আমরা যারা ৮০ ও ৯০ এর দশকে স্কুল পড়ুয়া তাদের নিশ্চয় মনে আছে ৮৮-৯০ এর দিকে এই দেশের ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পে একটা জোয়ার আসে। তখন একসাথে অনেক কয়েকটা ব্যান্ড আত্মপ্রকাশ করে। তখনকার ঈদে ব্যান্ড সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ছিল আমাদের মত কিশোরদের সবচেয়ে প্রিয়।
তখন কোন ব্যান্ডের একটা অ্যালবামে ২/৩ টার বেশি ভাল গান থাকত না। তাই সবাই মনমত গান বাছাই করে রেকর্ড করে নেয়াই পছন্দ করত।
মনে আছে, তখন প্রিয় গান দিয়ে সাজিয়ে ক্যাসেট রেকর্ডিং এর জন্য মিরপুর ১০ এর 'চৌধুরী উদ্যোগ' কিংবা মিরপুর ১ নং এর 'উত্তরা রেকর্ডিং' কিংবা যাদের পয়সা বেশি তারা এলিফ্যান্ট রোডের 'রেইনবো রেকর্ডিং' এ ছোটাছুটি করতাম। একটা ব্ল্যাংক ক্যাসেট ৩০-৬০ টাকা আর রেকর্ডিং ২৫ টাকা। প্রিয় গানের লিস্ট একটা কাগজে সুন্দর করে লিখে দিয়ে ৪/৫ দিন অপেক্ষার পর ক্যাসেটের দোকানে ছুটে যেতাম তীব্র এক আকর্ষণে।
কিশোর বয়সে যে ব্যান্ডগুলোর গান শোন হত সেগুলো হল-
মাইলস
সোলস
রেনেসা
এলআরবি
আর্ক
ডিফরেন্ট টাচ
নোভা
অরবিট
চাইম
ফেইথ
অবসকিউর
মনিটর
প্রমিথিউস
নর্দার্ন স্টার
ফিডব্যাক
ফিলিংস
উইনিং
ওয়ারফেজ
সিম্ফনী
ইভস্
রকস্ট্রাটা
পানকৌড়ি
জিপসী
চার্মিং বৌ
পালস্
সিঞ্জন
মাইলস ছিল সবচেয়ে প্রিয় ব্যান্ড। মাইলসের 'প্রত্যাশা' অ্যালবামটি মনে হয় এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া অ্যালবাম। আসলে এই অ্যালবামের প্রতিটি গানের কথা, সুর ও কম্পোজিশন অনন্য। মাইলসের এর পরের অ্যালবামগুলো তেমন সাড়া ফেলতে পারে নি। এই ব্যান্ডের যে গানগুলো উল্লেখ না করলেই নয়-
১। চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি নও পাহাড়ী ঝরণা........
২। নিঃস্ব করেছ আমায় কি নিঠুর ছলনায়……
৩। সে কোন দরদিয়া আমার…..
৪। ধ্বিকি ধ্বিকি আগুন জ্বলে……
৫। নীলা....
৬। পাহাড়ী মেয়ে...
৯। প্রথম প্রেমের মত...
সোলস অন্যতম পুরনো ব্যান্ড। সোলসের তপন চৌধুরী,নাসিমের গান ভাল লাগত। একসময় কুমার বিশ্বজিৎ, আইয়ুব বাচ্চু ও নকিব খানও এই ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন। পরবর্তিতে পার্থ এই ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হন। সোলসের কিছু প্রিয় গান-
১। মন শুধু মন ছুঁয়েছে……
২। এ এমন পরিচয়……
৩। ব্যস্ততা আমাকে দেয় না……
৪। চায়ের কাপে পরিচয়……
রেনেসা ব্যান্ডের গান খুব একটা ভাল লাগত না। তার কারণ এই ব্যান্ডের সব সদস্য বয়স্ক। ব্যান্ডের গান মানেই তারুণ্য- এই বিষয়টি কিছুতেই ভুলতে পারতাম না। তবে কয়েকটি গান অনেকের প্রিয় ছিল-
১। হৃদয় কাদামাটির কোন মূর্তি নয়…..
২। আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে.......
৩। তৃতীয় বিশ্ব…….
এলআরবি মানেই আইয়ুব বাচ্চু- একথা নতুন করে বলা লাগে না। ভরাট গলার এই শিল্পী আমার চিরকালের পছন্দের মানুষগুলোর একজন। এলআরবি তথা আইয়ুব বাচ্চুর প্রিয় গানগুলো হল-
১। কোন সুখের ছোঁয়া পেতে নয়...
২। মাধবী...
৩। ফেরারী মন...
৪। আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি....
৫। একদিন ঘুম ভাঙা শহরে...
৬। রূপালী গিটার
৭। হকার....
অবসকিউর পুরনো একটি ব্যান্ড। ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা টিপুর বেশির ভাগ গানই আমার খুব প্রিয়। যেমন-
১। মাঝ রাঁতে চাদ ...
২। নিঝুম রাতের আঁধারে....
৩। ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী...
৪। কাল সারারাত...
৫। দৃষ্টিরও সীমানায়..
৬। কলিকালের ভন্ডবাবা....
ডিফরেন্ট টাচ নামে একটি ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম তুমুল জনপ্রিয় ছিল। প্রথম অ্যালবামের ভোকাল যিনি ছিলেন তার নামটি ভুলে গেছি। পরে মেজবাহ নামে একজন ভোকালের প্রথম অ্যালবামটির রিমেক বাজারে ও নেটে পাওয়া যায়। ডিফরেন্ট টাচের দ্বিতীয় অ্যালবামটি ততটা ভাল হয়নি। এই ব্যান্ডের প্রিয় কিছু গান-
১। শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হল আকাশে....
২। স্বর্ণলতা...
৩। দৃষ্টি প্রদীপ জ্বেলে...
৪। মন কি যে চায় বলো...
৫। আল জামানার রাজনীতি (গানের কথাগুলো চিরবাস্তব
৬। জীবনমাঝি....
৭। শুরু হোক পথচলা...
নোভা ব্যান্ডটি ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ফজল কেন্দ্রিক। নোভার কিছু গান ছেলেবেলায় খুবই প্রিয় ছিল। পিঙ্ক ফ্লয়েডের একটি গানের অনুকরণে 'রাজাকারের তালিকা' গানটি মন্দ নয়। নোভার প্রিয় গানগুলো হল-
১। পদ্মার পাড়ে...
২। সজনী...
৩। দ্যুতি...
৪। আতিকুল্লাহ ডাক্তার (
৫। নীলাঞ্জনা নদীর তীরে.
৬। স্কুল পলাতক মেয়ে...
৭। রাখাল ছেলে
ফিডব্যাকের গান বললে চোখে ভাসতো টিভিতে ব্যান্ড শোতে দেখা গোঁফওয়ালা, মোটা মাকসুদ নামে এক গায়কের তুমুল লাফালাফি
১। মেলায় যাইরে...
২। মৌসুমী-১
৩। মৌসুমী-২
৪। এইবার তোমার আপন দেশে চল...
আর্কের শুরুর দিকের অর্থাৎ টুলুর কিছু গান আমার খুবই পছন্দের। পরবর্তিতে হাসান নামক 'চিড়িয়া' (ভক্তদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি) এই ব্যান্ডের যোগদানের পর আমরা ভক্তরা পদ্ত্যাগ করতে বাধ্য হই
১। সেদিনও আকাশে ছিল চাঁদ..
২। পাগল মন...
৩। ঐ দূর পরবাসে...
ফিলিংস ব্যান্ডটির মূল ভোকাল জেমস হলেও প্রথম দিকে ততটা জনপ্রিয়তা ছিল না। আমার মতে, এলআরবির সাথে দুটো মিক্সড অ্যালবাম (ক্যাপসুল, স্ক্রু ড্রাইভার মনে হয়) জেমস্ তথা ফিলিংসের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। প্রিয় কিছু গান-
১। ঐ দূর পাহাড়ে... (একই শিরোনামে উইনিংয়ের একটি গান আছে)
২। জেল থেকে বলছি...
