somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারাবী নামায

১০ ই মে, ২০১২ সকাল ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ বলে কিয়ামু রমযান হলো- তাহাজ্জুদ । কিয়ামু রমাযান অর্থাৎ তারাবীহ (মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড অনুচ্ছেদ ১০৯ অধ্যায় সালাত পৃঃ ৮৯ ইঃ ফাঃ);

আনোয়ার শাহ কাশমিরি হানাফী (রহঃ) লিখেছেন- আমার নিকট এ দুটি নামায একই নামায । সাধারণ লোকেরা এটার অর্থ না বুঝে দুটো আলাদা নামায বানিয়ে দিয়েছে (ফয়জুল বারী শরাহ বুখারী ২য় খন্ড ৪২০ পৃঃ);

দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রটিষ্ঠাতা আল্লামা কাসেম নামুতুবী (রঃ) তার কিতাবে লিখেছেন- জ্ঞানীদের নিকট এ কথা গোপন নয় যে, কেয়ামে রমযান ও কেয়ামুল্লায়ল আসলে এ দুটো একই নামায । যেটা মুসলমানদের সুবিধার জন্য রাতের প্রথম অংশে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । কিন্তু গুরুত্ব হচ্ছে শেষ রাত্রে আদায় করা (ফয়েজে কাসেমিয়া ১৩ পৃঃ);

হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন রাসুল (সঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ছওয়াবের নিয়তে রমযানে কিয়াম তথা তারাবী পড়বে তার অতীতের সমুহ গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে (সহীহ আল বুখারী ১,৪৭ হাঃ নং ৩৬);

হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন রাসুল (সঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত তারাবী পড়েছে তার জন্য সারা রাত নফল নামায পড়ার ছওয়াব লিখা হয় (সহীহু সুনানিত তিরমিযী ১ম খন্ড হাঃ নং ১৬৪৬; আবু দাউদ ১ম খন্ড ১৯৫ পৃঃ; নাসাঈ ২৩৮ পৃঃ; মেশকাত ১১৪ পৃঃ);

হযরত আবু সালমা ইবনে আব্দুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি একদা হযরত আয়িশাহ (রাঃ) থেকে জিজ্ঞাসা করলেন রাসুল (সঃ) রমযান শরীফে রাত্রের নামায কি রকম পড়তেন ? হযরত আয়িশা (রাঃ) উত্তরে বললেন রমযান এবং গায়রে রমযান উভয় সময়ে নবী করিম (সঃ) রাত্রের নামায এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না । প্রথমে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিলম্ব করে চার রাকাত পড়তেন, পরে একই নিয়মে আরো চার রাকাত পড়তেন, আর তিন রাকাত বিতরের নামায পড়তেন (সহীহ আল বুখারী ১/৪৭০ হাঃ নং ১০৭৬; মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড ৬৪ পৃঃ হাঃ ১৫৯৩; যাদুল মায়াদ ১ম খন্ড ৩২৫ পৃঃ);

হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন রাসুল (সঃ) রমযান হোক অথবা অন্য কোন মাসে হোক এ নামায বিতর সহ ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না (বুখারী ১ম খন্ড ১৫৪ পৃঃ; মুসলিম ২৫৪ পৃঃ; যাদুল মায়াদ ১ম খন্ড ৩২৫ পৃঃ);

রাসুল (সঃ) রমযানে ৮ রাকাতের বেশি তারাবী পড়েননি, উমার (রাঃ) ও ৮ রাকাতই চালু করেছেন (দেখুন, বুখারী ১ম খন্ড ১৬৯ পৃঃ; আবু দাউদ ১ম খন্ড ১৮৯ পৃঃ; নাসাঈ ২৪৮ পৃঃ; তিরমিযী ৯৯ পৃঃ; ইবনু মাযাহ ৯৭-৯৮ পৃঃ; মেশকাত ১১৫ পৃঃ; বাংলা বুখারী আঃ প্রঃ ১ম খন্ড ৪৭০ পৃঃ; ২য় খন্ড ২৬০ পৃঃ);

সায়েদ বিন ইয়াযিদ থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে হযরত ওমর (রাঃ) যে বিশাল তারাবীর জামাত কায়েম করেছিলেন তাতে উবায় বিন কা’আবকে ইমাম করে বিতর সহ ১১ রাকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন (কেয়ামুল লায়ল ৯১ পৃঃ);

উবায় বিন কা’আব (রাঃ) রাসুল (সঃ) এর নিকট এসে বলেন- ইয়া রাসুল (সঃ) আজ রাতে এক ঘটনা ঘটেছে । রাসুল (সঃ) বললেন কি ঘটনা ? তিনি বললেন মহিলারা কোরআন পড়তে জানে না । তাই আমার পিছনে তারা নামায পড়েছে । আমি তাদেরকে ৮ রাকাত ও বিতর পড়িয়েছি । এ কথা শুনে রাসুল (সঃ) নিরব সম্মতি জানালেন (মুসনাদে আবু ইয়ালা, তাবারানী ও কেয়ামুল লায়েল ১৫৫ পৃঃ);

তারাবী সুন্নত হচ্ছে জামাতের সঙ্গে বিতর সহ ১১ রাকাত (ফতহুল কাদির । হাশিয়া হেদায়া ১ম খন্ড ১৯৮ পৃঃ);

