somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু সমর্পণই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বৈধ কি?

১৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ের ক্ষেত্রে শুধু পুরুষের নয়, নারীর সম্মতি প্রদানও একটি অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু তাই বলে কোন নারী নিজেকে কোন পুরুষের কাছে সমর্পণ করতে চাইলেই কি সেই পুরুষ ও নারীর মাঝে স্বামী-স্ত্রীর মত সম্পর্ক স্থাপন করা জায়েজ হতে পারে?

অনেকে আল-কোরআনের ৩৩ নং সুরা আহযাবের ৫০ নং আয়াতটি উল্লেখ কোরে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন। অনেকে তো আবার খালাত, মামাত, চাচাত ভা্ই-বোনদের মাঝে বিয়ে করা জায়েজ কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

এ সম্পর্কে (৩৩:৫০) আয়াতটির সঠিক অনুবাদ ও তার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। সর্বজ্ঞ মহান স্রষ্টাই প্রতিটি বিষয়ের প্রকৃত জ্ঞান রাখেন।

সূরা আল আহযাব (মদীনায় অবতীর্ণক্রম- ৯০)
(৩৩:৫০) অর্থ- হে নবী! আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) তোমার জন্য হালাল/ বৈধ করেছি- তোমার স্ত্রীদের, যাদেরকে তুমি মোহরানা প্রদান করেছ। আর তোমার ডান হাতের অধিকারভুক্তরা, তাদের থেকে যাকে আল্লাহ তোমার নিকট সম্প্রদান/ প্রত্যর্পণ করেছেন এবং তোমার চাচাদের কন্যারা, ফুফাত কন্যারা, মামাত কন্যারা, খালাত কন্যারা- যে তোমার সাথে হিজরত করেছে এবং (সে) একজন মুমিন নারী হলে, যদি সে নিজেকে সমর্পণ করে নবীর কাছে, যদি নবীও তাকে বিবাহ করার ইচ্ছা পোষণ করেন- এটা বিশেষ করে তোমারই জন্য, অন্য মুমিনদের বাদ দিয়ে। আমরা অবশ্যই জানি তাদের উপর আমরা কি বাধ্যতামূলক করেছি তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাতের অধিকারভুক্তদের ব্যাপারে, যেন তোমার উপরে কোনরূপ অস্বস্তি/ বাধা না থাকে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
(৩৩:৫২) অর্থ- এরপর তোমার জন্যে হালাল নয় স্বাধীন নারীগণ এবং তাদেরকে অন্য স্ত্রীদের থেকে বদলে নেয়া, যদিও তাদের রূপলাবণ্য তোমাকে মুগ্ধ করে, তবে তোমার ডান হাতের অধিকারভুক্তরা ব্যতীত এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখেন।
.......................................
(৩৩:৫০) নং আয়াতের বক্তব্য অনুসারে প্রথমত রাসূলের (সাঃ) স্ত্রীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের বৈধতার ক্ষেত্রে মোহরানা প্রদানের বিষয়টি শর্ত হিসেবে উল্লেখ করার হয়েছে।

এরপর তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসেবে যে নারীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন-
১/ ডান হাতের অধিকারভুক্তদের মধ্য থেকে যাদেরকে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে সম্প্রদান করা হয়েছিল।
২/ তাঁর চাচাদের কন্যা, ফুফাদের কন্যা, মামাদের কন্যা, খালাদের কন্যাদের মধ্যে যিনি তাঁর সাথে হিজরত করেছিলেন।

এই ১ ও ২ নং নারীদের মধ্যে কারো সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের বৈধতা স্বরূপ তিনটি শর্ত দেয়া হয়েছিল-
১/ একজন মুমিন নারী হওয়া।
২/ সেই নারী স্বেচ্ছায় নিজেকে রাসূলের (সাঃ) কাছে সমর্পণ করতে চাওয়া।
৩/ রাসূলেরও (সাঃ) সেই নারীকে বিবাহের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করা।

এই তিনটি শর্ত পূরণ হলেই কোন ‘ডান হাতের অধিকারভুক্ত’ কিংবা চাচাদের কন্যা, মামাদের কন্যা, ফুফুদের কন্যা ও খালাদের কন্যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা রাসূল (সাঃ) জন্য হালাল ছিল। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, একটি বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথাগত সাক্ষী-সাবুদ এবং মোহরানা আদায়ের শর্তটি এক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছিল। আর এই নিয়ম শুধু রাসূলের (সাঃ) জন্যই প্রযোজ্য ছিল। অন্য মুসলিমদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।

তাছাড়া (৩৩:৫২) নং আয়াতের বক্তব্য অনুসারে এরপর থেকে উপরে উল্লেখিত তিনটি শর্ত সাপেক্ষে শুধুমাত্র ডান হাতের অধিকারভুক্ত নারীগণকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা নবীর (সাঃ) জন্য বৈধ ছিল এবং তখন থেকে কোন স্বাধীন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা রাসূলের (সাঃ) জন্যও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

সুতরাং স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সকল মুসলিমের জন্য বিবাহযোগ্য নারীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে অর্থাৎ সব সময়ের জন্যই উপরে উল্লেখিত তিনটি শর্তের [কনেকে ইমানদার হওয়া, বিয়েতে কেনর সম্মতি ও বরের সম্মতি] সাথে বিবাহের জন্য সাক্ষী-সাবুদ রাখা এবং মোহরানা আদায়ের শর্তটি পূরণ করা আবশ্যক হিসেবে বিধান দেয়া হয়েছে।

আর উপরের এই শর্তগুলো পূরণ করা সাপেক্ষে মুসলিমদের জন্য চাচাত, মামাত, খালাত, ফুফুতো ভাই-বোনদের মাঝে বিবাহ বৈধ। কাজেই চাচাত, মামাত, খালাত, ফুফুতো ভাই ও বোনের সন্তানকেও বিয়ে করায় কোন বাধা নেই।

তবে (৪:২২, ২৩) নং আয়াত অনুসারে আপন কিংবা পিতা অথবা মাতার দিক থেকে রক্ত সম্পর্কের ভাই ও বোনের মাঝে যেমন বিয়ে হারাম, তেমনি তাদের সন্তানকেও বিয়ে করা হারাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×