somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান ও উগ্র প্রাদেশিকতা আমরা সমর্থন করছি না

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পশ্চিমবঙ্গের এক জন বাঙালি হিসেবে একটা কথা পরিস্কারভাবে বাংলাদেশের বন্ধুদের জানিয়ে দিতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাদেশিকতার ধুয়ো তুলে সাম্প্রতিককালে এমন কিছু অবস্থান নিচ্ছেন যা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করছে এবং পশ্চিমবঙ্গের বড় অংশের মানুষ তা চান না বলেই আমার বিশ্বাস। (বিশ্বাস কারণ এইসব ইস্যুতে গণভোট নেবার মত মজবুত জায়গায় আমাদের গণতন্ত্র এখনো পৌঁছয় নি। সরকারের উপর মহলের কর্তাব্যক্তিদের সিদ্ধান্তকেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়।)
সাম্প্রতিককালে ছিটমহল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মমতার আপত্তিতেই থমকে রয়েছে। অথচ এটা সবারই জানা ছিটমহলগুলির মানুষেরা দুদেশেই নাগরিকত্বসহ নানা সমস্যায় ভোগেন। অতীতেও তিস্তা চুক্তি মমতার আপত্তিতে স্থগিত হয়ে যায়, যে চুক্তি আন্তর্জাতিক জলবিধির ন্যায্যতা মেনে অবশ্যই হওয়া উচিৎ ছিল। এই দুটি ক্ষেত্রে ভারত সরকার রাজী হয়েছিল। সাধারণভাবে ভারত রাষ্ট্র (ভারতের সাধারণ জনগণ বিশেষত সাধারণ পশ্চিমবঙ্গবাসী কিন্তু প্রবলভাবে বাংলাদেশের ভাইবোনেদের সঙ্গে আত্মিক টান অনুভব করেন) বাংলাদেশসহ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর আধিপত্যবাদী অবস্থান নিয়ে থাকে। এতদ স্বত্ত্বেও তিস্তা চুক্তি বা ছিটমহল হস্তান্তরের মত যে কয়েকটি ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, তাও মমতার উগ্র প্রাদেশিকতার ধুয়ো মাখা আপত্তিতে আটকে যাচ্ছে।
ছিটমহল হস্তান্তর নিয়ে মমতার আপত্তি আর বাস্তবতাটা কি? আনন্দবাজারের রিপোর্ট থেকে তুলে ধরা যাক।
"মুখ্যমন্ত্রীর অবশ্য বক্তব্য, স্থলসীমান্ত চুক্তি হলে রাজ্যের লাভ নয়, লোকসানই হবে। কারণ, ভারতে বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে ৫১টি, যার মোট এলাকা প্রায় ৭ হাজার একর। আর বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের যে ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, তার জমির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার একর। ফলে ছিটমহল হস্তান্তর হলে ভারত পাবে ৭ হাজার একর, কিন্তু দিতে হবে ১৭ হাজার একর।
যার উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে বলা হচ্ছে, খাতায়-কলমে ভারতকে বেশি জমি দিতে হলেও বাস্তবে ওই ১৭ হাজার একর জমিতে কখনওই ভারতের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ভারতীয় ছিটমহলগুলি বাংলাদেশের গভীরে অবস্থিত এবং সেগুলি কার্যত বাংলাদেশেরই দখলে থেকেছে। একই ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। ফলে ছিটমহল বিনিময় একটি পরিস্থিতিকে বৈধতা দেবে, যা ইতিমধ্যেই বিদ্যমান।
তা ছাড়া, দিল্লি মনে করে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে। ফলে এই সুযোগে ছিটমহল-সহ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা অন্যান্য সমস্যার যদি সমাধান করে ফেলা যায়, তা হলে সেটা জাতীয় স্বার্থের পক্ষেও ভাল হবে। এত দূর এগিয়ে এখন স্থলসীমান্ত চুক্তি করা না-গেলে ভবিষ্যতে যে সেটা করা কঠিন হবে, সেই বার্তাও বারবার দিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের কর্তাদের মত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীপথ বদলে যাবে, জনসংখ্যা, ভূগোল সবই বদলে যাবে। মাঝখান থেকে ছিটমহলের মানুষের দুর্দশা ঘুচবে না।
এই অবস্থায় সোমবারই মমতাকে ফোন করে চুক্তির ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। মমতা তাঁকে জানিয়েছেন মুকুল রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেককে নিয়ে গঠিত তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করবে। খুরশিদের সঙ্গে ডেরেকের কথা হয়েছে। কিন্তু সংসদের চলতি অধিবেশনে বিলটি পেশের ব্যাপারে সম্মতি দেওয়ার সম্ভাবনা যে নেই, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব"।
