পেটেন্ট নিয়ে যে আলোচনা ব্লগে চলছে তাতে কিছু কথা বলতে চেয়ে এই লেখা।
প্রথমেই জানাই আমি কোলকাতাবাসী, ভারতের নাগরিক। ব্লগে দৃষ্টি আকর্ষক এই সংক্রান্ত মূল্যবান লেখাটি পড়লাম,
Click This Link
সুন্দর এই লেখার জন্য ধন্যবাদ।
কয়েকটি কথা সূত্রাকারে বলি, পড়ে সময় সুযোগমত বিস্তারিত বলার ইচ্ছে রইলো।
১) পেটেন্ট বা মেধাসত্তা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গীটাই আসলে সমস্যাজনক। আরো অনেক কিছুর মতোই পুঁজিবাদ বা বলা ভালো একচেটিয়া পুঁজিবাদ এর মধ্য দিয়ে নিজের মুনাফার রাস্তা প্রসারিত করতে চেয়েছে, কিন্তু এটা করতে গিয়ে সে সভ্যতার স্বাভাবিক নিয়মের সাথে তাল রাখতে পারে নি।
২) অনেক জ্ঞানই উত্তরাধিকার সূত্রে বয়ে আসে, বহু শতাব্দীর অনেক মণীষার সাধনাকে কেউ বা কোন সংস্থা হয়ত কোন একটা বিশেষ মাত্রা দিলেন। সেইসূত্রে সেই ব্যক্তি বা সংস্থাকে সেই জ্ঞানের একক 'মালিকানা' অর্পণ করতে হবে, এটা একটা অন্যায্য প্রস্তাবনা। অন্যায্য কিন্তু অসম্ভব বা অবাস্তব যে নয় দুনিয়া জোড়া পেটেন্ট আইনের অসংখ্য ফলিত প্রয়োগে তা প্রতীয়মান হচ্ছে।
৩) সমস্যাটা আরো বাড়ে ভৌগলিক এলাকার সঙ্গে পণ্যর সংযুক্তি প্রসঙ্গে। এখানে ইলিশ মাছ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ফজলি আম ইত্যাদি প্রসঙ্গে যেটা আমরা বুঝতে পারি। জল জমি জঙ্গল দীর্ঘ ইতিহাস জুড়ে মানুষের উন্মুক্ত সামাজিক ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এমনকী ব্যক্তিগত মালিকানার আবির্ভাবের পরেও শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে দীর্ঘ পর্বেও তা অবিকৃত এবং অবিক্রীত থেকেছে। কিন্তু পেটেন্ট আইন এক্ষেত্রে মৌলিক বদল আনতে চায়। এটা কোন দেশের ব্যাপার আলাদা করে নয়। এটা মুক্ত পুঁজির লুঠেরা পুঁজি ও তার ধারক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। [দেশ ও রাষ্ট্র শব্দদ্বয়ের প্রয়োগ সচেতন ও পৃথক।]
৪)(ভারতীয় উপ-মহা) দেশ রাষ্ট্রে ভাগ হওয়ার ফলে জল জমি জঙ্গল বিভাজিত হয়েছে। সুন্দরবনের জঙ্গলের বাঘ বা একই গাঙ্গেয় বদ্বীপের ফল, এক্ষেত্রে ফজলি, বা একই নদীর শাখানদীর মাছ, যেমন ঈলিশ নিয়ে পেটেন্ট আইন যে এই সব হাস্যকর অবস্থানে পোঁছবে, তা বলাই বাহুল্য।
৫) সমাধান প্রসঙ্গে বলি আপনারা যে বিক্ষোভের কথা তুলেছেন, কর্মসূচীর কথা তুলেছেন, তার সারবত্তা আছে। এটা ঠিক পেটেন্ট আইনকে তার মূলগত জায়গা থেকে লড়ে বাতিল না করতে পারলে এই ধরণের সমস্যা তার উপসর্গ হয়ে বারবার দেখা দেবে। আর এই আইন আসলে নিও লিবারাল নীতি ও একচেটিয়া পুঁজির ব্রেন চাইল্ড, মানস সন্তান। তার সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদী লড়াইটা জিততে হবে। কিন্তু সেই বড় প্রেক্ষাপটের লড়াই এর অংশ এইসব জাতীয়তাবাদী লড়াইগুলো। এগুলোর দিশা সঠিক হলেই বড় লড়াইগুলো জেতা সম্ভব। মার্কিনের এশীয় চেলা ও বৃহৎ শক্তি হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষায় উন্মত্ত ভারতরাষ্ট্র ও তার চালক একচেটিয়া শিল্পপতি গোষ্ঠীগুলি তার সম্প্রসারণবাদী চরিত্র, পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আধিপত্য স্থাপনের নানা প্রয়াস পেটেন্টের সূত্রেও বিস্তৃত করতে চাইবে। কিন্তু ভারতের জনগ্ অন্তত তার সেই অংশ, যারা নানাভাবে এই রাষ্ট্রশক্তিকে নিয়ত চিনছেন, তারা এই লড়াইয়ে আপনাদের সহযোদ্ধা বলেই আমি মনে করি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




