somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রচলিত তাবলীগ জামাত বনাম ইসলামের বিধান

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকল প্রশংসা এক আল্লাহর যিনি আমাকে লেখার তৌফিক দান করেছেন । অসংখ্য দুরুদ ও সালাম নবী মোহাম্মদ সা: এর উপর ।

আমাদের আগে শিরক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন । আল্লাহ শিরক সম্পর্কে কোরআন বলেছেন-

আল্লাহ শিরক এর গুনাহ মাফ করেন না । (সূরা নিসা-৪:৪৮)

শিরক সম্বন্ধে মহানবী সাঃ কে বাদ দিয়ে ১৮ জন নবীর নাম উচ্চারণ করে বলেছেন, তারা যদি শিরক করতো আল্লাহর সাথে তাহলে তাদের আমলগুলো বরবাদ হয়ে যেতো । (সূরা আনআম-৮৮)

এবার নবী মোহাম্মদ সাঃ কেই বলা হইছে, (হে নবী) যদি তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করো তোমার আমলও বাতিল এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে । (সূরা যুমার-৬৫) নবীকেও ছাড় দেওয়া হয় নাই ।

সর্বশেষ যারা শিরক করে তাদের জন্য জান্নাত হারাম করে দেওয়া হইছে । (সূরা মায়িদাহ-৫:৭২)

ফাজাযেলে আমল পড়লে অনেক আমল শিখা যায় । কিন্তু যদি শিরকও করি আমলও করি । তাহলে সেই আমলের কোন মূল্য নাই আল্লাহর নিকট । সত্য সঠিক অল্প আমলই এনাফ । কারণ আল্লাহর নিকট এখলাসপূর্ণ শিরকমুক্ত ইবাদাতও গ্রহণযোগ্য । (সূরা যুমার-৩)

কি কি বিষয় তাবলীগ বা প্রচার করবো আমরা ?
আল্লাহ আমাদের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবীর উম্মত করেছেন এবং আমাদের জানিয়েছেন কি কি বিষয় তাবলীগ বা প্রচার করতে হবে ।

সূরা মায়িদাহ-৫:৬৭> হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ।
এখানে যা অবতীর্ণ হয়েছে বলতে কোরআন ও সহীহ হাদিসকে বুঝানো হয়েছে পৃথিবীর সকল আলেমদের মতে ।

যদি নবী কোরআন বাদ দিয়ে অন্তর বা মনের বা খেয়ালখুশির অনুসরণ করতেন তাহলে কি হত ?
সূরা রা'দ-১৩> এমনিভাবেই আমি এ কোরআনকে আরবী ভাষায় নির্দেশরূপে অবতীর্ণ করেছি । যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পর, তবে আল্লাহর (আজাব) কবল থেকে আপনার না কোন সাহায্যকারী আছে এবং না কোন রক্ষাকারী ।

হে মানুষ, চিন্তা করেন নবীকে কতবড় থ্রেট । যদি মনো বাসনা বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন তো আল্লাহর আজাব উনাকেও ঘিরে ধরবে ।

প্রচলিত তাবলিগ জামাআতের কিছু প্রমান পত্রঃ-
০১) আমরা মসজিদে জামাতে নামায পড়ার পর অর্থাৎ সালাম ফেরানোর পর বিভিন্ন ধরনের কায্যকলাপ করে থাকি । আমাদের ইবাদতের গুরুত্বের ক্রমানুসারে ঐগুলো কত নম্বরে পড়ে ? যেমব ফরজ, ওয়াজীব, সুন্নত, নফল ইত্যাদি । কোনটার গুরুত্ব বেশী?

আরো সহজ ভাবে বলি- ফরজ নামাযের পর যারা তাবলিগ জামায়াত করেন তারাও উচ্চস্বরে কিতাবি তালিম আছে, ঈমান-আমল সম্বব্ধে আলচোনা হবে ইত্যাদি বলে থাকেন যা পরে আসা নামাযী ব্যক্তির নামাযে বিঘ্ন ঘটে ।

ফরজের ক্ষতি সাধন করে বা ফরজ আমল বিনষ্ট করে অন্য কোন আমল করা কুরআন হাদিসের কোন দলিল কেউ কি দেখাতে পারবে ?

০২) ফাজায়েল আমাল বইয়ের লেখক জনাব মাওলানা যাকারিয়া বইটির ভূমিকায় তাবলীগ জামাআতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াসকে লক্ষ করে লিখেছেনঃ
এত বড় বজুর্গের সন্তুষ্টি হাসিল করা আমার পরকালে নাজাতের উসীলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই ।

সুপ্রিয় দ্বীনি ভাইগণ! আমরা জানি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া কোন মানুষই কিয়ামতের দিন নাজাত পাবে না । তাই সকল এবাদত একমাত্র আল্লাহকে রাজী-খুশী করার জন্যই করতে হবে । এটি সকল প্রকার আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত । সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্যকে খুশী করার জন্য আমল করা শির্ক । এতে কোন সন্দেহ নেই । আল্লাহ তাআলা বলনঃ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে । (সূরা বায়্যেনাহঃ ৫)

এখন তাবলীগি ভাইদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনারাই বলুন ফাযায়েলে আমাল বইয়ের ভূমিকার কথাটি যদি শির্ক না হয়, তাহলে এটি কোন পর্যায়ের কথা ? দয়া করে জানাবেন কি ?

০৩) “আবু আলি রোদবারি (রঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল যে এখানে কি কোন পরিস্কার জায়গা যেখানে একজন ফকির মরিতে পারে ? আমি ইহা বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম, ভিতরে এসে যেখানে এসে মর । সে ভিতরে আসিয়া ওযু করিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িল ও মারা গেল । আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করার পরে দেখিবার জন্য কাফন হটাইয়া দেখিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল । আমি তাকে বলিলাম, মৃত্যুর পরেও জীবন ? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন । আমি তোমায় কাল কিয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে সাহায্য করিব” (ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা)

এখন দেখা যাক কুরআন কি বলে- আল্লাহ বলেন,
“… কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেনা কোন স্থানে সে মৃত্যুবরন করবে” (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
এই আয়াতের ব্যখ্যায় নবী (সঃ) বলেন, “এগুলো গায়িবের কথা এবং এগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা” (সহিহ বুখারি)
আল্লাহ বলেন, “মৃতকে তো তুমি (নবী) কথা শুনাতে পারবে না” । (সূরা নামলঃ ৮৪)
তাহলে কিভাবে ঐ ব্যক্তি মৃত ফকিরকে প্রশ্ন করল এবং সে শুনল ?
আল্লাহ বলেছেন, “জীবিত ও মৃত কখনো সমান না” (সুরা আল ফাতিরঃ ২২)
অর্থাৎ, কিন্তু গল্পে জীবিত ও মৃত- উভয়েই কথা বলছে অর্থাৎ উভয়েই সমান ।

