somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ধর্ষনের ঘটনা ও রজমের হুকুম-

২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র কোরে বেশ কিছু কেচ্ছা-কাহিনী রচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মূল ঘটনাটা হয়ত সত্য। তবে ভেতরে রঙ চড়িয়ে হাদিছ হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাই বলে সব হাদিছই কিন্তু জাল নয়। সহী হাদিছের মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি স্বার্থবাদী মহল সত্য ঘটনাগুলোকে পুঁজি করে বিকৃতভাবে প্রচার করেছে। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে সরল সোজা মানুষের কাছে ধর্মের নামে এগুলো এমন ভাবে উপস্থাপন করেছে যে, ধর্মান্ধ মানুষেরা অহেতুক ভয় ও মোহে তা অন্ধের মত শুনছে ও বিশ্বাস করছে। আরেকটি স্বার্থান্বেষী মহল আবার এগুলোকে পুঁজি কোরেই সমগ্র হাদিছ সম্ভারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। আর যারা সত্যকে প্রকাশ করার প্রাণপণ চেষ্টায় নিয়োজিত, তারা এই দুটো মহলেই চক্ষুশূল। সত্য বলায় পাছে যদি তাদের স্বার্থ হাসিলে ব্যাঘাত ঘটে, সেই আশঙ্কায় এই দুই দলই সত্য প্রকাশ করতে দিতে নারাজ। কিন্তু সত্য তো একদিন নয়ত একদিন ঠিকই প্রকাশিত হয়ে আলো ছড়াবেই।

আজ এমন একটি জাল হাদিছ তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যার ঘটনাটি হয়ত ঐতিহাসিকভাবে সত্য। কিন্তু ভিতরে রঙ চড়িয়ে তার মূল বক্তব্যকে ভিন্ন খাতে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যা শুধু দুঃখজনকই নয়, ইসলামের জন্য চরম অবমাননাকর ও ক্ষতিকরও বটে-
....................................................
জাল হাদিছটি নিম্নরূপ-
হারুন ইবনুল আসিম বর্ণনা করেন: উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-কে সৈন্যবাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর তারা আসাদ গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তারা একটি সুন্দরী নারীকে বন্দি করেন এবং জিরার তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তার সঙ্গীদের থেকে তাকে (নারীটিকে) চাইলেন, তারা দিয়ে দিল এবং তিনি তার সাথে সঙ্গম করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং খালিদ (রা) এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে বললেন। খালিদ (রা.) বললেন, অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি। জিরার বললেন, “না, উমরকে চিঠি না পাঠানো পর্যন্ত নয়।” উমর উত্তরে লিখলেন, তাকে রজম (প্রস্তারাঘাতে হত্যা) করতে হবে। কিন্তু চিঠি পৌঁছবার আগেই জিরার ইন্তেকাল করলেন। খালিদ (রা.) বললেন, “আল্লাহ জিরারকে অপমানিত করতে চাননি।”
সূত্র: বায়হাকি’র সুনান আল কুবরা, হাদিস নং ১৮৬৮৫
..................................................

আহা! কি সুন্দর বর্ণনা। খালিদ (রা.) সৈন্যদল সহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর সেই সৈন্যদলের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিটি তার অন্য সঙ্গীদের থেকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধৃত এক সুন্দরী নারীকে চাইলেন। কেন জানেন? তার চরম লালসা মেটানোর জন্য। আহা! কি সুন্দর আবদার। তারা দিয়ে দিল। দিয়ে দেবেই তো। তাদের সেনাপতি বলে কথা। না দিয়ে কি পারে? তার এহেন পবিত্র আবদার কি ফেলা যায়। এবং জিরার সেই নারীর সাথে সঙ্গম ক্রীড়া সমাপ্ত করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেল।

প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে প্রশ্ন আসতেই পারে-
*এই সঙ্গম কর্মটি কি যুদ্ধবন্দি নারীটির সম্মতিতে হবার কথা?
*বন্দি নারীটির কি তখন সঙ্গম/ কাম লীলায় নিজেকে শপে দেয়ার মত মনের অবস্থা থাকতে পারে?

