somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কিছু ভীতু মানুষ !

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গেলো প্রায় ১৫-২০ বছর ধরেই আমার আশে-পাশের সাধারণ মানুষ, আত্তিয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য সবার মাঝেই একটা কমন কথা শুনতাম যে জামাত-শিবির অনেক শক্তিশালী, এদের সদস্য সংখ্যায় যেমন প্রচুর সাহসেও তেমন নির্ভীক। এদের বিদেশী নেটওয়ার্ক অনেক বড়; মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ এদের পক্ষে - এদের কিছু হলে সাথে সাথে বাংলাদেশের দফা-রফা হয়ে যাবে ইত্যাদি ! আর এদেরকে চ্যালেন্জ করতে পারে এত সাহস এইদেশের কারও নেই। তারপর ২০০১ এ এরা যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসল, স্বাভাবিক ভাবেই তখন এই ধারণা আরও শক্ত হলো । আমরাও সবাই ভাবতে আরম্ভ করলাম, আসলেই এদের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নেই ! যখন এরা মিছিল বের করত আমরা সবাই আতংকে লুকাতাম; যখন এরা হরতাল ডাকত আমরা সবাই আতংকে থাকতাম আজ হরতালে না জানি কি হয় ! শুনে শুনে আমাদের সবার মনেই জামাত-শিবিরের প্রতি এক ধরনের তীব্র ভয় কাজ করত - কেউ কখনও চিন্তাও করতাম না যে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব । শেষ পর্যন্ত গত নভেম্বর মাস থেকে যখন পুলিশও পড়ে পড়ে শুধু মার খেতে লাগলো (যদিও আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় কিছুতেই আমি পুলিশের এমন মার খাওয়ার কোনও আসল কারণ খুজে পাই না) তখন তো সবার মাঝেই এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেল যে এই দেশে জামাত-শিবিরের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই !

অথচ, কি ঘটে গেল গত ৮ দিনে !!! হঠাৎ দেখলাম জামাত-শিবিরের নামে কেউ এখন আর ভয় পাচ্ছে না ! এই নাম শুনে আতংকের বদলে সবার চোখে মুখে এখন তীব্র রাগের ছায়া, যেন প্রতিশোধের আগুন প্রতিটা মুখে ! পাশের ১৫-১৬ বছরের কিশোর ছেলেটা পর্যন্ত কাল বলছিল "ইস শিবিরগুলা যদি কাওরান বাজার বা মতিঝিলে না এসে একবার খালি শাহাবাগের আসে পাশে আসতো, তাহলে মজা দেখায় দিতে পারতাম !" শুনে ভাবলাম এই বয়সে রক্ত গরম, এরকম কত কথাই মুখে বলা যায়। কিন্তু আরেক পাশে বসে থাকা এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক যখন বলে উঠলেন "শিবিরগুলোকে হাতের কাছে একবারের জন্য পেলে মজাটা বুঝায় দিতাম !" তখন জিগ্গাসা করলাম "আংকেল আপনি কি করেন?" জেনে অবাক যে উনি একটি বিখ্যাত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর খুবই সিনিয়র লেভেলের ম্যানেজার ! তিন সন্তানের জনক, তার মধ্যে একজন দেশের প্রথম সারির একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সোজা কথায় পিওর মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত যাকে বলে, যাদেরকে আমরা সবসময়ই সুবিধাবাদি হয়ে নিজের পিঠ বাচাতে ব্যস্ত থাকে বলে জেনে থাকি। খুবই অবাক হলাম যে এরকম একটা মানুষের মুখেও এই রকম প্রতিবাদী কথা ! কোনও রকম ভয়-ডর-সংকোচ নেই ! আশ্চর্য !!! কোথায় আসল এত্ত শাহস ? কোন বাশিওয়ালা জাগালো এইসব ভীত মানুষের হৃদয়?
তখনই মনে হলো জামাত-শিবিরের নামের জুজু আসলে কোথায় যেন নিমিষে উড়ে গেছে - মানুষের মনে ভয়ের জায়গায় এখন স্থান করে নিয়েছে তীব্র ঘৃণা আর প্রতিরোধস্পৃহা ! আব্বুর কাছে শুনেছি ঠিক এমনই হয়েছিল ৭১ এ। আর তাইতো লুংগী পড়ে গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ গোবেচরা ভাল ছাত্রটি পর্যন্ত হয়ে উঠেছিল এক একটি এটম বোম্ব ! আর তাইতো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়েছিল এই সব আধপেটা লুংগী পড়া মানুষগুলোর কাছে মাত্র ৯ মাসে ! মনে হলো এটাই তো শাহাবাগের এক বিশাল অর্জন ! একটি জাতিকে নিমিষে ভয়মুক্ত করে সাহসি করে তোলা, একজন সাধারন মধ্যবিত্তকে প্রতিবাদী আগুন বানিয়ে দেয়া, একজন কিশোরকে প্রতিরোধের আগুনে জ্বলে উঠতে দেয়া - এসব কী খুব সাধারণ কিছু ! ইতিহাস তো এভাবেই তৈরী হয়েছে, এভাবেই তৈরী হয় ! কে পারবে এই জেগে ওঠাকে অবগ্গা করতে ? কে পারতে সাধারণ মানুষের এই অসাধারণ হয়ে ওঠাকে চ্যালেন্জ জানাতে ? কার আছে সেই স্পর্ধা ? জামাত-শিবিরের গুরুদেরও ক্ষমতা নেই একে চ্যালেন্জ জানানোর । যদি থাকতো তবে এভাবে চোরের মত চোরাগুপ্তা আক্রমণ না করে সামনে এসে দাড়াতো । আসলে জামাত-শিবির এবার চরমভাবে ভীত । সবাই জেনে গেছে এদের শক্তিমান ভাবা আসলে কাগজে-কলমেই, প্রচার-প্রচারণায় । ভেতরে এরা ভীত ভেড়ার মতই দুর্বল । আর দুর্বল বলেই ধর্ম, বিভেদ, আতংক এগুলোই এদের অস্ত্র ! সাধারণ মানুষের মনের ভয়ই এদের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা । কিন্তু আর না ! এদের মিথ্যা ক্ষমতার বলয় ভাংতে শুরু হয়েছে । পুলিশ-মিলিটারি থাকুক আর নাই থাকুক কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই এবার এদেরকে প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত ! ৭১ এদেশে তৈরী হয়েছে আরেকবার ! মানুষ জেগেছে আরেকবার ! এভাবেই তো শুরু হচ্ছে অন্য এক লড়াই, যে লড়াইয়ে সবাই মিলে আমরা তৈরী করবো সত্যিকারের একটি সুন্দর স্বপ্নের বাংলাদেশ, আর সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেবো "এই বাংলাদেশ আমাদের; কোনও পরাজিত শুয়োরের নয় ।"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×