০৪) বিষয় বস্তু (সংক্ষেপে লিখে দিলাম) নামাযের হেফাজত করিলে পাঁচটি পুরুষ্কার লাভ করিবে ।
অর্থঃ একটি হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি এহ্‌তেমামের সহিত ও গুরুত্ব সহকারে নামায আদায় করিবে আল্লাহ তায়ালা তাহাকে পাঁচ প্রকারে সম্মানিত করিবে ।…………।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজে শৈথিল্য প্রদর্শন করে, আল্লাহ পাক তাহাকে পনের প্রকার শাস্তি প্রদান করিবেন ।……………( ফাযায়িলে আমলের ফাযায়িলে নামায ৩৬ পৃঃ বাংলা অনুবাদ ৪৫ পৃঃ)

আমাদের ছিয়া সিত্তা সহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে যত হাদিস সংকলিত হয়েছে তাতে জ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে বলেছেন- মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) হাদীছ যথা- ছহীহ ও হাসান এবং (মারদূদ) অগ্রহণযোগ্য হাদীছ যথা- যঈফ (দুর্বল) ও জাল (বানোয়াট) ।

আর যে হাদিস কোন হাদিস গ্রন্থে হুবহু পাওয়া যায় না জুড়াতালি দিয়ে মনগড়াভাবে লিখা হয় ঐ হাদিসটি কোন প্রকারের হতে পারে ??!!!

প্রশ্নঃ হদিসটি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । হাদিসটি কোন গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ দলিল সহ জানাবেন ? (প্রয়োজনে আপনার জ্ঞানীদের সাহায্যে)

০৫) সালাতের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে জনাব শায়খুল হাদীস সাহেব তার ফাযায়েলে আমালে লিখেছেন, উম্মে কলসুমের স্বামী আব্দুর রহমান অসুস্থ ছিলেন, একবার তিনি এমন অচেতন অবস্থায় পতিত হলেন যে, সকলেই তাকে মৃত বলে সাব্যস্ত করল, উম্মে কলসুম তাড়াতাড়ি নামাজে দাড়ালেন, নামাজ শেষ করা মাত্রই আব্দুর রহমান জ্ঞান লাভ করলেন, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার অবস্থা কি মৃত্যুর অনরুপ হয়েছিল ? লোকজন বলল, জি হাঁ, তখন তিনি বললেন, আমি দেখলাম দু জন ফেরেশতা এসে বলল, চল আল্লাহর দরবারে তোমার ফয়সালা হবে, এই বলে তারা আমাকে নিয়ে যেতে উদ্যত হল, ইত্যবসরে তৃতীয় এক ফেরেশতা এসে তাদেরকে বাধা প্রদান করে বলল, তোমরা চলে যাও ইনি এমন এক ব্যাক্তি যিনি মাতৃগর্ভেই সৌভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত হয়েছেন, তার সন্তান সন্ততিগণ আরও কিছুদিন তার কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভের সুযোগ পাবে, তার পর তিনি আরো একমাস জীবিত ছিলেন (ফাযায়েলে নামাজ ৫৫)

মুহতারাম শায়েখ উক্ত ঘটনা উল্লেখ করার আগে বা পরে কোন রেফারেন্স উল্লেখ করেননি, জনাব শায়েখ উক্ত ঘটনার মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন, মানুষরাই শুধু ভুল করেনা বরং ফেরেশতা এবং আল্লাহ তায়ালাও ভুলের উদ্ধে নন, নাউযুবিল্লাহ, নইলে শায়খের দ্বারা এমন বর্ণনা কিভাবে লিখা সম্ভব হল যে, দুজন ফেরেশতা ঐ ব্যক্তির জান কবজ করার জন্য যখন উদ্যত হলেন তখন অপর ফেরেশতা এসে বাধা প্রধান করে তাকে মৃত্যু থেকে এক মাসের জন্য অব্যাহতি দিতে পারলেন, এ থেকে কি প্রমাণিত হয়না যে, প্রথম দুজন ফেরেশতা ভুল করে এসেছিলেন তাহলে ব্যাপারটা কি আল্লাহ তায়ালার অগোচরেই ঘটেছিল, নাকি আল্লাহ তায়ালা প্রথমে ভুল করে পাঠিয়ে পরে সংশোধন করলেন অন্য ফেরেশতা দিয়ে, আর আজরাইল আ: ইবা ছিলেন কোথায়, মহান আল্লাহ তায়ালাও ভুলের উদ্ধে নন .এটাকি খৃষ্টানী আকিদার বীজ বপন নয়, সুপ্রিয় ভাইয়েরা : এ ব্যাপারে আপনাদের যথার্থ মন্তব্য দিয়ে সত্যান্বেষী মানুষকে সঠিক পথ দেখাবেন বলে আশা করি ।

০৬) ফাযায়িলে আমলের ফাযায়িলে রমাযান ২০ পৃঃ বাংলা অনুবাদ ৩০ পৃঃ দেখুন ।
প্রশ্নঃ ইফতারের দু’আটি কি হাদিসের মোতাবেক ? (দেখুন আবু দাউদ ১ম খন্ড ৩২২ পৃঃ; মারাসিলে আবু দাউদ ৮ম পৃঃ)

০৭) ফাযায়িলে আমলের ফাযায়িলে যিক্র ৩৬ পৃ বাংলা অনুবাদ ৫০ পৃঃ দেখুন ।
অর্থঃ রাছুলুল্লাহ (ছঃ) এরশাদ করেন, যদি কাহারও নিকট অনেক অনেক টাকা থাকে এবং সে উহা আল্লাহর রাস্তায় দান করে আর অপর এক ব্যক্তি শুধু আল্লাহর জিকির করিতে থাকে তবে জিকিরকারীই উত্তম ।
প্রশ্নঃ উক্ত হাদিসটি কি কুরআন ও সহীহ হাদিস বিরোধী নয় ?
দেখুন সুরা তাওবা আয়াত ২০; যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে; নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জেহাদ করেছে; তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম ।

নবী প্রেমের বিভিন্ন কাহিনী শিরোনামে একটি অধ্যায় । যেখানে আল্লাহ বলেছেন কোরআন ও সহীহ হাদিস তাবলীগ করতে সেখানে তাবলীগ করা হইতেছে নবী প্রেমের কাহিনী । দেখেন কোন শিরক আছে কি না ?