এই রিপোর্টই জানাচ্ছে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকারের থেকে চুক্তি বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত গেছিল। এখন আমলাতন্ত্র ইত্যাদি কথার আড়ালে তাকে আড়াল করে বিপরীত অবস্থান নেওয়া হচ্ছে।
প্রাসঙ্গিক রিপোর্ট বলছে,
"ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি সংসদে পেশ করতে দেয়নি তৃণমূল। কিন্তু ঘটনা হল, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার ঠিক তিন মাস পরে বিদেশসচিবকে চিঠি লিখে ওই খসড়া চুক্তিতে সায় দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ।
স্থলসীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে রাজ্যের সম্মতি চেয়ে ২০১১ সালের ১৫ অগস্ট চিঠি (ডিও লেটার নম্বর ১৪৩৪০/এফ এস/২০১১) পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই। সেই চিঠির উত্তরে ২০ অগস্ট সমরবাবু লেখেন, ‘খসড়া চুক্তির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সম্মতির কথা আমি আপনাকে জানাচ্ছি’।
তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল সাংসদরা সে দিন রাজ্যসভায় বিলটি পেশে বাধা দিলেন কেন? মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এই চিঠিটি যখন পাঠানো হয়েছিল, তখন সবেমাত্র আমরা সরকারে এসেছি। চিঠির খসড়া তৈরি হয়েছিল আগের সরকারের সময়ই। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেই খসড়া অনুযায়ী চিঠিটি চলে গিয়েছে এবং সেটির বক্তব্যে বাম সরকারের মতামতেরই প্রতিফলন থেকে গিয়েছে।” তাঁর দল চিরকালই রাজ্যের জমি অন্যকে দিয়ে দেওয়ার বিরোধী বলেই জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু এই চিঠি প্রকাশ্যে আসায় স্থলসীমান্ত চুক্তি বিতর্কে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যসচিবের পাঠানো চিঠির বক্তব্য থেকে রাজ্য সরকার এ ভাবে সরে আসতে পারে কি না। তা ছাড়া, রাজ্যকে অন্ধকারে রাখার যে অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে, তা-ও তো ধোপে টিকছে না! রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েনের জবাব, “ওটা আমলাস্তরের একটা চিঠি। এক জন সচিবকে লেখা আর এক সচিবের। যার রাজনৈতিক ছাড়পত্র ছিল না। সময় গড়িয়ে গিয়েছে। এখন রাজনৈতিক অনুমোদন প্রয়োজন।”
আনন্দবাজারের রিপোর্টের লিঙ্কটি এখানে দিলাম
http://www.anandabazar.com/24desh2.html
মমতার উগ্র প্রাদেশিকতায় আমাদের সায় নেই। এসবই হলো তার গিমিকের রাজনীতির কিছু বহিঃপ্রকাশ। জনগণের সমস্যার মৌলিক কোনও সমাধানের চেষ্টা না করে রাজনৈতিক পপুলিজমে মেতে থাকার চেষ্টা। এজন্যই কখনো ক্লাবকে টাকা বিলানো, তো কখনো আই পি এল জয়ী ব্যবসায়িক ক্রিকেট টিমকে সম্ববর্ধনার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা। উৎসব অনুষ্ঠানের নামে যথেচ্ছ ব্যয়, অথচ স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির বিষয়ে চরম উদাসীনতা। বিভিন্ন আইডেনটিটির কাছের লোক সাজার চেষ্টা। কখনো মুসলিম মহিলার মত মাথায় কাপড় দিয়ে ইফতার পার্টিতে, তো কখনো বেলুড়ে সন্যাসীদের কাছে। আমি সবার লোক - এই ভঙ্গীমাটা কারো কারো পছন্দ হতে পারে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ভালো হিন্দু বা ভালো মুসলমান (ভালো শিখ বা ভালো খ্রীষ্টান তিনি অবশ্য সাজেন না, কারণ সেই ভোট প বাংলায় তেমন নেই, গোটাটাই ভোট বানানোর যে কৌশল, এটা তার থেকেই বোঝা যায়) সাজা নয়, জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও স্থায়ী সম্পদ বিকাশে মনোনিবেশ করা - এটা তার রাজনৈতিক উপলব্ধির জায়গা নয়।
যেখানে ভোট নেই সেখানে তার কোনও দায়ও নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি বা ছিটমহল হস্তান্তরে বাধা দিয়ে তিনি যে অমানবিক কাজ করছেন, তাতে তার কিছু যায় আসে না। কারণ এর বিনিময়ে তিনি উগ্র প্রাদেশিকতার দ্বারা রাজনৈতিক লাভ পাবেন ভাবছেন। কিন্তু নীতিকে দীর্ঘদিন সরিয়ে রেখে পপুলিজম দিয়ে বেশিদিন চালানো যায় না - এই ইতিহাসের শিক্ষা অনতি ভবিষ্যতেই তাঁকে পেতে হবে, আর সেটা অনেক মূল্যের বিনিময়ে।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×