রাসুল (সঃ) সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে মাত্র তিন দিন জামাতের সহীত তারাবীর নামায পড়েছেন । হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন আমরা রাসুল (সঃ) এর সাথে রোযা রেখেছি, নবী (সঃ) আমাদের তারাবীর নামায পড়ালেন না, এমনকি রমযানের আর সাত দিন বাকি ছিল অর্থাৎ তেইশ তারিখ পর্যন্ত । তারপর তেইশ তারিখে রাত্রে আমাদের তারাবীর নামায পড়ালেন তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত । চব্বিশ তারিখ পড়ালেন না । পঁচিশ তারিখ রত্রে অর্ধ রাত পর্যন্ত তারাবী পড়ালেন । আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! কতইনা ভাল হত যদি আপনি আমাদের সারারাত নামায পড়াতেন । নবী (সঃ) বললেন যে ব্যক্তি ইমাম মসজিদ থেকে চলে আসা পর্যন্ত ইমামের সাথে জামাতে নামায পড়েছে সে সারা রাত ইবাদত করার ছওয়াব পাবে । এরপর যখন সাতাশ তারিখ হয়ে গেছে তখন আবার নামায পড়লেন এবার পরিবারবর্গ এবং মহিলাদেরকেও আহবান করলেন এবং সুবহে ছাদেক পর্যন্ত নামায পড়ালেন (তিরমিযী । নাসাঈ । ইবনে মাযাহ । সহীহু সুনানি আবি দাউদ ১/৩৭৯ হাঃ ১৩৭৫);

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রঃ) লিখেছেন-যদি তোমরা বল যে এসব বর্ণিত রেওয়াতের ভিতরে ঐ রাতগুলিতে রাসুল (সঃ) কত রাকাত নামায পড়িয়েছেন তার কোন রাকাতের সংখ্যা নাই তাহলে আমি বলব সহীহ ইবিনে খুযায়মা ও সহীহ ইবনে হিব্বানে হযরত যাবের (রাঃ) বর্ণিত আছে যে রাসুল (সঃ) আমাদের নিয়ে ঐ রাতগুলিতে ৮ রাকাত তারাবী বিতর সহ পড়িয়েছেন (উমদাতুল ক্বারী শরাহ বুখারী ৩য় খন্ড ৫৯৭ পৃঃ);

ঐ রাতগুলিতে রাসুল (সঃ) বিতর ছাড়া ৮ রাকাত তারাবী পড়িয়েছেন (আল্লামা যয়লী হেদায়া তাখরীজ ১ম খন্ড ২৯৩ পৃঃ);

আল্লাহর নবী (সঃ) ২০ রাকাত তারাবী মোটেই পড়েনি পড়েছেন ৮ রাকাত (হাসিয়া দুরের মুখতার ১ম খন্ড ২৯৫ পৃঃ);

তারাবী সহীহ হাদিস থেকে বিতর সহ ১১ রাকাত প্রমাণিত (আইনুল হেদায়া উর্দু তরজমা ১ম খন্ড ৫৬৩ পৃঃ; নুরুল হেদায়া উর্দু তরজমা শরাহ বেকায়া ১৩৩ পৃঃ); তারাবী ৮ রাকাতের হাদিস সহীহ (নুরুল হেদায়া ১৩৩ পৃঃ);

দলিলের ভিত্তিতে ৮ রাকাত তারাবী সুন্নত । বাকি মুস্তাহাব (ফেকাহ রদ্দুল মুহতার ১ম খন্ড ৪৯৫ পৃঃ);

আমাদের হানাফী মাশায়াখদের উসুল অনুযায়ী ৮ রাকাতই সুন্নত বাকি ১২ রাকাত মুস্তাহাব (বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড ৭২ পৃঃ);

আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রঃ) লিখেছেন- রাসুল (সঃ) থেকে ৮ রাকাত তারাবী সহীহ সনদে প্রমাণিত । আর ২০ রাকাত রাসুল (সঃ) থেকে যঈফ হাদিসে এসেছে এবং যঈফ হওয়াতে সকলেই একমত । এটা স্বীকার করা ছাড়া পালাবার কোন জায়গা নেই যে রাসুল (সঃ) এর তারাবী ৮ রাকাতই ছিল (উরফুস শাজী ৩২৯ পৃঃ);

ইবনু নুজায়েম (রঃ) লিখেছেন এটা প্রমাণিত যে তারাবী বিতর ছাড়া ৮ রাকাত । যেমন বুখারী, মুসলিমে মা আয়িশা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে (বাহারুর রায়েক ২য় খন্ড ৭২ পৃঃ);

নিশ্চয়ই তারাবী নামায সুন্নত হচ্ছে ১১ রাকাত যেটা রাসুল (সঃ) জামাতের সঙ্গে বিতর সহ আদায় করেছেন (ফতহুল কাদির হাসিয়া হেদায়া ১ম খন্ড ১৯৮ পৃঃ);

তারাবীহ ৮ রাকাতের আরও দলিল দেখুন (মিশকাত-মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ৩য় খন্ড হাঃ ১২২১, ১২২৭, ১২২৮, ১২২৯; মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ১২২১, ১২২৮, ১২২৯; বাংলা অনুবাদ বুখারি মাওলানা আজীজুল হক ১ম খন্ড হাঃ ৬০৮; সহিহ আল বুখারি আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ১০৫৮, ১০৭৬, ২য় খন্ড হাঃ ১৮৭০; সহিহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ১১২৯, ১১৪৭, ২১১৩;

বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ৩য় খন্ড হাঃ ১৮৮১; মুসলিম শরীফ ইঃ ফাঃ ৩য় খন্ড হাঃ ১৫৮৭, ১৫৮৮, ১৫৯০, ১৫৯২, ১৫৯৩, ১৫৯৪, ১৫৯৬, ১৫৯৭);

জানাতে পারেন

২৮) তারাবী নামায সুন্নাত হিসাবে ২০ রাকায়াত পড়তে হবে । এর কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল লিখত জানাবেন ।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×