০৮) শায়েখ আবুল খায়ের বলেন, একবার মদীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকতে হয় । খাওয়ার জন্য কিছুই না পেয়ে অবশেষে আমি হুজুর এবং শায়ইখানের কবরের মধ্যে সালাম পড়িয়া আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল । আমি আজ রাতে আপনার মেহমান হবো ।
এই কথা আরজ করে মিম্বর শরীফের নিকট গিয়ে আমি শুইয়া পড়লাম । স্বপ্নে দেখি, হুজুরে পাক (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন । ডানে হযরত আবু বকর, বাম দিকে হজরত ওমর এবং সামনে হজরত আলী রাঃ । হযরত আলী রাঃ আমাকে ডেকে বলেন, এই দেখ, হুজুর সাঃ তাশরীফ এনেছেন । আমি উঠা মাত্রই মহানবী সাঃ আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলি
তারপর যখন আমার চোখ খুলিল তখন আমার হাতে বাকী অর্ধেক ছিল (রুটি অবশিষ্টাংশ) সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৬ পৃষ্ঠা ।

সম্মানিত মুসলিম ভাইগণ !
আল্লাহকে ছেড়ে মৃতু্র পর নবীর রওজায় গিয়ে খাদ্যের প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক নয় কি ?
মৃতুর পর নবী কবরে থেকেও খাওয়াতে পারেন এ আক্বিদাহ পোষন করা শিরক নয় কি ?
এই রকম শিরকী আকিদাহ কি মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়, নাকি জাহান্নামের দিকে ?
অথচ মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন,
ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর । (সূরা হুদ-৬)

০৯) বিখ্যাত সূফী (?) ও বুজুর্গ হজরত শায়খ আহমদ রেফয়ী (রঃ) ৫৫৫ হিজরী সনে হজ্জ সমাপন করিয়া নবীজির রওজা জিয়ারতের জন্য মদিনায় হাজির হন । সেখানে তিনি নিম্নোক্ত রওজার সামনে দাঁড়াইয়া নিম্নোক্ত দুটি বয়াত পড়েন ।
"দূরে থাকা অবস্থায় আমি আমার রুহকে হুজুর সাঃ এর খেদমতে পাঠাইয়া দিতাম । সে (রুহ) আমার নায়েব হইয়া আস্তানা শরীফে চুম্বন করিত । আজ আমি শ্বশরীরে দরবারে হাজির হইয়াছি । কাজেই হুজুর আপন হস্ত বাড়াইয়া দেন যেন আমার ঠোট উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করে । বয়াত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে (??) কবর হইতে হাত মোবারক বাহির হইয়া আসে এবং হযরত রেফায়ী উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করেন । বলা হয় যে, সে সময় মসজিদে নববীতে ৯০ হাজার লোকের সমাগম ছিল । সকলেই বিদ্যুতের মতো হাত মোবারকের চমক দেখিতে পায় । তাহাদের মধ্যে মাহবুবে ছোবহানী আব্দুল কাদের জিলানীও ছিলেন । সূত্র: ফাজায়েলে হজ্জ-২৫৮ পৃষ্ঠা ২৩ তম নবী প্রেমের কাহিনী ।

নবীজি সাঃ কখনো আবু বকর (রাঃ) ওমর (রাঃ), ওসমান (রাঃ), আলী (রাঃ) এর জন্য হাত বাড়ালেন না । কখনো নবী পরবর্তী এত যুদ্ধ হাঙ্গামার সময় হাত বাড়ালেন না । আর কোন জায়গার কোন রেফায়ীর জন্য কবর থেকে হাত বাড়ান ।
আবার দেখেন রুহকে ইমেইলের মতো সেন্ড করে, প্রতিবারই নবীজি সাঃ কবর থেকে চুমা দেন ।
এই সব কাহিনী একমাত্র সূফীদেরই হয়ে থাকে যেমন দেওয়ানবাগীর ১৯৯৮ সালের সম্মেলনে নাকি স্বয়ং আল্লাহ ও রাসূল সাঃ দেওয়ান শরীফে এসেছেন । নাউজুবিল্লাহ ।
বুখারীর প্রথমে দিকের সহীহ হাদিস> যে নবীর নামে মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয় ।

১০) জনৈক বেদুঈন হুজুর (ছঃ) এর কবর শরীফের নিকট দাড়াইয়া আরজ করিল, হে রব ! তুমি গোলাম আজাদ করার হুকুম করেছো । ইনি (নবী সাঃ) তোমার মাহবুব, আমি তোমার গোলাম । আপন মাহবুবের কবরের উপর আমি গোলামকে (জাহান্নামের) আগুন হইতে আজাদ করিয়া দাও । গায়েব হইতে আওয়াজ আসিল, তুমি একা নিজের জন্য কেন আজাদী (ক্ষমা) চাহিলে ? সমস্ত মানুষের জন্য কেন আজাদী চাহিলে না । আমি তোমাকে আগুন হইতে আজাদ করিয়া দিলাম (সূত্র: ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৪ পৃষ্টার ১ম কাহিনী)

সম্মানিত জ্ঞানী মুসলিম ভাইগণ, রাসুলের মৃত্যুর পর তার মাজারে গিয়ে প্রার্থনা করা মাজার পূজারীদের সাদৃশ্য নয় কি ?
গায়েবী আওয়াজ শুনা তো নবুওয়াতের কাজ । ঐ বেদুঈন কি নবী ছিল যে গায়েবী আওয়াজ এলো "আমি তোমাদের আগুন থেকে আজাদ করিয়া দিলাম" ।
কোরআন থেকে আমরা জানতে পারি আল্লাহ শুধু মাত্র মুসা আঃ এর সাথে দুনিয়ায় জীবনে কথা বলতেন । এবং অন্য আয়াতে আছে মানুষের এমন কোন যোগ্যতা নাই যে সে আল্লাহর সাথে কথা বলবে । কিন্তু তাবলীগি নিসাব পড়লে বুঝা যায় আল্লাহ গায়েবীভাবে মানুষের সাথেও কথা বলেন ।
আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি না আল্লাহ নবীর পরে আমাদের সাথে কথা বলবেন । এই আক্বিদাহ একমাত্র দেওয়ানবাগী, সুরেশ্বরী, পীরগণ ও সূফীবাদিরাই রাখতে পারেন । কারণ তাদের হজ্জ করা লাগে না । কাবা এবং স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুল তাদের বাসায় আসেন । নাউজুবিল্লাহ ।

১১) শায়েখ ইব্রাহিম এবনে শায়বান (রঃ) বলেন, আমি হজ্বের পর মদিনা পাকে পৌছাইয়া কবর শরীফে হাজির হইয়া হুজুর পাক সাঃ এর খেদমতে ছালাম আরজ করিলাম । উত্তরে হুজরা শরীফ হইতে ওয়ালাইকুমুস্সালাম শুনিতে পাই (সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্ব-পৃষ্ঠা-২৫৫ (৫ নং কাহিনী)

এই কাহিনী দিয়া এটাই বুঝাইতে চায় যে ইব্রাহিম এবনে শায়বান আল্লাহর অলী ছিল । তিনি পরকালে চলে গেছেন । অতএব এখন তোমাদের সামনে যারা আছে অর্থাৎ পীরগণ তাহাদের খেদমত কর । তাদের পুজা কর, সিজদা কর, ইবাদাতের না, সম্মানের সিজদাহ ।

১২) আল্লামা কাস্তালানী (রঃ) বলেন, আমি একবার এমন কঠিন রোগে আক্রান্ত হই যে, ডাক্তারগণ পর্যন্ত নিরাশ হইয়া যায় । অবশেষে আমি মক্কা শরীফ অবস্থানকালে হুজুর সাঃ এর উছিলায় দোয়া করিলাম । রাত্রি বেলায় আমি স্বপ্নে দেখি, এক ব্যক্তির হাতে একটি কাগজের টুকরা, তাহাতে লেখা রহিয়াছে, ইহা আহমাদ বিন কাস্তালানীর জন্য ওষুধ । হুজুরে পাক (সাঃ) এর তরফ থেকে তাহার নির্দেশে (?) ইহা দান করা হইয়াছে । আমি ঘুম হইতে জাগ্রত হইয়া দেখি আমার মধ্যে রোগের কোন চিহ্ন নাই (সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৫ পৃষ্ঠা (৬ নং কাহিনী)

মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম আঃ অসুস্থ হলে কি করেছিলেন আল্লাহ তায়ালা তা কুরআনে বর্ণনা করেন ।
আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন আল্লাহই আমাকে আরোগ্য দান করেন (আশ শুয়ারা-৮০)
আইয়ুব আঃ অসুস্থ হয়ে প্রার্থনা করেনঃ "আর স্মরণ কর আইয়ুবের কথা যখন সে তার প্রতিপালকের আহ্বান করে বলেছিল, আমি দুঃখ কষ্টে পড়েছি, আর আপনি দয়াবানদের চেয়েও সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবাদ (সূরা আল আম্বিয়া-৮৩)
আল্লাহ তাদের আরোগ্যতা দান করেছিলেন । আর এই কাহিনী বলে নবীজির নির্দেশে এই ওষুধ । তাহলে আল্লাহ কই ?
বিশ্বনবী সাঃ যখন কোন অসুস্থ লোককে দেখতে যেতেন তখন এই দুয়া পাঠ করতেনঃ
"হে মানবমন্ডলীর প্রতিপালক ! এই রোগ দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন । একমাত্র আপনিই আরোগ্য দানকারী । আপনার শিফা ব্যতিত আর কোন শিফা নেই । আপনার শিফা এমন যে কোন রোগকে ছাড়ে না (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম মিশকাত হাঃ ১৫৩০, মুসলিমের দোয়া পৃঃ ১৩৪)
মৃত্যর পরও নবী সাঃ ডাক্তারী করেন, রোগী আরোগ্য করেন, স্বপ্নযোগে ফি ছাড়া ওষুধ পাঠান, এমন আক্বিদাহ কি মুসলিমরা রাখতে পারে ?

১৩) ছাবেত বিন আহমদ বলেন, তিনি একজন মোয়াজ্জেনকে মসজিদে নব্বীতে আজান দিতে দেখিয়াছিলেন । মোয়াজ্জেন যখন আচ্ছালাতু খায়রুম মিন্নাওম বলিল, তখন এক খাদেম আসিয়া তাঁহাকে একটি থাপ্পড় মারিল । মোয়াজ্জেন কাঁদিয়া উঠিয়া আরজ করিল, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনার উপস্থিতিতে আমার সাথে এইরূপ হইতেছে ? (মানে বিচার দিল) সঙ্গে সঙ্গে সেই খাদেমের শরীর অবশ হইয়া গেল । লোকজন তাহাকে উঠাইয়া ঘরে লইয়া গেল এবং তিন দিন পর সে মরিয়া গেল (ফাজায়েলে হজ্জ্ব ২৬২ পৃ)

যখন নবীকে এ্যাড করা হইছে তখনই আমাদের মুসলিমদের সমস্যায় পরিণত হইছে । কারণ নবীর নামে মিথ্যা বলা বা বানিয়ে অবাস্তব কাহিনী বলা, কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কাহিনী বর্ণনা করা, আক্বিদা বিনষ্টকারী কাহিনী প্রচার করা মুসলিমরা কখনো মেনে নেয় না । এই কাহিনী নিশ্চিতভাবে কবরপূজারী, মাজারপূজারীদের কর্মকান্ডকে সমর্থন করে । এই কাহিনী নিশ্চিতভাবেই মুসলিমদের কবর পুজায় উৎসাহিত করে । হাদিসে এসেছে— عن أنس رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : كنت نهيتكم عن زيارة القبور، ألا فزوروها فإنها ترق القلب وتدمع العين وتذكر الآخرة، ولا تقولوا هجرا ( صحيح الجامع رقم الحديث : ৪৫৮৪)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, হ্যাঁ এখন তোমরা কবর জিয়ারত করবে । কারণ কবর (১) জিয়ারত হৃদয়কে কোমল করে, (২) নয়নকে অশ্রু সিক্ত করে ও (৩) পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয় । তবে তোমরা শোক ও বেদনা প্রকাশ করতে সেখানে কিছু বলবে না (সহিহুল জামে, হাদিস নং ৪৫৮৪)
নবী যেখানে বলছেন বেদনা প্রকাশ করতে কিছু বলবে না, সেখানে মহিলা গিয়ে বিচার দেয়, শরীর অবশ হয়, মারা যায় । চিন্তা করেন । এই কাহিনীরে কোন ক্যাটাগরিতে ফালামু বুঝতে পারছি না ।

১৪) ইউসুফ বিন আলী বলেন, জনৈক হাশেমী মেয়েলোক মাদীনায় বাস করিত । তাহার কয়েকজন খাদেম তাহাকে বড় কষ্ট দিত । সে হুজুরের দরবারে ফরিয়াদ লইয়া হাজির হইল (বিচার চাইতে হাজির) ; রওজা শরীফ হইতে আওয়াজ আসিল, তোমার মধ্যে কি আমার আদর্শের প্রতি আনুগত্যের আগ্রহ নাই । তুমি ছবর কর যেমন আমি ছবর করিয়াছিলাম । মেয়েলোকটি বলেন, এই সান্তনাবাণী শুনিয়া আমার যাবতীয় দুঃখ মুছিয়া গেল । ঐদিকে বদ আখলাক খাদেমগুলো মরিয়া গেল । (ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৯ পৃ)