বেচারা বন্দি নারী, যেহেতু সে শত্রু পক্ষের, সুতরাং বেকায়দায় পড়ে অবশেষে তাকে তো জিরারের সাথে যৌন মিলনে বাধ্য হতেই হলো। জিরারের উদ্দেশ্য ঠিকই পূর্ণ হলো। খালিদ (রাঃ) এর মত ব্যক্তিত্ব নাকি বললেন, "অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি।" (তার মানে কি তিনি চুপিসারে জিরারকে এও বলেছিলেন, "ধর্ষন করেছ তাতে কি হয়েছে, ওটা তো শত্রুর কাছ থেকে পাওয়া মাল") কিন্তু নারীটি যে ধর্ষিত হলো, তা কিন্তু ওমর (রাঃ) ঠিকই বুঝতে পারলেন। তাই তাকে রজম করার হুকুম দিলেন। কিন্তু হাদিছ বিশারদরা তা কোনদিনই বুঝতে পারল না। আর কখনো বুঝতে পারবে কিনা তা মহান আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। রজমের হুকুমের সেই চিঠি পৌছাতে পৌছাতে এতই সময় লাগলো যে জিরার ব্যাচারা প্রস্তরাঘাত না খেয়েই পরপারে পাড়ি জমালো। আবারও সেই খালিদের (রাঃ) নামে প্রচার করা হলো, "আল্লাহতায়ালা নাকি একজন ধর্ষককে অপমান করতে চান নাই।" কেচ্ছাটাকে চরম আবেদনময় কোরে তোলার জন্য মহান আল্লাহতায়ালাকেও ছাড়া হলো না। বলা হলো, "তিনিই নাকি একজন ধর্ষককে অপমান করতে চান নাই!!" অবশেষে তারা একজন ধর্ষকের প্রতি আল্লাহতায়ালার মহানুভবতার প্রমাণ দিয়ে আল্লাহর নামে সব দফারফা কোরে দিল। এভাবেই একটি জাল হাদিছের উছিলায় মুসলিম নামধারী যোদ্ধার জন্য শত্রুপক্ষের বন্দি নারীকে ধর্ষন করার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেল। ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, জিরার ইবনুল আযওয়ার নাকি শত্রপক্ষের সুন্দরী নারীকে বন্দি ও ধর্ষণ করে পারবর্তীতে অনুতপ্ত হয়েছিল। সেও জায়েজ ভাবেনি। কিন্তু হাদিছের অন্ধ অনুসারিরা কিন্তু এখনও তাদের বিভিন্ন লেখা-জোকায় এসব জাল হাদিছের কেচ্ছা কত আবেগময় কোরে বয়ান করছে। অন্ধ ভক্তদের মোহাবিষ্ট কোরে তাদের দলে ভেড়াবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। তাদের ফতোয়া অনুসারে এখন তো দেখছি মুনিব সেজে বন্দি নারীকে উপপত্নি বানিয়ে ব্যভিচার বা ধর্ষণ করলে অনুতপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকলো না। (অন্ধ হাদিছ প্রেমিরা বলুন মারহাবা মারহাবা) -----

নাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ--------
হে মহান আল্লাহ! এই জালিমদের বিকৃত ফতোয়ার হাত থেকে তুমি রক্ষা কর মাবুদ।

অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে অন্ধ অনুকরণ আর নয়। বরং আসুন! আগে আল্লাহর প্রেরিত কিতাব আল-কোরআন অনুধাবন করার চেষ্টা করার জন্য সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করি। আল-কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক ও প্রশ্নবিদ্ধ হাদিছ চিনে নেয়ার চেষ্টা করি এব পবিত্র গ্রন্থ কোরআন ও সহী হাদিছ অনুযায়ী বুঝে-শুনে আমল ও চেষ্টা-সাধনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:১৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×