঁড়ান অবস্থায় রুকুর আগে না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার রাকাত হবে না (যুয বুখারী ৭০ পৃঃ); আবি বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি একদিন দৌড়ে রুকু করা অবস্থায় রাকাতে সামিল হলেন । সালামের পর রাসুল (সঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিন; তুমি পুনরায় এমনটি আর করবেনা (বুখারী ৫৪ পৃঃ)
ইমাম বায়হাকী (রহঃ) বলেন- ইমাম বুখারী তার বুখারী শরিফের মধ্যে আবি বাকরা (রাঃ)’র হাদিসটি এনেছেন কিন্তূ পুরা নয় । পুরা হাদিসটি আবি বাকরা (রাঃ) থেকে ইমাম বুখারী দেখুন তার যুযউল কেরাত নামক হাদিসের গ্রন্থের মধ্যে এনেছেন এভাবে- হযরত আবি বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি মসজিদে ঢুকলেন এমন অবস্থায় যে রাসুল (সঃ) রুকুতে ছিলেন এবং আবি বাকরা (রাঃ) কাতারে সামিল হওয়ার আগেই রুকু করলেন এবং ঐ রুকু অবস্থায় কাতারে সামিল হলেন । তারপর রাসুল (সঃ) কে এ ব্যপারে অবগত করান হলে তিনি বলেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিন তুমি পুনরায় এরকম করবে না । আর যেটা ছুটে গেছে ওটা পূর্ণ করে নাও (যুযউল কেরাত বুখারী)
হযরত আবি বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একদিন নবী (সঃ) ফজরের নামায পড়ানোর সময় পিছনে থেকে লম্বা লম্বা শ্বাস ও হাপানীর শব্দ শুনলেন । নামায শেষে রাসুল (সঃ) বললেন, আবি বাকরা তুমি কি হাফাচ্ছিলে? আবি বাকরা (রাঃ) বললেন জী হ্যাঁ, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন আমি ভয় পাচ্ছিলাম আপনার সংগে এক রাকাত ছুটে যায় নাকি । এই জন্য আমি খুব তাড়াহুড়া করে নামাযে এসে শরীক হয়েছি । রাসুল (সঃ) বললেন আল্লাহ তোমার উৎসাহকে বাড়িয়ে দিন পুনরায় এরকম আর করবে না । নামায পড় যেটা পাবে, আর পূরণ করে নাও যেটা ছুটে গেছে (মির’আত ২য় খন্ড ৯৮ পৃঃ)
যখন তোমরা একামত শুনবে তখন নামাযের দিকে অগ্রসর হবে এবং তোমরা ধীরে ও শান্তভাবে আসবে এবং দৌরে আসবে না (বুখারী, মুসলিম ও বুলগুল মারাম ৪০ পৃঃ)
জানাতে পারেন
২২) জামায়াত শুরুর পর এসে রুকু পেলে ঐ রাকাত হবে । এর কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল লিখিত জানাবেন ।
নামায পড়ারসহিহ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