সম্মানিত মুসলিম ভাইয়েরা ! উল্লেখিত ঘটনাদ্বয় পড়ুন আর একটু ভেবে দেখুন, নাবী সাঃ ক্ববরে থেকেও মানুষের মুসিবত দূর করেন এবং বেয়াদবীর কারণে মানুষ মেরেও ফেলেন । জীবদ্দশায় নবী সাঃ কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন, দাঁত শহীদ হল, মাথায় হেলমেট ঢুকে গেল । তখনতো নবী সাঃ এভাবে কাফিরদের মেরে ফেলতে পারতেন । কিন্তু তাতো করলেন না । কিন্তু মরার পরে এ জাতীয় ক্ষমতায় বিশ্বাস তো মাজার ভক্তরা করে থাকে । যা বিবেকেরও পরিপন্থী । যার সাধারণ জ্ঞান আছে সেও কি এ জাতীয় বিশ্বাস করতে পারে ?
সাহাবারা কখনো কবর থেকে বিপদের ফায়সালা পেল না, আর সাধারণ খাদেম রা গিয়ে বিপদের কথা বললেই শুধু গায়েবী আওয়াজ আসে । এই ধরণের আক্বিদাহ একমাত্র সূফীবাদীদেরই হয়ে থাকে । এমদাদউল্ল্যাহ মক্কী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সহ উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ মোটামুটি সবাই ছিলেন সূফীবাদী । তাই তাদেরও দোষ দেওয়া যায় না । কারণ সূফীরা মিথ্যা বলে না, মিথ্যা অটোমেটিক তাদের মুখ দিয়ে বের হয় ।
মাত্র একটা উত্তর দেন, বিপদ থেকে উদ্ধারকারী নবী সাঃ না আল্লাহ ?
সূরা ফাতিহা-৪ নং আয়াতে আমরা বলি, আমরা তোমারই ইবাদাত করি, তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ।
কিন্তু এখানে কবরবাসীর নিকট সাহায্য চাওয়া হচ্ছে । অদৃশ্য বা গায়েবের নিকট কিছু চাইতে হলে সেটা একমাত্র আল্লাহর নিকটই চাইতে হবে । হ্যা এমনে পৃথিবীতে আমরা জীবিত মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে পারি । কিন্তু "গায়েবী ভাবে সাহায্য" একমাত্র আল্লাহর নিকটই চাইতে হবে । আরো পড়ুন সূরা বাকারাহ-১৬০, আনআম-১৭-১৮, আরাফ-৩৭, ১২৮, ১৯৭
আল্লাহকে বাদ দিয়ে নবীকে বিপদ থেকে রক্ষাকারী, গায়েবী সাহায্যকারী হিসেবে নির্ধারণ করা কি শিরক ? নাকি সওয়াব ?

১৫) শায়েখ আহমেদ বলেন, আমি তের মাস পর্যন্ত ময়দানে, জঙ্গলে ঘুরিতে ফিরিতে থাকি । উহাতে আমার চামড়া পর্যন্ত খসিয়া যায় । অবশেষে হুজুর ও শায়খাইনের খেদমতে সালাম করিতে যাই । রাত্রি বেলায় স্বপ্নে হুজুর সাঃ আমাকে বলেন, আহমদ তুমি আসিয়াছ ? আমি বলিলাম, হুজুর আমি আসিয়াছি । আমি বড় ক্ষুদার্ত, আমি হুজুরের মেহমান । হুজুর বলিলেন, দুই হাত খুল । আমি দুই হাত খুলিলে দেরহাম দিয়া দুইহাত ভরিয়া দিলেন । জাগ্রত হইয়া দেখি আমার হাত দেরহাম দিয়া ভর্তি । আমি উহা দ্বারা কিছু খাইয়া আবার জঙ্গলে ফিরিয়া আসিলাম -ফাযায়েলে হজ্জ-২৬২ পৃঃ

ভাইয়েরা, উপরোল্লিখিত ঘটনা কি এ শিক্ষা দেয় । শিক্ষা দেয় সব জায়গা থেকে ফিরিয়া গেলেও অলী আল্লাহগণের কবর থেকে ফিরার চান্স চাই । শায়খ আহমদ কাজ কাম না কইরা জঙ্গলে জঙ্গলে মোরাকাবা করে ঘুরে বেড়াইছে । পরে নবীর কবরে যেয়ে দেরহাম নিয়া আসছে । তাহলে যারা বলে নিচের কথাগুলো তাদের কি দোষ,
কেউ ফিরে না খালি হাতে, খাজার বাবার দরবার হতে
আল্লাহর ধন রাসূলকে দিয়ে, আল্লাহ গেছেন খালি হয়ে
ভাগ্যভাল নবীর সময় ফ্লেক্সীলোড ছিল না । থাকলে এটা নিয়াও কাহিনী শুরু করত যে নবী তার মোবাইলে ৫০০ রিচার্জ করছে, হের মোবাইলে ১০০০ রিচার্জ করছে ।

রাসুল বলেছেন, “নেতা, উপনেতা বা দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করেনা” (আবু দাউদঃ ৩৬২৪)
তাবলিগের মুরুব্বিদের কতিপয় কথা তথ্য প্রমানসহ উল্লেখ করা হলঃ-

(১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে একথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলেম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন (হযরতজীর মাল্‌ফুযাত-৪ পৃষ্ঠা-৭, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৫৩, তাবলীগে ইসলাম পৃষ্ঠা-৩, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ পৃষ্ঠা-২২)

(২) ইলিয়াছ সাহেবের মাল্‌ফুযাতসহ আরো কিছু কিতাবে লেখা আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা (হযরতজীর মাল্‌ফুযাত-২৯ পৃষ্ঠা-২২, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৫, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন পৃষ্ঠা-৪৯, তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৬)

৩) মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত- “তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে ১০ দফা” নামক কিতাবের ১৪ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ ।”

৪) মাল্‌ফুযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২ নং মাল্‌ফূযে এবং নুবুওওয়ত ও মাওঃ ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দু’প্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই মুসলমান । অর্থাৎ যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগ কারীদেরকে সাহায্যও করবেনা, তারা মুসলমান নয় ।” (অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মোঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী ১৭৪ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন ? (লেখক- ওবায়দুল হক) ২১ পৃষ্ঠা, হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান, ২য় খণ্ড ১১ পষ্ঠায় উল্লেখ আছে)

৫) ইলিয়াছ সাহেবের মলফূযাতের ১৮ পৃষ্ঠার ২৯ নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, “নামাজ-রোজা উচ্চাঙ্গের ইবাদত কিন্তু দ্বীনের সাহায্যকারী নয়”

৬) তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে “তেরো দফা” নামক কিতাবে ৭ পৃষ্ঠায় যা মুযাম্মিলুল হক উল্লেখ করেছেন, “মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাই যথেষ্ট, আর আলেমের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার”

৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায় কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন । যেমন- হযরত আদম আলাইহিস সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি (মলফূযাতে শায়খুল হাদীস পৃষ্ঠা ২৩১, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী পৃষ্ঠা ৬১)

৮) মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, লক্ষাধিক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন (অনুরূপ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব, যার মূল মাওলানা জাকারিয়া প্রণীত- ১৩ পৃষ্ঠা, তাবলীগী জামায়াতের প্রধানের তর্ক ও ইচ্ছা নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)

৯) মলফূযাত, পৃষ্ঠা-৪৭, ৫০ নং মলফূয, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব পৃষ্ঠা ১৫, হযরতজী ইনয়ামের তর্ক ও বাহাছ পৃষ্ঠা ১২, তাবলীগ পরিচয় পৃষ্ঠা ১৭, তাবলীগ দর্পণ পৃষ্ঠা ৬২ ইত্যাদি কিতাবসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী ইলিয়াস সাহেব বিশেষ স্বপ্নের মাধ্যমে এ তাবলীগের নির্দেশ পেয়েছে । আবার কারো কারো মতে হিন্দু জমিদারদের কারণে মুসলমানগণ প্রায় হিন্দু হয়ে পড়লে ইলিয়াস সাহেব এ তাবলীগের উদ্যোগ নেন । তাবলীগের কাজ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর ইলিয়াস সাহেবই পুনরুজ্জীবিত করেন । নাঊযুবিল্লাহ !