৩। অনন্যা...
৪। তারায় তারায় রটিয়ে দেব..
উইনিং ব্যান্ডের কিছু গান ছিল অনন্য। মূল গায়ক চন্দনের কন্ঠ ভাল লাগে। কীবোর্ড বাদক বিপ্লব আমার পাড়ার ছেলে
১। ঐ দূর পাহাড়ের ধারে..
২। ওগো সোনার মেয়ে...
৩। ইচ্ছে করে...
৪। মন কি যে চায়...
হেভি মেটাল ব্যান্ড হিসেবে ওয়ারফেজ একটি নির্দিস্ট শ্রেণীর শ্রোতাদের কাছে সমাদর পেত। সঞ্জয়, সুমন, বাবনা, বালামের ওয়ারফেজের ভাল লাগা কিছু গান-
১। ধূপছায়া গোধূলী বেলায়..
২। জীবন ধারা...
৩। অসামাজিক...
প্রমিথিউস ব্যান্ডটি প্রতিস্ঠাতা বিপ্লব কেন্দ্রিক (ইনি আমার পাশের পাড়ার ছেলে
১। নির্জন শালবনে...
২। চাঁদ সাজানো আলো রূপালী...
অরবিট নামে একটি ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবামের কিছু গান খুবই প্রিয় ছিল-
১। লালশাড়ি...
২। সুখেরই প্লাবনে...
৩। পাপের স্রোতে...
খালিদের কন্ঠে চাইম ব্যান্ডের কিছু গান ভাল লাগত। চাইমের জনপ্রিয় কিছু গান হল-
১। ভিক্ষা কেমনে চাই...
২। নাতি খাতি বেলা গেল...
৩। কালো মাইয়া...
৪। জয় জগানন্দন...
ইভস্ নামে একটি ব্যান্ডের কিছু গান হঠাৎ আলোড়ন তুলেছিল। এই ব্যান্ডটিকে আমি কল্পনায় 'ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ' এর সাথে তুলনা করতাম
১। বন্যেরা বনে রয় তুমি এ বুকে.....
মনিটর নামে একটা 'খ্যাত মার্কা' ব্যান্ডের কিছু গান ভাল লাগত-
১। ছোট বেলার মত এসো ফুল তুলিতে যাই...
২। শোন বকুল, হাসনাহেনা.....
৩। রক্তজবা হাসে...
চার্মিং বৌ- নাম শুনলেই বোঝা যায় এটি কি ধরণের ব্যান্ড
১। বকুল তলায় ফুল কুড়াতে আসতে তুমি মৌ...
২। কি ছিলে আমার বল না তুমি......
নর্দার্নস্টার নামে উত্তরবঙ্গের একটি ব্যান্ড ছিল। কিন্তু কোন গান মনে করতে পারছি না। এদের একটি অ্যালবামের নাম ছিল 'ফটো সুন্দরী' (ব্লগার উধাও ভাবুক র তথ্য অনুসারে)
মিউজিক টাচ্ ব্যান্ডের একটি গান (ব্লগার নামহীনা র তথ্য অনুসারে) মনে পড়ে-
১। ছল কইরা সব কাইরা নিলি কিছুই পাইলাম না...
ব্যান্ড শোতে দেখা বাদল খন্দকারের একটি গান খুবই প্রিয়-
১। কাঁটার আঘাত দেবে সুবাস দেবে না ফুল তাই কি হয়...
(ব্লগার এইতো আমি এবং নামহীনা র তথ্য অনুসারে)
পালস্ ব্যান্ডের একটি গান ভাল লাগত-
১। চন্দ্রিমা রাত্রিতে কিংশুক সৌরভে...
(ব্লগার নামহীনা র তথ্য অনুসারে)
আদনান বাবুর একটি গান বাসাবাড়ি, দোকানপাটে বাজত-
১। রং নম্বর টেলিফোনে নাম না জানাকে বলল হ্যালো.....
(আবোল তাবোল স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট। তথ্যগত ভুল থাকাই স্বাভাবিক)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৩:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