বিশ্ব বরেণ্য আলিমগণের দৃষ্টিতে তাবলীগ জামা'আত ও তার নিসাব :
আল্লাহ পাক শারী'আতের বিভিন্ন বিষয়ে এ সমস্ত আলিমদের অভিমত গ্রহণ করার জন্য আল কোরআনে বলেন, "তোমরা জ্ঞানবানদের জিজ্ঞেসা কর, যদি তোমরা তা না জান ।" (সূরা আম্বিয়া, ৭)

০১) শাইখ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আল শাইখ (রহঃ) সাবেক গ্রান্ড মুফতী, সৌদী আরব তাঁর রাজকীয় তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রধানকে লেখা পত্রে তাবলীগ জামা'আত সম্পর্কে বলেন,

আমি মহোদয়ের নিকট এ প্রতিবেদন পেশ করছি যে, এই জামা'আতের কোনই ফায়দা নেই, এটি একটি বিদ'আতী এবং গোমরা সংগঠন । তাদের নিসাব গ্রন্থ পড়ে দেখলাম, তাতে গোমরাহী এবং বিদ'আত ভরপুর । এতে কবর পূঁজা এবং শিরকের দিকে আহ্বান করা হয়েছে । বিষয়টি এমনই যে, এ ব্যাপারে চুপ থাকা যায় না । এজন্য অবশ্যই আল্লাহ চাহেন তো আমি এর প্রতিবাদ লিপি পাঠাব যেন এর বিভ্রান্তি ও বাতিল প্রকাশ হয়ে পড়ে । আল্লাহর নিকট দু'আ করি তিনি যেন, তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং কালিমাকে সুউচ্চে রাখেন- আমীন ! তারিখঃ ২৯/০১/১৩৮২ হিঃ (তথ্য সূত্রঃ ফতওয়া ও চিঠিপত্র, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শাইখ, খন্ড ১ পৃঃ ২৬৭-২৬৮)

০২) শাইখ আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ) 'র নিকট তাবলীগ জামা'আত এর সঙ্গে চিল্লায় বের হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন,
"আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য । অতঃপর তাবলীগ জামা'আতের নিকট আক্বীদাহর ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ধারণা নেই । সুতরাং তাদের সাথে বের হওয়া উচিত নয় । একমাত্র যার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'তের আক্বীদা সম্পর্কে জ্ঞান ও স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে সে বের হতে পারে, এজন্য যে তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিতে এবং প্রয়োজনীয় নাসীহাত করতে পারে এবং তাদেরকে কল্যাণমূলক কাজে সহায়তা করতে পারে । কেননা, তারা তাদের কাজের ব্যাপারে খুবই তৎপর । কিন্তু তারা আরো অধিক জ্ঞানের মুখাপেক্ষী এবং আলিম-উলাময়ে কিরামের প্রতি মুখাপেক্ষী, যারা তাদেরকে তাওহীদ ও সুন্নাহর জ্ঞানে আলোকিত করবে । আল্লাহ তা'আলা সকলকে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন এবং এর উপর সাবেত রাখুন ।আমীন! (মাযমু ফাতাওয়া আল শাইখ ইবন বায, ৮/৩৩১)

০৩ শাইখ সালিহ আল ফাওযান বলেন,
আল্লাহর জন্যে বের হওয়া বলতে তারা যে ধরণের বের হওয়াকে বুঝে থাকে আসলে তা নয় । আল্লাহর জন্যে বের হওয়া বা আল্লাহর রাস্তা বলতে বোঝায় জিহাদের জন্যে বের হওয়াকে । তারা বের হওয়ার জন্যে যেভাবে আহবান করে থাকে তা একটি বিদ’আত যা সালাফদের থেকে বর্ণিত নেই, অর্থাৎ সালাফদের কেউ এভাবে বের হওয়ার জন্যে আহবান করেন নি ।
আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকার জন্যে বের হওয়াকে কয়েকটি দিনের মাঝে সীমাবদ্ধ করা যায় না, বরং একজন মানুষ তার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে লোকদের আল্লাহর দিকে আহবান করবে, তার এই সামর্থ্যকে সে কোন নির্দিষ্ট কিছু দিন যেমন চল্লিশ দিন বা এর কিছু বেশি বা কম অথবা কোন দলের মাঝে সীমাবদ্ধ করবে না ।
অনুরূপভাবে, একজন দায়ীর অবশ্যই ইলম থাকতে হবে । একজন লোকের অনুমতি নেই সে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করবে অথচ যে একজন অজ্ঞ মূর্খ বা জাহেল ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “(হে নবী,এদের) তুমি বলে দাও, এ হচ্ছে আমার পথ; আমি মানুষদের আল্লাহর দিকে আহবান করি; আমি ও আমার অনুসারীরা পূর্ণাংগ সচেতনতার সাথেই আহবান জানাই; আল্লাহ তায়ালা মহান, পবিত্র এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই” । [সূরা ইউসুফ ১০৮]
দ্রষ্টব্য; “সচেতনতার সাথেই আহবান জানাই”, এ আহবান হতে হবে ইলমের সাথে কারণ একজন আহবানকারী যেদিকে লোকদেরকে আহবান করছে তা সম্পর্কে তাকে অবশ্যই জানতে হবে । তাকে জানতে হবে কোনটি ফরয, মুস্তাহাব, হারাম আর কোনটি মাকরুহ । তাকে জানতে হবে শিরক সম্পর্কে; পাপকার্য, কুফর, অনৈতিকতা, অবাধ্যতা সম্পর্কে । অন্যায়ের এবং মন্দ কাজের কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় সে সম্পর্কেও তাকে অবশ্যই জানতে হবে ।
এ ধরণের বের হওয়া (চল্লিশ দিন কিংবা চার মাস) মানুষকে ইলম অর্জন থেকে বিঘ্নিত করে এবং এটি একটি ভুল, কারণ ইলম অর্জন করা একটি অত্যাবশ্যক বা ফরয কাজ, আর এটা কেবলমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই অর্জন করা যায়, অনুপ্রেরণার মাধ্যমে নয় । এটা হল এক প্রকার ভুল পথে চালিত সুফী মিথ (myth), কেননা ইলম ছাড়া আমল হল ভুল পথে চলা বা পথভ্রষ্টতা আর শিক্ষা অর্জনের প্রক্রিয়া ছাড়া ইলম অর্জনের আশা করা একটি বিভ্রম ব্যতীত আর কিছু নয় ।
- সালাস মিহাদারাত ফিল-ইলম ওয়াল দাওয়াহ থেকে । আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন । শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ ।

০৪) শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)'র নিকট প্রশ্ন করা হয়ঃ
তাবলীগ জামা'আত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ? এদের সাথে কোন তালিমে 'ইলম বা অন্য কেউ আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে বের হতে পারে কি ?
উত্তরে তিনি বলেন, তাবলীগ জামা'আত আল্লাহর কুরআন এবং রসূলের হাদীসের তরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং আমাদের সলফে সালিহীনদের পন্থার উপর নয় । অবস্থা যখন এই, তখন তাদের সাথে বের হওয়া জায়িয হবে না । কেননা এটা আমাদের সালফে সালিহীনদের তাবলীগের পন্থার পরিপন্থী । দা'ওয়াতের কাজে বের হবেন আলিম বা বিদ্বান ব্যক্তি । আর এরা যারা বের হচ্ছে তাদের উপর অবশ্য করণীয় হল নিজের দেশে জ্ঞান শিক্ষা করা, মাসজিদে মাসজিদে জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা, যারা দা'ওয়াতের কাজ করবে তারা যেন আলিম তৈরী হয় । এ অবস্থায় তালিবে ইলমদের উচিত যেন এদেরকে তাদের দেশেই কুরআন-হাদীস শিক্ষার জন্য আহ্বান জানায় । মানুষকে আল্লাহর পথে দা'ওয়াত তাবলীগীরা কুরআন ও সুন্নাহকে তাদের মূলনীতি হিসাবে গণ্য করে না । বরং তারা এই দা'ওয়াতকে বিভক্ত করে ফেলেছে । এরা যদিও মুখে বলে যে, তাদের দা'ওয়াত কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক তা নিছক মুখের কথা, এদের কোন একক আক্বীদা বিশ্বাস নেই যা তাদেরকে একত্রিত করতে পারে । এজন্যই দেখা যায়- এরা হল সূফী ও মাতুরিদী, আশায়িরীর আর এরা তো কোন মাযহাবেই নেই । আর এর কারণ হল তাদের আক্বীদাহ-বিশ্বাস জটপাকানো । এদের নিকট স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাব । এদের জামা'আত প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধশত বছর পার হয়ে গেল কিন্তু এত লম্বা সময়ের পরও তাদের মাঝে কোন আলিম তৈরী হলো না । আমরা এজন্যই বলি আগে জ্ঞানার্জন কর, তারপর একত্রিত হও, যেন একত্রিত হওয়া যায় নির্দিষ্ট ভিত্তির উপর, যাতে কোন মতভেদ থাকবে না ।
তাবলী জামা'আত বর্তমান সূফী মতবাদের ধারক বাহক জামা'আত । এরা চরিত্র সংশোধনের ডাক দেয় কিন্তু আক্বীদা-বিশ্বাসের সংস্কার ও সংশোধনের ডাক দেয় না । এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চূপ । কেননা তাদের ধারণা মতে এর দ্বারা বিভক্তি সৃষ্টি হবে । জনাব সা'দ আল হুসাইন এবং ভারত-পাকিস্তানের তাবলীগের মুরব্বীদের সাথে বেশ কিছু পত্র যোগাযোগ হয় । এর দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা ওয়াসীলা, উদ্ধারকারী (ইস্তিগাসা) এবং এ ধরনের অনেক ধারণাই সমর্থন করে । প্রত্যেক তাবলীগীকে এই চার তরীকার ভিত্তিতে বাই'আত গ্রহণ করতে হবে । কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে এদের প্রচেষ্টায় অনেক মানুষই আল্লাহর পথে ফিরে এসেছে । বরং এদের সাথে বের হবার জন্য কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য কি এটা যথেষ্ট নয় ? এ ব্যাপারে বলছি যে, এটার আমরা অনেক শুনেছি এবং জানি, সূফীদের কাছে থেকে অনেক ঘটনাই জানি । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি শাইখের আক্বীদাহ ফাসিদ হয়, হাদীস জানে না বরং লোকজনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে এতদ্বসত্ত্বেও অনেক ফাসিক লোক তার হাতে তাওবাহ করে । যে দলই ভাল বা কল্যাণের দিকে ডাকবে অবশ্যই তার অনুসারী পাওয়া যাবে । কিন্তু আমরা দৃষ্টি দিবো যে, সে কিসের দিকে আহ্বান করছে ? সে কি কুরআন হাদীস এবং সালফে সালিহীনের আক্বীদার দিকে ডাকছে এবং কোন মাযহাবের ব্যাপারে কোন রকম গোঁড়ামী করে না এবং যেখানেই পায় সুন্নাতের অনুসরণ করে । তাবলীগ জামা'আতের কোন ইলমী তরীকা বা পন্থা নেই । তাদের পন্থা হল স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে তার জন্ম হয়েছে । এরা সব রঙেই রঙ্গীন হয় (ইমারতী ফতওয়া, আলবানী, পৃঃ ৩৮)

বিঃ দ্রঃ তাবলীগী জামা'আত দেইখ্যা উষ্ঠা খাইয়া পইড়েন না । নীচের হাদীসটি মিলিয়ে দেখবেন আশা করি ।

সাহাবী আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর শেষ যামানায় আমার উম্মতের মধ্য হতে পূর্বের কোন দেশ থেকে একটি জামাআত বের হবে, তারা কুরআন পাঠ করবে, তাদের কুরআন পাঠ তোমাদের কুরআন পাঠের তুলনায় খুবই সুন্দর হবে । কুরআনের প্রতি বাহ্যত তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা দেখে মনে হবে যেন ওরা কুরআনের জন্য কুরআন ওদের জন্য । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওরা কুরআনের প্রতিটি আয়াতের উপরে ঈমান রাখবে না এবং কুরআনের কঠিন নির্দেশের উপর আমল করবে না ।
এই জামা'আতের অধিকাংশ লোক হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ । যেমন কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানে হবে মূর্খ তেমন সাধারণ জ্ঞানেও হবে মূর্খ । এই জামাআতে যদি কোন শিক্ষিত লোক যোগদান করে তাহলে তার আচরণ ও স্বভাব হয়ে যাবে জামাআতে যোগদানকারী অন্যান্য মূর্খের মত । মূর্খরা যেমন মূর্খতার আনুগত্য করবে তেমনি শিক্ষিত লোকটিও মূর্খদেরই আনুগত্য করবে । এই জামা'আতের বয়ান ও বক্তৃতায় থাকবে কেবল ফযিলাতের বয়ান । বিভিন্ন আমলে সর্বোচ্চ ফযিলাতের প্রমাণহীন বর্ণনাই হবে তাদের বয়ানের বিষয়বস্তু ।
হে মুসলমানগণ ! ঐ জামা'আতের লোকদের নামায, রোযা অন্যান্য আমল এতই সুন্দর হবে যে, তোমরা তোমাদের নামায, রোযা ও আমল সমূহকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে । এই জামা'আতের লোকেরা সাধারণ মানুষকে কুরআনের পথে তথা দ্বীনের পথে চলার নামে ডাকবে, কিন্তু তারা চলবে তাদের তৈরী করা পথে, ডাকলেও তারা কুরআনের পথে চলবে না ।
তাদের ওয়াজ ও বয়ান হবে মধুর মত মিষ্টি, ব্যবহার হবে চিনির মত সুস্বাদু, তাদের ভাষা হবে সকল মিষ্টির চাইতে মিষ্টি । তাদের পোশাক পরিচ্ছদ ধারণ-ধরণ হবে খুবই আকর্ষণীয়, যেমন সুন্দর হরিণ তার হরিণির পিছনে যেমন ছুটতে থাকে তেমন সাধারণ মানুষ তাদের মিষ্ট ব্যবহার, আমলের প্রদর্শনী ও সুমধুর ওয়াজ শুনে তাদের জামা'আতের দিকে ছুটতে থাকবে ।
তাদের অন্তর হবে ব্যাঘ্রের মত হিংস্র । বাঘের অন্তরে যেমন কোন পশুর চিৎকার মমতা প্রকাশ করে না, তেমন কুরআন ও হাদীসের বাণী যতই মধুর হোক তাদের অন্তরে প্রবেশ করবে না । তাদের কথাবার্তা আমল আচরণ, বয়ান যেগুলি তারা তাদের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তার-ভিতরকার কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আমলগুলি বর্জন করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার জন্য যতবার কেউ কুরআন ও সুন্নাহ প্রদর্শন করুক বাঘের অন্তরে যেমন মমতা প্রবেশ করে না তেমন তাদের অন্তরে কুরআন ও সুন্নার প্রবেশ করবে না ।
তাদের জামা'আতে প্রবেশ করার পর তাদের মিষ্টি ব্যবহারে মানুষ হবে মুগ্ধ, কিন্তু ঐ মনোমুগ্ধ ব্যবহারের পেছনে জীবন ধ্বংসকারী, ঈমান বিনষ্টকারী, ইসলামী মুল্যবোধ বিনষ্টকারী মারাত্মক বিষ বিরাজমান থাকবে । তাদের প্রশিক্ষন ধীরে ধীরে মানুষের অন্তর হতে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এ আনুগত্যের প্রেরণা শেষ করে দেবে এবং জামা'আতের আমীরদের আনুগত্যের প্রতি মরণপণ আকৃষ্ট করবে । আমীরগণ দেখতে হবে খাঁটি পরহেজগার দ্বীনদার ব্যক্তিদের মত, কিন্তু তার অন্তর হবে শয়তানের মত, কুরআন সুন্নাহের প্রতি বিদ্রোহী । আমীরগণ যা করে যাচ্ছে তার মধ্যে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজ কখনো কেউ ধরিয়ে দিলে কোনক্রমেই তা পরিবর্তন করতে প্রস্তুত হবে না । অর্থাৎ কুরআন হাদীস উপস্থাপন করার পর তারা কুরআন হাদীস দেখেও কুরআন হাদীস বর্জন করে মুরব্বীদের কথা মানবে । কুরআন হাদীসের প্রতি তাদের অনীহা এতই তীব্র হবে যে, তারা অর্থসহ কুরআন হাদীস কখনই পড়বে না, পড়ানোও যাবে না ।
এই জামা'আতটি ইসলামের তাবলীগ করার কথা যতই বলুক কুরআন যত সুন্দরই পাঠ করুক, নামায রোযা যতই সুন্দর হোক, আমল যতই চমৎকার হোক, মূলতঃ ঐ জামা'আতটি ইলসালম হতে বহির্ভূত হবে ।
সাহাবাগণ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ঐ দলটি চিনবার সহজ উপায় কি হবে ? আমাদিগকে জানিয়ে দিন । রাসূল (সাঃ) বললেন, এই ইসলাম বহির্ভূত জামা'আতটি চিনবার সহজ উপায় হল-
১) তারা যখন তালীমে বসবে, গোল হয়ে বসবে ।
২) অল্প সময়ের মধ্যে এই জামা'আতের লোকসংখ্যা খুব বেশী হবে ।
৩) এই জামা'আতের আমীর ও মুরব্বীদের মাথা নেড়া হবে । তারা মাথা কামিয়ে ফেলবে ।
তীর মারলে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায় । ঐ তীর আর কখনও ধনুকের দিকে ফিরে আসে না, তেমন যারা এই জামা'আতে যোগদান করবে তারা কখনও আর দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে না । অর্থাৎ এই জামা'আতকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কুরআন হাদীস যত দেখানো হোক, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন দলটি দ্বীনের পথে ফিরে আসবে না । এদের সাথে তোমাদের যেখানেই স্বাক্ষাত হোক, সংগ্রাম হবে তোমাদের অনিবার্য । এই সংগ্রাম যদি কখনও যুদ্ধে পরিণত হয় তাহলে তা থেকেও পিছ পা হবে না ।
এই সংগ্রামে বা যুদ্ধে যারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদেরকে যে পুরষ্কার আল্লাহ দান করবেন তা অন্য কোন নেক কাজে দান করবেন না
(বুখারী, আরবী দিল্লীঃ ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২৪, ১১২৮, মুয়াত্তা ইমামা মালেক, আরবী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৮, আবূ দাউদ, আরবী দিল্লী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬৫৬, তিরমিযী, মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৫৫, মুসলিম,মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৬২)
হাদীস সমূহের বর্ণনাকারী হলেন আবূ সাঈদ খুদরী, আলী, আবূ হুরায়রা, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) । (দেখুন সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৬৪৪৯, ৬৪৫০, ৬৪৫২, ৭০৪১ (আ.প্র.), বাংলা অনুবাদ মুয়াত্তা মালেকঃ ই.ফা. ১ম খন্ড, হাঃ নং- ৫৭৮)

পরিশেষে বলি- ষড়রিপুর তারনায় আমরা যেন একে অপরকে দোষারোপ না করি । হিংসাক্ত মনোভাব নিয়ে পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত না হই । আমরা যেন কুরআন হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করতে পারি । কোন বিষয়ে মতভেদ দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য মৌখিক তর্ক বিতর্ক না করে কুরআন হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল পেশ করতে পারি । মৌখিক ভাবে না বলে সঠিক প্রমান পত্র দিয়ে লিখিত জানানোকেই আমি ভাল বা সর্বোত্তম মনে করি ।

আমি যা লিখেছি, কোরআন ও হাদিসের আলোকে লিখেছি । যদি এই লেখায় কোন ভুল ধরতে চান, তাহলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিস দিয়ে ভুল ধরবেন । যেখানে কোরআন হাদিস দিয়ে ভুল প্রমাণ করা হয়েছে, সেখানে কোরআন হাদিসের প্রমাণ ছাড়া শুধু আবেগের বশে তর্ক করা মানে কোরআন-হাদিসের অমান্য করা ।

আল্লাহ বলেছেনঃ “যদি তোমরা সত্যবাদি হও, তবে প্রমান উপস্থিত করো” (সূরা নামলঃ ৬৪)
► যদি ইসলাম বিষয়ের কোন বইয়ে কোরআন ও সহিহ হাদিসের এর বিপরীত বানোয়াট ও নতুন কিছু থাকে, তাহলে মুসলমানদের জন্য সেই বইকে আর অনুসরন না করা যাবে না ।

লেখাটি সবাই প্রচার করুন । অতএব আসুন ! আমরা সহিহ তাবলিগ করি তালিম হিসাবে

কুরআনের তাবসীর ও হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ পড়ি ।


আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহ দ্বীন বুঝার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন !!
২৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×